ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

বেলুন উৎসব

প্রকাশিত: ০৬:৪৭, ১ অক্টোবর ২০১৬

বেলুন উৎসব

ইব্রাহিম নোমান ॥ আকাশে পাখি ওড়ে, দূর আকাশে মেঘ ওড়ে, মানুষের মনও ওড়ে। মানুষ আকাশে উড়তে পারে না। কিন্তু বেলুন উড়িয়ে আকাশে ওড়ার আনন্দ পায় মানুষ। যুক্তরাষ্ট্রের নিউ মেক্সিকো অঙ্গরাজ্যের রিও গ্রানডে ভ্যালিতে প্রতিবছরের অক্টোবরে বসে মজার এক আসর। হেমন্তের নীল আকাশটা তখন হয়ে ওঠে বর্ণিল এক ক্যানভাস। আর সেটা হয় আকাশে উড়তে থাকা নানা আকারের হরেক রং আর ঢঙের বেলুনের জন্য। বিশ্বখ্যাত এই বেলুন উৎসবের নাম ‘অ্যালবুকার্ক ইন্টারন্যাশনাল বেলুন ফিয়েস্তা’। শুধু যুক্তরাষ্ট্রে নয়, যুক্তরাজ্য, ইতালি, কানাডা, ফ্রান্স, হল্যান্ড, বেলজিয়াম, চীন, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়াসহ অন্যান্য দেশেও বেলুন উৎসবের আয়োজন করা হয়। যুক্তরাষ্ট্রের ৯ দিন ধরে চলা এ উৎসবে জড়ো হয় লাখো মানুষ। শুরুটা হয়েছিল মাত্র ১৩টি বেলুন নিয়ে, সেই ১৯৭২ সালে। করোনাডো শপিং মলে ২০ হাজার দর্শকের সামনে নিছক মজার ছলে শুরু হয়েছিল উৎসবটি। এক দৌড় প্রতিযোগিতার মধ্য দিয়ে ওড়ানো হয় বেলুন। পরের বছরে ‘ওয়ার্ল্ড হট এয়ার বেলুন চ্যাম্পিয়নশিপ’-এর সঙ্গে যোগ হয় এ উৎসব। এতে উৎসবটি পায় নতুন মাত্রা। ২০০০ সালের দিকে এসে উৎসবে অংশ নেয়া বেলুনের সংখ্যা গিয়ে দাঁড়ায় সাড়ে সাত শ’তে। এ উৎসবে বেলুনযান বেশি ব্যবহৃত হয়। চলো বন্ধুরা, বেলুন সম্পর্কে জেনে নিই নানা তথ্য- খেলনা বেলুন শিশুরা খেলনা হিসেবে যে বেলুন ব্যবহার করে, তা সাধারণত ল্যাটেক্সের তৈরি। মুখ দিয়ে জোরে ফুঁ দিয়ে ফুলিয়ে এ ধরনের বেলুন ফুলানো হয়। তবে ভেতরে কার্বন-ডাই-অক্সাইড ব্যবহৃত হয় বলে বেলুন বাতাসের তুলনায় ভারি হয়ে যায় এবং বাতাসে ভাসতে পারে না। জন্মদিন, বিয়ে ও বিভিন্ন উৎসব অনুষ্ঠান রং-বেরঙের বেলুন দিয়ে সাজানো হয়। গ্যাস বেলুন সাধারণ বেলুনে হাইড্রোজেন গ্যাস ভরা হলে তা বাতাসে ভাসে। তখন বেলুনের মুখ সুতায় বেঁধে সে সুতা হাতে ধরে রাখতে হয়। হাইড্রোজেন গ্যাস বাতাসের চেয়ে হাল্কা তাই এ রকম বেলুন বাতাসে ভাসে। শান্তির প্রতীক কবুতর উড়িয়ে যেমন অনেক অনুষ্ঠানের সূচনা করা হয় তেমনি একগুচ্ছ গ্যাস বেলুন উড়িয়ে অনুষ্ঠান উদ্বোধনের রেওয়াজ চালু আছে বিভিন্ন দেশে। গ্যাস বেলুন ছেড়ে দিলে ভাসতে ভাসতে তা ক্রমেই আকাশে উঠে যায়। তবে সুতায় মুখ বাঁধা হলেও গ্যাস ‘লিক’ হয়ে যেতে থাকে এবং এক সময় বেলুন নিচে নামতে শুরু করে। বেলুনযান বেলুন যখন যান হিসেবে ব্যবহৃত হয়, তখন তার আকৃতি হয় যথেষ্ট বড় এবং তা ভর্তি করা হয় সাধারণ বাতাসের থেকে হাল্কা কোন গ্যাস দিয়ে। সাধারণত হিলিয়াম গ্যাস দিয়ে। বেলুনের নিচের দিকে একটা বাঁশ কিংবা বেতের ঝুড়ি রশি দিয়ে লাগানো থাকে। বেলুনকে গ্যাস পুরে ফুলিয়ে নিলে তা উপরের দিকে উঠতে থাকে। তখন নিচে ঝুড়িটা ঝুলে থাকে এবং মানুষ বা বেলুন যাত্রী এই ঝুড়িতে অবস্থান করে। অতীতে বেলুনের উচ্চতা নিয়ন্ত্রণের জন্য ঝুড়িতে রাখা হতো বালির বস্তা। পরবর্তীতে বেলুনের উপরিভাগে আলগা পরিচলনক্ষম পর্দা লাগানোর মাধ্যমে বেলুনের ভেতরকার বাতাস প্রয়োজনমতো বের করে দেয়া ও ধরে রাখার ব্যবস্থা করার মাধ্যমে বেলুনের নিয়ন্ত্রণকে সহজ করা হয়। অ্যালবুকার্ক ইন্টারন্যাশনাল বেলুন ফিয়েস্তার মূল অংশ সকাল থেকেই শুরু হয়। রং-বেরঙের বেলুনগুলো এ সময় আকাশে ওড়ানোর প্রস্তুতি চলতে থাকে। সব বেলুন যাতে ঠিকভাবে আকাশে ওড়ে নিরাপদে মাটিতে নেমে আসতে পারে, সে জন্য একদল ট্রাফিক কন্ট্রোলার কাজ করেন। এঁদের বলা হয় ‘জেব্রাস’। দায়িত্ব পালনের সময় জেব্রার মতো সাদা-কালো দাগকাটা পোশাকের জন্য তাঁদের এই নামকরণ। উৎসবের আসল আর সবচেয়ে আকর্ষণীয় অংশটি দেখা যায় দিনের শেষ ভাগেই। সন্ধ্যা পৌনে ৬টা নাগাদ শুরু হওয়া এ আয়োজনের নাম ‘বেলুন গো’। ১৯৭৯ সাল থেকে শুরু হওয়া এ আয়োজনে আকাশে ওড়ানো বেলুনগুলো একই সঙ্গে নিজেদের বার্নার জ্বালিয়ে আকাশে উড়ে বেড়াতে থাকে। সেই সঙ্গে রাতের আকাশজুড়ে বার্নারের আগুন থেকে তৈরি হয় অসাধারণ সব আলোকছটা। এ দৃশ্য দেখার জন্য নিচে জড়ো হয় লাখো মানুষ, সেই সঙ্গে শুরু হয় ছবি তোলার হিড়িক। উৎসবে থাকে বেলুন রেসেরও আয়োজন। সবচেয়ে বেশি দূরত্ব অতিক্রম করা বেলুনকে দেয়া হয় পুরস্কার। যেখানে স্বপ্ন আকাশে ডানা মেলে। বেলুন উৎসবে বিশ্বের নানা দেশের প্রতিযোগীরা অংশগ্রহণ করে। বেলুন উৎসবে আরেকটি আকর্ষণীয় দৃশ্যের সৃষ্টি হয় প্রতিদিন রাতে। বেলুনগুলো তখন মাটির সামান্য উপরে থাকে। প্রতিটি বেলুনের বার্নার জ্বালানো হয়। মিউজিকের তালে তালে কাঁপতে থাকে আগুনের শিখা। তৈরি হয় আলো-আঁধারির মায়াবি পরিবেশ। এই পর্বকে বলা হয় ‘নাইট গ্লো’। উৎসবকে প্রাণবন্ত করতে এবার আতাশবাজির খেলা ও প্যারাস্যুট জাম্পারদের পারফরমেন্সও সংযুক্ত করা হয়েছে। এই বেলুনগুলো যারা পরিচালনা করেন তাদের বলা হয় বেলুন পাইলট। উৎসব চলাকালে বেলুন পরিচালনায় নিজেদের দক্ষতার প্রতিযোগিতায় নামেন বেলুন পাইলটরা। যুক্তরাষ্ট্রের বেলুন ফিয়েস্তায়ে হাজির না হতে পারলেও বাবা-মা ও বন্ধুদের সঙ্গে নিয়ে অনেক বেলুন কিনে বাসায় নিজেই বেলুন উৎসবের আয়োজন করতে পারো। [email protected]
×