ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

পাকিস্তান-তুরস্কের মিল!

প্রকাশিত: ০৪:১২, ১ অক্টোবর ২০১৬

পাকিস্তান-তুরস্কের মিল!

পশ্চিমী দেশের কয়েকটি সংস্থা ও ‘লবিস্ট ফার্ম’ বাংলাদেশের যুদ্ধাপরাধ বিচারের সমালোচনা করে আসছে। এদিকে পাকিস্তানের সঙ্গে যোগ দিয়েছে তুরস্ক। এই দুই দেশের মধ্যে একটি মিল লক্ষ্য করার মতো। পাকিস্তান যে নির্লজ্জতায় বাংলাদেশের মাটিতে ইতিহাস অস্বীকার করছে, তেমনি অটোমান টার্কদের হাতে আর্মেনীয় জনগোষ্ঠীর ওপর যে ভয়ঙ্কর গণহত্যা চালানো হয়, যা আধুনিক ইতিহাসের প্রথম গণহত্যা বলে স্বীকৃত, তারও দায়ভার অস্বীকার করেছে অটোমানদের উত্তরসূরি এরদোগানের সরকার। অটোমান সৈন্যদের হাতে সংঘটিত সেই গণহত্যায় ৮ লাখ বা তারও বেশি আর্মেনীয় নিহত হয়েছে। বিশ্বের ২৯টি রাষ্ট্র এই নির্বিচার গণহত্যাকে স্বীকৃতি দিয়েছে। পোপ ফ্রান্সিস একে ভয়াবহতম গণহত্যা বলে আখ্যায়িত করেছেন। চলতি বছরের জুনে জার্মানির পার্লামেন্ট বানস্টেক এক সর্বসম্মত প্রস্তাবে একে ‘ইতিহাসের কালো অধ্যায়’ বলে স্বীকৃতি দিয়েছে। নাজি বাহিনীর হাতে ইহুদী গণহত্যা ইতিহাসের একটি কালো অধ্যায়, নিঃসন্দেহে। কিন্তু ফারাকটা এই যে, তুরস্ক যেখানে বেমালুম আর্মেনীয় গণহত্যাকে অস্বীকার করে যাচ্ছে, জার্মানি সেখানে হিটলারÑনাজিদের হাতে ঘটা বর্বরতার দায় স্বীকার করে দুঃখ প্রকাশ করেছে এবং এই উপলব্ধির ওপর দাঁড়িয়েই আধুনিক জার্মানি গড়ে উঠেছে। পাকিস্তানের সঙ্গে তাল মিলিয়ে তুরস্ক বাংলাদেশের গণহত্যাকারীদের সমর্থনে কেন দাঁড়ালÑ তা বুঝতে খুব অসুবিধে হওয়ার কথা নয়। পাকিস্তানÑবাংলাদেশের যে জামায়াতে ইসলামী, তার সঙ্গে এরদোগানের ক্ষমতাসীন ‘জাস্টিস এ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট পার্টি’ বা এপিকের আদর্শিক মিল আছে। এরপরও বলতে হবে তুরস্কের প্রতিক্রিয়া অবাঞ্ছিত ও নিন্দাযোগ্য। আরও একটি বড় দ্বিচারিতা লক্ষ্য করার মতো। এরদোগানের বিরুদ্ধে সম্প্রতি যে ব্যর্থ সামরিক অভ্যুত্থান ঘটে তাতে শত শত মানুষকে প্রচলিত আইন ও মানবাধিকার লঙ্ঘন করে বিচার করা হচ্ছে অথচ সে দেশটিই কিনা আরেক দেশের মানবাধিকারের প্রশ্ন তুলছে! বাংলাদেশের মাটিতে ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চের মতোই ১৯১৫ সালের ২৪ এপ্রিল থেকে আর্মেনিয়ায় গণহত্যা শুরু করা হয়। অটোমান সৈন্যরা প্রথমত শত শত আর্মেনীয় বুদ্ধিজীবীকে নির্মমভাবে হত্যা করে। এরপর দুই পর্যায়ে এই ভয়ঙ্কর গণহত্যা কার্যকর করা হয়। লাখ লাখ শক্তসামর্থ্য মানুষকে বন্দী করে সিরিয়ার মরুভূমিতে নেয়া হয়। নারী ও শিশুদের ওপর চালানো হয় বর্বরতম নিপীড়ন। অটোমান খ্রীস্টান ও গ্রীক এসেরিয়ানদেরও একই পরিকল্পনায় হত্যা করা হয়। গ্রাম ও শহর ধ্বংস করা হয় একমাত্র ধর্মের কারণে।
×