ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

পদ্মা সেতুর সুপার স্ট্রাকচার জোড়া লাগানো হচ্ছে কুমারভোগে

প্রকাশিত: ০৬:২৩, ১ অক্টোবর ২০১৬

পদ্মা সেতুর সুপার স্ট্রাকচার জোড়া লাগানো হচ্ছে কুমারভোগে

মীর নাসিরউদ্দিন উজ্জ্বল, মাওয়া থেকে ফিরে ॥ পদ্মা সেতুর ভিত ক্রমশ প্রসারিত হচ্ছে। ইতোমধ্যেই পদ্মার বুকে ৩৭ পিলার স্থাপন হয়ে গেছে। এই পিলার স্থাপনের গতি বাড়াতে জার্মানি থেকে আনা ২০ কিলোজুল ক্ষমতার হ্যামার এখন মাওয়ার পথে। শুক্রবার সন্ধ্যায় প্রাপ্ত সর্বশেষ খবর অনুযায়ী বিশাল হ্যামারের চালানটি লোহিত সাগর অতিক্রম করেছে। ১৫ অক্টোবরের মধ্যে এটি মাওয়ায় পৌঁছার কথা রয়েছে। আরও নতুন খবর হচ্ছে- চীন থেকে ১ হাজার টন ক্ষমতার ফ্লোটিং ক্রেন মাওয়া আসছে ৮ অক্টোবর। এসব ভারি যন্ত্রপাতি আসার পর পদ্মা সেতুর কাজে গতি আরও বেড়ে যাবে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন। এদিকে মাওয়ার কুমারভোগের ওয়ার্কশপে আরেক বিস্ময়! এখানে ইতোমধ্যেই সেতুর এক স্প্যান সমপরিমাণ ১৫০ মিটার দীর্ঘ সুপারস্ট্রাকচার জোড়া লাগানো সম্পন্ন প্রায়। স্টিলের বিশাল এই সুপারস্ট্রাকচার ফিটিং নিয়ে চীনের বিশেষজ্ঞ দল কাজ করে যাচ্ছে। সদ্য চীন থেকে আসা দু’টি স্প্যান পরিমাণ এই সুপারস্ট্রাকচার ফিটিংয়ের কাজ এখানে চলছে। পদ্মা সেতুর নির্বাহী প্রকৌশলী (মূল সেতু) দেওয়ান আব্দুল কাদের শুক্রবার সন্ধ্যায় জনকণ্ঠকে জানান, সুপারস্ট্রাকচার স্থাপনে কাজ দ্রুত এগিয়ে চলেছে। ডিসেম্বরেই পদ্মা সেতু দৃশ্যমান হবে। প্রথমে জাজিরা প্রান্তে ৩৭ ও ৩৮ নম্বর পিলারের ওপর এই সুপারস্ট্রাকচার স্থাপন হবে। সে লক্ষ্যেই শুধু এই দু’পিলারই নয় আশপাশের পিলারগুলোতেও পাইল স্থাপনের কাজ চলছে হরদম। পদ্মায় এই পাইল স্থাপন ছাড়াও জারিরা প্রান্তে সেতু সংযোগ (ভায়াডাক্ট) কাজসহ অন্যান্য ধাপেও নির্মাণযজ্ঞ এগিয়ে চলেছে। বর্ষার পানি কমতে থাকায় নদী শাসনসহ নানা কাজে পরিবর্তন আসতে শুরু করেছে। স্রোতের তীব্রতা হ্রাস পাওয়ায় এখন মাওয়া প্রান্তে নতুন নতুন কাজ শুরুর প্রক্রিয়া চলছে। এদিকে পদ্মা সেতু পুনর্বাসন প্রকল্পের চারটি প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং পাঁচটি স্বাস্থ্যকেন্দ্র চালু প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। আগামী জানুয়ারি থেকেই বিদ্যালয়গুলোতে ক্লাস শুরু এবং স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলোতে চিকিৎসা দান শুরু হচ্ছে। নির্বাহী প্রকৌশলী তোফাজ্জল হোসেন এই আশা ব্যক্ত করে জনকণ্ঠকে জানিয়েছেন, চিকিৎসক ও শিক্ষকসহ অন্যান্য জনবল নিয়োগের জন্য সার্ভিস প্রভাইডার নিয়োগ দেয়ার কাজ চলছে। সার্ভিস প্রভাইডাররাই জনবল নিয়োগ করবে। সাতটি পুনর্বাসন কেন্দ্রে এ পর্যন্ত ১ হাজার ৯৯০ প্লট বরাদ্দ হয়েছে। তৈরি হয়েছে ২ হাজার ৭শ’ প্লট। ইতোমধ্যে অনুমোদন হয়েছে প্রায় ২ হাজার ২শ’ প্লট। অনুমোদনের পর নির্ধারিত টাকা জমা দেয়ার পরই প্লট বরাদ্দ দেয়া হয়ে থাকে। তাই অনুমোদনকৃত প্লট ও বরাদ্দকৃত প্লটের সংখ্যায় তফাৎ। মুন্সীগঞ্জের লৌহজংয়ের কুমারভোগ, কুমারভোগ-শিমুলিয়া, মেদিনীম-ল, যশলদিয়া, শরীয়তপুরের পশ্চিম নাওডোবা ও পূর্ব নাওডোবা এবং বাঘরকান্দি পুনর্বাসন কেন্দ্রে। কেন্দ্রগুলোর বরাদ্দকৃত প্লটে বসবাস শুরু হয়েছে। তাই পুনর্বাসন কেন্দ্রগুলোতে এখন প্রাণের স্পন্দন। এই সাত পুনর্বাসন কেন্দ্রে তিন ধরনের প্লট রয়েছে। আড়াই শতাংশ, পাঁচ শতাংশ এবং সাড়ে সাত শতাংশ জমি নিয়ে তৈরি করা হয়েছে সুপরিকল্পিত এই প্লট। এই পুনর্বাসন কেন্দ্রগুলোতে রয়েছে নানা ধরনের সুবিধা। তাই এখানে বসবাসরতরা বেজায় খুশি। এদিকে পদ্মা বহুমুখী সেতু প্রকল্পের কারণে প্রায় ২ লাখ ১০ হাজার গাছ কাটতে হয়েছে। সেতু কর্তৃপক্ষও পরিবেশ অধিদফতরের নির্দেশনা অনুযায়ী ৬ লক্ষাধিক গাছ রোপণ অনুমোদিত হয়। প্রকল্প হতে ঠিকাদারের মাধ্যমে গাছ রোপণের প্রাথমিক সিদ্ধান্ত নেয়া হলেও সামাজিক বন বিভাগ ও বন অধিদফতরের মাধ্যমে গাছ রোপণের নির্দেশনা দেয়া হয়। সে মোতাবেক সামাজিক বন বিভাগকে পদ্মা সেতু প্রকল্প গাছ রোপণের জন্য খরচ প্রদান করে এবং এমওইউ স্বাক্ষরিত হয়। সামাজিক বন বিভাগ বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে নির্দিষ্ট পরিমাণ গর্ত, জৈব সার, পলি মাটি ও অন্যান্য প্রযোজ্য নিয়মাবলি মেনে ইতোমধ্যেই প্রায় ৩ লাখ গাছ রোপণ করে। পরবর্তীতে রোপিত গাছের জন্য পাঁচ বছর পরিচর্যার দায়িত্বও তারা পালন করবে। ইতোমধ্যে প্রায় তিন বছর হয়েছে শতকরা পাঁচ ভাগেরও কম গাছ মারা গেছে। সংশ্লিষ্টরা জানিছেন, আর যেগুলো মারা গেছে সেগুলোরও কারণ শনাক্ত করে নতুন চারা রোপণ করছে বন বিভাগ এবং বর্তমানে শতভাগ গাছ বেঁচে আছে।
×