ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

গৃহবধুকে গ্রাম ছাড়ার নির্দেশ! গ্রাম্য শালিসে ধর্ষণ চেষ্টাকারীর জরিমানা!

প্রকাশিত: ০১:৪৮, ১ অক্টোবর ২০১৬

গৃহবধুকে গ্রাম ছাড়ার নির্দেশ! গ্রাম্য শালিসে ধর্ষণ চেষ্টাকারীর জরিমানা!

নিজস্ব সংবাদদাতা, নওগাঁ॥ নওগাঁর মহাদেবপুরে গৃহবধুকে ধর্ষণ চেষ্টার অভিযোগে গ্রাম্য শালিসে ধর্ষন প্রচষ্টাকারী যুবকের ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। নির্যাতিত গৃহবধুসহ তার পরিবারকে ১৫ দিনের মধ্যে গ্রাম ছাড়ার নির্দেশ দেয় শালিসদার মাতবররা। ঘটনাটি ঘটেছে শুক্রবার দিনগত রাত ৯ টায় উপজেলার ভীমপুর ইউনিয়নের বাগাচারা আদর্শগ্রামে। ঘটনাটি এলাকায় তোলপাড় সৃষ্টি করেছে। ওই গ্রামের বাসিন্দারা জানায়, তাদের প্রতিবেশী মাইক্রোবাস চালক মিজানুর রহমান কাজলের শয়ন ঘরের দরজার ছিটকানি ভেঙ্গে ঘরে ঢুকে তার স্ত্রী নুপুর বেগমকে (২২) বৃহস্পতিবার রাত ২ টার দিকে পার্শ্ববর্তী পাতনা গ্রামের খায়রুল ইসলামের ছেলে তুহিন মন্ডল (২৫) জোর পূর্বক ধর্ষণের চেষ্টা করে। এ সময় ওই গৃহবধুর চিৎকারে পাশের ঘরে থাকা তার শ্বাশুড়ি করিমন বেওয়াসহ প্রতিবেশী লোকজন ঘটনাস্থলে এসে হাতে নাতে তুহিনকে ধরে গণধোলাই দিয়ে আটকে রাখে। ঘটনাটি মিমাংসার নামে ধামাচাপা দিতে আদর্শগ্রামের সভাপতি আয়েজ উদ্দীন শুক্রবার রাত ৯ টায় সেখানে এক শালিস বৈঠক ডাকে। জানা গেছে এ শালিসে স্থানীয় মাতবররা ধর্ষণ চেষ্টাকারী তুহিনের ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করাসহ নির্যাতিত গৃহবধুসহ পরিবারকে ১৫ দিনের মধ্যে গ্রাম ছাড়ার নির্দেশ দেন। উল্লেখ্য ঘটনার রাতে ওই গৃহবধুর স্বামী বাড়িতে ছিলনা। তবে এই বিতর্কিত রায় দেয়া নিয়ে ওই সময় শালিসের মাতবরদের সঙ্গে নির্যাতিত পরিবারের লোকজনের মধ্যে ধাক্কাধাক্কি ও মারপিটের ঘটনা ঘটে বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান। শালিস প্রহসন দাবি করে নির্যাতিত গৃহবধুর স্বামী মিজানুর রহমান বলেছেন, টাকার বিনিময়ে ইজ্জত কেনা বেচা করে যৌন কর্মীরা। তার স্ত্রী কোন যৌনকর্মী নয়। যদি সে যৌন কর্মী হয়, তাহলে গ্রাম ছাড়ার আগেই তাকে তালাক দেবে বলে স্বামী মিজানুর রহমান জানান। শালিসে উপস্থিত ওই ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান মোশারফ হোসেন বকুল নির্যাতিত গৃহবধু পরিবারকে গ্রাম ছাড়ার নির্দেশের সত্যতা অস্বীকার করে বলেছেন, ধর্ষণ চেষ্টাকারী ৫০ হাজার জরিমানার টাকা ১৫ দিনের মধ্যে নির্যাতিত পরিবারকে দেয়ার সিদ্ধান্ত দিয়েছে আদর্শগ্রাম সভাপতি আয়েজ উদ্দীন। এ ব্যাপারে মহাদেবপুর থানার অফিসার ইনচার্জ সাবের রেজা আহম্মেদ সাংবাদিকদের জানান, ঘটনাটি তিনি শুনেছেন। তবে তার কাছে এখনো কেউ অভিযোগ বা মামলা করতে আসেনি। নির্যাতিত পরিবার মামলা করতে চাইলে অবশ্যই মামলা নেয়া হবে এবং দোষীদের বিরুদ্ধে তদন্ত সাপেক্ষে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
×