ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

শীর্ষ জঙ্গী নেতা মেজর জিয়া ও মারজান সম্পর্কে তথ্য মিলেছে

প্রকাশিত: ০৬:০০, ২ অক্টোবর ২০১৬

শীর্ষ জঙ্গী নেতা মেজর জিয়া ও মারজান সম্পর্কে তথ্য মিলেছে

শংকর কুমার দে ॥ শীর্ষ জঙ্গী নেতা মেজর (বরখাস্ত) সৈয়দ জিয়াউল হক জিয়া ও নুরুল ইসলাম মারজান কোথায় তা জানতে রিমান্ডে নেয়া জঙ্গী রাকিবুল হাসান রিগ্যান ও সালাউদ্দিন কামরানকে জিজ্ঞাসাবাদ করে পলাতক জঙ্গী, তাদের আস্তানা ও জঙ্গী নেটওয়ার্কের অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পেয়েছে পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিট। নব্য জেএমবির জঙ্গী রিগ্যান ও সালাউদ্দিন কামরান- এ দুজনকেই ৬ দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করছেন তদন্তকারীরা। পুলিশের জঙ্গী দমন ইউনিটের সদস্যরা এর মাধ্যমে সফলতার একটি ধাপ পেরিয়ে গেলেও এখনও ধরাছোঁয়ার বাইরে পুরস্কার ঘোষিত আরেক শীর্ষ জঙ্গী নেতা চাকরিচ্যুত মেজর জঙ্গী ও মারজানসহ আরও কয়েক শীর্ষ ও দুর্ধর্ষ জঙ্গী। এসব জঙ্গীর অবস্থান, আস্তানা, অর্থ ও অস্ত্রের যোগানদাতা, মদদদাতা, নির্দেশদাতা ও জঙ্গী নেটওয়ার্ক সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে রিমান্ডে থাকা জঙ্গী রিগ্যান ও সালাউদ্দিনকে। তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিট হেফাজতে কল্যাণপুর জঙ্গী আস্তানায় অভিযানকালে গুলিবিদ্ধ হয়ে আটক হওয়ার পর হলি আর্টিজান হামলার মামলায় রিগ্যান এবং কল্যাণপুর ও নারায়ণগঞ্জ জঙ্গী আস্তানা থেকে পালিয়ে যাওয়ার পর টঙ্গী এলাকা থেকে আটক সালাউদ্দিন কামরানকে। নব্য জেএমবির শীর্ষ নেতা তামিম চৌধুরী হলি আর্টিজান ও শোলাকিয়ায় হামলার মাস্টারমাইন্ড। গুলশান হামলার আগে হামলাকারীদের সে ঘটনাস্থলে পৌঁছে দিয়েছিল। গত ২৬ জুলাই কল্যাণপুরে জঙ্গী আস্তানায় সফল অভিযানের পর বেরিয়ে আসে তামিম আর মারজানের নাম। পলাতক মারজান নব্য জেএমবির ‘ন্যাশনাল অপারেশন কমান্ডার’। দেশে মুক্তমনা লেখক ও ব্লগার হত্যাকা-ের হোতা মেজর জিয়া। নব্য জেএমবি প্রধান তামিম চৌধুরী ও আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের প্রধান চাকরিচ্যুত মেজর জিয়াÑ দুইজনকে ধরিয়ে দেয়ার জন্য ২০ লাখ টাকা পুরস্কার ঘোষণার পর পুরস্কার ঘোষিত তামিম চৌধুরী নারায়ণগঞ্জের পাইকপাড়ায় পুলিশের ‘অপারেশন হিট স্ট্রং-২৭’-এ নিহত হয়েছে। গত ২ আগস্ট তামিম চৌধুরী এবং চাকরিচ্যুত মেজর জিয়াকে ধরিয়ে দিতে ২০ লাখ টাকা করে পুরস্কার ঘোষণা করেছিল পুলিশ সদর দফতর। এর ২৪ দিনের মধ্যেই নারায়ণগঞ্জে পুলিশের বিশেষ অভিযানে নিহত হয় নব্য জেএমবির শীর্ষ নেতা তামিম চৌধুরী। তামিম অধ্যায় শেষ হওয়ার পর এবার তারা জিয়া এবং মারজানকে হন্যে হয়ে খুঁজছে। তদন্তকারীদের এখন বড় লক্ষ্য শীর্ষ দুই জঙ্গী নেতাসহ পলাতকদের গ্রেফতার। তাহলে আপাতত দেশে জঙ্গী কার্যক্রমের লাগাম টানা অকেটাই সম্ভব হবে। সূত্র মতে, পুলিশ পাহারায় চিকিৎসাধীন অবস্থায়ই জঙ্গী রিগ্যান নব্য জেএমবির সম্ভাব্য কিছু আস্তানার সন্ধান দেয়ার পর এখন তাঁকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। গোয়েন্দা তৎপরতা চালিয়েও কিছু তথ্য মিলেছে। এছাড়াও জাগৃতি প্রকাশক ফয়সল আরেফিন দীপন হত্যায় গ্রেফতার আনসার আল ইসলামের নেতা শামীম ওরফে সিফাতও গুরুত্বপূর্ণ কিছু তথ্য দিয়েছে। মেজর জিয়া কোথায় থাকতে পারে, এ বিষয়ে তথ্য দিয়েছে সে। এসব তথ্য যাচাই করে এ দুই দুর্ধর্ষ জঙ্গীকে গ্রেফতারে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা অনেক অগ্রসর হয়েছে। এরই মধ্যে গ্রেফতার করে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে কামরানকে। জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া তথ্য সম্পর্কে জঙ্গী কার্যক্রম মনিটরিংয়ে দায়িত্বরত পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন, তামিম চৌধুরীর অধীনে থাকা জেএমবির গ্রুপটি বিদেশীদের হত্যা কার্যক্রম চালিয়ে আসছিল। এ নব্য জেএমবি ইন্টারনেটে আন্তর্জাতিক জঙ্গী সংগঠন ইসলামিক স্টেটের (আইএস) কার্যক্রম অনুসরণ করত। তবে এক সময়ের আনসারুল্লাহ নেতা ও বতর্মানে আনসার আল ইসলামের অপারেশন কমান্ডার ও অন্যতম সমন্বয়ক চাকরিচ্যুত মেজর জিয়ার টার্গেট ভিন্ন। মেজর জিয়ার গ্রুপ দেশে মুক্তমনা লেখক ও ব্লগারদের হত্যা কার্যক্রম চালিয়ে আসছে। যদিও টানা অভিযানে তাদের এক স্থানে অবস্থান কষ্টকর হয়ে পড়েছে। মেজর জিয়াপন্থীরা অপর আন্তর্জাতিক জঙ্গী সংগঠন আল-কায়েদার আদর্শে বিশ্বাসী। তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, নিষিদ্ধ জঙ্গী সংগঠন জেএমবির নতুন ধারা নব্য জেএমবির পুরো নেটওয়ার্কের সঙ্গেই যুক্ত ছিল সালাউদ্দিন কামরান। সংগঠনের সমন্বয়কারী নিহত তামিম চৌধুরীর ঘনিষ্ঠ ‘সহচর’ ছিল সালাউদ্দিন কামরান। প্রায় নয় মাস ধরে নিখোঁজ থাকার পর জঙ্গী সালাউদ্দিন টঙ্গীতে গ্রেফতার হয়। পরিবারের লোকদের সঙ্গেও তার ঘনিষ্ঠতা ছিল না। নিখোঁজ হওয়ার আগেও সে তেমন বাসায় যেত না। বেশিরভাগ সময় বাইরেই থাকত। সম্প্রতি টঙ্গী থেকে তাকে গ্রেফতার করে কল্যাণপুরের ঘটনায় দায়ের মামলায় ছয় দিনের রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদের পর গুরুত্বপূর্ণ তথ্য মিলেছে। শনিবার ছিল রিমান্ডের দ্বিতীয় দিন। নিহত তামিম চৌধুরীই সালাউদ্দিনকে গুরুত্বপূর্ণ জঙ্গীদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষার দায়িত্ব দিয়েছিল। গুলশান ও শোলাকিয়ায় হামলাকারী জঙ্গীদের প্রশিক্ষক নিহত মেজর (অব) জাহিদুল ইসলাম ও রায়হান কবির তারেকের সঙ্গে তার নিয়মিত যোগাযোগ হতো। তামিম নিহত হওয়ার আগে নারায়ণগঞ্জের জঙ্গী আস্তানায়ও ছিল সে। কিন্তু অভিযানের সময় সে সংগঠনের কাজে বাইরে ছিল। পরে গণমাধ্যমে অভিযানের খবর পেয়ে আর ওই আস্তানায় ফেরেনি। নব্য জেএমবির নেটওয়ার্ক সম্পর্কে জানে সালাউদ্দিন কামরান। গুলশানের হলি আর্টিজানে ও শোলাকিয়ায় হামলার বিষয়ে অনেক তথ্য জানে সে। এরই মধ্যে সে অনেক তথ্য দিয়েছে। সালাউদ্দিন কামরানকে রিমান্ডে এনে এসব তথ্য জানার চেষ্টা চলছে বলে জানা গেছে। তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্র জানান, গত দুই বছরে বাংলাদেশে একের পর এক ব্লগার, অনলাইন এ্যাক্টিভিস্ট, লেখক-প্রকাশক, বিদেশী নাগরিক ও ধর্মীয় সংখ্যালঘু হত্যার প্রেক্ষাপটে জিয়ার নাম আলোচনায় আসে। চাকরিচ্যুত মেজর জিয়ার পুরো নাম হচ্ছে সৈয়দ মোঃ জিয়াউল হক। বাবার নাম জিল্লুল হক। বাড়ি মৌলভীবাজারের মস্তফাপুরে। তাঁর পাসপোর্ট নম্বর, এক্স-০৬১৪৯২৩। রাজধানীর বারিধারার ডিওএইচএসে ৯ নম্বর রোডে ৫১২ নম্বর বাড়ির তৃতীয় তলায় জিয়ার পরিবারের ঠিকানা। নিষিদ্ধ সংগঠন হিযবুত তাহরীরের সঙ্গে সম্পৃক্ততা থাকায় ২০১২ সালে চাকরি হারায় মেজর জিয়া। আর চাকরি হারানোর পর থেকে আনসারুল্লাহ বাংলাটিমের সামরিক কমান্ডারের দায়িত্ব পালন করে আসছে। প্রায় দুই শতাধিক সদস্যকে প্রশিক্ষণ দিয়েছে জিয়া। জঙ্গীদের প্রশিক্ষক জিয়া দেশেই আত্মগোপনে থেকে সক্রিয়। সিরিয়ায় প্রশিক্ষণ নিয়েছে বলে পুলিশের কাছে খবর রয়েছে। জিয়া এর আগে ভারতে আত্মগোপন করেছে বিভিন্ন সূত্রে এমন খবর মিললেও, সম্প্রতি ঢাকার অভিজাত এলাকা বারিধারা-বসুন্ধরায় অবস্থান করছে এমন খবর পেয়ে অভিযানও চালানো হয়েছে।
×