ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

হাওড় অঞ্চলে ধান কাটার মেশিন কিনতে ঋণ

প্রকাশিত: ০৫:৩৮, ৩ অক্টোবর ২০১৬

হাওড় অঞ্চলে ধান কাটার  মেশিন কিনতে ঋণ

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ হাওড় অঞ্চলের কৃষকদের জন্য নতুন একটি ঋণ কর্মসূচী হাতে নিচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক। কর্মসূচীর অধীনে কৃষকদের ধান কাটার যন্ত্র কিনতে ঋণ দেবে বিভিন্ন ব্যাংক। গত কয়েক বছর ধরেই হাওড় অঞ্চলে ধান উৎপাদনের অনুপাত বেড়েছে। কিন্তু শ্রমিকের অভাবে দিন দিন এ অঞ্চলে পাকা ধান কাটা দুষ্কর হয়ে পড়ছে। এতে বর্ষা এলেই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন কৃষকরা। এ ক্ষতি থেকে কৃষকদের বাঁচাতে নতুন এ ঋণ কর্মসূচী হাতে নেয়া হচ্ছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক সূত্রে জানায়, ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের স্বল্প সুদে ঋণ বিতরণের লক্ষ্যে ১০০ কোটি টাকার একটি পুনঃঅর্থায়ন তহবিল রয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংকের। ২৪টি ব্যাংক এ তহবিলের টাকা নিয়ে ঋণ দিয়ে থাকে। এবার এ তহবিল ব্যবহার করেই হাওড় অঞ্চলের কৃষকদের ধান কাটার যন্ত্র কেনার জন্য ঋণ দেয়া হবে। কৃষক নিজে বা অন্য কেউ চাইলেই ঋণ নিয়ে ধান কাটার যন্ত্র কিনে তা ভাড়ায় কৃষকদের ধান কেটে দিতে পারবে। শীঘ্রই এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানিয়ে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকগুলোকে বিস্তারিত নির্দেশনা দেয়া হবে। ব্যাংক সূত্র জানায়, যদি কোথাও ব্যাংকের শাখা না থাকে, তবে সেটা এনজিও লিংকেজের মাধ্যমে সমন্বয় করা হবে। হাওড় অঞ্চলের মাধ্যমে শুরু হলেও পর্যায়ক্রমে দেশের সব অঞ্চলেই এ খাতে ঋণ দেয়া হবে বলে জানা গেছে। এছাড়া একই তহবিলের অধীনে বায়োগ্যাস প্ল্যান্ট তৈরির জন্যও কেন্দ্রীয় ব্যাংক ঋণ বিতরণের উদ্যোগ নিচ্ছে। কোন পরিবার যদি তিনটি গরু পালন করে, তবে সে গরুর গোবর দিয়ে ওই পরিবারের পক্ষেই একটি বায়োগ্যাস প্ল্যান্ট চালু করা সম্ভব। এখান থেকে যে পরিমাণ গ্যাস তৈরি হবে তা দিয়ে ওই পরিবারের নিয়মিত রান্নার কাজ পুরোপুরি চালিয়ে যাওয়া সম্ভব হবে। এর পাশাপাশি পাওয়া যাবে জৈব সার। সম্পূর্ণ পরিবেশবান্ধব এ প্রকল্পে ঋণ দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। দুটি বিষয়ে ঋণ দিতে ব্যাংকগুলোকে একই সঙ্গে নির্দেশনা দেয়া হবে। বাংলাদেশ ব্যাংকের এসএমই বিভাগ এটি নিয়ে কাজ করছে। এ বিভাগের একজন কর্মকর্তা বলেন, ‘দুটি বিষয়েই এবার বেশ গুরুত্ব দিয়ে ঋণ বিতরণের জন্য ব্যাংকগুলোকে নির্দেশনা দেয়া হবে। কৃষকদের ধান কাটার যন্ত্র কেনার জন্য ঋণ বেশ জরুরী। কারণ আমরা জানতে পেরেছি বর্ষার সময়ে হাওড় অঞ্চলের মানুষগুলো শ্রমিকের অভাবে ধান কাটতে পারে না। ফলে অনেকের পাকা ধান নষ্ট হয়ে যায়। এ জন্য ধান কাটা যন্ত্রের ঋণ ব্যবস্থা চালু করা হচ্ছে। আর বায়োগ্যাস প্ল্যান্টও একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কারণ মানুষ জমিতে এখন ইউরিয়া সার ব্যবহার করছে। যেটা উৎপাদিত খাদ্যদ্রব্যের গুণাগুণ নষ্ট করে। কিন্তু জৈব সার হলে সেটি মাটির উর্বরতা বাড়ানো থেকে শুরু করে খাদ্যপণ্যের গুণাগুণও বাড়ায়। আবার বায়োগ্যাস ব্যবহার করে অনায়াসেই রান্নার কাজ সেরে ফেলা যায়। এজন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংক এ দুটি বিষয় নিয়ে কাজ করছে। সূত্র জানায়, বায়োগ্যাস প্ল্যান্টে ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকা বা প্রয়োজনে এরও বেশি ঋণ দেয়া হবে। আর জামানতবিহীন এ ঋণ পরিশোধের প্রক্রিয়াটিও হবে বেশ সহজ। এখানে যেসব ব্যাংক ঋণ দেবে, তারাই আবার জৈব সার কিনে নেয় এমন কোম্পানির সঙ্গে যোগাযোগ করিয়ে দেবে। তারা নিয়মিত বায়োগ্যাস প্ল্যান্টের মালিকদের কাছ থেকে জৈব সার কিনে নেবে। যে টাকার জৈব সার বিক্রি করা হবে, সে টাকার সমপরিমাণ কিস্তিই নেয়া হবে ওই ব্যক্তির কাছ থেকে। অর্থাৎ সার বিক্রি করেই ঋণের টাকা পরিশোধ করতে পারবে যে কেউ। প্ল্যান্টের সাইজ অনুযায়ী কী পরিমাণ জৈব সার বিক্রি করা সম্ভব তা থেকেই নির্ধারণ হবে ঋণের কিস্তি।
×