ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

পর্যটনের সম্ভাবনাময় এ প্রকল্পের প্রাক্কলিত ব্যয় ৩১৬ কোটি টাকা, কাল একনেকে উঠছে

নেত্রকোনার ৩৭ কিমি রাস্তা জাতীয় মহাসড়কে যুক্ত হচ্ছে

প্রকাশিত: ০৫:৩৩, ৩ অক্টোবর ২০১৬

নেত্রকোনার ৩৭ কিমি রাস্তা জাতীয় মহাসড়কে যুক্ত হচ্ছে

আনোয়ার রোজেন ॥ জাতীয় মহাসড়কে যুক্ত হচ্ছে পর্যটনে সম্ভাবনাময় জেলা নেত্রকোনার প্রায় ৩৭ কিমি আঞ্চলিক সড়ক। এজন্য প্রায় ৩১৬ কোটি টাকা ব্যয়ের একটি প্রকল্প হাতে নিয়েছে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়। প্রকল্পের আওতায় নেত্রকোনার পূর্বধলা উপজেলার শ্যামগঞ্জ থেকে দুর্গাপুর উপজেলার বিরিশিরি পর্যন্ত সড়কটি জাতীয় মহাসড়কমানে উন্নীত করা হবে। দুর্গাপুর-বিরিশিরি-পূর্বধলা হয়ে শ্যামগঞ্জে এসে এটি মিলিত হবে নেত্রকোনা-ঢাকা মহাসড়কের মূল অংশের সঙ্গে। ফলে ঢাকা থেকে মাত্র চার ঘণ্টায় (স্বাভাবিক অবস্থায়) ভারতীয় সীমান্তের কাছে আদিবাসী ও পর্যটনসমৃদ্ধ এসব এলাকায় যাতায়াত করা যাবে। প্রস্তাবিত সড়কটি বিরিশিরি-বিজয়পুর স্থলবন্দর সড়ক ও আন্তঃজেলা সীমান্ত সড়কের সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করেছে। মহাসড়কমানে উন্নীত হলে এটির বর্তমান বাণিজ্যিক ব্যবহার আরও বাড়বে, যা সামগ্রিকভাবে দেশের আর্থ-সামাজিক অবস্থার উন্নয়নসহ দারিদ্র্য দূরীকরণে সহায়ক হবে। ‘শ্যামগঞ্জ-জারিয়া-বিরিশিরি-দুর্গাপুর জেলা মহাসড়ককে জাতীয় মহাসড়কমানে উন্নয়ন’ শীর্ষক এ প্রকল্পটি চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য আগামীকাল মঙ্গলবার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় উপস্থাপন করার কথা রয়েছে। অনুমোদন পেলে ২০২০ সালের জুনের মধ্যে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে সড়ক ও জনপথ অধিদফতর (সওজ)। পরিকল্পনা কমিশন এবং সওজ সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। সূত্র জানায়, প্রকল্পটি চলতি অর্থবছরের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচীতে (এডিপি) বরাদ্দহীনভাবে অননুমোদিত নতুন প্রকল্প তালিকায় অন্তর্ভুক্ত নেই। তবে জরুরী ও জনগুরুত্বপূর্ণ বিবেচনায় প্রকল্পটি অনুমোদনের সুপারিশ করা হয়েছে। এ বিষয়ে পরিকল্পনা কমিশনের ভৌত অবকাঠামো বিভাগের সদস্য খোরশেদ আলম চৌধুরী মতামত দিতে গিয়ে বলেন, প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে শ্যামগঞ্জ-জারিয়া-বিরিশিরি-দুর্গাপুর জেলা সড়কটি জাতীয় মহাসড়কমানে উন্নয়নের মাধ্যমে নেত্রকোনা জেলার দুর্গাপুর ও পূর্বধলা উপজেলার সঙ্গে ঢাকা জেলার বিদ্যমান সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নততর হবে এবং প্রকল্প এলাকার জনসাধারণের আর্থ-সামাজিক অবস্থার উন্নয়ন হবে। এছাড়া সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় যে আড়াই হাজার কিলোমিটার সড়ক উন্নয়নের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে, প্রকল্পটি তার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। এসব বিবেচনায় প্রকল্পটি অনুমোদন করা যেতে পারে। সূত্র জানায়, নেত্রকোনা জেলার সীমান্তবর্তী দুর্গাপুর, পূর্বধলা, কলমাকান্দা এবং ময়মনসিংহ জেলার ধোবাউড়া উপজেলার লাখ লাখ মানুষের দেশের বিভিন্ন স্থানে চলাচলের একমাত্র রাস্তা এটি। জেলার ভারতীয় সীমান্তবর্তী গারো পাহাড় পরিবেষ্টিত দুর্গাপুর হচ্ছে প্রাকৃতিক সৌর্ন্দযের অপূর্ব লীলাভূমি ও প্রাকৃতিক সম্পদে ভরপুর। দুর্গাপুর উপজেলার বিজয়পুরে রয়েছে দেশের একমাত্র চিনামাটির খনি। রয়েছে বিরিশিরি ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী কালচারাল একাডেমি জাদুঘর। এছাড়া রয়েছে কাচশিল্পের অপরিহার্য উপাদান সিলিকন, জ্বালানি কয়লা, সোমেশ্বরী ও কংস নদের অফুরন্ত মোটা ও চিকন বালু। গুরুত্বপূর্ণ এ সড়ক দিয়ে প্রতিদিন ৫-৭শ’ ট্রাক বালু, পাথর, কয়লা, চিনামাটিবোঝাই করে দেশের বিভিন্ন স্থানে যাতায়াত করে। পাহাড়-নদীর সম্মিলিত চোখজুড়ানো সৌন্দর্য দেখার জন্য প্রতি বছর দেশ-বিদেশের হাজার হাজার পর্যটক এই এলাকায় আসেন। তবে অনেক বিদেশী পর্যটক দেখতে এসে মাঝপথ থেকে ফিরে যান। বিদ্যমান বেহাল রাস্তা এর মূল কারণ। গত ঈদের ছুটিতে বন্ধুদের নিয়ে ঢাকা থেকে বাইসাইকেলে বিরিশিরি এসেছিলেন পর্যটক আসিফুর রহমান। জনকণ্ঠকে তিনি বলেন, নেত্রকোনার প্রচুর পর্যটন সম্ভাবনা রয়েছে। কিন্তু বিদ্যমান রাস্তা রেখে এই এলাকার পর্যটন বিকাশ সম্ভব নয়। এটি মহাসড়কে উন্নীত করলে কিংবা সংস্কার করলে দেশী পর্যটকের সংখ্যাও বহুগুণ বেড়ে যাবে। সওজ সূত্রে জানা গেছে, ২০১২-১৩ অর্থবছরে সড়কটি সংস্কারের উদ্যোগ নেয়া হয়।
×