ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

ধর্মঘটমুক্ত হোক বন্দর

প্রকাশিত: ০৩:৪৯, ২ অক্টোবর ২০১৬

ধর্মঘটমুক্ত হোক বন্দর

অচল চট্টগ্রাম বন্দর সাময়িক সচল হয়েছে। টানা পাঁচদিন পণ্য পরিবহন বন্ধ থাকায় চব্বিশ হাজার কোটি টাকার রফতানি বাধাগ্রস্ত হয়। রফতানি না হওয়ায় পোশাক খাতের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হয়েছে। চট্টগ্রাম বন্দর দাবি আদায়ের হাতিয়ার হতে পারে না জানার পরও কেন এই ধর্মঘট। কেন আমদানি-রফতানি পণ্য পরিবহনে বাধা দান? যার মাসুল দেশবাসীকে দিতে হবে। প্রাইম মুভার মালিক শ্রমিক ঐক্য পরিষদ আগামী ৪ অক্টোবর পর্যন্ত ধর্মঘট স্থগিত রাখলেও প্রত্যাহার করেনি। তাদের এই আচরণ দেশ, জাতি, অর্থনীতি ও ব্যবসা-বাণিজ্যবিরোধী অবশ্যই। ধর্মঘটের কারণে যে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে তার ক্ষতিপূরণ দেবে কে? এই সময়ে বাজার আহরণেও বিঘœ ঘটেছে। আগামী চার অক্টোবর আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠকে বিষয়টি আলোচিত হবে। বৈঠকে খেয়াল খুশিমত-ধর্মঘট ডাকা বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নেয়া জরুরী। গত চল্লিশ বছরে বন্দরে এত কন্টেনারজট সৃষ্টি হয়নি। ধর্মঘটজনিত কারণে সৃষ্ট অচলাবস্থার প্রভাব সারাদেশের অর্থনীতিতে নেতিবাচক অবস্থার সৃষ্টি করছে। সড়ক পরিবহন বিভাগ কর্তৃপক্ষের জারি করা প্রজ্ঞাপনকে কেন্দ্র করে এই ধর্মঘট। ১৬ আগস্ট গাড়িভেদে পণ্য পরিবহনের পরিসীমা বেঁধে দেয়া হয় প্রজ্ঞাপনে। প্রতিবাদে সোমবার থেকে শুরু হয় ধর্মঘট। প্রজ্ঞাপণে বলা হয়, চৌদ্দ চাকার প্রাইম মুভার ট্রেইলর গাড়ি ও কন্টেনার ওজনসহ সর্বোচ্চ তেত্রিশ টন পরিবহন করা যাবে। এর বেশি হলে স্তরভেদে দুই থেকে সর্বোচ্চ বারো হাজার টাকা পর্যন্ত জরিমানা দিতে হবে। প্রজ্ঞাপনের পর প্রতিটি প্রাইম মুভার ট্রেইলরকে জরিমানা করা হয়। প্রতিবাদে তারা যে কর্মসূচী নিয়েছে, প্রায় আট হাজার গাড়ির পণ্য বোঝাই কন্টেনার পরিবহন বন্ধ থাকায় যথাসময়ে পণ্য রফতানি সম্ভব হয়নি। ফলে বিদেশী ক্রেতার কাছে নেতিবাচক অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। দেশের আমদানি-রফতানি বাণিজ্যের পণ্যবাহী কন্টেনারের সাতান্নব্বই শতাংশই চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে আনা-নেয়া করা হয়। সেই বন্দরই যদি থাকে অচল, তবে পরিস্থিতি যে কত ভয়াবহ তা সংশ্লিষ্টরা উপলব্ধি করতে পারছেন। ধর্মঘটের কারণে ইতোমধ্যে প্রায় তিন হাজার কোটি টাকার শিপমেন্ট বাতিল হয়েছে তৈরি পোশাক শিল্পের। তৈরি পোশাকবাহী কন্টেনার ফেলে জাহাজ চলে গেছে। বিভিন্ন বেসরকারী কন্টেনার ডিপোতে সাড়ে ছয় হাজার কন্টেনার আটকা পড়ে আছে। আমদানি করা বিভিন্ন কারখানার কাঁচামাল কারখানায় পৌঁছতে না পারায় ব্যাহত হয়েছে উৎপাদন। অন্যান্য আমদানি পণ্য গন্তব্যে যেতে না পারায় আমদানিকারকরাও ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন। বন্দরকেন্দ্রিক প্রায় আট হাজার ট্রেইলর রয়েছে। এর মধ্যে সাত শ’ ট্রেইলর অফডক কর্তৃপক্ষের মালিকানায়। কিন্তু এসব গাড়িও চালানো হচ্ছে না। চালক-শ্রমিকরা প্রাইম মুভার ট্রেইলর মালিক শ্রমিক সমিতিভুক্ত হওয়ায় এক প্রকার জিম্মি করে ফেলেছে ট্রেইলর খাতকে। অফডক থেকে যে সাঁইত্রিশ ধরনের আমদানি পণ্য খালাস করা হয়ে থাকে, সেগুলোতেও সময়ক্ষেপণ বাড়ছে। ফলে বন্দরে কন্টেনারজট লেগে যাচ্ছে। ধর্মঘটের কারণে বিদেশী অর্ডার বাতিল হয়েছে। ধর্মঘটের নামে আমদানি-রফতানি পণ্যকে জিম্মি করার অর্থই হচ্ছে দেশের অর্থনীতির চাকাকে স্থবির করা, উৎপাদনের ক্ষেত্রকে সঙ্কুুচিত করা ও দেশবাসীকে বিপন্ন পরিস্থিতির মুখোমুখি করা। এই সঙ্কট নিরসনে সরকারের দ্রুত উদ্যোগ গ্রহণ না করা বিস্ময়কর। চট্টগ্রাম বন্দরকে ধর্মঘটমুক্ত রাখার জন্য সর্বাত্মক পদক্ষেপ গ্রহণ বাঞ্ছনীয়। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের ব্যর্থতা কোনভাবেই কাম্য নয়। সচল বন্দর চায় দেশবাসী।
×