ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

যমুনাপাড়ের দ্রোহের গল্প

জাতীয় নাট্য উৎসবে প্রশংসিত বগুড়া থিয়েটারের নাটক ‘দ্রোহ’

প্রকাশিত: ০৩:৫৬, ২ অক্টোবর ২০১৬

জাতীয় নাট্য উৎসবে প্রশংসিত বগুড়া থিয়েটারের নাটক ‘দ্রোহ’

সাজু আহমেদ ॥ নদীমাতৃক বাংলাদেশে কান পাতলেই ভেসে আসে নদীপাড়ের মানুষের আহাজারি। জল ছলছল নদীর প্রবাহমানতা প্রকৃতির সৌন্দর্যকে যেমন ঋদ্ধ করে, তেমনিভাবে অতিরিক্ত বন্যায় স্থানীয় মানুষের দুঃখ-দুর্দশাকেও বাড়িয়ে দেয়। প্রকৃতির আগুনবরণিতে লড়াই-সংগ্রামের চিরন্তন চিত্র খুঁজে পাওয়া যায় বাংলাদেশের নদী ভাঙ্গনকবলিত এলাকাগুলোতে। এমনি একটি নদী ভাঙ্গনকবলিত অঞ্চল উত্তরবঙ্গের প্রাণকেন্দ্র বগুড়া জেলার সারিয়াকান্দি উপজেলা। এ অঞ্চলের মানুষগুলো প্রতিনিয়ত প্রমত্তা যমুনার সঙ্গে লড়াই করে। যমুনার পাকের সঙ্গে যেন ঘূর্ণাবর্তে ঘুরতে থাকে তাদের ভাগ্যচাকা। কিন্তু প্রকৃতির ভাঙ্গনের সঙ্গে যখন সমাজের শোষক শ্রেণী অকৌলিন্য মানুষের ভাগ্যবদলের নিয়ন্তা হয়ে ওঠে তখনই ঘটে বিপর্যয়। ভিটেমাটি হারানো মানুষের আহাজারি যেন শূন্য আকাশে অস্ফুট বেদনার ধ্বনি তোলে। নদীপাড়ের মানুষের লড়াকু জীবন ভাষ্য নিয়ে রচিত হয়েছে বগুড়া থিয়েটারের নাটক ‘দ্রোহ’। নাটকটি রচনা করেছেন বগুড়া থিয়েটারের প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক এবং বাংলাদেশ গ্রাম-থিয়েটারের মহাসচিব তৌফিক হাসান ময়না। নাটকটি গতকাল শনিবার জাতীয় নাট্যশালার প্রধান মিলনায়তনে মঞ্চস্থ হয়। এদিন নাটকটির ২০তম মঞ্চায়ন হলো। এমনটিই জানান নাটকের রচিয়তা ও নির্দেশক তৌফিক হাসান ময়না। তিনি আরও জানান ‘দ্রোহ’ নাটকটি একটি শিল্পীত বর্ণনাত্মক উপাখ্যান। শাশ্বত পালাগানের বিভিন্ন গীতল উপস্থাপনায় নাটকের প্রতি দৃশ্যে দৃশ্যে রয়েছে বাংলার প্রাণরস। নাটকটিতে একাধারে উঠে এসেছে এ অঞ্চলের হাজার বছরের সেতুবন্ধনের চিত্র, আবার তুচ্ছ ঘটনায় হীন স্বার্থপর মানুষের বিষাক্ত ভাবনায় সেই বন্ধন যমুনার চরের মতো ভেঙ্গে যাবারও চিত্র। নাট্যজন তৌফিক হাসান ময়না জানান, মূলত নাটকে উঠিয়ে আনতে চেয়েছি প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষের জীবণালেখ্য। যেখানে রয়েছে হাসি, আনন্দ আবার ক্ষমতালোভীদের লোলুপ জিহ্বা। যে মানুষগুলো নানা ঝড়-ঝঞ্ঝায় কাঁধে কাঁধ রেখে বিপদ পাড়ি দেয় তারাই আবার ধর্মীয় মাদকতায় বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। এখানেই নাটকের সমকালীন প্রাসঙ্গিকতা। ‘দ্রোহ’ নাটকে গল্পের প্রয়োজনে লাঠি ব্যবহারের নান্দনিক ও অনুপম প্রদর্শনী দর্শকদের মুগ্ধ করে। এছাড়া নাটকে ব্যবহৃত কীর্তন আর গীতের সুর দর্শকদের মোহিত করে। বর্ণনাত্মক রীতিতে একাত্ত হয়ে কুশীলবৃন্দ নানা ভঙ্গিমায় নাটকের শিল্পরূপটি এঁকেছেন। তারুণ্যনির্ভর এ নাটকের বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেন- কনক কুমার পাল অলক, ফারুক হোসেন, জাকিউল সবুজ, বিধান কৃষ্ণ রায়, পাপড়ি ইসলাম, নিশু, দীপাবলী মুখার্জী, তপন পাটোয়ারি, শোভন চন্দ্র, আমজাদ হোসেন, সুপিন বর্মণ, সবুজ বর্মণ, হামিদ, মাহবুবে বাপ্পী, সিজুল ইসলাম, ওসমান, রাফি, আশিক, আরাফাত, রুহি। সঙ্গীত পরিচালনা করেছেন নজরুল ইসলাম এবং আবহ সৃষ্টিতে ছিলেন সজল, অভি, মিঠু, তন্ময় প্রমুখ। নাটকের আলোক পরিকল্পনায় ছিলেন ঠা-ু রায়হান এবং আলোক সঞ্চালনায় দ্বীন মোহাম্মদ দীনু।
×