ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

কাল ঢাকায় শুরু হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে পঞ্চম নিরাপত্তা সংলাপ

প্রাধান্য পাবে সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদ মোকাবেলার বিষয়

প্রকাশিত: ০৬:১৩, ১ অক্টোবর ২০১৬

প্রাধান্য পাবে সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদ মোকাবেলার বিষয়

তৌহিদুর রহমান ॥ ঢাকা-ওয়াশিংটনের মধ্যে এবারের ‘নিরাপত্তা সংলাপে’ সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদ মোকাবেলা, বঙ্গোপসাগরে নিরাপত্তা, সামরিক সহযোগিতা, মানব পাচার প্রতিরোধসহ বিভিন্ন বিষয়ে জোর দেবে বাংলাদেশ। এছাড়াও সংলাপে কৌশলগত স্বার্থ নিয়ে আলোচনা করবে দুই দেশ। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র এসব তথ্য জানায়। আগামীকাল রবিবার ঢাকায় দুই দেশের মধ্যে পঞ্চম নিরাপত্তা সংলাপ শুরু হচ্ছে। এবারের নিরাপত্তা সংলাপ অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে চূড়ান্ত প্রস্তুতি চলছে। আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা জোরদারের লক্ষ্যে প্রতিবছর বাংলাদেশ-মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র দুই দেশের মধ্যে নিরাপত্তা সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। নিরাপত্তা সংলাপ সামনে রেখে ইতোমধ্যে কয়েকবার আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। সর্বশেষ গত বুধবার নিরাপত্তা সংলাপের প্রস্তুতি নিয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে একটি বৈঠক হয়। এসব বৈঠকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ছাড়াও প্রতিরক্ষা, স্বরাষ্ট্র, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয় ও সশস্ত্র বাহিনীর কর্মকর্তারা অংশ নেন। একাধিক বৈঠকে দুই দেশের মধ্যে অনুষ্ঠিত নিরাপত্তা সংলাপের সিদ্ধান্তের অগ্রগতি এবারের নিরাপত্তা সংলাপে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে যেসব বিষয়ে প্রাধান্য দেয়া হবে, তা নিয়েও বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে মেরিটাইম এ্যাফেয়ার্স ইউনিটের প্রধান ও ভারপ্রাপ্ত পররাষ্ট্র সচিব রিয়ার এ্যাডমিরাল (অব) খুরশেদ আলম জনকণ্ঠকে বলেন, ঢাকা-ওয়াশিংটনের মধ্যে নিরাপত্তা সংলাপের প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। সংলাপে সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদ প্রতিরোধের বিষয়টি প্রাধান্য পাবে বলে তিনি জানান। পঞ্চম নিরাপত্তা সংলাপে সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদ মোকাবেলা, বঙ্গোপসাগরে নিরাপত্তা, দুই দেশের নিরাপত্তা, সামরিক সহযোগিতা, মানব পাচার প্রতিরোধসহ বিভিন্ন বিষয়ে জোর দেবে বাংলাদেশ। এছাড়াও রাজনৈতিক সহযোগিতা, যৌথ মহড়া, প্রশিক্ষণ, দুর্যোগ মোকাবিলার প্রস্তুতি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হবে। তবে রাজধানীর গুলশানে জঙ্গী হামলার প্রেক্ষিতে দুই দেশের মধ্যে নিরাপত্তা সহযোগিতার বিষয়টিই এবারের সংলাপে প্রাধান্য পাচ্ছে বলে জানা গেছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, মিয়ানমার ও ভারতের সঙ্গে সমুদ্রসীমা বিরোধ নিষ্পত্তির পরে বাংলাদেশ বঙ্গোপসাগরে সমুদ্র নিরাপত্তার বিষয়ে জোর দিয়ে আসছে। সমুদ্র নিরাপত্তা নিয়ে সহযোগিতার জন্য বিভিন্ন দেশের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে আসছে। সমুদ্র নিরাপত্তায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতা চেয়েছে বাংলাদেশ। সে কারণে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বিভিন্ন সহযোগিতা দিয়ে আসছে। বিশেষ করে নৌবাহিনীকে বিএনএস ‘সমুদ্র জয়’ জাহাজ দিয়েছে দেশটি। এছাড়া দেশটির সহায়তায় শীঘ্রই বাংলাদেশে আরও একটি জাহাজ আসছে । দু’দেশের মধ্যে পরপর চারটি নিরাপত্তা সংলাপ এরই মধ্যে অনুষ্ঠিত হয়েছে। এই সংলাপের মধ্য দিয়ে দুই দেশের পারস্পরিক সহযোগিতা অনেক বেড়েছে। বিশেষ করে তথ্য আদান-প্রদান, সামরিক বিভিন্ন ধরনের প্রশিক্ষণ বৃদ্ধি পেয়েছে। ‘নিরাপত্তা সংলাপ’ শুরুর আগে বিভিন্ন ক্ষেত্রে যে ধরনের সহযোগিতা যুক্তরাষ্ট্র থেকে পাওয়া যেত, চার দফা সংলাপের পর সেসব সহযোগিতা অনেক বেড়েছে। বিশেষ করে সামরিক বিভিন্ন প্রশিক্ষণের পরিধি ও মান বেড়েছে। নিরাপত্তা সংলাপের ধারাবাহিকতায় ইতোমধ্যেই বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র সন্ত্রাস দমন চুক্তি সই হয়েছে। তিন বছর আগে ঢাকায় সই হওয়া এই চুক্তির মাধ্যমে দুই দেশের মধ্যে সন্ত্রাস প্রতিরোধে আধুনিক কলাকৌশল বিনিময়, উভয় দেশের আইন প্রয়োগকারী সংস্থাসমূহের মধ্যে যোগাযোগ বৃদ্ধি, প্রশিক্ষণ কেন্দ্র ও ফরেনসিক প্রতিষ্ঠানসমূহের মধ্যে সহযোগিতা বৃদ্ধি, সম্মতিক্রমে আইনগত সহায়তা প্রদান, মানি লন্ডারিং ও সন্ত্রাসে অর্থায়ন প্রতিরোধে সহযোগিতা বৃদ্ধি, সম্মতিক্রমে সাইবার অপরাধ দমনে সহযোগিতার অঙ্গীকার করা হয়েছে। গতবারের নিরাপত্তা সংলাপে বাংলাদেশের সমুদ্র নিরাপত্তার বিষয়ে সবচেয়ে গুরুত্ব দেয়া হয়েছিল। সে অনুযায়ী ইতোমধ্যেই দুই দেশ যৌথভাবে সমুদ্র নিরাপত্তার বিষয়ে বেশ কয়েকটি পদক্ষেপ নিয়েছে। তবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সমুদ্র নিরাপত্তায় আরও সহযোগিতা দিতে প্রস্তুত রয়েছে বলে জানা গেছে। দক্ষিণ এশিয়ার শান্তি ও নিরাপত্তায় বাংলাদেশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে বলেও মনে করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। আর ভূ-কৌশলগত কারণে বাংলাদেশ চীন ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র উভয় দেশের জন্যই গুরুত্বপূর্ণ। সমুদ্র সংক্রান্ত বিষয়ে চীনের কাছ থেকেও সহযোগিতা নিয়ে চলেছে বাংলাদেশ। তবে সমুদ্র সংক্রান্ত বিষয়ে চীন-বাংলাদেশের পারস্পরিক সহযোগিতার কারণে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র-বাংলাদেশ সমুদ্র নিরাপত্তা সহযোগিতায় কোন প্রভাব পড়বে না বলে জানিয়েছেন মার্কিন পররাষ্ট্র দফতর। এছাড়া মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র একাধিকবার জানিয়েছে, বঙ্গোপসাগরে তাদের ঘাঁটি করার কোন পরিকল্পনা নেই। এর আগে দুই দেশের মধ্যে প্রথম নিরাপত্তা সংলাপ ২০১২ সালের এপ্রিলে ঢাকায় ও দ্বিতীয় নিরাপত্তা সংলাপ ২০১৩ সালের এপ্রিলে অনুষ্ঠিত হয় ওয়াশিংটনে। ২০১৪ সালের ২২ এপ্রিল ঢাকায় তৃতীয় আর সর্বশেষ ওয়াশিংটনে গত বছর ১১ সেপ্টেম্বর চতুর্থ নিরাপত্তা সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়েছিল।
×