ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

দণ্ডপ্রাপ্ত খুনীদের সম্পদ

প্রকাশিত: ০৩:৪৮, ২ অক্টোবর ২০১৬

দণ্ডপ্রাপ্ত খুনীদের সম্পদ

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের খুনী এবং মুক্তিযুদ্ধে ৩০ লাখ মানুষ হত্যাকারী মৃত্যুদণ্ড প্রাপ্ত যুদ্ধাপরাধী-মানবতাবিরোধীদের নামে-বেনামে থাকা সকল স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি বাজেয়াফত করা হবে। এমন তথ্য জানা গেল আইনমন্ত্রীর বক্তব্যে। বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে এই ধরনের একটি প্রস্তাবও সর্বসম্মতিক্রমে পাস হয়। আইনমন্ত্রী বলেছেন, বঙ্গবন্ধুর পলাতক খুনীদের সম্পত্তি বাজেয়াফত করতে আইনের কোন প্রয়োজন পড়বে না। কিন্তু মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হওয়া বঙ্গবন্ধুর খুনীদের সম্পত্তি বাজেয়াফত করতে গেলে আইনের কিছুটা সংশোধনী আনতে হবে। এ লক্ষ্যে আইন মন্ত্রণালয় থেকে একটি বিল প্রস্তুত করা হচ্ছে। বিলম্বে হলেও এই ধরনের সিদ্ধান্তকে সাধুবাদ জানাবে দেশবাসী। কারণ, দেশের সচেতন মানুষ মনে করে, জাতির পিতাকে হত্যাকারী এবং মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা করে গণহত্যাসহ যারা মানবতাবিরোধী ও যুদ্ধাপরাধ করেছে তাদের কোন সম্পত্তিই এদেশে থাকা উচিত নয়। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট এদেশের কিছু কুসন্তান এবং ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে পাকিস্তান হানাদার বাহিনীর সশস্ত্র সহযোগী হিসেবে এদেশের কিছু কুলাঙ্গার মানুষ হত্যায় মেতেছিল। তারা রাজাকার, শান্তি কমিটি, আলবদর, আলশামস নামে কমান্ড বাহিনী গড়ে ’৭১ সালে বাঙালী নিধনে মত্ত হয়, ’৭৫ সালে চক্রটিই জাতির পিতাকে সপরিবারের হত্যা করে। ’৭১-এ তাদের অনেকেরই রাজনৈতিক পরিচয় ছিল জামায়াত, মুসলিম লীগ, পিডিপি, নেজামে ইসলামসহ কতিপয় বাঙালী ও স্বাধীনতাবিদ্বেষী দলভুক্ত। পাকিস্তানী হানাদারদের সহযোগী হিসেবে তারা কেবল গণহত্যা, ধর্ষণ, লুটপাট, অগ্নিসংযোগেই লিপ্ত ছিল না- সে সময় লুটপাটের মাধ্যমে অর্থের পাহাড়ও গড়ে তুলেছে কেউ কেউ। স্বাধীনতার পর তারা আত্মগোপনে থাকলেও সামরিক শাসক জিয়াউর রহমান, এরশাদ ও পরে খালেদা জিয়ার সহযোগী হিসেবে ক্ষমতার কাছে থেকে দেশে-বিদেশে বিপুল পরিমাণ অবৈধ অর্থ-বিত্তের মালিক হয়। অন্যদিকে তাদেরই সহযোগী কিছু কুসন্তান ’৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করে রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতা পায়। ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ জারি করে খুনীদের বিচারের পথ বন্ধ করার চেষ্টা করা হয়। খুনীদের কেউ কেউ দেশে-বিদেশে তৎকালীন সরকারের লাভজনক গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্বপালন করে বিপুল বিত্তবৈভবের মালিক হয়। উভয় ঘটনায় অপরাধীদের সম্পদ ‘বাজেয়াফতে’ আইন প্রণয়নের দাবি উঠে আসছে দীর্ঘদিন ধরে। এই ব্যাপারে সরকার উদ্যোগ নিচ্ছে বিভিন্ন সময় এমন কথাও বলা হয়েছে। অবশেষে সংসদে প্রস্তাব গ্রহণের মাধ্যমে এই দাবির প্রতি সরকারের সমর্থন প্রতিষ্ঠিত হলো। সময়ের প্রয়োজনে এই দাবির যৌক্তিকতা রয়েছে। ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত হওয়ার স্বার্থে এটা জরুরী বলে আমরা মনে করি। উল্লেখ্য, দ-প্রাপ্তদের সম্পদ বাজেয়াফত করার উদাহরণ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রয়েছে। একথা সত্য যে, দ-িত অপরাধীদের কারণে বহু পরিবার নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তিকে হারিয়ে অনেক শহীদ পরিবারে অমানিশার অন্ধকার নেমে আসে। শহীদ পরিবারগুলো মানসিক, শারীরিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। স্বাধীনতার এই দীর্ঘ সময় পরও বহু পরিবার উঠে দাঁড়াতে পারেনি। এখন সরকারের উচিত তাদের সম্পদ বাজেয়াফত করে যেসব শহীদ পরিবারের প্রয়োজন রয়েছে, তাদের কল্যাণে এসব অর্থ ব্যয় করা। অথবা রাষ্ট্রের উচিত হবে তাদের সব সম্পদ রাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণে নেয়া। দ-প্রাপ্ত খুনীদের সম্পদের ব্যাপারে সংসদ যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে তা প্রস্তাব গ্রহণের মধ্যেই যেন সীমাবদ্ধ না থাকে। এই ব্যাপারে অতিদ্রুত সংসদে একটি বিল আনা হোক এবং তা পাসের মাধ্যমে কার্যকর করার পদক্ষেপ গ্রহণ করা হোক।
×