ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদে তথ্য

তামিম চৌধুরীর মেসেঞ্জার হিসেবে কাজ করত কামরান

প্রকাশিত: ০৫:২৮, ৩ অক্টোবর ২০১৬

তামিম চৌধুরীর মেসেঞ্জার হিসেবে কাজ করত কামরান

শংকর কুমার দে ॥ গুলশান হলি আর্টিজান রেস্তরাঁয় হামলার আগে আবদুল করিম ওরফে তানভীর কাদেরীর ভাড়া করা বসুন্ধরার বাসাতে মাস্টারমাইন্ড তামিম আহমেদ চৌধুরীর সঙ্গে অবস্থান করেছে জঙ্গী সালাউদ্দিন কামরান। গুলশান হামলার রাতেই বসুন্ধরা থেকে তামিম চৌধুরীর সঙ্গে সে চলে যায় কল্যাণপুরের জঙ্গী আস্তানায়। সে ছিল তামিম চৌধুরীর খুবই ঘনিষ্ঠ ও বিশ্বস্ত। নারায়ণগঞ্জের পাইকপাড়ার জঙ্গী আস্তানা থেকে অন্য এক জঙ্গী আস্তানায় তামিম চৌধুরীর জঙ্গীসংক্রান্ত খবর পৌঁছাতে যাওয়ার কারণেই সেদিন পুলিশ অভিযান থেকে বেঁচে যায় সে। জঙ্গী সংগঠন নব্য জেএমবির জঙ্গীরা কখন কোথায় কিভাবে হামলা চালাবে- তামিম চৌধুরীর কাছ থেকে ম্যাসেঞ্জার হিসেবে সেই খবর পৌঁছে দেয়াই ছিল তার কাজ। টঙ্গী থেকে গ্রেফতারের পর ছয় দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদে এ ধরনের তথ্য দিয়েছে জঙ্গী সালাউদ্দিন কামরান। তাকে হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিট কর্মকর্তারা। তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ খবর জানা গেছে। তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, নব্য জেএমবির শীর্ষ নেতাদের গোপনীয় নির্দেশনা মাঠপর্যায়ের জঙ্গীদের কাছে পৌঁছে দেয়ার দায়িত্ব পালন করত সালাউদ্দিন কামরান। গুলশান ও শোলাকিয়ায় জঙ্গী হামলার পর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চলমান জঙ্গীবিরোধী অভিযানে নারায়ণগঞ্জের পাইকপাড়ার জঙ্গী আস্তানা থেকে সৌভাগ্যক্রমে বেঁচে যায় সে। কারণ তামিম চৌধুরীর বার্তা নিয়ে সে অন্য জঙ্গী আস্তানায় যাওয়ার কারণে পুলিশ অভিযানের দিন রক্ষা পেতে সক্ষম হয়। মাঠে থাকা জঙ্গীদের প্রতি তামিম চৌধুরীর কাছ থেকে যখন যে দির্দেশনা আসত ওই খবরগুলো সালাউদ্দিনের মাধ্যমেই জানতে পারত জঙ্গীরা। তামিম চৌধুরী নারায়ণগঞ্জের জঙ্গী আস্তানায় নিহত হওয়ার আগপর্যন্ত সালাউদ্দিনকে সঙ্গে নিয়েই চলাফেরা করত। নারায়ণগঞ্জের পাইকপাড়ার জঙ্গী আস্তানায় পুলিশ অভিযানে তামিম চৌধুরী নিহত হওয়ার পর আত্মগোপনে চলে যায় বলে জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছে সালাউদ্দিন কামরান। তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, গুলশান ও শোলাকিয়ায় হামলার পর বিভিন্ন অভিযানে গ্রেফতার জঙ্গীদের কাছ থেকেই সালাউদ্দিন কামরান সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পায় গোয়েন্দারা। তারপর থেকেই তাকে গ্রেফতারের জন্য খোঁজ করা হয়। গত ১ মাসের বেশি সময় ধরে চেষ্টার পর শেষপর্যন্ত তাকে গত বুধবার টঙ্গীর স্টেশন এলাকা থেকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয় পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিট। পরদিন বৃহস্পতিবার সালাউদ্দিনকে আদালতে হাজির করে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ৬ দিনের রিমান্ড হেফাজতে নেয় তদন্তকারীরা। সন্ত্রাসবিরোধী আইনে করা মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে সালাউদ্দিন কামরানকে। তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, গুলশান ও শোলাকিয়ায় হামলার পর আত্মগোপনে চলে যাওয়া তামিম চৌধুরীসহ শীর্ষ জঙ্গীদের মধ্যে সালাউদ্দিনের মাধ্যমে একে অপরের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করা হতো। গুলশান ও শোলাকিয়ায় হামলার পর কল্যাণপুরে জঙ্গী আস্তানায় প্রশিক্ষণ ও পরিকল্পনায়ও ছিল সালাউদ্দিন কামরান। কল্যাণপুরের জঙ্গী আস্তানায় অভিযানের আগে সেখান থেকে তামিম চৌধুরী সালাউদ্দিনকে সঙ্গে নিয়ে চলে যায় নারায়ণগঞ্জের পাইকপাড়ার জঙ্গী আস্তানায়। কল্যাণপুর জঙ্গী আস্তানায় পুলিশ অভিযানে ৯ জঙ্গী নিহত হলেও গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত অবস্থায় রাকিবুল হাসান রিগ্যানকে আটক করার পর তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করেই মূলত তামিম চৌধুরী ও সালাউদ্দিন সম্পর্কে তথ্য পায় গোয়েন্দারা। কল্যাণপুরে নিহত জঙ্গীদের সঙ্গেও সালাউদ্দিনের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল বলে জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছে সে। রাকিবুল হাসান রিগ্যানকেও ছয় দিনের রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিট। সূত্র জানায়, রাকিবুল হাসান রিগ্যানকে জিজ্ঞাসাবাদ করে সালাউদ্দিনের বিষয়ে তথ্য জানতে গিয়েই তামিম চৌধুরীর সম্পর্কে তথ্য পায় গোয়েন্দারা। এরপরই পুলিশ নারায়ণগঞ্জের পাইকপাড়ায় অভিযান চালালে তামিম আহমেদ চৌধুরীসহ ৩ জঙ্গী নিহত হয়। নারায়ণগঞ্জের পাইকপাড়ায় পুলিশের অভিযানের আগেই জঙ্গীদের কাছে খবর পৌঁছানোর জন্য চলে আসে সালাউদ্দিন। তামিম চৌধুরীর মারা যাওয়ার খবর পাওয়ার পর সে আত্মগোপনে চলে যাওয়ার পর টঙ্গীতে গ্রেফতার হয় বলে জিজ্ঞাসাবাদে জানায় সালাউদ্দিন। টাঙ্গাইলের ঘাটাইল উপজেলার শামসুল ইসলাম তালুকদারের ছেলে সালাউদ্দিন কামরান গত এপ্রিল মাস থেকে পরিবারের সঙ্গে বিচ্ছিন্ন ছিল। এর আগে থেকেই সে নব্যধারার জেএমবির কার্যক্রমের সঙ্গে জড়িত হয়। কল্যাণপুরে জঙ্গী আস্তানায় নিহত জঙ্গী আবু হাকিম নাঈমের মাধ্যমে সে নব্যধারার জেএমবির দাওয়াত পায়। এরপর গুলশান হামলার মাস্টারমাইন্ড তামিমের সঙ্গে সাক্ষাত হলে তার আনুগত্য দেখে তামিম চৌধুরী সালাউদ্দিন কামরানকে নিজের সঙ্গেই রেখে দেয়। তামিম চৌধুরী যখন যেখানে যেত সেখানে সালাউদ্দিনকে সঙ্গে নিয়ে যেত। এর ফলে সালাউদ্দিন নব্য জেএমবির সবকিছু জানতে পারে। এসব বিষয়েই সালাউদ্দিনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে বলে জানা গেছে। জিজ্ঞাসাবাদে সালাউদ্দিন বলেছে, নারায়ণগঞ্জের পাইকপাড়ায় জঙ্গী আস্তানায় তামিম চৌধুরীর সঙ্গেই ছিল সে। পুলিশ অভিযানের আগের দিনই তামিম চৌধুরীর কাছ থেকে জঙ্গীদের খবর পৌঁছানোর জন্য চলে আসে সে। পুলিশ অভিযানের পরদিনই তার নারায়ণগঞ্জের পাইকপাড়ায় ফেরার কথা ছিল। তারপর থেকে আত্মগোপনে ছিল সে। পলাতক শীর্ষ জঙ্গী নুরুল ইসলাম মারজান, বাশারুজ্জামান চকলেট, রাজীব গান্ধীসহ আরও অনেক জঙ্গীর সঙ্গে যোগাযোগ ছিল তার। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের উপকমিশনার (মিডিয়া) মাসুদুর রহমান বলেছেন, নব্য জেএমবির বেশিরভাগ নেতাকর্মীই চেনা সালাউদ্দিন কামরানের। সালাউদ্দিন কামরানকে ৬ দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদে তার কাছ থেকে নব্য জেএমবির জঙ্গী ও সাংগঠনিক কার্যক্রমের তথ্য জানার চেষ্টা চলছে। মাসুদুর রহমান জানান, কল্যাণপুর জঙ্গী আস্তানা থেকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় গ্রেফতার করা রাকিবুল হাসান রিগ্যানকে গুলশানের হলি আর্টিজান রেস্তরাঁর মামলায় ৬ দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া গেছে।
×