ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

ডাক্তার, নার্স ও পুলিশের ছুটি বাতিল করেছে পাঞ্জাব রাজ্য সরকার সীমান্তে খোঁড়া হচ্ছে বাঙ্কার

পাক-ভারত সংঘাত ॥ ভয়ে সীমান্তবাসী এলাকা ছাড়ছে

প্রকাশিত: ০৬:১৪, ১ অক্টোবর ২০১৬

পাক-ভারত সংঘাত ॥ ভয়ে সীমান্তবাসী এলাকা ছাড়ছে

জনকণ্ঠ ডেস্ক ॥ নিয়ন্ত্রণরেখা পেরিয়ে পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে ভারতীয় কমান্ডোদের সার্জিক্যাল স্ট্রাইকের পর উভয় দেশের সীমান্তের অনেক জায়গায় সম্ভাব্য হামলার আশঙ্কায় সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। শুক্রবার পাকিস্তান সীমান্তের কাছের অনেক জায়গার অন্তত ১০ কিলোমিটারের মধ্যে বাস করা হাজার হাজার জনগণকে সরিয়ে নিয়েছে ভারত। অনেকে আবার পালিয়ে যাচ্ছে। এসব জায়গায় ভারতীয় বাহিনীকে সতর্ক অবস্থায় রাখা হয়েছে। পাকিস্তানের পক্ষ থেকে ছোড়া গোলার আশঙ্কায় এসব এলাকা খালি করা হচ্ছে। আর যারা সীমান্ত ছাড়তে অপারগ তাদের ঘরের দরজা বন্ধ করে রাখার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। শুক্রবারও পাক-ভারত সীমান্তে উভয় দেশের সেনারা পাল্টাপাল্টি গুলি ছুড়েছে। এদিকে শুক্রবারও ভারতের বিরুদ্ধে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছে পাকিস্তান। পাক সেনাপ্রধান জেনারেল রাহিল শরীফ বলেছেন, প্রতিপক্ষকে উপযুক্ত আঘাতের মাধ্যমে ঘায়েল করা হবে। নিয়ন্ত্রণরেখা ও আন্তর্জাতিক সীমান্তে সর্বোচ্চ প্রতিরোধ ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। তিনি বলেন, প্রতিপক্ষের যে কোন হামলা মোকাবেলায় পাক বাহিনী প্রস্তুত রয়েছে। একই দিন মন্ত্রিপরিষদের সঙ্গে বৈঠক সেরেছেন পাক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরীফ। বৈঠকে পাকিস্তানে ভারতের সাম্প্রতিক অভিযানের নিন্দা জানানো হয়। বৈঠক শেষে নওয়াজ বলেছেন, আমরা পাকিস্তানের বিরুদ্ধে যে কোন আগ্রাসন রুখে দিতে প্রস্তুত। একই বৈঠকে পাকিস্তান বরাবরই কাশ্মীরী জনগণের পাশে থাকবে বলে জানান পাক প্রধানমন্ত্রী। খবর পিটিআই, এনডিটিভি, বিবিসি ও এএফপির। খবরে বলা হয়েছে, পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে ভারতীয় কমান্ডোদের হামলার পর এখন ভারতের পশ্চিমাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোতে দেখা দিয়েছে পাকিস্তানের জবাবী হামলার আশঙ্কা। ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে বা গোটা জম্মু-কাশ্মীর রাজ্যে এ ধরনের কোন সরকারী নির্দেশ না দেয়া হলেও জম্মু এলাকার সীমান্তবর্তী গ্রামগুলো থেকে বহু মানুষ নিজ উদ্যোগেই সরে যাচ্ছে। অন্যদিকে ভারতীয় সামরিক বাহিনীর সূত্রগুলো বলছে, নিয়ন্ত্রণরেখা পার করে সার্জিক্যাল স্ট্রাইক চালানো হয়েছিল বুধবার রাতে। তারপর পাকিস্তান নিয়ন্ত্রণরেখার অন্যদিক থেকে গুলিবর্ষণ করেছে। জম্মুর ডেপুটি কমিশনার সিমরণদীপ সিং শুক্রবার জানান, অখনূর সেক্টরে পাকিস্তানের ফরোয়ার্ড পোস্ট থেকে গুলি চালানো হয়েছে। শুক্রবারও ভারতীয় নিরাপত্তারক্ষীদের এক কনভয়ে জঙ্গী হামলার ঘটনা ঘটেছে। জম্মু ও কাশ্মীরের কুলগাম জেলায় একদল নিরাপত্তা বাহিনী যখন টহলে বের হচ্ছিল ঠিক তখনই এ হামলার ঘটনা ঘটে। তবে এ হামলায় আপাতত কোন হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি। পাঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী প্রকাশ সিং বাদল বলেছেন, বৃহস্পতিবার সকালেই যখন সার্জিক্যাল স্ট্রাইকের ব্যাপারে জানানো হয় তারপরই সীমান্ত থেকে গ্রামবাসীদের সরিয়ে নেয়া শুরু হয়েছে। এ পর্যন্ত অন্তত এক হাজার গ্রামের মানুষকে সরিয়ে নেয়া হয়েছে। এসব মানুষকে স্কুলের বারান্দায় রাখা হয়েছে। এদিকে, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় পাক সেনাপ্রধান রাহিল শরীফের ‘বদলা নেয়ার’ হুমকির পর আশঙ্কার চোরাস্রোত বইছে নয়াদিল্লীর নর্থ-সাউথ ব্লকেও। ফলে আগামী দু-তিন দিন পাকিস্তান কী করে, সেদিকেই নজর থাকছে। ভারতের উত্তরাঞ্চলীয় পাঞ্জাব রাজ্য কর্তৃপক্ষ জানায়, কোন ঝুঁকি না নিয়ে শুক্রবার থেকেই পাঞ্জাব সীমান্তের দশ কিলোমিটারের মধ্যে যেসব গ্রাম রয়েছে, তা খালি করার কাজ শুরু হয়েছে। হামলার আশঙ্কায় সরকারী চিকিৎসক, নার্স ও পুলিশদের ছুটি বাতিল করে দিয়েছে পাঞ্জাব প্রশাসন। সীমান্তে পাঠানো হয়েছে বাড়তি আধাসেনা। খোঁড়া হচ্ছে বাঙ্কার। অনির্দিষ্টকালের জন্য বাতিল করা হয়েছে আত্তারি-ওয়াঘা সীমান্তের প্রাত্যহিক সেনা মহড়া। সতর্কতা জারি হয়েছে রাজস্থান, গুজরাট এবং জম্মু ও কাশ্মীরেও। সরানো হচ্ছে সেখানকার সীমান্তবর্তী বা নিয়ন্ত্রণরেখা বরাবর গ্রামের বাসিন্দাদেরও। শুক্রবার সকালে পাঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী প্রকাশ সিং বাদলকে ফোন করেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিং। টেলিফোনে তিনি পাল্টা হামলা চালানোর আশঙ্কা রয়েছে বলে জানান। তাই সীমান্তসংলগ্ন সমস্ত গ্রাম খালি করে দেয়া হোক। পাঞ্জাবের সঙ্গে পাকিস্তানের প্রায় ৫৫৩ কিলোমিটার সীমান্ত রয়েছে। সীমান্তের কাছাকাছি যেসব গ্রাম রয়েছে, জেলা প্রশাসন দুপুর থেকেই সেগুলো খালি করার কাজ শুরু করেছে। গ্রামগুলোর দখল নিয়ে খোঁড়া হচ্ছে বাঙ্কার। সীমান্তে মজুদ করা হচ্ছে অস্ত্রশস্ত্র, গোলাবারুদ। সীমান্তের দায়িত্ব এখনও বিএসএফের হাতে থাকলেও প্রস্তুত থাকতে বলা হয়েছে পাঠানকোট সেনা ছাউনিকেও। খালি করে দেয়া হয়েছে পাঠানকোট হাসপাতালের আপৎকালীন বিভাগ। রোগীদের অন্যত্র পাঠানো হয়েছে। ভারত শুক্রবার জানিয়েছে, তাদের এক সেনা সদস্য ভুলক্রমে বৃহস্পতিবার নিয়ন্ত্রণরেখা পার করে যাওয়ার পর তাকে পাক সেনাবাহিনী আটক করেছে। ওই সেনা সদস্যের নাম চন্দু বাবুলাল চৌহান। তাকে ছাড়াতে সকল ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানিয়েছেন ভারতীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিং।
×