ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

চীনা ইকোনমিক জোন ও কর্ণফুলী টানেলে বদলে যাবে চট্টগ্রাম

প্রকাশিত: ০৫:২২, ৩ অক্টোবর ২০১৬

চীনা ইকোনমিক জোন ও কর্ণফুলী টানেলে  বদলে যাবে  চট্টগ্রাম

হাসান নাসির, চট্টগ্রাম অফিস ॥ স্বপ্নের কর্ণফুলী টানেল ও আনোয়ারায় চীনা ইকোনমিক জোন বাস্তবায়নের কাজ আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হতে যাচ্ছে আগামী ১৪ অক্টোবর। যৌথভাবে উদ্বোধন করবেন চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিন পিং ও বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বহুল প্রত্যাশিত এই দুই প্রকল্প বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে দক্ষিণ চট্টগ্রামে উন্মোচিত হবে শিল্পায়নের নতুন দ্বার। ৩৭১ শিল্প কারখানায় কর্মসংস্থান হবে অর্ধ লক্ষাধিক মানুষের। আর বাংলাদেশ-চীন দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক উন্নীত হবে নতুন উচ্চতায়। বাংলাদেশ ইকোনমিক জোন অথরিটি (বেজা) সূত্রে জানা যায়, চট্টগ্রামের আনোয়ারায় চীনা ইকোনমিক এ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিয়াল জোনটি হবে বাংলাদেশ ও চীন সরকারের যৌথ অর্থায়নে দেশের প্রথম ‘জি টু জি’ অর্থনৈতিক অঞ্চল। চীনের অর্থায়নে বাস্তবায়িত হবে এই ইন্ডাস্ট্রিয়াল জোন। ৭৭৪ একর জমিতে প্রস্তাবিত এ প্রকল্পে ব্যয় হবে ১৬ হাজার কোটি টাকা, যেখানে চীনের ৭০ ভাগ ও বাংলাদেশের ৩০ ভাগ অংশীদারিত্ব থাকবে। সেখানে গড়ে ওঠা শিল্প কারখানায় কর্মসংস্থান হবে অন্তত ৫৩ হাজার মানুষের। আনোয়ারা এলাকার সংসদ সদস্য ভূমি প্রতিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ রবিবার জনকণ্ঠকে জানান, কর্ণফুলী টানেল ও আনোয়ারায় চীনা ই[জঞঋ নড়ড়শসধৎশ ংঃধৎঃ: }থএড়ইধপশ[জঞঋ নড়ড়শসধৎশ বহফ: }থএড়ইধপশকোনমিক জোন এখন আর জল্পনা-কল্পনার বিষয় নয়। দুই সপ্তাহের মধ্যে বাস্তবে রূপ নিতে যাচ্ছে আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে। চীনা প্রেসিডেন্টের বাংলাদেশ সফরকালেই ভিত্তি স্থাপন হবে বলে জানিয়ে তিনি বলেন, উদ্বোধন প্রকল্প এলাকায় নাকি ভিডিও কনফারেন্সে হবে তা এখনও ঠিক হয়নি। তবে এনিয়ে আর কোন সংশয় নেই। টানেল ও চীনা অর্থনৈতিক জোন পাল্টে দেবে পুরো চট্টগ্রামের চেহারা, যার প্রভাব পড়বে দেশজ অর্থনীতিতে। বর্তমান সরকার আমলে বাংলাদেশ ও চীন অর্থনৈতিক অংশীদারিত্বের বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছে বলে তিনি অভিমত রাখেন। কর্ণফুলী টানেল ও চীনা অর্থনৈতিক জোনকে ঘিরে এখন ব্যাপক প্রাণচাঞ্চল্য চট্টগ্রাম নগর ও দক্ষিণ চট্টগ্রামে। এ টানেলটি হতে যাচ্ছে দেশে কোন নদীর তলদেশে প্রথম সুড়ঙ্গ, যা চট্টগ্রামকে চীনের শিল্প নগরী সাংহাইয়ের আদলে ওয়ান সিটি টু টাউনে পরিণত করবে। নদীর দুই পাশে গড়ে উঠবে শহর। মীরসরাই থেকে শুরু হওয়া মেরিন ড্রাইভ কর্ণফুলী টানেল হয়ে আনোয়ারার ওপর দিয়ে কক্সবাজারের সঙ্গে যুক্ত হবে। এ সড়ক যোগাযোগের ফলে আনোয়ারায় চীনা ইকোনমিক জোন ছাড়াও দক্ষিণ চট্টগ্রামে গড়ে উঠবে অনেক শিল্প কারখানা। সূত্র জানায়, আনোয়ারায় চীনা ইকোনমিক জোনে গড়ে উঠবে তৈরি পোশাক কারখানা, রাসায়নিক ও ফার্মাসিউটিক্যালস, কৃষিনির্ভর কারখানা, রাসায়নিক, যন্ত্রপাতি ও ইলেকট্রনিকস, চিকিৎসা সরঞ্জাম, প্লাস্টিক ও আইটি সংশ্লিষ্ট শিল্প। প্রকল্প বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ইতোমধ্যেই ২৯১ একর খাস জমি বেজাকে হস্তান্তর করেছে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন। আরও ৪৮৪ একর জমি অধিগ্রহণের কাজ একেবারেই শেষ পর্যায়ে। চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, সরকারের এ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে দ্রুততার সঙ্গে খাস জমি হস্তান্তর ও প্রয়োজনীয় ভূমি অধিগ্রহণের কাজ শেষ করা হচ্ছে। যাদের জমি অধিগ্রহণ করা হচ্ছে তাদের যথাযথ মূল্যও পরিশোধের কাজ শেষ পর্যায়ে। এই ইকোনমিক জোন বাস্তবায়নকে স্বাগত জানিয়েছে আনোয়ারার অধিবাসীরা। কারণ সেখানে তাদের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হচ্ছে, লাগছে উন্নয়নের হাওয়া। সমুদ্র বন্দরের সঙ্গে সহজ যোগাযোগের বিষয়টি বিবেচনায় রেখে ওই এলাকাকে বেছে নেয়া হয়েছে ইন্ডাস্ট্রিয়াল জোন বাস্তবায়নের জন্য। অবস্থানগত দিক থেকে শিল্প জোন বাস্তবায়নের জন্য অত্যন্ত অনুকূল আনোয়ারা। ইকোনমিক জোন যেখানে হচ্ছে তা চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ৩৯ কিমি দূরে। শহরের দূরত্ব সেখান থেকে ২৮ কিমি। চট্টগ্রামের রয়েছে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, যার দূরত্ব চীনা ইকোনমিক জোন থেকে ৪৬ কিমি দূরে। টানেল ও সড়ক যোগাযোগ হয়ে গেলে শুধু ওই জোন নয়, পুরো দক্ষিণ চট্টগ্রামে গড়ে উঠবে শিল্পায়ন। বেজা সূত্রে জানা যায়, আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে কাজ শুরু হলে ২০২০ সালের মধ্যে তা শেষ হবে বলে আশা করা হচ্ছে। আনোয়ারায় জাহাজ নির্মাণ শিল্পের জন্যও জায়গা বরাদ্দ থাকবে। বাস্তবায়নকারী সংস্থা চায়না হারবার ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি এককভাবে ১৬ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগে আগ্রহী। বাস্তবায়িত প্রকল্পের ৩০ শতাংশ অংশীদারিত্ব থাকবে বাংলাদেশের। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত বছরের জুন মাসে চীন সফরকালে সে দেশের প্রধানমন্ত্রীকে চট্টগ্রামে এই বিশেষ অর্থনৈতিক ও শিল্পাঞ্চল স্থাপনের প্রস্তাব দেন। চীন সরকার এতে সম্মত হলে বাংলাদেশ ইকোনমিক জোন অথরিটি (বেজা) ও চীনের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের মধ্যে সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষর হয়। এরপরই শুরু হয় প্রকল্প বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া। খাস জমি হস্তান্তর ও ভূমি অধিগ্রহণের কাজও চলতে থাকে দ্রুতগতিতে। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে সরাসরি মনিটরিং করা হয় চীনা অর্থনৈতিক অঞ্চল বাস্তবায়নের কাজ। ফলে এ ক্ষেত্রে কোন ধরনের দীর্ঘসূত্রতা পরিলক্ষিত হয়নি। এদিকে কর্ণফুলী নদীর তলদেশে টানেল নির্মাণের পরিকল্পনাটি প্রথম গ্রহণ করে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (চউক)। সম্ভাব্যতা যাচাই ও স্থান নির্বাচনের কাজটিও সম্পন্ন হয় চউকের তত্ত্বাবধানে। কিন্তু এ ধরনের প্রকল্প সড়ক ও সেতু মন্ত্রণালয়ের অধীনে পড়ে বিধায় বাস্তবায়নের কাজটি বর্তায় এ মন্ত্রণালয়ের ওপর। কর্ণফুলী টানেলকে ঘিরে রয়েছে অনেক স্বপ্ন। চট্টগ্রাম এমনকি সরকারেরও এটি একটি স্বপ্নবিলাসী প্রকল্প। বাংলাদেশের মতো দেশে নদীর তলদেশে টানেল হতে পারে তা এক সময় কল্পনায়ও আসেনি। কিন্তু শেষ পর্যন্ত বর্তমান সরকারের সাহসিকতা ও যথাযথ উদ্যোগে সম্পন্ন হবে দেশের প্রথম টানেল, যা মেরিন ড্রাইভের মাধ্যমে পর্যটন নগরী কক্সবাজারকে সংযুক্ত করবে চট্টগ্রাম তথা সারাদেশের সঙ্গে। এ সড়ক নির্মিত হলে শিল্পায়ন ও নগরায়নের মাধ্যমে পাল্টে যাবে দক্ষিণ চট্টগ্রাম।
×