ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

বিপিএল ফুটবল

সিলেটের সেই দর্শক কোথায় হারাল!

প্রকাশিত: ০৬:০৪, ২ অক্টোবর ২০১৬

সিলেটের সেই দর্শক কোথায় হারাল!

জাহিদুল আলম জয়, সিলেট থেকে ॥ খেলা মানেই সিলেটে দর্শক জোয়ার। এ দৃশ্য বরাবরই দেখা গেছে পুণ্যভূমি খ্যাত এ জেলায়। ফুটবল বা ক্রিকেট যে খেলায় হোক না কেন গ্যালারি থাকে টইটুম্বর। কিন্তু বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লীগ ফুটবলে (বিপিএল) প্রথম লেগে সিলেট পর্বের খেলায় চরম দর্শক লক্ষ্য করা গেছে। শনিবার শেষ হয়েছে সিলেট পর্বের খেলা। এক সপ্তাহের ফুটবল লড়াই হয়েছে অনেকটাই ফাঁকা গ্যালারিতে। এ নিয়ে আক্ষেপের শেষ নেই ক্রীড়াপ্রেমী, সংগঠক, স্থানীয় সাংবাদিকদের। সবাই হতাশা নিয়ে জানান, অব্যবস্থাপনা, সমন্বয়হীনতা, প্রচারণার অভাবের কারণেই এবার স্টেডিয়ামমুখী হননি দর্শকরা। অথচ বিপিএলের আগে স্থানীয় টুর্নামেন্ট বিভাগীয় কমিশনার গোল্ডকাপের ফাইনালে সিলেট জেলা স্টেডিয়ামে তিল ধারণের জায়গা ছিল না। ২ সেপ্টেম্বর ওই টুর্নামেন্টের ফাইনালে খেলেছিল নরসিংদী ও সুনামগঞ্জ জেলা। দর্শক খরা নিয়ে আক্ষেপ করেন স্থানীয় ক্রীড়া সাংবাদিক মিজান আহমদ চৌধুরী। তিনি জানান, এর আগে আমি কখনও সিলেটে এত কম দর্শক দেখিনি। কেন এমন হলো ভাবতে অবাক লাগে। তবে হতাশ নন আরেক স্থানীয় সাংবাদিক আহমেদ ইয়াসিন খান। তিনি আশাবাদী সুরে বলেন, সামনেই জেলা প্রশাসক গোল্ডকাপ। আমি নিশ্চিত এই টর্নামেন্টে আবারও গ্যালারিতে দর্শক ভরপুর হবে। দর্শক নিয়ে অতৃপ্তির কথা জানিয়েছেন সিলেট জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক মাহিউদ্দিন আহমদ সেলিমও। তিনি স্পন্সর প্রতিষ্ঠান সাইফ গ্লোবাল স্পোর্টসকে এজন্য দোষারোপ করেন। মাহিউদ্দিন সেলিম বলেন, প্রচারণার অভাবের কারণেই এবার দর্শক মাঠে আসেনি। প্রচারণার মূল দায়িত্ব স্পন্সর প্রতিষ্ঠানের। তারা নিজেরাও প্রচারণা করেনি, আমাদেরও প্রচার করতে দেয়নি। এজন্য মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে দর্শকরা। স্থানীয় ক্লাবের সৌজন্যে টিকেট পেতেও আমার গলদর্ঘম হয়েছে। এরপর যে কোন আয়োজন নিজেদের অধীনে করার কথা জানান তিনি। বলেন, সব স্পন্সর প্রতিষ্ঠানের হাতে ছেড়ে দিব না। সবকিছু আমরা নিজেরা করব। তাহলে আর দর্শক ঘাটতি হবে না। টিকেটের দামও কমানোর কথা বলেন তিনি। প্রতিদিন দু’টি খেলা হওয়াই দর্শকখরার কারণ। মাহিউদ্দিন সেলিম স্বীকার করে বলেন, একটি করে ম্যাচ হলে ভাল হয়। আর স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের মাঠে আনার উদ্যোগ নিতে হবে। এরপর আমরা এই কাজগুলো করব। প্রচারণার অভাবই দর্শক ঘাটতির মূল কারণ বলে জানান সংগঠক, ফুটবলার ও সাধারণ ক্রীড়াপ্রেমীরা। পাশাপাশি বাংলাদেশ-আফগানিস্তান ক্রিকেট সিরিজও দর্শকখরার কারণ বলে মনে করেন অনেকে। এমনই এক যুবক মনিরুজ্জামান বলেন, সিলেটে সবসময়ই মাঠে দর্শক হয়। কিন্তু বাংলাদেশের ক্রিকেট খেলা থাকলে কেউ মাঠে যেতে চায় না। এজন্য ক্রিকেট চলাকালীন সময় ফুটবল না আয়োজন করায় ভাল। ঢাকা আবাহনীর স্ট্রাইকার ও সিলেটের ফুটবলার ওয়াহেদ আহমেদ বলেন, আমার মনে হয় রাতে খেলা হওয়া ও প্রচারণা কম হওয়ায় এমন হয়েছে। তবে আমি আশাবাদী, এরপর ঠিকই দর্শক মাঠে আসবে। ঢাকার ফুটবল থেকে দর্শকরা ফিরিয়ে নিয়েছেন অনেক আগে। যে কারণে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন (বাফুফে) জেলা শহরগুলোতে বেশি বেশি ম্যাচ আয়োজনের সিদ্ধান্ত নেয়। ফলও আসতে শুরু করে। এক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে সিলেট। ফুটবলের হাহাকার সময়ে এই শহরটি যেন স্বর্ণযুগ ফিরিয়ে আনার পণ করে। যে কোন আসরেই সিলেটের স্টেডিয়ামে দর্শক জোয়ার দেখা যায়। গত দুই বছর এ প্রমাণ মিলেছে। ২০১৫ সালে বঙ্গবন্ধু কাপ ও সাফ অনুর্ধ-১৬ চ্যাম্পিয়নশিপে গ্যালারি ছিল উন্মাতাল। দর্শক জোয়ারে নতুন প্রাণ আসে। ২০১৪ সালের আগস্টে নেপাল অনুর্ধ-২৩ দলের সঙ্গে বাংলাদেশের ম্যাচেও ছিল দর্শক ঢেউ। অথচ এবার বিপিএলে সিলেট জেলা স্টেডিয়ামের প্রায় পুরো অংশই ফাঁকা থেকেছে। উত্তর গ্যালারিতে যৎসামান্য যে দর্শক আসে তাও হাতেগোনার মতো!
×