ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

হারুন হাবীব

জাতীয় দায়বদ্ধতা ও তুরস্ক-পাকিস্তানের অবাঞ্ছিত প্রতিক্রিয়া

প্রকাশিত: ০৪:১২, ১ অক্টোবর ২০১৬

জাতীয় দায়বদ্ধতা ও তুরস্ক-পাকিস্তানের অবাঞ্ছিত প্রতিক্রিয়া

একটি স্বাধীন-সার্বভৌম রাষ্ট্রের নিজস্ব আইন ও বিচার ব্যবস্থায় পরিচালিত হওয়া সত্ত্বেও বাংলাদেশের মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের বিষয়টি স্বদেশেই সীমাবদ্ধ থাকেনি, বহির্বিশ্বেও আলোচনাÑসমালোচনার বিষয়বস্তু হয়েছে। এসব আলোচনা-সমালোচনা কখনও আবার ঘোরতর অবাঞ্ছিতভাবে বাংলাদেশের জাতীয় ইতিহাস ও স্বাধীন বিচার ব্যবস্থাকে প্রশ্নবিদ্ধ করার চেষ্টা করেছে। কখনও বা সরকারের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক প্রতিহিংসা চরিতার্থ করা, আইনের সীমাবদ্ধতাসহ বিচারিক মানের প্রশ্ন তুলে বাংলাদেশের জাতীয় দায়বদ্ধতার বিষয়টিকেও প্রশ্নের সম্মুখীন করার চেষ্টা হয়েছে। কিন্তু ইত্যকার প্রতিবন্ধকতার পরও যুদ্ধাপরাধীর বিচার দেশের গণমানুষের জোরালো সমর্থনে এবং সাহসী সরকারী পদক্ষেপে এগিয়ে চলেছে। এ যাবত ২৭টি মামলার চূড়ান্ত রায় ঘোষিত হয়েছে এবং ছয়জনের মৃত্যুদ- কার্যকরসহ বেশকিছু আলোচিত যুুদ্ধাপরাধীর শাস্তি নিশ্চিত হয়েছে। সম্প্রতি সুপ্রীমকোর্টের চূড়ান্ত রায়ে আরেক শীর্ষ যুদ্ধাপরাধীর দ- কার্যকর করা হয়েছে। প্রতিবারের মতো এবারও পাকিস্তান বাংলাদেশের যুদ্ধাপরাধ বিচারের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে, ১৯৭১ সালে পাকিস্তানের পক্ষ নেয়ার জন্য যুদ্ধাপরাধীকে সাচ্চা দেশপ্রেমিক বলেছে; এবং মন্তব্য করেছে যে, একটি ত্রুটিপূর্ণ বিচার ব্যবস্থার মধ্য দিয়ে মীর কাশেম আলীকে ফাঁসিতে ঝুলানো হয়েছে। বাংলাদেশ শক্ত ভাষায় এসব অবাঞ্ছিত প্রতিক্রিয়ার প্রতিবাদ জানিয়েছে, পাকিস্তানকে এটিও স্মরণ করিয়ে দিয়েছে যে, এসব প্রতিক্রিয়া কেবল অবাঞ্ছিতই নয়, একই সঙ্গে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে প্রত্যক্ষ হস্তক্ষেপের শামিল। পাকিস্তানের সরকার এর আগেও প্রায় একই ধরনের প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছে কয়েক যুদ্ধাপরাধীর দ- কার্যকরের আগে ও পরে। দেশটির সরকার, মন্ত্রী এবং পার্লামেন্ট এসব যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধীকে ‘শহীদ’ বলে আখ্যায়িত করেছে। বাংলাদেশের একান্ত অভ্যন্তরীণ বিষয় নিয়ে পাকিস্তানের এসব প্রতিক্রিয়া দৃশ্যতই আন্তর্জাতিক রীতিনীতির সুস্পষ্ট লঙ্ঘন এবং কূটনৈতিক শিষ্টাচারবহির্ভূত আচরণ। কিন্তু পাকিস্তান থেমে নেই। কাজেই বিষয়টি নিয়ে ভাববার অবকাশ আছে। প্রশ্ন হচ্ছেÑ এসব প্রতিক্রিয়ায় পাকিস্তান আসলে কী প্রমাণ করতে চায়? প্রথমত. দেশটি কি মনে করে যে, ৪৫ বছর পরও বাংলাদেশ ‘পূর্ব পাকিস্তান’ই আছে? দ্বিতীয়ত. পাকিস্তান কি বাংলাদেশের মাটিতে তাদের ঐতিহাসিক আত্মসমর্পণের শোধ নিতে চায়? তৃতীয়ত. দেশটি কি বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র লিপ্ত? চতুর্থত. দেশটি কি গোপনে বাংলাদেশের স্বাধীনতাবিরোধী অপশক্তিকে সমর্থন দিয়ে চলেছে? আমার বিশ্বাস, এসব প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে হবে। কারণ, বাংলাদেশের স্বাধীনতার প্রতিপক্ষরা নতুন করে সক্রিয়। দেশী-বিদেশী পৃষ্ঠপোষকতায় তারা জঙ্গীবাদের বিস্তার ঘটাচ্ছেÑ যা সর্বতোভাবে বাংলাদেশ রাষ্ট্রের চেতনা ও অস্তিত্ববিরোধী। এসব পাকিস্তানী অপতৎপরতা, বলাই বাহুল্য, ইতিহাসের নগ্ন অস্বীকৃতি এবং আত্মপ্রতারণামূলকÑ যা বাংলাদেশের মানুষের কাছে সম্পূর্ণভাবে অগ্রহণযোগ্য।
×