ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

দন্ত্যস রওশন

বিড়াল ছানার কথা

প্রকাশিত: ০৬:৪৬, ১ অক্টোবর ২০১৬

বিড়াল ছানার কথা

পাশাপাশি দুটি গ্রাম। গ্রামের মাঝখানে ছোট খাল। সেই খালে বাঁশের সাঁকো। একদিন, সন্ধ্যাবেলা। একটি ছোট বিড়াল সাঁকো পার হবে। কিন্তু কিছুতেই সে সাঁকোতে উঠতে পারছিল না। একবার সাঁকোতে পা রাখে আবার সেখান থেকে মাটিতে পা নামায়। একটি শালিক পাখি হিজল গাছ থেকে দেখছিল বিড়াল ছানাটিকে। শালিক পাখি উড়ে গিয়ে বিড়াল ছানাকে বলল, ‘এ্যাই বিড়াল ছানা, ওই পাড়ে যাবে?’ বিড়াল ছানা বলল, ‘মিয়াঁও।’ শালিক পাখি বুঝতে পারল বিড়াল ছানা ওই পাড়ে যাবে। শালিক পাখি লাফিয়ে লাফিয়ে বাঁশের সাঁকো পার হলো। বিড়াল ছানা বলল, ‘মিয়াঁও।’ তার মানে বিড়াল ছানা বুঝতে পেরেছে কিভাবে খাল পার হতে হবে। বিড়াল ছানা শালিক পাখির মতো সাঁকোতে পা রাখল। যাচ্ছে, যাচ্ছে, যাচ্ছে। যেতে যেতে একদম সাঁকোর মাঝখানে। এবার হঠাৎ বিড়াল ছানার পা কাঁপতে লাগল। ওই মুহূর্তে একটা ঝড়ো হাওয়া এলো। বাঁশের সাঁকোটা নড়ে উঠল। আর ওমনি বিড়াল বাচ্চা ঝপাস করে পড়ে গেল সাঁকো থেকে। পড়ে আটকে গেল কচুরিপানার মধ্যে। মিয়াঁও মিয়াঁও শব্দ শুরু করে দিল বাচ্চাটা। শালিক পাখিও চেচাঁমেচি শুরু করে দিল। সেই পথ দিয়েই যাচ্ছিল গ্রামের হরমুজ আলী। হরমুজ আলীকে দেখেই শালিক পাখিটি তার মাথার ওপর দিয়ে উড়তে লাগল। ‘হায়, হায়। এ দেখি আজব পাখি।’ মনে মনে বলে হরমুজ আলী। এবার সে মুখ ফুটে বলে, ‘এ্যাই শালিক কি চাস তুই?’ এ কথা বলতেই সে উড়ে গেল বিড়ালের কাছে। তখন হরমুজ আলী শুনতে পেল মিয়াঁও মিয়াঁও শব্দ। তার হাতে ছিল টর্চলাইট। সে টর্চ জ্বালিয়ে দেখল একটা বিড়াল বাচ্চা। ভিজে চুপসে গেছে। ‘এখন কি করি বলতো, বিড়াল বাচ্চা? তোকে বাঁচাতে গেলে তো আমাকে পানিতে নামতে হবে।’ হরমুজ আলী একা একাই বলে। ‘না থাক। বাড়ি চলে যাই। এতো রাতে পানিতে নেমে কাজ নেই।’ যেই এই কথা বলেছে হরমুজ আলী অমনি শালিক পাখিটা চেচাঁমেচি শুরু করে দিল। হরমুজ আলীর কেমন মায়া হলো বিড়াল বাচ্চাটার জন্য। তার চোখ ভিজে উঠল। তার মেয়ে দিশা বিড়ালকে জড়িয়ে ধরে কেমন ঘুমিয়ে থাকে সেই দৃশ্য তার মনে পড়ল। সে খালে নেমে পড়ল। নামতে নামতে গলা পানিতে। বিড়ালটাকে বলল, ‘আয়, এদিকে আয়। বিড়ালটা সাঁতরিয়ে তার কাছে চলে এলো। বিড়ালটাকে কোলে নিল সে। আর অমনি আনন্দে শালিক পাখিটা চেঁচামেচি শুরু করল। হরমুজ আলী বিড়ালটাকে বাড়িতে নিয়ে এলো। তার মেয়ে দিশার এখন দুইটা বিড়াল। দুটোকেই ভীষণ আদর করে দিশা।
×