ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

পদ্মায় জেগে ওঠা চরে ফের বসতি গড়ার সংগ্রাম

প্রকাশিত: ০৪:২৮, ২ অক্টোবর ২০১৬

পদ্মায় জেগে ওঠা চরে ফের বসতি গড়ার সংগ্রাম

মামুন-অর-রশিদ, রাজশাহী ॥ রাজশাহীর পদ্মা নদীর পানি কমতে শুরু করেছে। ডুবে যাওয়া চর আবার জেগে উঠছে। জেগে উঠা চরে আবারও চলছে ঘর-বসতি স্থাপন। ভাঙ্গা-গড়ার খেলায় মনোবল না হারানো পদ্মাপারের (চরাঞ্চল) মানুষ আবারও নতুন স্বপ্ন নিয়ে, নতুন আশায় বাঁধছে ঘর-বাড়ি। পানি কমার পর চরাঞ্চল জুড়ে এখন কোথাও ঘন কাশবন, কোথাও হালকা-কোথাও শুধু ঘাস, কোথাও জমে আছে সামান্য পানি। এর মধ্যে বাঁশের খুঁটি পুঁতে ঘর নির্মাণ শুরু করেছেন বাসিন্দারা। পবায় পদ্মা নদীতে জেগে ওঠা চরাঞ্চলে চলছে নতুন বসতি গড়ার সংগ্রাম। চরাঞ্চলের মানুষের জীবনই সংগ্রামী। সংগ্রাম করেই টিকে থাকতে হয় তাদের। টিকে থাকার সংগ্রামেই আবারও নতুন করে ঘর-বাড়ি তুলছেন তারা। ফারাক্কার প্রভাবে পদ্মার পানি বৃদ্ধি পেয়ে এবার বন্যায় রাজশাহীর চলাঞ্চলের প্রায় ২৫ হাজার মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হন। আর নষ্ট হয়েছে ৪৭ হাজার হেক্টর জমির ফসল। ক্ষতিগ্রস্তদের বেশিরভাগ চরাঞ্চলের মানুষ। বন্যার পানিতে তলিয়ে যায় পবার চর শ্যামপুর, চর খিদিরপুর, চর খানপুর, চর খিদিরপুর, চর আষাড়িদহের মতো আরও কয়েকটি চরের বাড়িঘর আর ফসলের জমি। তবে, বন্যার পানি নেমে চর জেগে উঠার সঙ্গে সঙ্গে আবার নতুন স্বপ্নে ঘর-বাড়ি স্থাপনের কাজ শুরু করেছেন এখানকার মানুষ। ফিরতে শুরু করেছেন চরে। বেশিরভাগ ঘর-বাড়ির আর কোন চিহ্ন নেই। সবকিছুই আবার নতুন করে শুরু। আগামী বছরে এরকম আরেক বন্যায় আবার মুছে যাবে হয়ত সবকিছু। কিন্তু তাতে কি? এমন যুদ্ধ প্রতিবছরই করতে হয় তাদের। বাড়ি-ঘর নদীতে বিলীন ছাড়াও চিকিৎসা, শিক্ষা থেকে বঞ্চিত থাকার পরও বাঁচার তাগিদে জীবন সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছে তারা। জেলার পবা উপজেলার চর খিদিরপুর এলাকার রমজান আলী (৬৫)। ছেলে মেয়ের বিয়ে দিয়ে দিনমজুরের কাজ করে স্ত্রীকে নিয়ে বসবাস করেন। এবারের বন্যায় নদীতে নিয়ে গিছে তার বাড়িটি। গত ৩ বছর ধরে প্রতিবার নদীতে ভেঙ্গে যায় তার ঘর-বাড়ি। আবার বাড়ি মেরামত করে বাস শুরু করেন। তবুও তিনি নদী ভাঙ্গনের কাছে হার মানেনি। চরের বাসিন্দারা আবারও ফিরতে শুরু করেছেন চরের ঠিকানায়। এভাবেই প্রতিকূলতার সঙ্গে লড়াই করে তাদের বসবাস ফি বছর। একই এলাকার সুবেদা বেগম জানান, প্রতি বছর ভাঙাগড়াই শুধু সমস্যা নয়। চরে কোন ক্লিনিক নেই, নিজেদের ও গর্ভবতী মায়েদের সঠিক চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত হতে হয়। কোন উপায় না পেয়ে অদক্ষ ধাত্রী দিয়েই সন্তান প্রসব করাতে হয়। খুব জরুরী হলে রোগীকে চার পাঁচজন মিলে ধরে নৌকায় করে রাজশাহীর শহরের হাসপাতালে নিতে হয়। এভাবেই চলে তাদের জীবন।
×