ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

ডিসেম্বরের মধ্যে চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা

জাতীয় পার্টির নির্বাচনী প্রচার আজ শুরু সিলেট থেকে

প্রকাশিত: ০৬:২০, ১ অক্টোবর ২০১৬

জাতীয় পার্টির নির্বাচনী প্রচার আজ শুরু সিলেট থেকে

রাজন ভট্টাচার্য ॥ হাতে সময় অন্তত আড়াই বছর। এরপর জাতীয় সংসদ নির্বাচন। তবুও কিসের যেন তাড়া। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে আগাম প্রচারে নামছে বিরোধী দল জাতীয় পার্টি। এত আগে নির্বাচনে নামার প্রস্তুতি সচরাচর চোখে পড়ে না। তাছাড়া বড় বড় রাজনৈতিক দল এ নিয়ে এই মুহূর্তে তেমন ভাবছে না। দলের নেতারা বলছেন, তাদের লক্ষ্য একক নির্বাচনে অংশ নেয়া। পাশাপাশি ধারাবাহিকভাবে বিভিন্ন আসনে প্রার্থী তালিকাও চূড়ান্ত করা। যা শেষ হবে আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে। তাই আজ শনিবার পুণ্যভূমি সিলেট থেকে নির্বাচনী প্রচারণার কাজ শুরু করবেন জাপা চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। সকাল ১১টায় ঢাকা থেকে বিমানযোগে সিলেটে যাবেন জাপা চেয়ারম্যান। তাঁর সফরসঙ্গী থাকছেন বিরোধী দলের নেতা ও জাপা সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান রওশন এরশাদ, ভাইস চেয়ারম্যান জি এম কাদের। এছাড়াও সফরসঙ্গী হিসেবে থাকছেন কেন্দ্রীয় ৬০ নেতা। হযরত শাহজালাল (রঃ) মাজার জিয়ারত শেষে বিকেলে স্থানীয় রেজিস্ট্রি মাঠে জেলা জাপার উদ্যোগে সমাবেশের আয়োজন করা হয়েছে। সমাবেশ থেকে আগামী নির্বাচনের প্রার্থী হিসেবে বর্তমান একাধিক এমপিসহ বেশ কয়েকজনের নাম ঘোষণা করতে পারেন তিনি। সম্প্রতি রংপুর সফরে গিয়ে এক অক্টোবর থেকে নির্বাচনী প্রচার শুরুর ঘোষণা দিয়ে এরশাদ বলেন, প্রতিটি রাজনৈতিক দলের লক্ষ্য থাকে সুষ্ঠু নির্বাচনের মধ্য দিয়ে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় যাওয়া এবং সরকার গঠন করা। জাতীয় পার্টি সে লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছে। জাতীয় পার্টি অতীতে ক্ষমতায় ছিল। জাতীয় পার্টি জনগণের কাছে পরীক্ষিত বন্ধু। আমরা আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিপুল পরিমাণ আসনে নির্বাচিত হয়ে সরকার গঠন করব এই আশা রাখি। দলের একাধিক সূত্র বলছে, মূলত মধ্যবর্তী নির্বাচনের প্রস্তুতি হিসেবে আগাম প্রচারণার পরিকল্পনা করে দলটি। কিন্তু জাপার নয় সদস্যের সংসদীয় দল ভারত সফর করে বাংলাদেশে ফেরার পর পরিস্থিতি কিছুটা পাল্টে যায়। ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকেও মধ্যবর্তী নির্বাচনের বিষয়টি নাকোচ করা হয়েছে। ফলে জাপার দলীয় সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে কিছুটা পরিবর্তন আসে। তবে কর্মসূচী পরিবর্তন হয়নি। মূলত এখন সাংগঠনিক দূরবস্থা কাটিয়ে উঠতে আগামী নির্বাচনকে কৌশল হিসেবে নিয়েছে জাতীয় দলটি। এই সুযোগে যোগ্য প্রার্থীর খোঁজ করার পাশাপাশি বিভিন্ন জেলা উপজেলা থেকে শুরু করে ইউনিয়ন পর্যন্ত রাজনৈতিক নানা কর্মসূচী ঠিক করা হয়েছে। এসব কর্মসূচীতে দলের শীর্ষ নেতারা উপস্থিত থাকবেন। দলের নেতারা মনে করছেন, এসব কর্মসূচীর মধ্য দিয়ে জাপায় জাগরণ আসবে। যা আগামী নির্বাচনে ক্ষেত্রে ভোটের বাক্স ভারি করতে পারে। সেই সঙ্গে দেশব্যাপী কর্মসূচীর মধ্য দিয়ে নিরুত্তাপ বিরোধী দলের কলঙ্কও কিছুটা ঘোচাতে চায় দলটি। দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য অধ্যাপক দেলোয়ার হোসেন খান জনকণ্ঠকে বলেন, জাতীয় পার্টি একটি নির্বাচনমুখী দল। আমরা নির্বাচনের প্রস্তুতির পাশাপাশি সাংগঠনিক কার্যক্রম চালিয়ে যাব। যা আগামী নির্বাচনের জন্য ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে। তাছাড়া যেসব জেলা ও উপজেলায় এখন আহ্বায়ক কমিটি রয়েছে সেখানে দ্রুত সম্মেলন করা হবে। দলের অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন এত আগে ভাগে নির্বাচনের প্রস্তুতি বা প্রচার নিয়ে। কেউ কেউ বিষয়টিকে ইতিবাচক দৃষ্টিতে দেখছেন না। তারা চান আগে সাংগঠনিক কার্যক্রম জোরদার করা। পরবর্তীতে নির্বাচনের জন্য সরাসরি মাঠে নামা। এসব বিষয়ে জানতে চাইলে জাতীয় পার্টির মহাসচিব এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদার জনকণ্ঠকে বলেন, জাতীয় নির্বাচনের প্রস্তুতির জন্য আড়াই বছর খুব বেশি সময় নয়। আমরা এককভাবে নির্বাচন করব। তাই সাংগঠনিক দুর্বলতা কাটিয়ে প্রার্থী ঠিক করা অনেক সময়রে ব্যাপার। সবকিছু বিবেচনায় একটু আগে ভাগেই মাঠে নামা হচ্ছে। তিনি বলেন, যোগ্যতার ভিত্তিতে ও এলাকায় জনসমর্থন বিবেচনায় এবার প্রার্থী ঠিক করতে চাই। যাকেই দেয়া হবে তিনি যেন পাস করতে পারেন। চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে প্রার্থী তালিকা চূড়ান্ত করার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, এক অক্টোবর প্রচার শুরুর দিন সিলেট এলাকায় আগাম প্রার্থী তালিকা এখনও চূড়ান্ত হয়নি। আমাদের লক্ষ্য একটি সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচনে অংশ নিয়ে ক্ষমতায় আসা। সে লক্ষেই নেতা কর্মীরা কাজ শুরু করেছেন বলে জানান তিনি। নাম প্রকাশ না করার শর্তে দলের আরেক প্রেসডিয়াম সদস্য জানিয়েছেন, আগামী এক জানুয়ারি জাতীয় পার্টির ৩২তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে রাজধানীতে মহাসমাবেশ করার পরিকল্পনা নিয়েছে দলটি। তাই নির্বাচনী প্রচারণার পাশাপাশি মহাসমাবেশের প্রস্তুতি থাকবে নেতাদের। এভাবেই জেলা ও উপজেলা কমিটিগুলোতে মহাসমাবেশ সফল করার বার্তাও দেয়া হবে সাংগঠনিক সফরে। এসব বিষয়ে জানতে চাইলে জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য মীর আব্দুস সবুর আসুদ জনকণ্ঠকে বলেন, দলের পক্ষ থেকে আগামী নির্বাচনের প্রস্তুতি হিসেবে আগে ভাগেই প্রচারে নামা হচ্ছে। একটি জাতীয় নির্বাচনের জন্য আড়াই বছর খুব বেশি সময় নয়। তাই আজ অক্টোবর থেকে আমরা মাঠে নামছি। সিলেট থেকে আনুষ্ঠানিক প্রচারণা শুরু হবে। তিনি বলেন, নির্বাচনের প্রস্তুতি হিসেবে দল গোছানো ও প্রার্থী চূড়ান্ত করা অনেক কাজ রয়েছে। যারা প্রার্থী হবেন তারা নিজ নিজ এলাকায় আগে ভাগেই কাজ শুরু করতে পারবেন। এরশাদের শাসনামলের বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজ মানুষের কাছে তুলে ধরার সুযোগ পারেন। এতে সাধারণ ভোটাররা দলের প্রতি সন্তুষ্ট হবে। ভোট বাড়বে। তিনি বলেন, এরশাদের শাসনামলে মানুষ শান্তিতে ছিল, সুখে ছিল। আমরা ক্ষমতায় গিয়ে দেশবাসীকে সুখ-শান্তি ফিরিয়ে দেব। কেউ অশান্তিতে থাকবে না। তাছাড়া জাতীয় পার্টিকে মানুষ এখনও ভালবাসে। তাই আগামী নির্বাচন পর্যন্ত সাংগঠনিক সকল দুর্বলতা কাটিয়ে জাতীয় পার্টি ক্ষমতায় যেতে চায়। দলের নেতারা জানিয়েছেন, বিভাগীয় সম্মেলনগুলোতে এরশাদ উপস্থিত থাকবেন। জেলা ও উপজেলায় যাবেন কেন্দ্রীয় নেতারা। এজন্য পৃথক পৃথক কমিটিও ইতোমধ্যে গঠন করা হয়েছে। এ প্রসঙ্গে দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও এরশাদের প্রেস সচিব শুনিল শুভ রায় জনকণ্ঠকে বলেন, এক অক্টোবর থেকে জাতীয় পার্টির জাগরণ যাত্রা শুরু। সে লক্ষ্য নিয়েই পরিকল্পনা করা হয়েছে। তিনি বলেন, সিলেট থেকে প্রচারণা শুরুর পর পর্যায়ক্রমে সকল বিভাগীয় শহরে সমাবেশ করার প্রস্তুতি রয়েছে। এসব সমাবেশে দলের চেয়ারম্যান উপস্থিত থাকবেন।
×