ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

পদোন্নতির আগে ধারণাগত জ্যেষ্ঠতার দাবি শতাধিক কর্মকর্তার

তিন স্তরে পদোন্নতি হচ্ছে প্রশাসনে ॥ ঘন ঘন এসএসবির সভা

প্রকাশিত: ০৫:৪৮, ২ অক্টোবর ২০১৬

তিন স্তরে পদোন্নতি হচ্ছে প্রশাসনে ॥ ঘন ঘন এসএসবির সভা

তপন বিশ্বাস ॥ প্রশাসনে তিন স্তরে পদোন্নতি দিতে যাচ্ছে সরকার। এ লক্ষ্যে দফায় দফায় চলছে সুপিরিয়র সিলেকশন বোর্ড (এসএসবি)-এর সভা। পদোন্নতির আগে ধারণাগত জ্যেষ্ঠতার দাবি জানাচ্ছে শতাধিক কর্মকর্তা। তারা বলছেন, সকল যোগ্যতা থাকার পরও এর আগে তৎকালীন জনপ্রশাসনের এক ক্ষমতাধর কর্মকর্তার ব্যক্তিগত আক্রোশে কিছু কর্মকর্তা পদোন্নতি বঞ্চিত হয়েছেন। ধারণাগত জ্যেষ্ঠতা প্রদান না করে পদোন্নতি দিলে তারা আবারও বঞ্চনার শিকার হবেন। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, প্রশাসনে আবারও তিন স্তরে পদোন্নতি দেয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। এ লক্ষ্যে এনএসবি’র একাধিক বৈঠকও হয়েছে। অতিরিক্ত সচিব পদে এই পদোন্নতিতে এবার বিবেচনায় আসছে ৮৬ ব্যাচের কর্মকর্তা। যুগ্ম-সচিব পদে পদোন্নতিতে বিবেচনায় আসছেন ১১ ব্যাচের কর্মকর্তারা। এছাড়া বিভিন্ন ব্যাচের ‘লেফট আউট’ কর্মকর্তারা এই দুই পদের জন্য বিবেচনায় আসছেন। আর উপসচিব পদে পদোন্নতির ক্ষেত্রে বিবেচনায় আসছেন ২১ ও ২২ ব্যাচের কর্মকর্তারা। এদিকে পদোন্নতির আগে ধারণাগত জ্যেষ্ঠতার দাবি তুলেছেন শতাধিক কর্মকর্তা। ৮৩, ৮৪, ৮৫ ও ৮৬ ব্যাচের এই কর্মকর্তাদের বক্তব্য ইতোপূর্বে দেয়া পদোন্নতিতে যোগ্যতা থাকার পরও কিছু কর্মকর্তা তৎকালীন জনপ্রশাসনের এক ক্ষমতাশালী কর্মকর্তার ব্যক্তিগত আক্রোশের কারণে বঞ্চিত হয়েছেন। এর মধ্যে কোন কোন প্রভাবশালী মন্ত্রীর একান্ত সচিবও রয়েছেন। পদোন্নতির আগে তাদের ধারণাগত জ্যেষ্ঠতা প্রদান করলে এদের অনেকেই এই দফায় পদোন্নতি পাবেন। আর ধারণাগত জ্যেষ্ঠতা না দিয়ে পদোন্নতি দিলে আবারও তারা বঞ্চনার শিকার হবেন। অতীতে ১৯৮৩ (বিশেষ) ব্যাচে ৬৫০, ১৯৮৪ ব্যাচে ৪৫০ এবং ১৯৮৫ ব্যাচে ৫৫০ সর্বমোট ১৬৫০ কর্মকর্তা নিয়োগ করা হয়। পদোন্নতিযোগ্য পদ সৃজন না করে প্রবেশ পদে এমন বিপুলসংখ্যক কর্মকর্তা নিয়োগের ফলে মাথাভারি প্রশাসনসহ সমস্ত প্রশাসনে মারাত্মক স্থবিরতা সৃষ্টি হয়। এই পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে বর্তমান সরকার শূন্য পদের বাইরে পদোন্নতির ধারা অব্যাহত রেখেছে যা নিঃসন্দেহে প্রশংসার দাবিদার। কিন্তু এই তিনটি ব্যাচের পরবর্তী ১৯৮৬ ব্যাচে মাত্র ২১৬ কর্মকর্তাকে নিয়োগ করা হয়। পদোন্নতির ক্ষেত্রে ১৯৮৬ (অষ্টম) ব্যাচের কর্মকর্তারা বর্তমান সরকারের আমলে ব্যাচগতভাবে কিছুটা বঞ্চিত হওয়ার পাশাপাশি কিছু কর্মকর্তা অন্যায় ও অযৌক্তিক আচরণের শিকার হয়েছেন। ১৯৮৬ সালের পূর্ববর্তী এবং পরবর্তী সকল ব্যাচ দুই/তিন দফায় পদোন্নতি পেয়েছেন। ১৯৮৪ ব্যাচের কর্মকর্তাগণ বর্তমান সরকারের আমলে যুগ্মসচিব, অতিরিক্ত সচিব এবং সচিব পদে পদোন্নতি পেয়েছেন। ১৯৮৫ ব্যাচের কর্মকর্তাগণ যুগ্মসচিব ও অতিরিক্ত পদে পদোন্নতি পেয়েছেন। আবার ১৯৮৬ (অষ্টম) ব্যাচের পরবর্তী নবম ব্যাচের কর্মকর্তাগণ উপসচিব ও যুগ্মসচিব পদে পদোন্নতি পেয়েছেন। অথচ ১৯৮৬ ব্যাচের কর্মকর্তাগণ বর্তমান সরকারের প্রায় আট বছরে মাত্র একটি স্তরে অর্থাৎ যুগ্মসচিব পদে পদোন্নতি পেয়েছেন আবার এ ব্যাচের অনেক মেধাবী ও যোগ্য কর্মকর্তা শ্রেফ ব্যক্তিগত আক্রোশের শিকার হয়ে কয়েক দফা পদোন্নতি বঞ্চিত হন। ১৯৮৬ ব্যাচের ১০৭ কর্মকর্তাকে প্রথম দফায় বিগত ২০১৩ সালের ১৮ জুলাই বর্তমান সরকারের আমলে যুগ্মসচিব পদে পদোন্নতি দেয়া হয়। ৩ কর্মকর্তাকে একই তারিখ হতে ধারণাগত জ্যেষ্ঠতা দিয়ে পরবর্তীতে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। পুনঃবিবেচনার মাধ্যমে একই বছরের ১০ সেপ্টেম্বর আরও ২০ কর্মকর্তাকে পদোন্নতি দেয়া হয়। বেশ কিছু দক্ষ ও যোগ্য কর্মকর্তা বাদ পড়লে ২০১৫ সালের ৬ এপ্রিল ১৭ এবং ২০১৬ সালের ১৫ মে ৮ কর্মকর্তাকে যুগ্ম সচিব পদে পদোন্নতি দেয়া হয়। ২০১৫ ও ২০১৬ সালে পদোন্নতি প্রাপ্ত এই ২৫ কর্মকর্তাসহ বিভিন্ন ব্যাচের বহু কর্মকর্তা তৎকালীন ‘কেবিনেট সেক্রেটারিয়েটের (সংস্থাপন বিভাগ)’ এর জারিকৃত ৩১/১২/১৯৭০ তারিখের জ্যেষ্ঠতার সাধারণ নীতিমালার সংশ্লিষ্ট বিধিমোতাবেক ধারণাগত জ্যেষ্ঠতার জন্য ইতোমধ্যে জনপ্রশাসন সচিব বরাবর আবেদন করেছেন। ২০১৩ সালে পদোন্নতি বঞ্চিত এসব কর্মকর্তা তাঁদের ন্যায্য পাওনা থেকে বঞ্চিত হওয়ায় হতাশায় ভুগছেন। যেসব শর্তের ভিত্তিতে কর্মকর্তা ২০১৩ সালে পদোন্নতি বঞ্চিত হন হুবহু একই শর্তাবলীর ভিত্তিতে তাঁরা ২০১৫ ও ২০১৬ সালে পদোন্নতি পান। কিছু কর্মকর্তার ব্যক্তিগত আক্রোশের শিকার হয়ে তাঁরা পদোন্নতি বঞ্চিত হন। এখন তারা ন্যায় বিচারের জন্য দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন। এসব বঞ্চিত কর্মকর্তা বর্তমান সরকারের অনেক গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীর পিএসসহ অনেক গুরুত্বপূর্ণ পদে পদায়িত থেকে সরকারের ঘোষিত নীতি ও কর্মসূচী বাস্তবায়নে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে চলেছেন। প্রশ্ন উঠেছে, জ্যেষ্ঠতার সাধারণ নীতিমালা একটি সুস্পষ্ট আইনী বিধান যা বলবৎ থাকা অবস্থায় জনপ্রশাসন এসব বঞ্চিত কর্মকর্তাকে ধারণাগত জ্যেষ্ঠতা প্রদান না করে প্রশাসনের কর্মকর্তাদের বিধি-বিধান মেনে চলার নির্দেশনা প্রদান স্ববিরোধিতা নয় কি? এ কারণে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় নিজেই আইন মানে না বলে অভিযোগ উঠেছে। বর্তমান সরকারের আমলে ১৯৮৬ ব্যাচের কর্মকর্তা যাঁরা ২০১৩ সালে দুই দফায় পদোন্নতি পেয়েছেন যুগ্মসচিব হিসাবে তাঁদের চাকরি দুই বছর পূর্ণ হওয়ায় অতিরিক্ত সচিব হিসেবে পদোন্নতি পাওয়ার হকদার বলে তাঁরা মনে করেন। একই সঙ্গে ২০১৩ সালে পদোন্নতি বঞ্চিত বেশ কিছু মেধাবী, দক্ষ ও যোগ্য কর্মকর্তাগণ যাতে এবারে যুগ্মসচিব হিসাবে চাকরি দুই বছর পূর্ণ না হওয়ার অজুহাতে আবার পদোন্নতি বঞ্চিত না হন সে বিষয়ে ন্যায় বিচার প্রত্যাশা করছেন।
×