ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

খালেদা ও তারেকের দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা

বিএনপির স্থায়ী কমিটির তিন পদের জন্য এক ডজন নেতার লবিং

প্রকাশিত: ০৬:২০, ১ অক্টোবর ২০১৬

বিএনপির স্থায়ী কমিটির তিন পদের জন্য এক ডজন নেতার লবিং

শরীফুল ইসলাম ॥ বিএনপির স্থায়ী কমিটিতে এখন তিনটি পদ খালি রয়েছে। এ তিনটি পদ পেতে লবিং করছে দলের এক ডজন সিনিয়র নেতা। এসব নেতারা বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া এবং লন্ডন প্রবাসী সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে নানামুখী চেষ্টা চালাচ্ছেন। কেউ কেউ বিএনপিপন্থী বুদ্ধিজীবীদের মাধ্যমেও লবিং করছেন। শীঘ্রই এ ৩টি পদ পূরণ করা হবে। জাতীয় কাউন্সিলের সাড়ে ৪ মাস পর ৬ আগস্ট ৫৯১ সদস্যের জাতীয় নির্বাহী ঘোষণার পর স্থায়ী কমিটিতে নিজের নাম না দেখে বিএনপির বেশ ক’জন সিনিয়র নেতা ক্ষুব্ধ হন। এর মধ্যে ভাইস চেয়ারম্যান মেজর (অব.) হাফিজউদ্দিন আহমেদ বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার সঙ্গে সরাসরি সাক্ষাত করে তাঁর ক্ষোভের কথা জানান। আর অন্য ৩ জন ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল নোমান, সাদেক হোসেন খোকা ও শাহমোয়াজ্জেম হোসেন পরোক্ষভাবে তাঁদের ক্ষোভের কথা জানান। এর বাইরেও আরও ক’জন সিনিয়র নেতা স্থায়ী কমিটির সদস্য হতে না পেরে অসন্তুষ্ট হয়েছে বলে জানা গেছে। ৬ আগস্ট ঘোষিত ১৯ সদস্যের বিএনপির স্থায়ী কমিটিতে ২টি পদ খালি রাখা হয়। তাই এ খালি ২টি পদ পেতে তখন থেকেই কেউ কেউ লবিং শুরু করেন। আস্তে আস্তে এ পদ পেতে লবিং করা নেতার সংখ্যা আরও বেড়ে যায়। আর ২৭ সেপ্টেম্বর স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আসম হান্নান শাহ মারা যাওয়ায় আরও একটি পদ খালি হয়। তাই এখন বিএনপির স্থায়ী কমিটিতে শূন্য পদের সংখ্যা ৩। তাই লবিং করা নেতাদের মধ্যে অন্তত ৩ জনকে স্থায়ী কমিটির পদ দিতে পারবেন বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া। আগে বিএনপির স্থায়ী কমিটিতে যে ১৭ জনকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে তার মধ্যে ৩ জন নতুন মুখ। তারা হলেন মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, আগের কমিটির বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী ও আগের কমিটির যুগ্ম মহাসচিব সালাহ উদ্দিন আহমেদ। আর স্থায়ী কমিটির আগের সদস্যদের মধ্যে যারা বর্তমান কমিটিতে আছেন তারা হলেন, খালেদা জিয়া, তারেক রহমান, ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদ, লে. জেনারেল (অব.) মাহবুবুর রহমান, ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার, তরিকুল ইসলাম, এমকে আনোয়ার, রফিকুল ইসলাম মিয়া, ড. মঈন খান, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায় ও নজরুল ইসলাম খান। আগের কমিটির স্থায়ী কমিটির সদস্য সারোয়ারী রহমানকে নতুন কমিটিতে উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য করা হয়েছে। আর আগের স্থায়ী কমিটির সদস্য এম সামসুল ইসলামকে এবার কোন পদ দেয়া হয়নি। জানা যায়, বিএনপির স্থায়ী কমিটির ৩ শূন্য পদ পেতে লবিংকৃত এক ডজন নেতার মধ্যে রয়েছেন বর্তমান কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল নোমান, সাদেক হোসেন খোকা, রাবেয়া চৌধুরী, মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ, এম মোর্শেদ খান, শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন, চৌধুরী কামাল ইবনে ইউসুফ, এয়ার ভাইস মার্শাল (অব.) আলতাফ হোসেন চৌধুরী, সেলিমা রহমান, এ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন, ড. ওসমান ফারুক ও আব্দুল আউয়াল মিন্টু। মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ স্থায়ী কমিটির সদস্য পদ প্রত্যাশা করলেও ওয়ান-ইলেভেনের সময় সংস্কারপন্থী বিএনপির মহাসচিবের দায়িত্ব পালন করায় তাঁর প্রতি দলের একটি অংশ এখনও ক্ষুব্ধ থাকায় তিনি এ পদ পাননি। তবে খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাতের পর পরিস্থিতি কিছুটা পাল্টেছে বলে জানা গেছে। আর আব্দুল্লাহ আল নোমান স্থায়ী কমিটির সদস্য হওয়ার যোগ্য হলেও ওয়ান-ইলেভেনের সময় বিদেশে পালিয়ে যাওয়ায় তাঁর ওপর বিএনপি হাইকমান্ড কিছুটা ক্ষুব্ধ। তবে তিনি নিষ্ক্রিয় থাকলে চট্টগ্রাম অঞ্চলে দলে বিরূপ প্রতিক্রিয়া হতে পারে ভেবে আব্দুল্লাহ আল নোমানকে শূন্য ৩টি পদের একটি দেয়া হতে পারে বলে জানা গেছে। আর সাদেক হোসেন খোকাকেও ওয়ান-ইলেভেনের ভূমিকার কারণে স্থায়ী কমিটিতে স্থান দেয়া হয়নি। তবে খোকা নিষ্ক্রিয় থাকলে রাজধানীতে দলীয় রাজনীতির প্রভাব পড়তে পারে ভেবে তাকেও স্থায়ী কমিটিতে স্থান দেয়ার চিন্তা চলছে। কিন্তু সুস্থ হয়ে খোকা তাড়াতাড়ি দেশে ফিরতে পারবে কি না তার ওপর সবকিছু নির্ভর করছে বলে জানা গেছে। এদিকে স্থায়ী কমিটির পদ না পেয়ে প্রথমে ক্ষুব্ধ হলেও ইদানীং তাদের মধ্যে কেউ কেউ দলীয় বিভিন্ন কর্মসূচীতে যোগ দিচ্ছেন। সম্প্রতি বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য হান্নান শাহর লাশ দেশে আসার পর বিমানবন্দরে আব্দুল্লাহ আল নোমানকে উপস্থিত থাকতে দেখা গেছে এ ছাড়া দলীয় কার্যালয়ের সামনে জানাজায়ও কমিটি ঘোষণার পর ক্ষুব্ধ ক’জন নেতাকে অংশ নিতে দেখা গেছে। সূত্রমতে, স্থায়ী কমিটিতে স্থান না পেয়ে ক্ষুব্ধ হওয়া ক’জন নেতার সঙ্গে বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া এবং দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর কথা বলেছেন। আর এ কারণেই কারও কারও দল ত্যাগের সম্ভাবনা থাকলেও তারা এখন নীরব রয়েছেন। তাদের আশা শীঘ্রই স্থায়ী কমিটির ৩টি শূন্য পদ পূরণ করা হবে এবং তাদের নাম সেখানে থাকবে। এ ব্যাপারে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য লে. জেনারেল (অব.) মাহবুবুর রহমান বলেন, স্থায়ী কমিটির শূন্যপদে যোগ্য নেতাদেরই স্থান দেয়া হবে। তবে কারা শূন্য পদে স্থান পাবেন এবং কবে তা ঘোষণা করা হবে তা বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া জানেন। আমরা জাতীয় কাউন্সিলে কমিটি গঠনের দায়িত্ব তাঁকে দিয়েছি তাই তিনিই এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবেন। স্থায়ী কমিটির শূন্য পদ পাওয়ার মতো যোগ্য নেতা অনেকেই আছেন। তাই কারা কারা এ পদে আসছেন তা এখনই বলা যাচ্ছে না। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপির এক কেন্দ্রীয় নেতা জানান, তারেক রহমান ও খালেদা জিয়া একমত হতে না পারায় ঘোষিত বিএনপির নির্বাহী কমিটির ২ স্থায়ী কমিটির সদস্য পদ খালি রাখা হয়। আর হান্নান শাহ মারা যাওয়ায় এখন স্থায়ী কমিটির ৩ পদ খালি রয়েছে। তবে ডজনখানেক সিনিয়র নেতা এ পদের জন্য লবিং করায় এবারও সবাইকে খুশি করা যাচ্ছে না। তাই স্থায়ী কমিটির সদস্য সংখ্য ১৯ থেকে বাড়িয়ে আরও ক’জন সিনিয়র নেতাকে সেখানে স্থান দেয়ার কথাও চিন্তা করা হচ্ছে।
×