ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

নাকচ প্রধানমন্ত্রীর ॥ নির্বাচন কমিশন গঠনে বিএনপির সংলাপের প্রস্তাব

প্রকাশিত: ০৫:২০, ৩ অক্টোবর ২০১৬

নাকচ প্রধানমন্ত্রীর ॥ নির্বাচন কমিশন গঠনে বিএনপির সংলাপের  প্রস্তাব

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠনে বিএনপির সঙ্গে সংলাপের সম্ভাবনা কার্যত নাকচ করে দিয়ে বলেছেন, বিএনপি কী ধরনের নির্বাচন কমিশন চায় সেটিই তো স্পষ্ট নয়। তারা এমন কী নির্বাচন কমিশন চায়, যারা তাদের সময়ের মতো এক কোটি ৩১ লাখ ভুয়া ভোটার তালিকায় আনবে। এ ধরনের নির্বাচন কমিশন আর কেউ দেখতে চায় না। তাদের (বিএনপি) পরামর্শ নিলে তো ভুয়া ভোটার তালিকা করে দেবে এমন কমিশন করতে হবে। যারা যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বন্ধ করে দিয়েছে, যারা ক্ষমতায় থাকতে যুদ্ধাপরাধীদের মন্ত্রী-এমপি-উপদেষ্টা বানিয়েছে, তাদের বাংলাদেশে রাজনীতি করার কোন অধিকার নেই জানিয়ে তিনি বলেন, এদের সঙ্গে (বিএনপি-জামায়াত) স্বাধীনতায় বিশ্বাসী দেশের মানুষ কোন সম্পর্ক রাখবে কি-না, তাদেরই ভেবে দেখতে হবে। রবিবার বিকেলে গণভবনে আয়োজিত জনাকীর্ণ সংবাদ সম্মেলনে ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে সৃষ্ট সম্পর্কের টানাপোড়েন ও সংঘাতপূর্ণ অবস্থান প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এটা খুবই উদ্বেগজনক। আমরা চাই না এ নিয়ে কোন উত্তেজনা তৈরি হোক, কোন যুদ্ধ-বিগ্রহ তৈরি হোক। এ রকম কিছু হলে ক্ষতিগ্রস্ত আমরাও হব। আমাদের উন্নয়নের যে অগ্রযাত্রা হয়েছে সেটাও ক্ষতিগ্রস্ত হবে। কাজেই এ ধরনের ঘটনা হোক, এটা আমরা চাই না। তারা (ভারত ও পাকিস্তান) দুই দেশ, দ্বিপক্ষীয়ভাবে নিজেরা বসে সমাধান করুক, এটাই চাই। এ নিয়ে কোন ধরনের সংঘাত হোক এ অঞ্চলে, এটা কাম্য না। আমি এ ব্যাপারে শুধু এটুকুই বলতে পারি। সার্কের ভবিষ্যত সম্পর্কে অপর এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এ নিয়ে আমাদের একলা কিছু বলার নেই। সার্কের আরও ৭ সদস্য আছে। সবাই মিলে যে সিদ্ধান্ত নেবে তা-ই হবে। তবে আমি চাই, দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলো ঐক্যবদ্ধ হয়ে আর্থসামাজিক উন্নয়নে একসঙ্গে কাজ করবে। সম্প্রতি কানাডার গ্লোবাল ফান্ডের পঞ্চম রিপ্লেনিশমেন্ট সম্মেলন এবং নিউইয়র্কে জাতিসংঘের ৭১তম সাধারণ অধিবেশনে যোগদান এবং অর্জিত সাফল্যগুলো দেশবাসীর সামনে তুলে ধরতেই এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। ওই দুই দেশ সফর ছাড়াও দেশের সর্বশেষ রাজনৈতিক পরিস্থিতি, নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন, সার্ক শীর্ষ সম্মেলন স্থগিত, পাকিস্তানের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্কের ভবিষ্যতসহ আওয়ামী লীগের আসন্ন জাতীয় কাউন্সিল নিয়ে সাংবাদিকদের একাধিক প্রশ্নের জবাব দেন প্রধানমন্ত্রী। সংবাদ সম্মেলনের শুরুতেই প্রধানমন্ত্রী প্রয়াত সব্যসাচী লেখক সৈয়দ শামসুল হকের বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করে বলেন, ফিরে এসে তাঁকে আর দেখতে পারব না, এটা ভাবতেই পারিনি। সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে এ সময় মূল মঞ্চে উপবিষ্ট ছিলেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও জনপ্রশাসনমন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম, পররাষ্ট্রমন্ত্রী এএইচ মাহমুদ আলী, এলজিআরডিমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেন, প্রধানমন্ত্রীর তথ্য উপদেষ্টা ইকবাল সোবহান চৌধুরী ও পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম। সংবাদ সম্মেলনে বিভিন্ন গণমাধ্যমের সম্পাদক, সিনিয়র সাংবাদিক ছাড়াও সরকারের মন্ত্রী-এমপি ও আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের সিনিয়র নেতারা উপস্থিত ছিলেন। সংবাদ সম্মেলন সঞ্চালনা করেন প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম। বিএনপির সঙ্গে সংলাপ প্রসঙ্গ ॥ আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন প্রক্রিয়ায় বিএনপি অবদান রাখতে চায় এবং সরকারের সঙ্গে এ ব্যাপারে সংলাপের আগ্রহ প্রকাশ করেছে। এ অবস্থায় আপনার অবস্থান কী? একুশে টেলিভিশনের সিইও মনজুরুল আহসান বুলবুলের এমন প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী পাল্টা প্রশ্ন করেন, আপনারা কী চান? বিএনপি কী ধরনের নির্বাচন কমিশন চায়? ২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত ক্ষমতায় থাকাকালে বিএনপি কেমন নির্বাচন কমিশন করেছিল? ওই নির্বাচন কমিশন এক কোটি ৩১ লাখ ভুয়া ভোটার অন্তর্ভুক্ত করে ভোটার তালিকা করেছিল। এখন কোন ভুয়া ভোটারের তালিকা নেই, এজন্যই বর্তমান নির্বাচন কমিশনকে পছন্দ নয় বিএনপির। এ প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, বিএনপি কি তাদের মতোই নির্বাচন কমিশন চায়, যারা এক কোটি ৩১ লাখ ভুয়া ভোটার অন্তর্ভুক্ত করবে? এত ভুয়া ভোটার থাকলে তো আর নির্বাচন লাগে না। বিএনপির আমলে ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারির ভোটারবিহীন নির্বাচনের কথা কি দেশের মানুষ ভুলে গেছে? মাগুরা, মিরপুর ও ঢাকা-১০-এর উপ-নির্বাচনে ভোটকেন্দ্রে কোন ভোটার যেতে পারেনি। তারা (বিএনপি) কি সে ধরনের নির্বাচন কমিশন চায়? তাদের (বিএনপি) পরামর্শ নিলে তো এমন নির্বাচন কমিশন করতে হবে, যারা ভুয়া ভোটার অন্তর্ভুক্ত করবে। আপনারা (সাংবাদিক) কি সে ধরনের নির্বাচন কমিশন চান? এ সময় বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ওই সময়ে তারা অনেক খারাপ কর্মকা- এবং আমাদের জেলে পুরলেও ছবিযুক্ত ভোটার তালিকা করার মতো একটি ভাল কাজ করেছে। পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্কের টানাপোড়েন ॥ পাকিস্তানের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক এবং সার্কের ভবিষ্যত সম্পর্কে অপর এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, পাকিস্তান যুদ্ধাপরাধীদের বিচারসহ বিভিন্ন বিষয়ে বাংলাদেশ বিষয়ে নানা কথা বলেছে, বিচারে হস্তক্ষেপ করার চেষ্টা করেছে। এ কারণে আমরা সার্ক সম্মেলনে না যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আমাদের সঙ্গে আরও চারটি দেশ সম্মেলনে না যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সাতটি দেশের মধ্যে চারটি দেশ না যাওয়ায় সার্ক সম্মেলন স্থগিত করা হয়েছে। এ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, পাকিস্তান পরাজিত শক্তি। আমরা তাদের মুক্তিযুদ্ধে পরাজিত করেছি। আমরা বিজয়ী জাতি। এ কারণেই ১৯৭৪ সালে পাকিস্তান বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দিতে বাধ্য হয়। প্রত্যেক দেশের মধ্যেই দ্বিপক্ষীয় কূটনৈতিক সম্পর্ক থাকে। মতভেদ ও ঝগড়াঝাটি চললেও কূটনৈতিক সম্পর্ক রয়েছে। তবে পরাজিত দেশ অনেক কথাই বলতে পারে। তবে তারা (পাকিস্তান) কী বলল তাতে আমাদের কী আসে যায়? যুদ্ধাপরাধের কারণে যাদের শাস্তি হয়েছে তারা তো ওই দেশটির পেয়ারের লোক ছিল। আমাদের দেশেরও অনেক নেত্রীর পেয়ারের লোক ছিল। কিন্তু আমার প্রশ্ন- যারা স্বাধীনতাবিরোধী, যুদ্ধাপরাধ করেছে, যারা এসব যুদ্ধাপরাধীদের প্রধানমন্ত্রী-মন্ত্রী-উপদেষ্টা বানিয়েছে, তাদের এ দেশে রাজনীতি করার কোন অধিকার আছে কি-না? স্বাধীনতায় বিশ্বাসী এ দেশের জনগণেরই সিদ্ধান্ত নিতে হবে- তাদের সম্পর্ক ত্যাগ করবেন কি-না। এ সিদ্ধান্ত দেশের জনগণকেই নিতে হবে। সার্কের ভবিষ্যত সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সার্ক শীর্ষ সম্মেলন সম্পর্কে বাংলাদেশ এককভাবে কোন সিদ্ধান্ত নিতে পারে না। কাজেই বাস্তবতাটা মনে রাখতে হবে। (পাকিস্তানের সঙ্গে) কূটনৈতিক সম্পর্ক সেটাও থাকবে আবার ঝগড়াঝাটি সেটাও চলবে। এটা কোন ব্যাপার নয়। যে কোনো দেশের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক থেকেই যায়। তারা যখন যা বলছে, আমরা তার প্রতিবাদ করছি- যোগ করেন প্রধানমন্ত্রী। সার্ক থাকার দরকার আছে কি-না এবং পাকিস্তানকে বাদ দিয়ে বিকল্প কিছু করার কোন চিন্তা বাংলাদেশের আছে কিনা- এমন প্রশ্নের জবাবে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেন, এ ব্যাপারে তাঁর এককভাবে বলার কিছু নেই, সেটা উচিতও হবে না। সার্কের চেয়ারপার্সন এখন নেপাল। বাংলাদেশ চেয়ারপার্সন নয়। এ সিদ্ধান্ত সবাই মিলে নিতে হবে যে, সার্কের কী হবে। তিনি বলেন, সার্কের চার্টারে উল্লেখ রয়েছে- দ্বিপক্ষীয় বিষয়ে আলোচনা করা যাবে না। এ কারণে অনেক বিষয়ে কিছু করা যায় না, অনেক কিছুই কার্পেটের নিচে ঢাকা পড়ে। তবে আমি মনে করি, দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে একটি যৌথ উদ্যোগ থাকা উচিত। আর্থসামাজিক উন্নয়নে ঐক্যবদ্ধভাবে আমরা কিভাবে এগিয়ে যেতে পারি সে ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেয়া উচিত। অবসরে যাওয়ার প্রস্তাব, মন্ত্রী-নেতাদের ‘না’ ॥ সংবাদ সম্মেলনে আওয়ামী লীগের আসন্ন ২০তম জাতীয় সম্মেলনে নতুন নেতৃত্ব কেমন হবে, কিভাবে দলে সংস্কার আনতে চান- তা নিয়েও সাংবাদিকরা প্রশ্ন করেন। জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সম্মেলনে দলের কাউন্সিলর ও ডেলিগেটররা যেভাবে চাইবেন, সেভাবেই আগামী নেতৃত্ব গঠন করা হবে। এ ব্যাপারে আমি ইতোমধ্যে মতামত গ্রহণ করতে শুরু করেছি, আমরা বসে নেই। এ প্রসঙ্গে কথা বলতে গিয়ে ৩৫ বছর ধরে তাঁর আওয়ামী লীগের সভাপতি পদে থাকার বিষয়টি উল্লেখ করে বলেন, আওয়ামী লীগ নতুন নেতা বেছে নিয়ে এবং তিনি অবসরে যাওয়ার সুযোগ পেলে ‘সবচেয়ে বেশি’ খুশি হবেন। আমার তো ৩৫ বছর হয়ে গেছে। আমাকে যদি রিটায়ার করার সুযোগ দেয়া হয় তাহলে আমি সব থেকে বেশি খুশি হব। এ সময় সংবাদ সম্মেলনের পরিবেশ পাল্টে যায়। সেখানে উপস্থিত আওয়ামী লীগের সব পর্যায়ের নেতা-এমপি ও মন্ত্রী প্রধানমন্ত্রীর এমন প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে সমস্বরে ‘নো, নো’ বলতে থাকেন। এ সময় বঙ্গবন্ধুর এই কন্যা বলেন, আমি তো দলেই থাকব। দল ছেড়ে তো আমি যাচ্ছি না। যদি নতুন নেতা নির্বাচিত করা হয়, তাহলে সব থেকে বেশি আনন্দিত হব। পুনরায় নেতারা ‘না, না’ বললে তিনি বলেন, যাক সম্মেলনে কাউন্সিলদের সঙ্গে কথা বলেই সবকিছু করা হবে। মা হিসেবে আমি গর্বিত ॥ বাংলাদেশে তথ্যপ্রযুক্তি খাতে অবদান রাখায় ‘আইসিটি ফর ডেভেলমেন্ট এ্যাওয়ার্ড’ পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছেলে ও তাঁর তথ্যপ্রযুক্তিবিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়। এ প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাঁর ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় দেশের জন্য সম্মান বয়ে এনেছে। তথ্যপ্রযুক্তিতে আন্তর্জাতিক পুরস্কারে ভূষিত হয়েছে আর সেজন্য মা হিসেবে আমি গর্বিত। এ সময় তিনি দেশবাসীর কাছে সজীব ওয়াজেদ জয়ের জন্য দোয়া কামনা করেন। এ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমার ছেলে ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে জন্মগ্রহণ করে। তখন আমাদের বড় দুঃখের সময় ছিল। একটি একতলা বাড়িতে আমাদের বন্দী রাখা হয়েছিল, তারই একটি দিনে ওর জন্ম। তারপর আল্লাহ তাকে এত বড় করেছে। বাংলাদেশকে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারে এগিতে নিতে পারছে, এটাই অনেক বড় কথা। এ পুরস্কার অর্জন করায় মা হিসেবে আমার জন্য অনেক গর্বের। জয় তথ্য ও প্রযুক্তি উন্নয়নে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করে যাচ্ছে। ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার তার বিশেষ অবদান রয়েছে। বাংলাদেশ যে এত দ্রুত ডিজিটাল হতে পেরেছে এজন্য জয়ের অবদান অনেক। কম্পিউটার শিক্ষাসহ ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার ভিশন আমি সজীব ওয়াজেদ জয়ের কাছ থেকেই শিখেছি। বাংলাদেশের তথ্যপ্রযুক্তির উন্নয়ন এবং বিকাশে জয় দীর্ঘদিন ধরে কাজ করে যাচ্ছে। ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়তে তার অপরিসীম অবদান রয়েছে। আমি আশা করি, জয় জাতির পিতার স্বপ্নের ‘সোনার বাংলাদেশ’ গড়ে তোলা এবং ‘রূপকল্প-২০২১’ ও ‘রূপকল্প-২০৪১’ বাস্তবায়নে আরও জোরালো ভূমিকা পালন করবে। ৩৫ বছরে এই প্রথম ৫ দিনের ছুটি ॥ ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার বিষয়ে কথা বলতে গিয়ে তাঁর ৩৫ বছরের রাজনৈতিক জীবনে এই প্রথম পাঁচ দিনের ছুটি কাটানোর কথাও সাংবাদিকদের সামনে তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, গত ৩৫ বছরে এই প্রথম তিনি ব্যক্তিগত ছুটিতে টানা পাঁচ দিন কাটালেন। তিনি বলেন, পাঁচ দিন ব্যক্তিগত ছুটি কাটালেও আমি বসে থাকিনি। ডিজিটাল প্রযুক্তির কারণে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ছেলের কাছে থাকার সময়ও আমি দিনে দুই ঘণ্টা অফিস করেছি। প্রযুক্তির মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রে বসেই ৫১টি ফাইল নিষ্পত্তি করেছি এবং প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিয়েছি। বিশ্বনেতাদের সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদের মদদদাতাদের খুঁজে বের করার আহ্বান জানিয়েছি ॥ কানাডা ও যুক্তরাষ্ট্রের সফরকে অত্যন্ত ফলপ্রসূ উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতিসংঘ সাধারণ অধিবেশনে দেয়া বক্তৃতায় আমি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে সন্ত্রাসী ও জঙ্গীদের পরামর্শদাতা, মূল পরিকল্পনাকারী, মদদদাতা, পৃষ্ঠপোষক, অর্থ ও অস্ত্র সরবরাহকারী এবং প্রশিক্ষকদের খুঁজে বের করে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছি। তিনি বলেন, বক্তৃতায় আমি অভিবাসী ও শরণার্থী ইস্যুটিকে মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে দেখার অনুরোধ করেছি। এছাড়া টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা বাস্তবায়নের জন্য বিশ্বজুড়ে শান্তি, নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতার ওপর গুরুত্বারোপ করেছি। কানাডায় পালিয়ে থাকা বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত দ-প্রাপ্ত আসামি নূর চৌধুরীকে ফিরিয়ে আনা প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, কানাডা সফরকালে দেশটির প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোর সঙ্গে আমার দ্বিপক্ষীয় বৈঠক হয়েছে। বৈঠকে জাস্টিন ট্রুডো বাংলাদেশের সন্ত্রাসবাদ ও জঙ্গীবাদবিরাধী অবস্থানের প্রশংসা করেন। এ সময় আমি কানাডার প্রধানমন্ত্রীকে জাতির পিতার আত্মস্বীকৃত খুনী নূর চৌধুরীকে যথাশীঘ্র সম্ভব দেশে ফেরত পাঠানোর অনুরোধ জানাই। আমি তাঁকে জানাই যে, বাংলাদেশের প্রচলিত আইনেই নূর চৌধুরীর বিচার সম্পন্ন হবে। প্রধানমন্ত্রী জানান, এ সময় জাস্টিন ট্রুডো ১৫ আগস্টে সংঘটিত মর্মান্তিক ঘটনায় গভীর দুঃখ প্রকাশ করেন। নূর চৌধুরীকে দেশে ফেরত পাঠানোর বিষয়ে তিনি সে দেশের কিছু আইনী বাধার কথা উল্লেখ করেন। তবে ন্যায়বিচার নিশ্চিতপূর্বক কিভাবে এ স্পর্শকাতর বিষয়টি সুরাহা করা যায় তার উপায় খুঁজে বের করার জন্য উভয় দেশের উপযুক্ত প্রতিনিধির মধ্যে বিষয়টি আলোচনা শুরু করার পক্ষে তিনি মত দেন। আমি তাঁকে বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ জানাই এবং তিনি তা সানন্দে তা গ্রহণ করেন। অর্জিত আরও দুটি পুরস্কার জনগণকে উৎসর্গ করলেন প্রধানমন্ত্রী ॥ জাতিসংঘ অধিবেশনে যোগ দিয়ে এবারও দুটি আন্তর্জাতিক পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ইউএন-ইউমেন এবার আমাকে ‘প্লানেট ৫০-৫০ চ্যাম্পিয়ন’ এবং গ্লোবাল পার্টনারশিপ ফোরাম আমাকে তাদের ‘এজেন্ট অব চেঞ্জ এ্যাওয়ার্ড’ পুরস্কারে ভূষিত করেছে। গত ২১ আগস্ট আমি এ দুটি পুরস্কার গ্রহণ করি। নারীর ক্ষমতায়ন এবং তাদের উন্নয়নের মূলধারায় সম্পৃক্ত করে জাতি গঠনমূলক কাজে লাগানোর ক্ষেত্রে নেতৃত্বদানের স্বীকৃতিস্বরূপ এ দুটি পুরস্কার প্রদান করা হয়। আমি বাংলাদেশের জনগণকে এ পুরস্কার উৎসর্গ করলাম। তিনি বলেন, এবারই আমি একটানা দুই সপ্তাহের বেশি দেশের বাইরে অবস্থান করলাম। কিন্তু দাফতরিক কাজের কোন ব্যাঘাত ঘটেনি। কারণ ই-ফাইলিংয়ের মাধ্যমে আমি সেখানে বসেই ৫১টি ফাইলের নিষ্পত্তি করি এবং প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দিই। ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ বাস্তবায়নের ফলেই বিদেশে বসেও দাফতরিক কাজ সম্পন্ন করার এ সক্ষমতা অর্জন করা সম্ভব হয়েছে।
×