ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

কারিগরি জ্ঞানে প্রশিক্ষিত দক্ষ জনবল গড়ে তুলতে হবে ॥ কৃষিমন্ত্রী

প্রকাশিত: ০৫:২৮, ৩ অক্টোবর ২০১৬

কারিগরি জ্ঞানে প্রশিক্ষিত দক্ষ জনবল গড়ে তুলতে হবে ॥ কৃষিমন্ত্রী

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধির জন্য মেধাশক্তির সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। তাদের মতে, কারিগরি জ্ঞানে প্রশিক্ষিত ও দক্ষ জনবল গড়ে তোলার মাধ্যমে শিল্প, সেবা, কৃষিসহ সকল খাতে কাক্সিক্ষত উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি করা সম্ভব। শুধু তাই নয়, বর্তমানে প্রতি বছর ৬০০ কোটি টাকা বিদেশী দক্ষ জনশক্তির জন্য ব্যয় হচ্ছে। বিশে^র উন্নত দেশগুলোতে যেখানে শতকরা ৬০ থেকে ৭০ ভাগ শিক্ষার্থী কারিগরি শিক্ষায় শিক্ষিত হচ্ছে, সেখানে বাংলাদেশে এ সংখ্যা ১০ শতাংশের নিচে। এক্ষেত্রে দেশে কারিগরি দক্ষতা উন্নয়ন জরুরী হয়ে পড়ছে। দেশে প্রতি বছর ২০ লাখ শিক্ষিত জনগোষ্ঠী তৈরি হচ্ছে। তাদের পাঠ্যক্রমে সৃজনশীলতা, কর্মমুখী ও প্রযুক্তিগত শিক্ষার বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। জাতীয় উৎপাদনশীলতা দিবস উপলক্ষে ‘টেকসই প্রবৃদ্ধির জন্য উৎপাদনশীলতা অপরিহার্য’ শীর্ষক সেমিনারে বক্তারা এসব কথা বলেন। রবিবার রাজধানীর মতিঝিলে এফবিসিসিআই মিলনায়তনে শিল্প মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন ন্যাশনাল প্রোডাক্টিভিটি অর্গানাইজেশন (এনপিও) এবং এফবিসিসিআই যৌথভাবে এ সেমিনারের আয়োজন করে। কৃষিমন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরী এতে প্রধান অতিথি ছিলেন। শিল্প মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব সুষেণ চন্দ্র দাসের সভাপতিত্বে সেমিনারে স্বাগত বক্তব্য রাখেন এনপিওর পরিচালক অজিত কুমার পাল। এতে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ম্যানেজমেন্টের (বিআইএম) সিনিয়র ম্যানেজমেন্ট কাউন্সিলর ইঞ্জিনিয়ার এএনএম শহিদুল্লাহ। সেমিনারে কৃষি সচিব মোহাম্মদ মঈনউদ্দীন আবদুল্লাহ, ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি আবদুল মাতলুব আহমাদ, জাতীয় উৎপাদনশীলতা ও মজুরি কমিশনের চেয়ারম্যান মোঃ নজরুল ইসলাম খান, এফবিসিসিআইয়ের ভাইস প্রেসিডেন্ট মাহবুবুল আলম আলোচনায় অংশ নেন। প্রধান অতিথির বক্তব্যে কৃষিমন্ত্রী বলেন, উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধির জন্য মেধাশক্তির সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করা প্রয়োজন। সরকার মেধাসম্পদের উৎকর্ষতা সাধনে কারিগরি জ্ঞানসমৃদ্ধ শিক্ষার প্রসার এবং গবেষণা ও উন্নয়ন খাতের বিকাশে কাজ করছে। প্রতি উপজেলায় একটি করে কারিগরি স্কুল ও কলেজ গড়ে তোলার কাজ চলছে। তিনি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে শুধুমাত্র সাধারণ শিক্ষায় শিক্ষিত জনবল তৈরি না করে কারিগরি জ্ঞানে প্রশিক্ষিত ও দক্ষ জনবল গড়ে তোলার আহ্বান জানান। কৃষিমন্ত্রী বলেন, শিল্পে এখনও দক্ষ লোক বিদেশ থেকে আনতে হয়। ভবিষ্যতে বিদেশ থেকে দক্ষ লোক আনার বিষয়টি কমিয়ে আনতে সরকার কাজ করছে। কৃষি খাতে উৎপাদনশীলতা বাড়াতে তিনি হাল্কা-পাতলা ও শক্ত কৃষি যন্ত্রপাতি উৎপাদন ও আমদানির পরামর্শ দেন। বেগম মতিয়া চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশ এখন আর ক্ষুধা ও দারিদ্র্যের দেশ নয়। এ দেশ মাথা উঁচু করে এগিয়ে যাচ্ছে। এছাড়া ২০২১ সালের মধ্যে মধ্যম ও ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশে পরিণত হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন। এর আগে কৃষিমন্ত্রী জাতীয় উৎপাদনশীলতা দিবস ২০১৬-এর স্মরণিকার মোড়ক উন্মোচন করেন। মোঃ মঈনউদ্দিন আবদুল্লাহ বলেন, বিশ্বায়নের যুগে টিকে থাকার জন্য উৎপাদনশীলতা বাড়াতে হবে। এজন্য নতুন নতুন উদ্ভাবন ও কারিগরি প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষতা উন্নয়ন দরকার। প্রধানমন্ত্রীর ভিশন অনুযায়ী এগিয়ে যেতে উৎপাদনশীলতা অপরিহার্য। তিনি বলেন, উৎপাদন বিবেচনায় কৃষি সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে। এটা ধরে রাখতে উৎপাদনশীলতা বাড়াতে হবে। আবদুল মাতলুব আহমাদ বলেন, উৎপাদনশীলতার মূলে হচ্ছে দক্ষতার উন্নয়ন করা। কারিগরি দক্ষতা উন্নয়ন হলে বিদেশ থেকে জনবল আনতে হবে না। এতে ব্যয় কমে মুনাফা বেশি হবে। বর্তমানে প্রতি বছর ৬০০ কোটি টাকা বিদেশী দক্ষ জনশক্তির জন্য ব্যয় হচ্ছে। ব্যবস্থাপক পদে দুই হাজার আবেদন এলেও কারিগরি পদে আবেদন পাওয়া যায় না। এদিকে, জাতীয় উৎপাদনশীলতা দিবস উপলক্ষে শিল্প মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন ন্যাশানাল প্রোডাক্টিভিটি অর্গানাইজেশন (এনপিও) রবিবার সকালে এক বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রার আয়োজন করে। এটি রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তন গেট থেকে শুরু হয়ে জাতীয় প্রেসক্লাব ও পল্টন মোড় ঘুরে দৈনিক বাংলা হয়ে শিল্প মন্ত্রণালয়ে এসে শেষ হয়। শিল্প মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব সুষেণ চন্দ্র দাসের নেতৃত্বে শোভাযাত্রায় শিল্প মন্ত্রণালয় এবং এর আওতাধীন বিভিন্ন সেক্টর-কর্পোরেশন ও সংস্থার উর্ধতন কর্মকর্তা, এপিও সোসাইটি ফর বাংলাদেশ, নাসিব, ট্রেডবডি ও উদ্যোক্তা সংগঠনের প্রতিনিধিসহ শিল্পকারখানার মালিক, শ্রমিক ও কর্মচারীরা অংশগ্রহণ করেন। টেকসই উন্নয়ন ও উৎপাদনশীলতা শীর্ষক আলোচনা সভা ॥ বিকেলে মতিঝিলের এনপিওর সম্মেলনকক্ষে ‘টেকসই উন্নয়ন ও উৎপাদনশীলতা’ শীর্ষক এক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। এনপিওর পরিচালক অজিত কুমার পালের সঞ্চালনায় এতে শিল্পোদ্যোক্তা, ব্যবসায়ী, ব্যাংকার, প্রযুক্তিবিদসহ উৎপাদনশীলতার সঙ্গে সম্পৃক্ত প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা আলোচনায় অংশ নেন। অনুষ্ঠানে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য বা এসডিজি অর্জনে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান, তথ্যপ্রযুক্তি, হাসপাতাল ও প্রক্রিয়াজতকরণ খাদ্য শিল্প খাতে উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধির ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়।
×