ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

চাঁপাইনবাবগঞ্জে স্থাবর সম্পত্তির মূল্য নির্ধারণ নিয়ে জটিলতা

ঋণ দিতে পারছে না ব্যাংক

প্রকাশিত: ০৪:৫২, ২ অক্টোবর ২০১৬

ঋণ দিতে পারছে না ব্যাংক

স্টাফ রিপোর্টার, চাঁপাইনবাবগঞ্জ ॥ সরকার নিয়ন্ত্রিত প্রায় পাঁচটি তফশিলী ব্যাংক গত দুই বছর ধরে কোন ঋণ দিতে না পারার কারণে কয়েক হাজার কোটি টাকা অলস পড়ে রয়েছে তাদের ব্যাংকে। এর অন্যতম কারণ হচ্ছে স্থাবর সম্পত্তির মূল্য নির্ধারণ জটিলতা। বেশ কয়েক বছর আগে সরকারীভাবে পৌর এলাকার মধ্যে জমির মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছিল। যার তালিকা প্রতিটি রেজিষ্ট্রি অফিস সংরক্ষণ করে থাকে। কিন্তু বর্তমানে অতীতের মূল্য নির্ধারণ এখন অনেকটাই তামাদি হয়ে গেছে। চলমান বাজারদর কয়েকগুণ বেড়ে আকাশ ছুঁই ছুঁই করলেও সরকার নতুন করে এসব জমি বা স্থাবর সম্পত্তির পুনঃ মূল্য নির্ধারণ করেনি। ফলে ছোটবড় ব্যবসায়ী বা শিল্পপতিরা সরকারী ব্যাংকে ঋণ করার জন্য গিয়ে হোঁচট খাচ্ছে। কারণ ঋণের বিপরীতে স্থাবর যথা জমি বা বাড়ি বন্ধক রাখার নিয়ম রয়েছে। সরকারী ব্যাংকগুলো সেই মোতাবেক সরকারীভাবে বেঁধে রাখা মূল্য নির্ধারণ করতে গিয়ে বাধার মুখে পড়ছে। কারণ বর্তমান বাজারদরে এসব বাড়ি বা মাটির দাম কয়েকগুণ বেশি হলেও সরকারী বিধান মতে পূর্বের মূল্য নির্ধারণ করায় ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। ফলে তারা সরকারী ব্যাংকে ঋণ না নিয়ে ঝুঁকছে বেসরকারী ব্যাংকের দিকে। সেখানে বন্ধক রাখা জমি বা বাড়ির মূল্য কয়েকগুণ বেশি দেখাতে পারছে। আবার অনেক নিম্নমানের জমির মূল্য কয়েকগুণ বেশি দেখিয়ে বেসরকারী ব্যাংকের কাছে ঋণ নিতে পারছে। ফলে সরকারী সোনালী, জনতা, অগ্রণী, রূপালী ও বেসিক ব্যাংকের ঋণ বিতরণ ব্যবস্থা একেবারে ভেঙ্গে পড়েছে। কোন পার্টি তাদের কাছে যাচ্ছে না। পাশপাশি জেলা শহরসহ উপজেলা ও বিভিন্ন বড় বড় বাজার সংলগ্ন এলাকায় বেসরকারী ব্যাংকের শতাধিক শাখা রয়েছে। যদিও অধিকাংশ বেসরকারী ব্যাংক তাদের ঋণের টাকা ওঠাতে পারছে না বার বার নিলাম বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেও। আবার যেসব বেসরকারী ব্যাংক অধিক উদ্যোগী হয়ে বন্ধক সম্পত্তি নিলাম ডাকে ওঠাচ্ছে তা কেউ নিতে চাচ্ছে না। কারন, বেসরকারী ব্যাংকের একশ্রেণীর কর্মকর্তা তাদের নিয়োজিত আইনজীবীর সঙ্গে যোগাসাজশ করে পাঁচ লাখ টাকার স্থাবর সম্পত্তি দাম চড়িয়ে লিখে রেখেছে পাঁচ কোটি টাকা। ফলে নিলাম ডাকে এসব সম্পত্তি উঠলেও পার্টি সরেজমিন দেখতে গিয়ে হোঁচট খাচ্ছে। খাল, খন্দক বা পানিতে ডুবে থাকা এসব নিম্নমানের সম্পত্তি কেনার একেবারে অযোগ্য। চড়ামূল্য লিখে রাখার কারণে এসব হচ্ছে। ফলে এসব বেসরকারী ব্যাংকের নিলামে ওঠা সম্পত্তি কেউ কিনতে চাচ্ছে না ৭/৮ বার নিলাম ডাকের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেও। সরকারী ব্যাংকগুলো কঠোরভাবে নীতিমালা মেনে চলার কারণে এখানে এখন পর্যন্ত কোন বন্ধকী সম্পত্তি নিয়ে তাদের বেকায়দায় পড়তে হয়নি। তবে তাদের কাছে ব্যাংকে ঋণ গ্রহণে কোন ধরনের ব্যবসায়ী আগ্রহ দেখাচ্ছে না। বিধায় তারা গত দেড় বছরে তেমন কোন উল্লেখিত যোগ্য বা মোটা অংকের ঋণ বিতরণ করতে পারেনি। তবে এসব ব্যাংক কর্মকর্তা আশাবাদ প্রকাশ করে বলেছেন, পাঁচ বছর আগের মূল্য নির্ধারণ এখন একেবারে তামাদি হয়ে পড়েছে। নতুন করে স্থাবর সম্পত্তি বা মাটি ও বাড়ির দাম পুনঃ মূল্য নির্ধারণ করলে বাজারে সমতা ফিরে আসবে। ব্যবসায়ী ও শিল্পপতিরাও তাদের স্থাবর সম্পত্তি বর্তমান বাজারদরের সঙ্গে সমতা রেখে বন্ধক দিয়ে ঋণ নিতে আগ্রহী হয়ে উঠবে সরকারী ব্যাংকে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক সরকারী ব্যাংকের কয়েক কর্মকর্তা জনকণ্ঠের কাছে প্রথমত কোন ধরনের মত প্রকাশ করতে না চাইলেও তাদের একটাই দাবি বর্তমান বাজারদরের সঙ্গে তাল মিলয়ে স্থাবর সম্পত্তির মূল্য পুনঃ নির্ধারণ করা হোক। ঋণ বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা পূরণে ব্যর্থ হওয়া এই পাঁচ (সরকারী) ব্যাংকের বহু কর্মকর্তা উর্ধতনদের ক্ষোভের ও কোপের মুখে পড়ে শাস্তি পেয়েছে বা পাচ্ছে। কারও কারও ডিমোশন বা অনির্ধারিত বিচ্ছিন্ন এলাকার ব্যাংকে শাস্তিযোগ্য বদলি করে খায়েশ মিটিয়েছে ও মেটাচ্ছে উর্ধতনরা। অপরাধ একটাই, তারা ঋণ বিতরণে টার্গেট মোতাবেক ব্যর্থ হয়েছে। আর এই ব্যর্থতার মূল কারণ স্থাবর সম্পত্তির মূল্য বর্তমান বাজারদরের চেয়ে অনেক কম।
×