ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

আন্তর্জাতিক কৃষি সম্মেলনে উঠে আসলো নানা সুপারিশ

প্রকাশিত: ২৩:১১, ১ অক্টোবর ২০১৬

আন্তর্জাতিক কৃষি সম্মেলনে উঠে আসলো নানা সুপারিশ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ কৃষি গবেষণায় নিয়োজিত বিজ্ঞানীদের মাত্র ২০ শতাংশ পিএইডি ডিগ্রিধারী। নীতি নির্ধারণী পর্যায়ে রয়েছে দক্ষ জনবলের অভাব। ফলে বৈশ্বিকভাবে প্রণয়নকৃত নীতিতে মার খাচ্ছে দেশ। গবেষণা পরিচালনায়ও রয়েছে অপর্যাপ্ত অর্থের সংস্থান। কৃষি উন্নয়নের ধারাকে অব্যাহত রাখতে কৃষির সঙ্গে সম্পৃক্ত প্রতিটি প্রতিষ্ঠানকে পুনরুজ্জীবিত করতে হবে। কৃষির প্রতি মানুষকে অনুপ্রাণিত করতে সামাজিকভাবে কৃষক ও কৃষিবিদদের মূল্যয়িত করা আবশ্যক। আন্তর্জাতিক এই সম্মেলনে উঠে আসা সুপারিশমালা দ্রুতই সরকারের কাছে পেশ করা হবে। শুক্রবার বিকেলে রাজধানীর কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশনে পঞ্চম জাতীয় কনভেনশন ও আন্তর্জাতিক কৃষি কনফারেন্স ২০১৬’র বিভিন্ন সেমিনার ও সমাপনী অনুষ্ঠানে বক্তাদের আলোচনায় এসব কথা উঠে আসে। কৃষি উন্নয়ন, সম্প্রসারণ ও সম্ভাবনাসহ নানা দিক তুলে ধরতে দুই দিনব্যাপী ওই কনফারেন্সের আয়োজন করে কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন বাংলাদেশ। বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে শুক্রবার বিকেলে আন্তর্জাতিক এই সম্মেলনের সমাপ্তি ঘোষণা করেন। সমাপনী অনুষ্ঠান ও ‘কৃষি প্রতিষ্ঠানকে পুনরুজ্জীবিতকরণ’ শীর্ষক সর্বশেষ সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিলের সাবেক নির্বাহী চেয়ারম্যান ড. মো. ওয়াইস কবির। কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশনের সভাপতি আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিমের সভাপতিত্বে সমাপনী অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের মহাপরিচালক মো. হামিদুর রহমান, প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের মহাপরিচালক অজয় কুমার রায় ও মৎস্য অধিদফতরের মহাপরিচালক কৃষিবিদ সৈয়দ আরিফ আজাদ। মূল প্রবন্ধে ড. মো. ওয়াইস কবির বলেন, কৃষির গবেষণা প্রতিষ্ঠানে মাত্র ২০ শতাংশ বিজ্ঞানী পিএইডি ডিগ্রীধারী, যা পাশ্ববর্তী দেশে ৮০ শতাংশ। এছাড়া কৃষিতে মানব সম্পদ উন্নয়নে গৃহীত পোগ্রামের স্বল্পতাও দৃশ্যমান। কৃষিপ্রতিষ্ঠানগুলোর জনবলের চিত্র তুলে ধরে তিনি বলেন, প্রতিটি প্রতিষ্ঠানই অপর্যপ্ত জনবল নিয়ে চলছে। কোন কোন প্রতিষ্ঠানের নীতি নির্ধারণী পর্যায়ে কাজ চলছে ভারপ্রাপ্তের মাধ্যমে। আবার এন্ট্রি লেভেলে বেশি পদ রয়েছে। নীতি প্রণয়নে দক্ষ জনবলের অভাবের কারণে সহযোগীদের সঙ্গে কাজ করতে গিয়ে দেশ মার খাচ্ছে। ভবিষ্যতের কৃষি প্রসঙ্গে আলোকপাত করতে গিয়ে তিনি আরও বলেন, খাদ্য নিরাপত্তা, বায়ো সেফটি, এগ্রো বিজনেজ নিয়ে আরও ভাবতে হবে। প্রতিবন্ধকতার কথা উল্লেখ করে ওয়াইস কবির বলেন, নিন্মাঞ্চলে কয়েকটি জেলা প্রতিবছরই জলাবদ্ধতার শিকার হয়। এই এলাকাগুলো শুষ্ক মৌসুমে কৃষি সম্প্রসারণের কাজের আওতাধীন। আবার বর্ষাকালে মৎস্য অধিদফতরের আওতাধীন। এক্ষেত্রে মাঠ পর্যায়ে সেবা বৃদ্ধি করতে নীতিগতভাবে সিদ্ধান্ত প্রয়োজন। সেবা বৃদ্ধি করতে চাইলে দক্ষ জনবল করেত হবে। গবেষণায় আরও বেশি ফান্ড তৈরি করতে হবে। প্রধান অতিথির বক্তব্যে বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বলেন, কৃষিখাতে বঙ্গবন্ধুর দর্শন সবাইকে মুগ্ধ করতো। আজ আমরা যে স্থানে দাঁড়িয়ে আছি তার ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেছিলেন বঙ্গবন্ধুই। কৃষকের প্রতি তাঁর যে মমত্ববোধ- কাছে না থাকলে তা বুঝা যায় না। তিনি দেশকে সোনার বাংলায় রুপান্তরিত করে যেতে পারেন নি, তাঁর কন্যার হাত ধরে ১৬ কোটি মানুষের দেশ আজ খাদ্যে উদ্বৃত্ব। মন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধু লক্ষ্য নিয়ে কাজ করতেন, শেখ হাসিনাও লক্ষ্য নিয়ে কাজ করেন। বর্তমানে কৃষক ও কৃষির অভূতপূর্ব সাফল্য এসেছে। কয়েকটন চাল রফতানি করেছি। বর্তমানে আফ্রিকার কয়েকটি দেশে রফতানির চেষ্টা করছি। শ্রীলঙ্কায় রফতানি করেছি, নেপালেও সাহায্য করেছি। বাংলাদেশ এখন চাল রফতানি কারক দেশ। তিনি বলেন, দেশ এখন খাদ্য নিরাপত্তায় সন্তোষজনক স্থানে অবস্থান করছে। বাংলাদেশ এগিয়ে চলছে, এগিয়ে যাবে। অনেক ষড়যন্ত্র হয়েছে। কিন্তু উন্নয়ন থেমে থাকে নি, থেমে থাকবে না। সভাপতির বক্তব্যে কৃষিবিদ আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম এমপি বলেন, কৃষি উন্নয়নে নতুন নতুন উইং ও লোকবল বাড়ানো দরকার। কনফারেন্সে উঠে আসা সুপারিশমালা তৈরির জন্যে কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। সরকারের কাছে আমরা তা কয়েক দিনের মধ্যে পেশ করবো। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের মহাপরিচালক কৃষিবিদ মো. হামিদুর রহমান বলেন, সব ক্ষেত্রেই সফল হতে পারি নি, অনেক ক্ষেত্রেই সফল হয়েছি। কৃষি উন্নয়নে যে ইতিবাচক সাড়া দেখা গেছে, তা সামনের দিকে এগিয়ে নিতে চাইলে জনবল বৃদ্ধি দরকার। প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের মহাপরিচালক কৃষিবিদ অজয় কুমার রায় বলেন, আজকের কৃষি জটিল কৃষি। জটিল কৃষিতে সাফল্য পেতে হলে প্রয়োজন দক্ষ নেতৃত্ব। আর বর্তমানে তা বিদ্যমান। দেশে প্রাণী সম্পদের দ্রুত বিকাশ ঘটেছে। গবাদি পশুর সংখ্যা তেমনভাবে বৃদ্ধি না পেলেও দুধের উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়েছে যথেষ্টভাবে। মৎস্য অধিদফতরের মহাপরিচালক কৃষিবিদ সৈয়দ আরিফ আজাদ বলেন, মাত্র ৭ বছরে দেশে মাছের উৎপাদন বেড়েছে ১০ লাখ মেট্রিক টন। মাছ চাষের মাধ্যমে দেশে বেকারত্ব দূর হয়েছে। তিনি বলেন, দেশের সমুদ্রসীমায় ১৯৭৩ সালে প্রথম জলজরিপ হয়েছিল, আশা করছি নতুন করে খুব দ্রতই সার্ভে করতে পারবো। প্রতিবন্ধকতা প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, পাঙ্গাস চাষে খরচ এবং বাজার মূল্য প্রায় সমান হয়ে গেছে। এক্ষেত্রে যদি প্রণোদনা দেওয়া না হয় তাহলে ভবিষ্যতে খাতটি হুমকির মুখে পড়বে। এর আগে ‘এগ্রো- বায়োডারসিটি’ শীর্ষক একটি পেরেলাল সেশনে সভাপত্বি করেন শেরে বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. কামাল উদ্দিন আহমেদ। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কৃষিবিদ আবদুল মান্নান এমপি। এসময় কয়েকটি প্রবন্ধে বক্তারা বলেন, চিংড়ি চাষের কারণে ডুমুরিয়া উপজেলায় খাদ্য দেয় এমন গাছের পরিমাণ কমেছে ৭৪ শতাংশ। গাজীপুরের কাপাসিয়ায় রাস্তার দুই পাশে গাছের পরিমাণ বেড়েছে ১ দশমিক ৮৮ শতাংশ। বাড়ির উঠোনে বেড়েছে ফলের গাছ। এসময় কৃষিবিদ আবদুল মান্নান এমপি বলেন, কৃষিবিদরা কাজের মাধ্যমে যাতে এগিয়ে যেতে পারে তা নিশ্চত করতে হবে। আন্তর্জাতিক এই সম্মেলন থেকে উঠে আসা সুপারিশগুলো বাস্তবায়নে মন্ত্রণালয়গুলোকে উদ্যোগ নিতে হবে।
×