ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

পর্যালোচনা সভায় মূল প্রবন্ধে অভিযোগ

সামাজিক সুরক্ষায় পুরো অর্থ ব্যয় না হওয়ায় কাক্সিক্ষত ফল মেলে না

প্রকাশিত: ০৫:৩৪, ৩ অক্টোবর ২০১৬

সামাজিক সুরক্ষায় পুরো অর্থ ব্যয় না হওয়ায় কাক্সিক্ষত ফল মেলে না

স্টাফ রিপোর্টার ॥ সামাজিক সুরক্ষায় সরকার তার প্রতিশ্রুত অর্থের পুরোটা ব্যয় করছে না। বছরপ্রতি জিডিপির ২ শতাংশ ব্যয় করার কথা থাকলেও এ খাতে সরকার মাত্র শূন্য দশমিক ৩৭ শতাংশ অর্থ ব্যয় করছে। ফলে দরিদ্র ও অতিদরিদ্র জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়নে কাক্সিক্ষত ফল আসছে না। রবিবার রাজধানীর বিআইআইএসএস অডিটরিয়ামে ‘বাংলাদেশে অভিযোজিত সামাজিক সুরক্ষা পরিধি: প্রাতিষ্ঠানিক ও ব্যয়ের নীতি পর্যালোচনা’ শীর্ষক আলোচনা সভায় উপস্থাপিত মূল প্রবন্ধে এমন অভিযোগ করা হয়েছে। ইউএনডিপি বাংলাদেশ ও বেসরকারী সংস্থা উন্নয়ন সমন্বয় যৌথভাবে ওই সভার আয়োজন করে। সভায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল এ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজের (বিআইআইএসএস) সিনিয়র রিসার্চ ফেলো ড. মাহফুজ কবির। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর এক তথ্য উল্লেখ করে তিনি বলেন, দেশে ২৪ দশমিক ৮ শতাংশ জনগোষ্ঠী দরিদ্র। এখনও ১৩ শতাংশ মানুষ অতিদরিদ্র। আর ২৪ দশমিক ৪৩ শতাংশ পরিবার কোন না কোনভাবে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে প্রভাবিত। সামাজিক সুরক্ষা খাতে দেশে অনেক সাফল্য এলেও সরকার তার প্রতিশ্রুত অর্থের পুরোটা ব্যয় করছে না উল্লেখ করে মাহফুজ কবির বলেন, সামাজিক সুরক্ষা খাতে প্রতিবছর জিডিপির ২ শতাংশ ব্যয় করার কথা। এক্ষেত্রে সরকার তার প্রতিশ্রুতি রক্ষা করছে না। অবসর ভাতা ও উন্নয়ন প্রকল্প বাদে সামাজিক সুরক্ষা বাজেটেÑ সরকার প্রকৃত ব্যয়ের চেয়ে জিডিপির ১ দশমিক ৫ শতাংশ কম ব্যয় করছে। তিনি আরও বলেন, এখাতে ব্যয় হচ্ছে জিডিপি’র শূন্য দশমিক ৩৭ শতাংশ। অথচ জিডিপির ২ শতাংশ ব্যয় করার কথা ছিল। সুতরাং সরকারের প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী এখাতে আরও ব্যয় বাড়ানো উচিত। প্রবন্ধে লিঙ্গ ও আয় বৈষম্য দূর করতে সামাজিক সুরক্ষায় জাতীয় দুর্যোগ, ব্যবস্থাপনা আইন, জাতীয় খাদ্য নীতি, জাতীয় কৃষি নীতি, জাতীয় নারী উন্নয়ন নীতি, জাতীয় শিশু নীতি, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় জাতীয় পরিকল্পনা, জাতীয় সামাজিক সুরক্ষা আইন, সপ্তম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা নিয়ে নতুন করে ভাবনার পরামর্শ দেয়া হয়। আলোচনায় অংশ নিয়ে ইউএনডিপি’র সহকারী কান্ট্রি ডিরেক্টর খুরশিদ আলম বলেন, সামাজিক সুরক্ষায় বাংলাদেশের সফলতা অনেক। এ বছর ইলিশ ভাল হয়েছে, এটা কিন্তু সামাজিক সুরক্ষার ফসল। তবে আমরা যে টাকা ব্যবহার করছি তার সর্বোচ্চ উপযোগ কিভাবে পাওয়া যায় তা নিয়ে ভাবতে হবে। তিনি বলেন, সামাজিক সুরক্ষায় বিনিয়োগ বাড়াতে হবে। একই সঙ্গে ওই অর্থের সর্বোচ্চ উপযোগী প্রাপ্তিও নিশ্চিত করতে হবে। তিনি আরও বলেন, নদী ভাঙ্গন রোধে বালু ফেলে ভাঙ্গন রোধে চেষ্টা করা হয়। কিন্তু সেই বালু নদীর পানিতে ভেসে যায়। এক্ষেত্রে ইঞ্জিনিয়ারদের করণীয় রয়েছে। এসব নিয়ে কাজ করার সুযোগ রয়েছে। আলোচনায় অংশ নিয়ে বক্তারা বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবকে আরও প্রসারিতভাবে চিন্তা করতে হবে। এক্ষেত্রে প্রচলিত প্রোগ্রামের বাইরে ভিন্ন কোন প্রোগ্রাম নিয়ে ভাবতে হবে, যাতে ক্ষতিগ্রস্তরা উপকৃত হয়। বর্তমানে প্রযুক্তিবান্ধব সামাজিক সুরক্ষা প্রকল্প গ্রহণ করা যেতে পারে। তারা বলেন, সামাজিক সুরক্ষায় সরকারের দায়বদ্ধতা রয়েছে। দেশে দরিদ্রের হার কমছে। তবে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে দরিদ্র ও অতি দরিদ্ররাই বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। দুর্যোগ প্রবণ অঞ্চলে ফুড ব্যাংক, ওয়াটার ব্যাংক গঠন করা আবশ্যক। এতে শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন ইউএনডিপির সহকারী কান্ট্রি ডিরেক্টর খুরশিদ আলম। ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট ফর এনভায়রনমেন্ট এ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের সিনিয়র ফেলো ড. সলিমুল হকের সভাপতিত্বে আলোচনায় অংশ নেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদফতরের মহাপরিচালক রিয়াজ আহমেদ, মহিলা বিষয়ক অধিদফতরের মহাপরিচালক সাহিন আহমেদ চৌধুরী, ইস্ট ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. এ কে এনামুল হক ও একশন এইডের কান্ট্রি ডিরেক্টর ফারাহ কবির।
×