ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

স্মার্টকার্ড যুগে দেশ, উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী

প্রকাশিত: ০৫:২২, ৩ অক্টোবর ২০১৬

স্মার্টকার্ড যুগে  দেশ, উদ্বোধন করলেন  প্রধানমন্ত্রী

বিডিনিউজ ॥ স্মার্টকার্ড যুগে পদার্পণ করা বাংলাদেশে নাগরিকদের তথ্যের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে নির্বাচন কমিশনের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। রবিবার স্মার্ট জাতীয় পরিচয়পত্র বিতরণ কার্যক্রমের উদ্বোধন করে তিনি বলেন, ‘আমি নির্বাচন কমিশনকে অনুরোধ করব, যত ডাটা নেয়া হচ্ছে, তার নিরাপত্তা নিশ্চিত করা একান্তভাবে প্রয়োজন।’ এই স্মার্টকার্ড নেয়ার সময় পুরনো লেমিনেটেড জাতীয় পরিচয়পত্র ফেরত দিতে হবে। দিতে হবে ১০ আঙুলের ছাপ ও চোখের আইরিশের প্রতিচ্ছবি। দশ ডিজিটের এই কার্ডে সংযুক্ত চিপে নাগরিকদের ৩১ তথ্য সংরক্ষিত থাকবে। স্মার্টকার্ড যাতে জালিয়াতি না হয়, সেজন্য সচেতন থাকার তাগিদ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘যত ধরনের নিরাপত্তা দরকার কোনভাবেই যেন কেউ এর অপব্যবহার করতে না পারে।’ তিনি বলেন, প্রতিটি প্রকল্পের ডিজিটালাইজেশনের ক্ষেত্রে অবশ্যই ফায়ারওয়াল রাখতে হবে। এজন্য প্রয়োজনীয় প্রযুক্তি ব্যবহার করতে হবে। সকালে রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে অনুষ্ঠানস্থলে উপস্থিত হয়েই প্রধানমন্ত্রী আইরিশের প্রতিচ্ছবি এবং দশ আঙুলের ছাপ দেন। পরে পুরনো ভোটার আইডি কার্ডটি ফেরত দেন তিনি। এরপর প্রধান নির্বাচন কমিশনার প্রধানমন্ত্রীর হাতে তার স্মার্টকার্ডটি তুলে দেন। রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদের স্মার্টকার্ডটি তাকে হস্তান্তর করার জন্য প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী রকিবউদ্দীন আহমদের হাতে তুলে দেন প্রধানমন্ত্রী। পরে বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের সদস্যদের মধ্যে স্মার্টকার্ড বিতরণ করা হয়। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সকলকে এই পরিচয়পত্র দেয়া সম্ভব হলে সরকারী সেবাপ্রাপ্তিতে দেশে একটা আমূল পরিবর্তন আসবে।’ এর ফলে প্রতারণা ও জালিয়াতি কমে আসবে আশা প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘অপরাধ করলে কেউ আর পার পাবে না।’ বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্র্তুজা স্মার্টকার্ডের ব্র্যান্ড এ্যাম্বাসেডর। এই স্মার্টকার্ড ভবিষ্যতে ট্র্যাভেল ডকুমেন্ট হিসেবেও ব্যবহার করা যাবে জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, নির্বাচন কমিশন দশ কোটির বেশি নাগরিকের তথ্য-উপাত্ত নিয়ে যে বায়োমেট্রিক ডেটাবেইস তৈরি করেছে, তা ইতোমধ্যে ‘নির্ভরযোগ্য’ হিসেবে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ‘গ্রহণযোগ্যতা’ পেয়েছে। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে এই ডেটাবেইস ব্যবহারের সুযোগ দেয়ার কথা জানিয়ে সরকার প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘পাসপোর্ট তৈরিতে এই সুবিধা ব্যবহার করতে পারছে এবং ব্যাংকে অর্থ লেনদেনে গ্রাহকদের পরিচয় নিশ্চিত হওয়া যাচ্ছে।’ ডিজিটাল বাংলাদেশ আজ বাস্তব ॥ ২০০৬ সালে ছবিসহ ভোটার তালিকার জন্য আওয়ামী লীগের দাবির কথা মনে করিয়ে দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরাই দাবি করেছিলাম ছবিসহ ভোটার তালিকা প্রণয়ন করার। যদিও সে দাবি উপেক্ষিত হয়। কিন্তু এটা প্রমাণ হয়েছিল, বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার তাদের ক্ষমতার সময়ে যে ভোটার তালিকা করে, তাতে এক কোটি ৩৯ লাখ ভুয়া ভোটার যুক্ত ছিল।’ পরে সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়ে ছবিসহ ভোটার তালিকা তৈরি করে নাগরিকদের মধ্যে জাতীয় পরিচয়পত্র বিতরণ শুরু হয়। এই পরিচয়পত্রের ব্যবহার কেবল ভোটের মধ্যে সীমাবদ্ধ না রেখে নাগরিক সেবার ক্ষেত্রেও যাতে কাজে লাগানো যায়, আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের পর সেই কাজে হাত দেয় বলে জানান শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘জাতীয় পরিচয়পত্র থাকলে নাগরিক হিসেবে সঠিক সেবাটা পেতে পারে, সেটাই আমাদের লক্ষ্য ছিল।’ ২০০৮ সালের নির্বাচনী ইশতেহারে ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ কর্মসূচী ঘোষণার কথা মনে করিয়ে দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি মনে করি, আজ যে স্মার্টকার্ড আমরা প্রদান করলাম, আমাদের সে অঙ্গীকারই আমরা রক্ষা করলাম। ডিজিটাল বাংলাদেশ আজকে বাস্তব। সেটাই প্রমাণিত হলো।’ স্মার্টকার্ড যুগে বাংলাদেশ ॥ আইরিশের প্রতিচ্ছবি এবং দশ আঙুলের ছাপ দিয়ে নিজের ‘স্মার্টকার্ড’ নেয়ার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের নাগরকিদের হাতে উন্নতমানের জাতীয় পরিচয়পত্র পৌঁছে দেয়ার কার্যক্রম উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। রবিবার রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে স্মার্টকার্ড বিতরণ কার্যক্রমের উদ্বোধন করে তিনি বলেছেন, ‘আমাদের জাতীয় জীবনে আজ এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা হতে যাচ্ছে।’ দেশের প্রায় ১০ কোটি ভোটারের মধ্যে মোটামুটি নয় কোটির হাতে লেমিনেটেড জাতীয় পরিচয়পত্র রয়েছে। বিভিন্ন নাগরিক সুবিধা পেতে এই জাতীয় পরিচয়পত্রের অনুলিপি জমা দেয়ার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। তাদের সেই পুরনো পরিচয়পত্র ফিরিয়ে নিয়ে ২০১৭ সালের ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে সব নাগরিকের হাতে স্মার্টকার্ড বিতরণের লক্ষ্য ঠিক করেছে নির্বাচন কমিশন। প্রধানমন্ত্রীর উদ্বোধনের পর সোমবার থেকে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনে এবং প্রত্যন্ত এলাকা কুড়িগ্রামে এই কার্ড বিতরণ শুরু হবে। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘জাতীয় পরিচয়পত্র যাতে কেবল ভোটারের জন্য নয়, বহুবিধ ব্যবহার যেন হয়, সে সুযোগ সৃষ্টির জন্য আমরা উদ্যোগ নিয়েছি। নাগরিক হিসাবে সঠিক সেবাটা ঠিকমতো নেয়ার জন্য এই পরিচয়পত্র।’ যেভাবে বিতরণ ॥ প্রথম পর্যায়ে ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশন ও কুড়িগ্রাম; দ্বিতীয় পর্যায়ে খুলনা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, বরিশাল, সিলেট, নারায়ণগঞ্জ, কুমিল্লা, রংপুর ও গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন; তৃতীয় পর্যায়ে ৬৪ সদর উপজেলা এবং চতুর্থ পর্যায়ে বাকি সব উপজেলায় দেশজুড়ে স্মার্টকার্ড বিতরণ করা হবে। প্রথমে ঢাকার উত্তরার ১ নম্বর ওয়ার্ডের ৬৩ হাজারেরও বেশি ভোটারের কাছে পরীক্ষামূলকভাবে স্মার্ডকার্ড বিতরণ শুরু হবে। ৩-২২ অক্টোবর পর্যন্ত উত্তরা হাইস্কুল ও কলেজে বিতরণ কাজ চলবে। আর ঢাকা দক্ষিণে রমনা থানার ১৯ নম্বর ওয়ার্ডের ভোটাররা সিদ্ধেশ্বরী গার্লস হাইস্কুল ও কলেজ, ২০ নম্বর ওয়ার্ডের ভোটাররা সেগুনবাগিচা হাইস্কুল এবং ২১ নম্বর ওয়ার্ডের ভোটাররা উদয়ন স্কুল কেন্দ্রে গিয়ে ৩-২৬ অক্টোবর পর্যন্ত স্মার্টকার্ড নিতে পারবেন। যাদের লেমিনেটেড জাতীয় পরিচয় নেই তারা নির্ধারিত সিøপ দিয়ে এনআইডি নম্বর জেনে বিতরণ কেন্দ্রে গেলেই স্মার্টকার্ড দেয়া হবে। নির্ধারিত সময়ে গণমাধ্যমে বিজ্ঞপ্তি দিয়ে এবং মাইকিং, ব্যানার, ফেস্টুন দিয়ে প্রচারের মাধ্যমে বিতরণের দিন তারিখ ও স্থান জানিয়ে দেবে নির্বাচন কমিশন।
×