হাসান নাসির, চট্টগ্রাম অফিস ॥ বাড়তি ওজনের জন্য জরিমানার অর্থ কন্টেনার মালিকের কাছ থেকে আদায় করা হবে- এমন আশ্বাসে ধর্মঘট ৪ অক্টোবর পর্যন্ত স্থগিত করেছে প্রাইম মুভার মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদ। শুক্রবার সকালে চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশ (সিএমপি) কমিশনারের সঙ্গে বৈঠকে এ আশ্বাস দেয়া হয়। ফলে দুপুর একটার পর চলাচল শুরু হয় কন্টেনারবাহী প্রাইম মুভার। কর্মসূচী স্থগিত করায় বন্দরে সৃষ্ট অচলাবস্থার আপাত অবসান ঘটল। তবে দাবি আদায় না হলে পুনরায় ধর্মঘট শুরুর ইঙ্গিত রয়েছে আন্দোলনকারী সংগঠনের পক্ষ থেকে। গত সোমবার থেকে শুরু হয় প্রাইম মুভার মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদের ডাকে লাগাতার ধর্মঘট। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের দাউদকান্দি এলাকায় স্থাপিত ওজন স্কেলে হয়রানি ও ৩৩ টনের বেশি ওজনের প্রাইম মুভারকে জরিমানার বিধানের প্রতিবাদে এ কর্মসূচীর ডাক দেয় সংগঠনটি। এতে চট্টগ্রাম বন্দরে কন্টেনার আনা-নেয়া সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে যায়। শুক্রবার দুপুর পর্যন্ত সাড়ে চার দিনের এ কর্মসূচীতে নজিরবিহীন কন্টেনার জট সৃষ্টি হয় বন্দর অভ্যন্তরে। বন্দরের ইতিহাসে এমন পরিস্থিতি আর হয়নি। উৎকণ্ঠিত হয়ে পড়ে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ। আমদানি-রফতানিকারক ও শিল্পকারখানার মালিকরা পড়েন বিপাকে। রফতানির কন্টেনার জাহাজীকরণ বন্ধ হয়ে যায়। একই ভাবে আমদানি করা কাঁচামালের কন্টেনারগুলোও আটকা পড়ে। এ ক’দিনেই অন্তত হাজার কোটি টাকার আর্থিক ক্ষতি হয় ব্যবসা-বাণিজ্যে। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় পোশাক শিল্প। প্রাইম মুভার বন্ধ থাকায় অফডক থেকে বন্দরে যেতে পারেনি রফতানির কন্টেনার। ফলে জাহাজগুলোকে বন্দর ছাড়তে হয় কন্টেনার ছাড়াই। বড় ধরনের ঝুঁকির মধ্যে পড়ে শিপিং কোম্পানিগুলো। কেননা, একটি জাহাজকে একদিন অতিরিক্ত অবস্থান করতে হলে ডেমারেজ গুনতে হয় ১০ হাজার ডলার পর্যন্ত। জাহাজে পণ্য প্রেরণ করতে না পেরে তৈরি পোশাকের এয়ারশিপমেন্ট করতে হয়। এতেও ব্যয় হয়েছে প্রচুর। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে পণ্য পাঠাতে না পারলে অর্ডার বাতিল হওয়ার আশঙ্কা থাকে বিধায় পোশাক শিল্প মালিকরা বাড়তি ব্যয়ে পণ্য পাঠাতে বাধ্য হন আকাশপথে।
অব্যাহত ধর্মঘটের ফলে চট্টগ্রাম বন্দরের অপারেশনাল কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়। কারণ, ইয়ার্ডে এত বেশি পরিমাণ কন্টেনার জমা হয়ে পড়েছিল যে, জাহাজ থেকে কন্টেনার নামিয়ে রাখার স্থান ছিল না। ৩৬ হাজার টিইইউএস কন্টেনার ধারণক্ষমতার ইয়ার্ডে কন্টেনারের সংখ্যা ৪২ হাজার ছাড়িয়ে যায়। সঙ্কট উত্তরণে জেলা প্রশাসক গত বৃহস্পতিবার বৈঠক করেন আন্দোলনকারীদের সঙ্গে। সে বৈঠক সিদ্ধান্ত ছাড়া শেষ হওয়ায় উৎকণ্ঠা আরও বাড়ে। অতঃপর শুক্রবার সকালে সিএমপি কমিশনার ইকবাল বাহারের সঙ্গে বৈঠকে দাবি বিবেচনার আশ্বাস মেলায় কর্মসূচী ৪ অক্টোবর পর্যন্ত স্থগিত করে প্রাইম মুভার মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদ।
চট্টগ্রাম প্রাইম মুভার-ট্রেইলর শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন কবির সাংবাদিকদের জানান, আগামী ৪ অক্টোবর আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে। সেখানে এ বিষয়টি উত্থাপিত হবে। অনুকূল একটি সিদ্ধান্ত হবে এ আশায় কর্মসূচী স্থগিত করা হয়েছে। সে বৈঠকের ওপর অনেক কিছু নির্ভর করছে। সার্বিক বিষয় পর্যালোচনা করে পরবর্তীতে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত গৃহীত হবে।
সিএমপি কমিশনারের সঙ্গে বৈঠকে মহাসড়কে স্থাপিত ওজন স্কেলে ৩৩ টনের বেশি পণ্যের জন্য আরোপিত জরিমানার অর্থ কে পরিশোধ করবে তা নিয়ে আলোচনা হয়। মালিক-শ্রমিক নেতৃবৃন্দ জরিমানা বা অতিরিক্ত ওজনের জন্য বাড়তি চার্জ কন্টেনার মালিকের কাছ থেকে আদায়ের ওপর জোর দেন। সিএমপি কমিশনারও জরিমানার অর্থ মালিকদের কাছ থেকে আদায়ের ব্যবস্থা করা হবে বলে আশ্বাস দেন। সিএমপি কমিশনারের আশ্বাস এবং আগামী ৪ অক্টোবরের আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠক এ দুটি বিষয় বিবেচনায় নিয়ে কর্মসূচী স্থগিতে সম্মত হন আন্দোলনকারীরা।
বেসরকারী কন্টেনার ডিপো এ্যাসোসিয়েশনের সচিব রুহুল আমিন সিকদার জানান, শুক্রবার একটা থেকেই প্রাইম মুভার সচল হয়েছে। অফডক থেকে বন্দরে কন্টেনার আনা-নেয়া চলছে। ফলে এ সমস্যার আপাত সমাধান হলো। তবে সমস্যার স্থায়ী সমাধান নির্ভর করছে আগামী ৪ অক্টোবরের বৈঠকে কী সিদ্ধান্ত আসে তার ওপর। তবে আমরা আশা করছি পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে যাবে। তিনি জানান, ১৬টি অফডকে যে পরিমাণ কন্টেনার জমে আছে তা স্বাভাবিক পর্যায়ে আসতে বেগ পেতে হবে। প্রতিদিন বন্দরে যায় ১৭শ’ থেকে ১৮শ’ কন্টেনার। আর বন্দর থেকে অফডকে আমদানির কন্টেনার আসে গড়ে ১২শ’। চার দিনের অচলাচস্থায় সঙ্কট কোন্ পর্যায়ে উপনীত হয়েছিল তা এতেই অনুমান করা যায়। নতুন করে কোন সঙ্কট যেন সৃষ্টি না হয় সে ব্যাপারে সকল পক্ষই আন্তরিক হবেন এমনই আশা করছেন বন্দর ব্যবহারকারীরা।