ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

প্রধানমন্ত্রী বহু কাক্সিক্ষত স্মার্টকার্ড বিতরণ উদ্বোধন করবেন আজ

প্রকাশিত: ০৫:৫২, ২ অক্টোবর ২০১৬

প্রধানমন্ত্রী বহু কাক্সিক্ষত স্মার্টকার্ড বিতরণ উদ্বোধন করবেন আজ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ডিজিটাল যুগের আরও একটি অধ্যায়ের সূচনা হচ্ছে আজ। এদিন বহু কাক্সিক্ষত উন্নত প্রযুক্তিসম্পন্ন পরিচয়পত্র স্মার্টকার্ড বিতরণের উদ্বোধন করছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সকাল সাড়ে দশটায় রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে এর উদ্বোধন করবেন তিনি। প্রধানমন্ত্রীর উদ্বোধনের পর আগামীকাল সোমবার থেকে সাধারণ নাগরিকদের হাতে স্মার্টকার্ড বিতরণে কাজ শুরু করবে ইসি। নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে, উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের স্মার্টকার্ডটি প্রথমে প্রধানমন্ত্রীর কাছে হস্তান্তর করবেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী রকিব উদ্দিন আহমেদ। এরপর প্রধানমন্ত্রীর স্মার্টকার্ডটি তাঁর হাতে তুলে দেবেন সিইসি। এরপর প্রধানমন্ত্রী জাতীয় ক্রিকেট দলের খেলোয়াড়দের হাতে স্মার্টকার্ড তুলে দেবেন। রাষ্ট্রপতির স্মার্টকার্ডটি পরে বঙ্গভবনে সিইসি ও অন্যান্য কমিশনার গিয়ে তাঁর সঙ্গে সাক্ষাত করে হস্তান্তর করবেন। এছাড়া আজ উদ্বোধনের দিনে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের স্মার্টকার্ড হস্তান্তর করা হতে পারে বলে জানা গেছে। আজ উদ্বোধনের পর আগামীকাল থেকে সাধারণ নাগরিকদের হাতে স্মার্টকার্ড বিতরণ শুরু করবে ইসি। পর্যায়ক্রমে সারাদেশে জনগণের হাতে পৌঁছে দেয়া হবে এটি। সংশ্লিষ্টদের মতে স্মার্টকার্ডের মাধ্যমে দেশের নাগরিকরা তথ্য প্রযুক্তির ক্ষেত্রে আরও একধাপ এগিয়ে গেল। কারণ সবার হাতে থাকা লেমিনেটিং করা জাতীয় পরিচয়পত্রের বদলে তাদের হাতে তুলে দেয়া হচ্ছে এই স্মার্টকার্ড। যেটা তৈরি করা হয়েছে উন্নত প্রযুক্তির সমন্বয়ে। যেখানে সংরক্ষিত থাকছে একজন নাগরিকের জন্ম পরিচয় থেকে শুরু করে সব ধরনের প্রয়োজনীয় ব্যক্তিগত তথ্য। স্মার্টকার্ড ব্যবহার করেই একজন নাগরিক সব ধরনের সেবা গ্রহণ করতে পারবেন। ইসি কর্মকর্তারা জানান, উদ্বোধনের পর রাজধানীর রমনা ও উত্তরা থানা থেকে স্মার্টকার্ড বিতরণের কাজ শুরু করা হবে। রাজধানীর বাইরে কুড়িগ্রামের দাশিয়ারছড়ায় সাবেক ছিটমহলবাসীদের হাতে স্মার্টকার্ড বিতরণ করা হবে। এজন্য সব ধরনের প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। রাজধানীতে রমনার তিনটি ওয়ার্ডে স্মার্টকার্ড বিতরণের সময়সূচী ইতোমধ্যে জানিয়ে দেয়া হয়েছে। স্মার্টকার্ড দেয়ার জন্য রমনার ১৯, ২০ ও ২১ নম্বর ওয়ার্ডে ক্যাম্প করা হচ্ছে। ক্যাম্পে সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডের নাগরিকরা হাজির হয়ে তাদের স্মার্টকার্ড সংগ্রহ করবেন। স্মার্টকার্ড বিতরণের জন্য ইসির পক্ষ থেকে অপারেটর নিয়োগ দেয়া হয়েছে। অপারেটররা স্মার্টকার্ড বিতরণের সময় প্রত্যেকের ১০ আঙ্গুলের ছাপ ও চোখের আইরিশের ছবি সংগ্রহ করবেন। এরপর নাগরিকদের হাতে থাকা লেমিনেটিং করা মূল জাতীয় পরিচয়পত্র ফেরত নিয়ে পরিবর্তে স্মার্টকার্ড তুলে দেবেন। তবে যার কাছে লেমিনেটিং করা জাতীয় পরিচয়পত্র নেই বা যার পরিচয়পত্র হারিয়ে গেছে তাকে থানায় এ বিষয়ে জিডি করে জিডির কপি নিয়ে সংশ্লিষ্ট থানা নির্বাচন অফিসে যোগাযোগ করতে বলা হয়েছে। এছাড়া যারা ভোটার হিসেবে নিবন্ধিত হয়েছেন অথচ এখনও কোন পরিচয়পত্র পাননি তাদের ভোটার নিবন্ধনের সিøপ সঙ্গে আনতে হবে। নিবন্ধন সিøপ দেখিয়ে স্মার্টকার্ড সংগ্রহ করতে হবে বলে ইসির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। ইসি জানিয়েছে, প্রথম পর্যায়ে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন ও কুড়িগ্রামে স্মার্টকার্ড বিতরণ সম্পন্ন করা হবে। দ্বিতীয় পর্যায়ে বাকি সিটি করপোরেশনগুলোতে বিশেষ করে খুলনা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, বরিশাল, সিলেট, নারায়ণগঞ্জ, কুমিল্লা, রংপুর ও গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনে স্মার্টকার্ড বিতরণ করা হবে। তৃতীয় পর্যায় দেশের ৬৪টি জেলা সদরে স্মার্টকার্ড বিতরণ করা হবে। চতুর্থ পর্যায়ে উপজেলা পর্যায়ে স্মার্টকার্ড বিতরণ করা হবে। এর জন্য নির্ধারিত সময়ে গণমাধ্যমে বিজ্ঞপ্তি, মাইকিং, ব্যানার, ফেস্টুন দিয়ে প্রচারের মাধ্যমে স্মার্টকার্ড বিতরণের নির্দিষ্ট দিনক্ষণ জানিয়ে দেয়া হবে। স্মার্টকার্ড এমন উন্নত প্রযুক্তিতে তৈরি যা রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ কাজে ব্যবহারের পাশাপাশি দেশের বাইরেও ব্যবহার উপযোগী হবে। যা লেমিনেটিং করা পরিচয়পত্রের মাধ্যমে সম্ভব হতো না। ইসি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এখন ই-গেটিং পদ্ধতি চালু রয়েছে। সেসব দেশে আমাদের এই স্মার্ট কার্ড ব্যবহার করা যাবে। সার্কভুক্ত দেশগুলোতে ভবিষ্যতে ভিসা পদ্ধতি তুলে দিয়ে ই-গেটিং পদ্ধতি চালু করলে সেখানেও ব্যবহারের জন্য এই স্মার্টকার্ডের উপযোগিতা থাকবে। এছাড়াও ড্রাইভিং লাইসেন্স থেকে শুরু করে টিআইএন, পাসপোর্ট, চাকরির আবেদন, সম্পত্তি কেনাবেচা, বিয়ে রেজিস্ট্রেশন, ব্যাংকে এ্যাকাউন্ট খোলা ও ব্যাংক ঋণ, বিও এ্যাকাউন্ট, সরকারী বিভিন্ন ভাতা উত্তোলন, সরকারী কর্মচারীদের বেতন ও অবসরপ্রাপ্তদের পেনশন উত্তোলন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি, বিমানবন্দরে আগমন ও বহির্গমন, বীমা স্কিম, গ্যাস-বিদ্যুত সংযোগ, বিভিন্ন ধরনের ই-টিকিটিং, মোবাইল সংযোগ, হেল্থকার্ড, ই-ক্যাশসহ আরও অনেক গুরুত্বপূর্ণ রাষ্ট্রীয় কাজে স্মার্টকার্ডের ব্যবহার বাধ্যতামূলক হবে। ইসি কর্মকর্তাদের মতে একজন নাগরিকের প্রয়োজনীয় সব তথ্য যাচাইয়ে স্মার্টকার্ড অনলাইন ও অফলাইন দু’ভাবেই ব্যবহার করা যাবে। তথ্য যাচাইয়ের জন্য বর্তমানে বেশ কিছু প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) চুক্তি রয়েছে? ইসি থেকে এসব প্রতিষ্ঠানকে একটি সফটওয়্যার ফ্রি সরবরাহ করা হবে। ওই সফটওয়্যারের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান কারও প্রয়োজনীয় তথ্য যাচাই করতে পারবে। একজন চাকরি প্রার্থীর ক্ষেত্রে চাকরিদাতা প্রতিষ্ঠানও সহজেই তার তথ্য যাচাই করে দেখতে পারে স্মার্টকার্ডের মাধ্যমে। এ ক্ষেত্রে তারা বায়োডাটার সঙ্গে দেয়া তথ্য মিলিয়ে নিশ্চিত হতে পারবেন। ইসি কর্মকর্তারা জানান, ভবিষ্যতের চাহিদার কথা মাথায় রেখেই নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে স্মার্টকার্ড তৈরি করা হয়েছে। উন্নত প্রযুক্তিনির্ভর ২৫টি নিরাপত্তা বৈশিষ্ট্য সংবলিত এই স্মার্টকার্ডে ভোটারদের সব তথ্য সংরক্ষিত থাকবে। ফলে কারও পক্ষে টু-ডি বারকোড যুক্ত যন্ত্রে পাঠযোগ্য এই কার্ড সহজে নকল করা সম্ভব হবে না। তাদের মতে, স্মার্টকার্ড কার্ড দেখতে অনেকটা ব্যাংকের এটিএম কার্ডের অনুরূপ। যার উভয় পাশে বিভিন্ন তথ্য সন্নিবেশিত থাকবে। এক পাশে ভোটারের নাম, পিতা-মাতার নাম, জন্ম তারিখ, এনআইডি নম্বর, স্বাক্ষর এবং অপর পিঠে ঠিকানা, ব্লাড গ্রুপ এবং ইস্যুর তারিখ দেয়া থাকবে। এছাড়া থাকবে ছবি, মেমোরি চিপ, বারকোডসহ বিভিন্ন নিরাপত্তা ফিচার। ফলে এটি কারও পক্ষে জালিয়াতি করাও সম্ভব হবে না।
×