স্টাফ রিপোর্টার, সিলেট অফিস ॥ আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি হিসেবে সিলেট থেকে আনুষ্ঠানিক প্রচার শুরু করেছে এরশাদের নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টি। দুপুরে বিমানযোগে ঢাকা থেকে সিলেটে যান এরশাদসহ দলের শীর্ষ নেতারা। সেখানে গিয়ে হযরত শাহজালাল (র) মাজার জিয়ারত শেষে বিকেলে স্থানীয় রেজিস্ট্রারি মাঠে জেলা জাপার উদ্যোগে সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। সমাবেশ থেকে আগামী নির্বাচনে সিলেট অঞ্চলের সংসদ সদস্য প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করার কথা থাকলেও সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করা হয়।
সমাবেশে এরশাদ বলেন, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি হিসেবে সিলেট থেকে আনুষ্ঠানিক প্রচার শুরু করলাম। পর্যায়ক্রমে সারাদেশে এ কার্যক্রম চলবে। নেতাকর্মীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, তোমরা নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি নাও। সংগঠনকে শক্তিশালী কর। নিজেদের এলাকা গোছাও। জাপার জাগরণ সৃষ্টি কর। আমি আবার এসে প্রার্থী ঘোষণা করব।
সাবেক সেনাপ্রধান এরশাদ বলেন, আমি ক্ষমতায় থাকতে মাত্র দু’জন মানুষ মারা গিয়েছিল- নূর হোসেন আর মিলন। অথচ এখন হিসাব ছাড়া মানুষ প্রতিদিন মারা যাচ্ছে। খবরের কাগজ খুললেই খুন, ধর্ষণ, ডাকাতি-রাহাজানি। এসবের বিচার হয় কিনা; আমি জানি না। তিনি বলেন, দেশে হিংসার রাজনীতি চলছে। মানুষ এখন পরিবর্তন চায়। দেশের উন্নয়নের জন্য জাতীয় পার্টিকেই ক্ষমতায় আসতে হবে। দলকে সুসংগঠিত করে আগামী নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি নিতেই তার সিলেটের জনসভা বলে জানান এরশাদ।
এর আগে বেলা ১১টায় ঢাকা থেকে বিমানযোগে সিলেটে রওনা দেন এরশাদ। তার সফরসঙ্গী ছিলেন বিরোধী দলের নেতা ও জাপার সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান রওশন এরশাদ, ভাইস চেয়ারম্যান জিএম কাদেরসহ শীর্ষ নেতারা। এছাড়াও সফরসঙ্গী হিসেবে কেন্দ্রীয় ৬০ নেতা সমাবেশে যোগ দেন।
জাপা চেয়ারম্যান বলেন, বৃহত্তর সিলেটের সকল উন্নয়ন আমি করেছি। সিলেটে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, সুরমা নদীর ওপর শাহজালাল সেতু করেছি, সিলেটের একটি জেলাকে চারটি জেলায় উন্নীত করেছি। আমার সময়ে সিলেটে হাইকোর্টের বেঞ্চ চালু করেছিলাম। পরে তা বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। আমি ক্ষমতায় গেলে আবার তা চালু হবে।
তিনি বলেন, আমার সময়ে একজন এ্যাসিড ছুড়েছিল, তাকে ফাঁসি দিয়েছিলাম। এখন এ্যাসিড মারার কারণে কারও শাস্তি হয় না। এবার ঈদে সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গেল ১৬৫ জন মানুষ। ঈদে মানুষ এখন লাশ হয়ে বাড়ি যায়। ভুয়া লাইন্সেস দিয়ে চালক করা হচ্ছে। এদের কারণেই এসব প্রাণহানি হয়। তিনি বলেন, এখন কে কখন গুম হয়ে যায় তার ঠিক নেই। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে জিজ্ঞেস করলেও কোন খোঁজ দিতে পারে না। তাহলে খোঁজ দেবে কে? এরশাদ বলেন, ক্ষমতায় গেলে আমি প্রাদেশিক সরকার ব্যবস্থা চালু করব। সিলেট হবে জালালাবাদ প্রদেশের রাজধানী।
সিলেটবাসীর উদ্দেশে তিনি বলেন, ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য আরেকবার সুযোগ দিন, আমি আপনাদের সন্তান। তিনি বলেন, সিলেট ছিল হাওড় ও পানির অঞ্চল। এখানে ছিল না কোন রাস্তাঘাট ও উন্নয়ন। আমি যখন ক্ষমতায় ছিলাম, এ ভাটি অঞ্চলকে উন্নয়নের অঞ্চল হিসেবে রূপ দিয়েছি। সিলেটের মানুষ আমাকে ৮টি আসন উপহার দিয়েছেন। সেদিন যদি তারা আমাকে সম্মানিত না করতেন তাহলে আমার ফাঁসি হতো। সিলেটের সন্তান দাবি করে জাপা চেয়ারম্যান বলেন, সিলেটবাসী আমাকে ভোট দিয়ে জীবন রক্ষা করেছেন। আমি কৃতজ্ঞ। তিনি বলেন, আমি আপনাদের কাছে আবেদন করছি আগামীতে ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য সিলেটবাসী আমাকে আরেকবার সুযোগ দেবে। জাতীয় পার্টি সকল নির্বাচনের আগে একটি নীতির মাধ্যমে শুভসূচনা করে। সেটি হলো প্রতিটি সংসদ নির্বাচনের আগে সিলেটের পুণ্যভূমি সফর ও হযরত শাহজালালের মাজার জিয়ারতের মাধ্যমে নির্বাচনের আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু করে আসছে। এবারও তাই করছি।
দেশের নির্বাচন পদ্ধতির পরিবর্তনের কথা জানিয়ে এরশাদ বলেন, আগামীতে জাপা ক্ষমতায় গেলে দেশে প্রাদেশিক সরকার ব্যবস্থা চালু করা হবে। এ্যাডভোকেট গিয়াস উদ্দিনের সভাপতিত্বে সমাবেশে বক্তব্য রাখেন- বিরোধীদলীয় নেতা ও জাপার সিনিয়র কো-চেয়ারমান বেগম রওশন এরশাদ, কো-চেয়ারম্যান জিএম কাদের, মহাসচিব এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার, প্রেসিডিয়াম সদস্য আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, কাজী ফিরোজ রশীদ, জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু, সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা, সালমা ইসলাম, সাইদুর রহমান টেপা, তাজুল ইসলাম চৌধুরী, সেলিম উদ্দিন, মুনিম চৌধুরী বাবু, পীর ফজলুর রহমান এমপি প্রমুখ।
জনসভায় রওশন এরশাদ বলেন, বিশেষ একটি মুহূর্তে, বিশেষ একটি সময়ে জাতীয় পার্টির জন্ম হয়েছিল। এক সময়ে সিলেট থেকে জাতীয় পার্টির ৮ জন সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। এখন দেশের জনগণের প্রয়োজনে আবারও জেগেছে জাতীয় পার্টি। জাতিসংঘ মিশনে আর্ম ফোর্স পাঠানো জাতীয় পার্টি সূচনা করেছিল। দেশকে ১৯ জেলা থেকে ৬৪ জেলায় উন্নীত করেছিল জাতীয় পার্টি। তিনি আগামী নির্বাচনের প্রস্তুতি নেয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘সিলেটে আমাদের ৮টি আসন ছিল। আমরা আবার সেগুলো ফিরে পেতে চাই।’