ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

সিডনির মেলব্যাগ ॥ অজয় দাশগুপ্ত

আড়ম্বরহীন ভালবাসায় শেখ হাসিনার বিজয়

প্রকাশিত: ০৫:৪৮, ৩ অক্টোবর ২০১৬

আড়ম্বরহীন ভালবাসায় শেখ হাসিনার বিজয়

প্রধানমন্ত্রী ইতোমধ্যে তাঁর একক আসন নিশ্চিত করেছেন। না এটা কথার কথা নয়। কিছু স্বার্থান্বেষী পাক প্রীতিতে মনমজানো মানুষ ছাড়া বাকিরা জানে তাঁকে ছাড়া বাংলাদেশের কি হতে পারে। চারদিকে নাগিনীরা এখনও ফেলিতেছে বিষাক্ত নিশ্বাস। আমাদের আশার বাতিঘর শেখ হাসিনার কাছে আমরা কৃতজ্ঞ। তিনি না থাকলে এ দেশের রাজাকার-দালালরা কোনদিন শাস্তি পেত না। বিচার হতো না মানবতাবিরোধীদের। সবই পজিটিভ। কিন্তু সঙ্গে কিছু দায়িত্ববোধও আছে আমাদের। আগেই বলে রাখি দল বা দলীয় লোকজন যতটা তার চেয়ে এখন তাঁর শক্তি দেশের সচেতন মানুষের সমর্থন। যারা এ দেশে দলীয় রাজনীতির নামে আগুন জ্বালানো-পোড়ানোর রাজনীতি করে, মানুষের প্রাণ হরণ করে, তাদের প্রতি মানুষের ঘৃণা আছে অন্তরে। তারা এদের চায় না। চায় না বলেই নেত্রীকে নিরাপদ ও শান্তিতে সমুজ্জ্বল রাখতে চায়। প্রধানমন্ত্রী আজ দেশের বাইরেও আকাশস্পর্শী উচ্চতায়। বিদেশে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি যেখানে সেখানে নজর দিলে সেখানকার আওয়ামী লীগের দিকেও দৃষ্টি দেয়া প্রয়োজন। চোখের বাইরে অজান্তে এদের যে চেহারা তাতে আমরা আতঙ্কিত। সেখানে না আছে আনুগত্য, না কোন নিয়ম পালনের ইচ্ছা। প্রধানমন্ত্রীর জন্মদিনের আয়োজন নিজের নির্দেশেই এবার না করার সিদ্ধান্ত হয়েছিল। সেটা কি তারা মেনেছে? সিডনি মানেনি। ঘরোয়া আয়োজনে আপনাকে আবদ্ধ রাখেনি তারা। হয়ত অনেক দেশেই তা হয়েছে। যদি তা হতো আন্তরিকতায়, যদি তা হতো তাঁর প্রতি গভীর ভালবাসায় তবে কোন কথা ছিল না। কিন্তু এসবের পেছনে ছিল এক ধরনের লোভ আর ব্যক্তি ইচ্ছা। বাংলাদেশের উন্নয়নের পাশাপাশি রাজনীতির জটিলতার কথাও মনে রাখি আমরা। মরতে মরতে লেজে প্রাণ থাকা বিএনপি এখনও সুযোগ খুঁজছে। তাদের চান্স দেয়ার রাস্তাটা যেন খুলে দেয়া না হয়। আজ যারা প্রধানমন্ত্রীকে ঘিরে দেশে-বিদেশে এসব করছে তাদের দলে এখন সত্যিকার আওয়ামী লীগার বা বান্ধব নেই। ঢুকে গেছে জাতির পিতাকে চরম অপমান করে লেখা ও বলার মানুষ। ঢুকেছে জাতীয়াতাবাদের মদদপুষ্ট মানুষ। কারণ একটাই, ব্যক্তির খামখেয়ালি। প্রবাসে দেশের রাজনৈতিক দলের দরকার থাক বা না থাক শো আপ আছে। মুশকিলের বিষয়, বড় বড় এমপি, নেতা, মিনিস্টাররা জেনেও নিজ নিজ জায়গা থেকে এগুলোকে উৎসাহিত করেন। আপনি এবার দেশে না ফেরা অবধি আমাদের উদ্বেগ যায়নি। কত রকমের ষড়যন্ত্র, কত ধরনের বিপদ। একশ্রেণীর আপদ সব সময় ওঁৎ পেতে আছে। আছে বিপদের সম্ভাবনা। তিনি একের পর এক দেশ ও বিদেশির মন জয় করে চলেছেন। প্রধানমন্ত্রীকে যারা ভালবাসে, যারা মন থেকে চায় তারা হৃদয়মথিত শ্রদ্ধাঞ্জলি আগেই পাঠিয়ে দিয়েছে। দুর্ভোগে পড়া মানুষ এক মিনিটের জন্য হলেও ভাববে তাদের এই নিয়তির কথা। বাংলাদেশের মানুষ প্রধানমন্ত্রীকে কিভাবে সংবর্ধনা দেবে সেটা তাদের অন্তরের বিষয়। যানজট আর জনদুর্ভোগে তার পরিমাপ হয় না। কিন্তু কেউ তা মনে রাখে না। প্রধানমন্ত্রী বাংলা সাহিত্য-সংস্কৃতির প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তার কথা লেখা আচার আচরণ পোশাকেই তা স্পষ্ট। তা না হলে হুমায়ূন আহমেদ থেকে সৈয়দ হকে তার সৌজন্যের হাত প্রসারিত হতো না। তিনি গুণের কবিতার ভক্ত। জননেত্রীর জীবনে আছে বাঙালী মণীষার প্রভাব। তিনি সেই বাপের মেয়ে যিনি প্রতি ভাষণে রবিঠাকুরের কবিতা আওড়াতেন। যিনি নজরুলকে নিয়ে এসেছিলেন এই দেশে। যিনি সুভাষ-হেমন্ত থেকে নতুন কবি গায়কদের সঙ্গে মন খুলে আড্ডা দিতেন। তাই তার নামে এই ফুলেল সংবর্ধনার আয়োজনে আমি সুভাষ মুখোপাধ্যায়ের একটা কবিতার কথা স্মরণ করিয়ে দিতে চাই : ফুলকে দিয়ে মানুষ বড় বেশি মিথ্যা বলায় বলেই/ ফুলের প্রতি আমার কোন টান নেই/ তারচেয়ে আমার পছন্দ আগুনের ফুলকি।/যা দেবে কোন দিন কারও মুখোশ হয় না। আজ মুখ ও মুখোশের জমানায় আমরা জননেত্রীকে মুখোশধারীদের বিরুদ্ধে সাবধান করতে চাই। বাংলাদেশের রাজনীতিতে আওয়ামী লীগের দুশমন আছে তা সুবিদিত। বাইরের শক্তি কখনও তাকে কাবু করতে পারেনি। যারা দল ছেড়ে গেছে বা যায় তাদের শোচনীয় পরিণতি দেখেছি আমরা। যারা মীরজাফরী করে তারাও রেহাই পায় না। খবরে দেখলাম এক সময়ের তুখোড় এক ছাত্রনেতা যিনি ‘সিরাজ’ হতে পারেননি হয়েছিলেন স্বার্থের মীরজাফর আজ বাকহীন পঙ্গু। দল বদলে খালেদা জিয়ার কোলে আশ্রয় নেয়া এই নেতাকে একবার দেখতে যায়নি তার সাধের বিএনপি নেতারা। কেন যাবে? তারা কি আসলে দল করে? দল মানে কি গদির লোভে দেশ ও ইতিহাসের বিরুদ্ধে নানা কারণে একত্রিত হয়ে থাকা একদল মানুষ? তারা তাদের দলে এমন লোভীদের আসা- যাওয়া দেখতে অভ্যস্ত। আর নিয়তি বা প্রকৃতিরও একটা বিচার আছে। তারা সেটাই ভোগ করছেন। এদের আমরা চিনতে পারি। চিনতে পারি না যারা এখনও দলের ভেতরে ঘাপটি মেরে ফায়দা নিচ্ছে। কি দেশে কি বিদেশে এরাই অতিউৎসাহী। এদের উৎসাহের তোড়ে ন্যায্য কথা বলা যায় না। বললে মনে হয় আপনার বা দলের বিরোধিতা করা হচ্ছে। অথচ ভাল করে দেখলে বা বিবেচনায় আনলে এটা মানতেই হবে এই অতিউৎসাহীরা কখনও আমাদের মঙ্গল চায়নি। চাইলে তারা জননেত্রী ও তাঁর দলের ভবিষ্যত মাথায় রাখত। এমন কিছু করত না যাতে নির্বাচনে বা জনমনে প্রভাব পড়ে। বঙ্গবন্ধুর কন্যা তিনি। দুশমনরা যাই বলুক আমরা জানি কিভাবে তিনি হাল ধরে আছেন। কোথায় সেই শক্তির উৎস। এরা রাজপথে মাতম করে সাময়িকভাবে হয়ত দেখায় তারা ভালবাসে কিন্তু আসল জায়গাটা মনের ভেতর। যারা তাকে নানাভাবে শক্তি যোগায় যাদের কলম কালি মুখ তুলি ও ভাবনায় এ দেশের মঙ্গল খেলা করে তারা চায় তার জননী রূপ। সেখানে এই জাতীয় সংবর্ধনা নিতান্ত গৌণ। যে কাজগুলো হয়েছে বা হচ্ছে তাতে তার নাম একটু একটু করে প্রোথিত হয়ে গেছে ইতিহাসের অবিনাশী প্রস্তরখ-ে। জনক যেমন দেশ স্বাধীন করেছিলেন, তাজউদ্দীন যেমন আমাদের মুক্তি সংগ্রামকে বিজয়ে রূপ দিয়েছিলেন আপনি দিয়েছেন রাজাকারমুক্ত দালালহীন ইতিহাসের শুদ্ধপাঠ। আবার নতুন করে বাংলাদেশের মাটিতে রোপিত হয়েছে সচেতনতার বীজ। যে তারুণ্য এ দেশ ও তার অতীত ভুলে গিয়েছিল, যে মানুষ ভেবেছিল বাংলাদেশ মূলত পাকি ধারার ককটেল তাকে তিনি মৃতসঞ্জিবনীমন্ত্রে জাগিয়ে তুলেছেন। মৌলবাদ উগ্রবাদ বা ভুল রাজনীতিতে বাংলাদেশের সামনে যাওয়ার পথ নেই। আছে একাত্তরের পথ থেকে শুদ্ধতা নিয়ে অতীতকে চর্বিত চর্বণ না বানিয়ে তার আলোয় পথচলা। সে কারণেই আমরা আজ উন্নত তকমা পরিধান করতে পারছি। আর এই সম্মান বজায় রাখতে তাকে আরও অনেকদিন শীর্ষে চাই। জনদুর্ভোগ বা মানুষকে জোর জবরদস্তি করে কোন দিন কোন ভাল কাজ হয়নি। ভাল ফল পাওয়াও অসম্ভব। অনুরোধ জানাই তার দেয়া নির্দেশ যেন অমান্য করতে না পারে কেউ। যেন শুদ্ধ রাজনীতির পথে থাকে দল ও নেতারা। যেন মানুষের মনে এই ভাব জাগে এ আমাদের দল। এরা আমাদের স্বস্তি ও আনন্দের কারণ। ত্রাস ও ভয়ের জায়গাটা তৈরি করা এদের রুখতে হবে। বাংলাদেশের রাজনীতির কালসাপ জামায়াত ফুঁসছে। আছে বিএনপির ষড়যন্ত্র। প্রধানমন্ত্রীার ইমেজ ও বিজয়েই আমাদের জয়।
×