ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

বাজার নিয়ন্ত্রণ জরুরী

প্রকাশিত: ০৫:৪৯, ৩ অক্টোবর ২০১৬

বাজার নিয়ন্ত্রণ জরুরী

আকস্মিকভাবে কয়েকটি নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দাম বেড়ে যাওয়ায় বাজারের স্থিতিশীলতা কমেছে বলেই প্রতীয়মান হচ্ছে। আর এই পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে অসাধু ও অতি মুনাফালোভী কিছু ব্যবসায়ী। নিত্যপণ্যের দাম কমানোর সরকারী নির্দেশনা থাকলেও তা না মেনে বরং উল্টো দাম বাড়িয়ে তারা প্রথমত অবৈধ মুনাফা লুটছে, দ্বিতীয়ত বাজারকে করছে অস্থিতিশীল এবং তৃতীয়ত প্রকাশ্যেই তারা সরকারের নির্দেশ অমান্য করার ধৃষ্টতা দেখাচ্ছে। পুরো বিষয়টিই পড়ে অপরাধের পর্যায়ে। প্রতি রমজানের আগে নিত্যপণ্য মজুদ থাকা সত্ত্বে¡ও দ্রব্যমূল্যের দাম বাড়িয়ে দেয়া এই ব্যবসায়ী শ্রেণীর মজ্জাগত স্বভাব। প্রতিবারই ভোক্তা সাধারণের পকেট কাটছে এরা। এবারের কোরবানির ঈদেও এরা অতি মুনাফার লোভে এহেন দুষ্কর্ম করেছে নির্বিঘেœ। এবারে যে ক’টি পণ্যের মূল্য বাড়িয়েছে তা একেবারে অত্যাবশ্যকীয়। চাল, চিনি ও ভোজ্যতেলের দাম বাড়িয়েছে কোন কারণ ছাড়াই। তারা দাবি করছে আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম বেড়েছে। ধানের মূল্য বৃদ্ধিতে বেড়েছে চালের দাম। চিনির উৎপাদন ব্যয় বাড়ায় বেড়েছে চিনির মূল্য। এ তিনটির দেখাদেখি আরও পণ্যের দাম বেড়ে যাওয়া বিচিত্র নয়। অথচ বাস্তবতায় দেখা যায় ভিন্নচিত্র। তাদের দাবির সত্যতা মিলছে না। এতেই স্পষ্ট হয় তাদের উদ্দেশ্য সৎ নয়। সবচেয়ে গুরুতর বিষয় মূল্য কমানোর সরকারী নির্দেশনা উপেক্ষার বিষয়টি। অত্যাবশ্যকীয় পণ্যের দাম না কমিয়ে বরং নিজেরা বাড়িয়েছে। আবার আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানগুলো আন্তর্জাতিক বাজারের দোহাই দিয়ে দাম বাড়ানোর জন্য ট্যারিফ কমিশনকে চিঠি দিয়েছে। তাদের এমন তৎপরতা দেখে মনে হয় এটা যেন মামা বাড়ির আবদার, চাইলেই পাওয়া যায়! আমাদের বাজার ব্যবস্থাপনা কাগজে-কলমে বেশ জনবান্ধব। কিন্তু বাস্তব চিত্র ভিন্ন। বাজার অর্থনীতির নিয়মানুসারে উৎপাদন বা সরবরাহ বেশি হলে পণ্যের দাম কমে। সরবরাহ কমে গেলে দাম বাড়ে। কিন্তু সাম্প্রতিক বাজারের বাস্তবতা হলো, পণ্যের উৎপাদন ও সরবরাহ নিশ্চিত থাকলেও দাম আকস্মিকভাবে বেড়ে যায়। ভোক্তা সাধারণের অধিকারকে দেখানো হয় বৃদ্ধাঙ্গুলি। বাজার প্রায়শই থাকে না নিয়ন্ত্রণে। কিছু দিন যেতে না যেতেই একেক দ্রব্যের মূল্য কোন কারণ ও আগাম ঘোষণা ছাড়াই হঠাৎ বেড়ে যায়। আজ চালের দাম নিয়ন্ত্রণে তো কাল বাড়বে ডালের দাম। এটা যে অসাধু ব্যবসায়ীদের কারসাজি তা বলাই বাহুল্য। আমদানিকারক, পাইকারি ও খুচরা বিক্রেতাদের অবস্থান এক্ষেত্রে অনেকটাই পরস্পরবিরোধী, যার খেসারত দিতে হয় সাধারণ ভোক্তার। বার বার লঙ্ঘিত হয় ভোক্তা অধিকার। অবস্থাদৃষ্টে মনে হয় বাজার নিয়ন্ত্রণ করা বা দেখার যেন কেউ নেই। বাজার মনিটরিং সেল বলে একটা কর্তৃপক্ষ আছে। তাদের কার্যক্রম ও ভূমিকা নিয়ে প্রায়ই প্রশ্ন ওঠে। তাদের স্বচ্ছতা থাকা অত্যাবশ্যক। বাজার নিয়ন্ত্রণে সংস্থাটির জোরালো ভূমিকাই সবার কাম্য। অসৎ ব্যবসায়ীদের নিয়ন্ত্রণ করতে প্রয়োজনে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে ব্যবস্থা গ্রহণ করা যেতে পারে। মনে রাখা দরকার, নিয়ন্ত্রিত বাজারই ভোক্তা অধিকার রক্ষার অন্যতম প্রধান পন্থা।
×