ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

দুই পা ফেললেই প্রকৃতির সঙ্গে ॥ অবকাশ যাপন ॥ স্বস্তির ছোঁয়া ১

প্রকাশিত: ০৫:৪৯, ২ অক্টোবর ২০১৬

দুই পা ফেললেই প্রকৃতির সঙ্গে ॥ অবকাশ যাপন ॥ স্বস্তির ছোঁয়া ১

রশিদ মামুন/মোস্তাফিজুর রহমান টিটু ॥ দেখা হয় নাই চক্ষু মেলিয়া ঘর হতে শুধু দুই পা ফেলিয়া একটি ধানের শীষের উপরে একটি শিশিরবিন্দু। ঘরের পাশেই ধানের শীষের শিশিরবিন্দুর সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়েছিলেন কবিগুরু রবিঠাকুর। আগে বেড়াতে যাওয়া, ঘুরতে যাওয়া মানেই মনে করা হতো দেশের বাইরে কোথাও। কিন্তু এখন দিন বদলেছে। দ্বিজেন্দ্রলাল রায় তো বাংলার ধন, ধান আর পুষ্পের রূপে মুগ্ধ হয়ে বলেই গেছেন- এমন দেশটি কোথাও খুঁজে পাবে নাকো তুমি, সকল দেশের রানী সে যে আমার জন্মভূমি। সত্যিই তো, চোখ মেলে দেখলে কী নেই এ বাংলায়। সব থেকে বড় সাগর সৈকত আমাদের। সব থেকে বড় ম্যানগ্রোভ বন সেটাও আমাদেরই। ঘরের পাশের সোনালী ধানক্ষেতের সৌন্দর্যে কে না মুগ্ধ হন। গাছের ছায়ায়-সবুজের মায়ায় আকৃষ্ট হন না এমন জন কে আছেন। অর্থনৈতিক অবস্থার পরিবর্তনের সঙ্গে সৌন্দর্য পিপাসু মানুষের দৃষ্টিভঙ্গিরও পরিবর্তন ঘটেছে। প্রসার ঘটেছে অভ্যন্তরীণ পর্যটনশিল্পের। এখন দু’দ- অবসর কাটাতে ছুটে যান সবুজের কাছে, সাগরের কাছে। কান পেতে শোনেন পাখির গান। রাতে থেকে থেকে শেয়ালের হাঁক। জোনাকি জ্বলা রাতে জ্যোৎস্নায় ভাসতে কার না ভাল লাগে। বাঙালীর অবকাশযাপনের হালচাল নিয়ে দৈনিক জনকণ্ঠ প্রকাশ করছে বিশেষ প্রতিবেদন। ঢাকায় প্রতি বর্গকিলোমিটারে মানুষ বসবাস করেন ৪৯ হাজার ৮১২ জন। নিঃসন্দেহে এ তথ্য আঁতকে ওঠার মতো। মানুষের নগরী এ ঢাকায় শান্তি নেই, স্বস্তি নেই, নির্জনতা নেই, সবুজ নেই, জল নেই, মাটি নেই। যা আছে তা হচ্ছে যানজট, বায়ুতে পানিতে শব্দে দূষণ, আর কংক্রিটের খাঁচা। ঘরের জনালা দিয়ে আলো আসে না, নীল আকাশেরও দেখা মেলে না। শেষ কবে জোৎস্না দেখেছেন অনেকেই মনে করতে পারবেন না। রাতের নগর সোডিয়ামের ঝাঁজালো আলো বদলে এলইডির মিষ্টি আলোতে সেজেছে। তবুও জোৎস্না পরাজিত বিজলির চমকে। সৌন্দর্য পিপাসুদের কাছে তো সে না পাওয়ার বেদনাই বইছে। এ শহরে মানুষের নিঃশ্বাসের গরম বাতাস লেগে যায় মানুষের শরীরে। অথচ ঠিক এখান থেকে খানিকটা পথ পাড়ি দিলেই সবুজ আর সবুজের খোলা প্রান্তর হাতছানি দিয়ে ডাকে। রাতে বসে জোৎস্না উপভোগ করবেন। জারি, সারি, ভাটিয়ালি ও বাউলগান শুনতে ইচ্ছা করবে, তারও ব্যবস্থা আছে। নগরের যাঁতাকলে পিষ্ট হতে হতে অনেকে তো ভুলতে বসেছেন মানুষ না যন্ত্র তিনি। নিরিবিলি নির্জনতায় খানিকটা রিফ্রেশমেন্ট মন্দ নয়, উদ্যম বাড়ে, কাজের প্রতি নতুন করে আগ্রহ তৈরি হয়। মনে করা হচ্ছে, যাদের ঘোরার জন্য হাতে সময় কম হুট করে চাইলেই তো আর কক্সবাজার, কুয়াকাটা, বান্দরবান যাওয়া যায় না। তাদের জন্য গাজীপুরই ভাল। ঢাকার এত কাছেই এত মনোরম সজ্জায় বিভিন্ন রিসোর্ট গড়ে উঠেছে চোখে না দেখলে বিশ্বাস করা কঠিন। বনের মধ্যেই সকল নাগরিক সুবিধায় ভরপুর প্রতিটি অবকাশযাবন কেন্দ্র। এখানে কথা হলো গ্রিনটেক রিসোর্ট এ্যান্ড কনভেনশন সেন্টারে বেড়াতে আসা আতিকা তাবাচ্ছুম রিমুর সঙ্গে, হুট করে দু-এক দিনের জন্য চাইলেই দূরে যাওয়া যায় না। সেদিক থেকে গাজীপুরই ভাল। ঘরের কাছে এমন বেড়ানোর জায়গা রয়েছে, তাই মন চাইলেই চলে আসা যায়। বিশেষ করে সাপ্তাহিক ছুটির দিনগুলো কাজে লাগানো যায়। সবচেয়ে ভাল এখানে নিরিবিলি থাকাও যায় আবার নাগরিক জীবনও খাটো হয় না। রাতের পরিবেশটা আর সুন্দর, নিরিবিলিতে দু’দ- বসে গল্প করা, হুল্লোড় করতে চাইলে বাউলগান শোনা যায়। থেকে থেকে শিয়ালের হাঁক শোনা খানিকটা রোমাঞ্চকরই। এখন মানুষের অর্থনৈতিক অবস্থার সঙ্গে অভ্যাসের বদল হয়েছে, যা কয়েক বছর আগেও ছিল না। এ কারণেই মানুষ বেড়ানোটা পছন্দ করে। কেবলমাত্র গাজীপুরেই এ ধরনের রিসোর্ট রয়েছে ৫৮টি। এছাড়া আরও কিছু রিসোর্ট রয়েছে তা মানের দিক থেকে ততটা উন্নত নয়। গাজীপুরের রিসোর্টগুলো ঘিরে মানুষের আগ্রহ দিন দিন বাড়ছে। বেশ কয়েকটি রিসোর্টে গিয়ে মানুষের সমারোহ দেখা গেল। কেউবা কয়েকদিন পরিবার-পরিজন নিয়ে কাটাতে এসেছেন আবার কেউ কেউ সকালে এসে বিকেলেই ফিরে যাবেন। একদিনের এসব অতিথির জন্য সকাল-সন্ধ্যার বিশেষ প্যাকেজ রয়েছে। তবে শীতেই রিসোর্টগুলো জমে বেশি। এখন একক পরিবারের পাশাপাশি বিভিন্ন ব্যবসায়িক গ্রুপ তাদের কর্মীদের প্রণোদনার জন্য ট্যুরের ব্যবস্থা করছে। রিসোর্টগুলোতে বেড়াতে আসা মানুষরা বলছেন, কর্মব্যস্ত নাগরিক জীবনে হাঁপিয়ে উঠে একটু প্রশান্তির ছোঁয়া পেতে তারা ছুটে আসেন সবুজের প্রান্তরে। সাধারণত ব্যস্ত এ জীবনে মানুষের এত সময় কোথায় দূরে হারিয়ে যাওয়ার? সঙ্গত কারণে ইচ্ছা থাকলেও সময়ের অভাবে অনেক সময় দূরে কোথাও যাওয়া হয়ে ওঠে না। অল্প সময়ের ছুটিতেও দু’দ- প্রকৃতির সান্নিধ্য পেলে মন্দ হয় না। রিসোর্টগুলো ঘুরে দেখা গেল, প্রকৃতির একটু সান্নিধ্য পেতে অনেকেই দলবেঁধে পরিবার-পরিজন বা বন্ধুবান্ধব নিয়ে ছুটে যান কোলাহলমুক্ত প্রত্যন্ত অঞ্চলে। অনেকেই দিনের পাশাপাশি রাতও কাটান সেখানে। তাদের জন্য রাজধানী ঢাকার অদূরে গাজীপুরের প্রত্যন্ত এলাকায় প্রকৃতির মাঝে মনোরম দৃশ্যমাখা গ্রামীণ পরিবেশে গড়ে উঠেছে এসব বেসরকারী রিসোর্ট। এখানে প্রকৃতিপ্রেমী ও ভ্রমণ পিপাসুদের আনাগোনা থাকে সব সময়। আর হাতের কাছে এমন সুন্দর, নয়নাভিরাম প্রাকৃতিক সৌন্দর্য দেখতে রাজধানীসহ দেশের সব শ্রেণী-পেশার মানুষের কাছে এখন জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে গাজীপুরের রিসোর্টগুলো। তাই খুব বেশি দূরে না গিয়ে অল্প সময়ে সবুজের সান্নিধ্য পেতে ঢাকার খুব কাছে গাজীপুরে গড়ে ওঠা আধুনিক ও উন্নতমানের রিসোর্টগুলোতে ভ্রমণ পিপাসুরা ভিড় জমাচ্ছেন প্রতিদিন। এসব রিসোর্টে বিদেশী পর্যটকরাও সময় কাটান প্রায়ই। রাজেন্দ্র ইকোরিসোর্ট এ্যান্ড ভিলেজে বেড়াতে আসা ব্যবসায়ী মোহাম্মদ নাসির জানান, তিনি ঢাকায় মোবাইলের ব্যবসা করেন। এখানে ২০ জন বন্ধু একসঙ্গে বেড়াতে এসেছেন। বন্ধুদের নিয়ে সুইমিংপুলে সাঁতার কাটার পর এখন দুপুরের খাবারের জন্য তৈরি হচ্ছেন। সন্ধ্যায় আবার ফিরে যাবেন। সকাল-দুপুরের খাওয়া আর বিকেলের নাস্তাসহ জনপ্রতি দুই হাজার ৫শ’ টাকা দিতে হয়েছে। এখানের সব আয়োজনকেই ভাল বলছেন তিনি। একটু রিফ্রেশমেন্টের জন্য এ আয়োজনটা যে কেউ চাইলেই করতে পারেন। জানালেন, সারাদিন ঘোরাঘুরি করে সন্ধ্যায় ফিরে যাবেন তারা। নিরিবিলিতে ঘুরে আসার জন্য গ্রিনটেক রিসোর্ট এ্যান্ড কনভেনশন সেন্টার অনেকের প্রথম পছন্দের জায়গা হয়ে উঠেছে এর নিরাপত্তার জন্য। ভবানীপুরের এ রিসোর্টটি বনের মধ্যে হলেও এখানে সব সময় সশস্ত্র আনসার প্রহরায় থাকে। এর বাইরেও নিজস্ব আরও নিরাপত্তারক্ষী রয়েছে। রিসোর্টের চারপাশই দেয়ালঘেরা। সুইমিংপুলটিও আলাদা দেয়ালঘেরা। রয়েছে পুকুরের উপরে কাঠের মাচার ওপর কটেজ। মন চাইলেই পুকুরে নৌকায় ভাসতে ভাসতে ছিপ ফেলতে পারেন অতিথিরা। বড়শি গিললে নিশ্চয়ই আনন্দ সীমা ছাড়াবে। ঘুরে দেখা যায়, গাজীপুরে অবস্থিত বেসরকারী রিসোর্টগুলোর মধ্যে খানিকটা বাড়তি সৌন্দর্যম-িত ‘নক্ষত্রবাড়ী’। নক্ষত্রবাড়ী প্রকৃতিপ্রেমী ও ভ্রমণ পিপাসুদের কাছেও অতিজনপ্রিয় নাম। প্রকৃতিপ্রেমীদের সব সুযোগ-সুবিধা সংবলিত ঢাকার খুব কাছে একটি রিসোর্ট বানানোর কথা চিন্তা করে অভিনেতা তৌকীর আহমেদ ও বিপাশা হায়াত দম্পতি শ্রীপুরের চিনাশুখানিয়ায় ১৪ বিঘা জমির ওপর ‘নক্ষত্রবাড়ী’ নির্মাণ করেন। ২০১১ সালের ১৬ ডিসেম্বর আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হয় নক্ষত্রবাড়ীর। নক্ষত্রবাড়ীর বিশেষ বৈশিষ্ট্য হলো, পুকুরের পানির ওপর কাঠ-বাঁশের সমন্বয়ে নির্মিত ১১টি কটেজ, যার বারান্দায় বসে রাতের পূর্ণিমার চাঁদ দেখতে বেশ লাগে। শুধু তাই নয়, প্রকৃতির মাঝে হারিয়ে যেতে, অতিসৌন্দর্যের কটেজ এগুলো। এখানে বসে রাতে ব্যাঙ আর ঝিঁঝি পোকার ডাক, জোনাকির আলো ছড়ানো টিপ টিপ বাতি কখনও জ্বলেছে কখনও নিভছে। যে কাউকে নিয়ে যাবে নির্ভেজাল প্রকৃতির কাছে। পুকুরের পশ্চিম পাশের পানির ওপর গজারীগাছ দিয়ে নির্মিত এসব কটেজ। কটেজগুলোর ওপর রয়েছে ছনের ছাউনি। পুকুরের পূর্ব পাশে ব্রিটিশ আমলের দরজা-জানালা সংবলিত একটি ঘর রয়েছে। একটু পূর্ব পার্শ্বে রয়েছে সুইমিংপুল। রয়েছে আরও একটি বিল্ডিং কটেজ। কনফারেন্সরুম ও খাবার রেস্টুরেন্ট। আর এ হোটেলে রয়েছে বাংলা, চাইনিজ, ইন্ডিয়ান, থাই, কন্টিনেন্টাল খাবার। এখানে বেড়াতে আসা মোহাম্মদ শামীম জানালেন, সবকিছু সত্যিই সুন্দর। এখানে এলে মনটা ভরে যায়। মনেই হয় না আর ফিরে যাই ব্যস্ত শহরের ব্যস্ততার মাঝে। তিনি জানালেন, নিজেদের জন্য ভাল তবে রিসোর্টগুলোর উচিত শিশুদের কথা চিন্তা করা। শিশুদের খেলাধুলার জন্য কিছু ব্যবস্থা থাকা দরকার বলে মনে করেন তিনি। ভরা পূর্ণিমা এবং রিমঝিম বর্ষা উপভোগ করার জন্য যেতে হবে সুকুন্দীর ছুটি রিসোর্টে। চাঁদনী রাতে বিদ্যুতের আলো জ্বালানো হয় না। এখানে আগত দর্শনার্থীদের নানা ধরনের মৌসুমী ফল সম্পূর্ণ ফ্রি দেয়া হয়। অতিথিদের জন্য এখানে সকালে পরিবেশন করা হয় চালের গুঁড়ার নরম রুটি অথবা চিতই পিঠা, সঙ্গে দেশী নানা প্রকার সবজি, ডাল ভুনা ও মুরগির গোশত। একেবারে কাছ থেকে বিল-ঝিলের আনন্দ উপভোগ করা যায় এখানে। ৫৪ বিঘা জমির ওপর গড়ে তোলা হয়েছে এ রিসোর্ট। ছুটি রিসোর্টের বড় আকর্ষণ ফিশিংয়ের ব্যবস্থা। আগত দর্শনার্থীরা ভেতরের লেকে ইচ্ছামতো মাছ শিকার করতে পারেন। অবশ্য এ জন্য আলাদা ফি দিতে হয়। যারা বনের গহীনে যেতে চান না তাদের জন্য একেবারে রাস্তার পাশেই রিসোর্ট রয়েছে। এর মধ্যে পুষ্পদাম বেশ পরিচিত নাম। ঢাকা থেকে প্রায় ৫৫ কিলোমিটার দূরে বাঘের বাজারে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের পাশে রিসোর্টটির অবস্থান। এখানে বিশাল পরিসরে রয়েছে দেশী-বিদেশী বাহারি গাছের সমাহার। প্রবেশপথেই রয়েছে বিশাল দেবদারুগাছের সারি। এ পথ পেরিয়ে একটু ভেতরে ঢুকলেই রয়েছে ফুলে ফুলে ঘেরা কয়েকটি কটেজ। এখানকার কর্মী জাকির হোসেন জিকু জানালেন, মূলত তাদের রিসোর্টটি পিকনিক স্পট হিসেবে বেশি ব্যবহার হয়। শীতে চহিদা বেশি থাকে। এখানে আসা অতিথিদের নিরাপত্তার বিষয়টি সব সময় বেশি নজর দেয়া হয়। পিকনিকের জন্য এক হাজার জন ধারণক্ষমতার রিসোর্টটি ছুটির দিনগুলোতে ভাড়া দেয়া হয় ৬৫ হাজারে আর অফিসের দিনগুলোতে ৪০ হাজারে ভাড়া দেয়া হয়। তবে রাস্তার পাশে ছোট পরিসরে যারা ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়েছেন তারা অনেকটা বিপাকেই রয়েছেন। হ্যাপি ডে ইন রিসোর্টের কর্মীরা সেই আভাসই দিলেন। মাত্র এক বিঘা জমির উপর রিসোর্টটি অবস্থিত। নানা আয়োজনে সাজালেও ছোট আকারের হওয়ায় মানুষ এখানে খুব একটা আসে না। তবে কোন এক সময় বেশ ভাল ছিল বলে জানালেন রিসোর্টের একজন সিনিয়র কর্মী মোঃ লেনিন। তিনি জানালেন এখানের ভাড়াও তুলনামূলকভাবে বেশ কম। মাত্র দুই হাজার ৫০০ টাকায় রুম ভাড়া পাওয়া যায়। রিসোর্টগুলোর মধ্যে কোন কোনটি আবার প্রকৃতি প্রেমীদের নিজস্ব কটেজ নির্মাণেরও সুযোগ করে দিচ্ছে। রাজেন্দ্রপুর ইকো রিসোর্ট এ্যান্ড ভিলেজ এই সুযোগ দিচ্ছে। এখানে ইতোমধ্যে কয়েকজন বাড়ি করেছেন। সব বাড়ি একই ধরনের। একটি কৃত্রিম জলাধারের উপরে বাড়িগুলো নির্মাণ করা হয়েছে। মাঝে মধ্যে নিজেদের থাকার পাশাপাশি তারা ভাড়াও দিয়ে থাকেন কটেজগুলো। ইয়েস গ্রুপ এই সুবিধা দিচ্ছে। সমবায় ভিত্তিতে এখানে নির্দিষ্ট অঙ্কের টাকার বিনিময়ে আজীবন সদস্য হওয়া যায়। ইয়েস গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মেজর (অব.) কবীর আহমেদ মাহমুদী জানান, তাদের প্রতিষ্ঠানটি প্রকৃতির খুব কাছাকাছি কটেজ করার সুবিধা দিচ্ছে। এর বাইরে প্লটও বিক্রি করছে। এই ধারণা কটেজ কালচারে একেবারে নতুন। তিনি জানান, কটেজের পরিচালনা ব্যয় ওঠাতে তারা ভাড়া দেন। এর বাইরে সাধারণত যারা কটেজ বা ফ্ল্যাট কিনছেন তারা নিজেরাই থাকেন। অপরূপ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি হওয়ায় এই রিসোর্টের নামকরণ করা হয়েছে ‘অঙ্গনা’। গ্রামীণ সৌন্দর্যের বেসরকারী রিসোর্ট অঙ্গনার মালিক উপমহাদেশের জনপ্রিয় কণ্ঠশিল্পী রুনা লায়লার ভাই সৈয়দ আলী মুরাদ ২০০৪ সালে ১৮ বিঘা জমির ওপর এটি নির্মাণ করেন। রাজধানীর অদূরে কাপাসিয়ার সূর্যনারায়ণপুর গ্রামে গড়ে তোলা হয়েছে বেসরকারী এই রিসোর্ট ‘অঙ্গনা’। ভাওয়াল পরগনার লালমাটির পাহাড়বেষ্টিত এই রিসোর্ট। পুরো রিসোর্ট এলাকা একটি শক্তিশালী নিরাপত্তা বেষ্টনীতে ঘেরা। নিরাপত্তার স্বার্থে সিসিটিভি ক্যামেরা রয়েছে পুরো রিসোর্ট এলাকায়। প্রাকৃতিকভাবে সাজানো হয়েছে বাগান। এখানে রয়েছে দুটি খেলার মাঠ, রয়েছে দুটি বিশালাকার পুকুর। মিটিং, প্রশিক্ষণ, কর্মশালা এবং ব্রেন স্টরমিং বৈঠকের ব্যবস্থা। রয়েছে শিশুদের জন্য পুরো কেটারিংয়ের ব্যবস্থা। রয়েছে বিশাল জলাশয়। একটি সুইমিং পুল, একটি ব্যাডমিন্টন কোর্ট ও একটি ডির পার্কও রয়েছে এখানে। অঙ্গনার সবচেয়ে আকর্ষণ হচ্ছে সুন্দরবনের অপরূপ হরিণ। বিশালাকৃতির দুটি খাঁচায় রয়েছে অন্তত ১৬টি হরিণ। সঙ্গে হরিণের বাচ্চাও রয়েছে কয়েকটি। কয়েকটি বাঁশ বাগান পুকুরপাড়ের সৌন্দর্য বাড়িয়ে দিয়েছে। রাজধানী ঢাকা হতে ৫০ কিলোমিটার দূরে গাজীপুরে কালিয়াকৈরের কালামপুরে প্রায় ১০ একর জমিতে গড়ে তোলা হয়েছে সোহাগ পল্লী রিসোর্ট। এখানে চম্পা, জুঁই, কৃষ্ণচূড়া, লোটাস, শাপলা, পপি, গন্ধরাজ, চামেলী, হাসনাহেনাসহ বিভিন্ন ফুলের নামে রয়েছে উন্নতমানের কয়েকটি কটেজ। কটেজগুলোর আকর্ষণও কম নয়। কটেজগুলো এমনভাবে নির্মিত, দেখতে মনে হয় যেন ইতালির রোম শহরের একটি সাজানো গ্রাম। কটেজগুলোর ঠিক সামনে দিয়ে বয়ে গেছে লেক। রয়েছে একটি সুইমিং পুল আর কনফারেন্সের জন্য একটি হলরুম। সোহাগপল্লী রিসোর্টের অন্যতম আকর্ষণ হলো উঁচু-নিচু জমিতে সবুজে ঘেরা জলাশয়ের ওপর নির্মিত অপরূপ সৌন্দর্যম-িত ঝুলন্ত সাঁকো আর এর পিলার ও বেলকনিতে খোদাই করা বিভিন্ন কারুকাজ- যা আগত দর্শনার্থীদের মুগ্ধ করে। বিশাল এক জলাশয়ের মাঝখানে ঝুলন্ত সাঁকো থাকায় দর্শনার্থীদের আকৃষ্ট করে বেশি। জলাশয়ের পূর্ব পাশে রয়েছে একটি দ্বিতল রেস্টুরেন্ট। রেস্টুরেন্টটির নাম রাখা হয়েছে মেজবান। শুধু তাই নয়, কৃত্রিমভাবে একটি লেক নির্মাণ করা হয়েছে। যাতে বর্ষা বা শুষ্ক সবসময়ই পানি থাকে। আর এই লেকের পানিতে বিভিন্ন জাতের মাছের বিচরণ দেখা যায়। গাজীপুরে শ্রীপুরের মাওনায় ‘ড্রিম স্কয়ার’ নামে বিশালাকৃতির বেসরকারী রিসোর্ট রয়েছে। প্রায় ১২০ বিঘা জমির ওপর নির্মিত বিভিন্ন প্রজাতির ফলদ, বনজ ও ঔষধি গাছের সমন্বয়ে গড়ে উঠেছে ড্রিম স্কয়ার রিসোর্ট। এর প্রধান আকর্ষণ বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে সবুজের সমারোহ। ড্রিম স্কয়ারের আকর্ষণীয় স্থানের মধ্যে রয়েছে তেলের ঘানি, ডেইরি ফার্ম, মৎস্য হ্যাচারি, কম্পোস্ট সার প্লান্ট, বায়োগ্যাস প্লান্ট। ড্রিম স্কয়ারের আলাদা বৈশিষ্ট্য হলো রেস্টুরেন্টের খাবারের সবজি এর ভেতরেই চাষাবাদকৃত, যা সম্পূর্ণ সার ও কীটনাশকমুক্ত। ড্রিম স্কয়ার রিসোর্টে রয়েছে প্রাকৃতিকভাবে গড়ে ওঠা বিশালাকৃতির কয়েকটি লেক। এখানে ১৬টি ছোট-বড় পুকুর রয়েছে। ভেতরে সবুজে বেষ্টিত বাগানের মাঝখানে রয়েছে জাতীয় মাছ ইলিশের দুটি প্রতিকৃতি। আর বিভিন্ন গাছে রয়েছে বানরের প্রতিকৃতি। এখানে নানান প্রজাতির পাখির অভয়াশ্রম রয়েছে। ড্রিম স্কয়ারে প্রতিবছর শীতের সময় অতিথি পাখির মেলা বসে। আছে একটি রেস্টুরেন্ট, রয়েছে ওয়াই-ফাই সুবিধা। এখানে সবচেয়ে বেশি বিদেশী পর্যটকদের আনাগোনা। এখানে ২০টি উন্নতমানের কটেজ রয়েছে। এখানে টু-ইন কেবিন, টেরাস, অনার্স, গ্রিন, ইকো এমন বিভিন্ন মানের কটেজ রয়েছে। গাজীপুর সদরের বাঘেরবাজার এলাকায় রয়েছে সাবাহ গার্ডেন রিসোর্ট। বিশ্বের বিভিন্ন নামী-দামী মনীষীর অমিয় বাণী দিয়ে পুরো রিসোর্টটি সাজিয়ে রাখা হয়েছে। মনে হয় এখানে রয়েল বেঙ্গল টাইগার অর্থাৎ বাঘ বেচাকেনা হয়। এ নামকরণ নিয়ে বিভিন্ন জনের কাছে নানা মুখরোচক গল্প শোনা যায়। এলাকার এ নামকরণ নিয়ে আগ্রহী হয়ে ওঠেন শিশু থেকে বয়ষ্করা। সাবাহ গার্ডেন দেশের একমাত্র রিসোর্ট যেখানে রয়েছে একটি লাইব্রেরি। বিশ্বের নামী-দামী লেখকের বই রিসোর্টটিকে ভিন্ন রূপ এনে দিয়েছে। এখানে রয়েছে গ্রামের মাটির ও টিনের ঘর। ৩৬ বিঘার ওপর নির্মিত এই রিসোর্টসের বিভিন্ন লোকেশনে রয়েছে বড় বড় মনীষীদের প্রতিকৃতি। রয়েছে সৌন্দর্যম-িত কয়েকটি কটেজও। রয়েছে ৬টি ছোট-বড় পুকুর। রয়েছে বাঘ, হাতিসহ কয়েকটি প্রাণির প্রতিকৃতিও। বিভিন্ন প্রজাতির ফলদ, ঔষধি, বনজ গাছের সমন্বয়ে গড়ে উঠেছে সাবাহ গার্ডেন রিসোর্টস। গাজীপুরের কালিয়াকৈরের পরিচিত রিসোর্ট হলো ‘আনন্দ’। আনন্দ রিসোর্টটি নামের সঙ্গে বেশ আবেগের মিল রেখেছে। আনন্দদানের সব উপকরণই এখানে জোগাড় করার চেষ্টা করা হয়েছে। শুধু চোখে দেখে নয়, বরং বিভিন্ন খেলার রাইডে চড়ে আনন্দের দেখা মিলবে এখানে। বিলঘেঁষা এই আনন্দ রিসোর্টের বৈশিষ্ট্য হলো, এখানে সরাসরি বিল থেকে মাছ শিকারের ব্যবস্থা রয়েছে। মাছ শিকারীদের জন্য এই সুযোগ অবশ্যই বাড়তি পাওনা। ছিপ ফেলে মাছের জন্য অপেক্ষায় কাটবে সময়। এ ছাড়া রয়েছে ছোটদের খেলার নানা উপকরণ। একটি সুইমিং পুল রয়েছে। ৪২ বিঘা উঁচু-নিচু টিলা ভূমিতে গড়ে তোলা হয় আনন্দ রিসোর্ট। কালিয়াকৈরের সিনাবহের তালতলি এলাকায় এর অবস্থান। বিভিন্ন প্রজাতির ফলদ গাছ ও ৬টি কটেজ রয়েছে এখানে। গাজীপুর রিসোর্টগুলোতে এখন ঢাকার কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের কর্মীদের প্রণোদনা দিতে নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন করছে। গ্রিনটেক রিসোর্ট এ্যান্ড কনভেনশন সেন্টার এর জেনারেল ম্যানেজার নয়ন তালুকদার বলেন আমাদের এখানে পৃথক পৃথকভাবে পরিবারগুলোর চেয়ে কর্পোরেট গ্রাহক বেশি আসেন। তিনি বলেন, আমরা এখানে কর্পোরেট গ্রাহকদের জন্য সভা, সেমিনার আয়োজনের সার্বিক ব্যবস্থা করে থাকি।
×