ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

সৃজনশীলতা বিকাশে ক্ষুদে ক্যানভাস

প্রকাশিত: ০৪:০৩, ১ অক্টোবর ২০১৬

সৃজনশীলতা বিকাশে ক্ষুদে ক্যানভাস

কবে কখন কোথা থেকে প্রথম দেয়ালিকা প্রকাশ করা হয়েছিল ময়মনসিংহে- এমন প্রশ্ন নিয়ে নানা বিতর্ক এবং মত থাকলেও ইতিহাস ও ঐতিহ্যের প্রাচীন জেলা ময়মনসিংহে দেয়ালিকা প্রকাশের রেওয়াজ ও প্রতিযোগিতা ছিল নামী-দামী স্কুল ও কলেজ থেকে শুরু করে গ্রামাঞ্চলের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও সাহিত্য সংগঠনগুলোতে এমন দাবি স্থানীয়দের। ময়মনসিংহ জেলা পরিষদের সাহিত্য ও সংস্কৃতি গ্রন্থের লেখক প্রয়াত আব্দুল কাদির খানের ময়মনসিংহের পত্রপত্রিকা প্রবন্ধে ২০০০ সালে উল্লেখ করেন, দেড়শ’ বছর ধরে সমাজ ও সাহিত্যের ক্ষেত্রে বাংলা সাময়িকপত্র গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। বাংলা গদ্যের বিকাশে, সাহিত্যের নতুন আঙ্গিক প্রবর্তনে, সামাজিক ভাব আন্দোলনের সৃষ্টিতে, রাজনৈতিক চেতনা সঞ্চারে এবং সাহিত্য ও সংস্কৃতির রুচি নির্মাণে সাময়িক পত্রের দান অপরিসীম। এই গুরুত্ব সত্ত্বেও বাংলা সাময়িকপত্রের ইতিহাস রচনার প্রয়াস দেখা যায় মাত্র পঞ্চাশ বছর আগে। তিনি লেখেন কেদারনাথ মজুমদারের ‘বাংলা সাময়িক সাহিত্য’ এই ক্ষেত্রে পথিকৃতের দাবি রাখে। ১৯১৭ সালে কেদারনাথ মজুমদারের প্রকাশিত ‘বাংলা সাময়িক সাহিত্য’ ময়মনসিংহের লেখকদের মুক্ত চিন্তার বিকাশসহ সৃজনশীল চেতনাকে ওই সময়ে মেলে ধরার ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখে। অনেকের মতে ওই সময়ে এর প্রভাবেই সীমিত আকারে বিভিন্ন স্কুল ও কলেজসহ সাহিত্য সংগঠনের উদ্যোগে নিজেদের মত প্রকাশ নিয়ে হাতে লেখা দেয়ালিকার যাত্রা শুরু হয়েছিল। কথা সাহিত্যিক সালিম হাসান জানান, পঞ্চাশের দশকের কথা শিল্প রাহাত খান, অধ্যাপক সুধীর দাস ও বিমল কান্তি দে-এর উদ্যোগে ‘দীপাবলী’ নামে দেয়ালিকা প্রকাশ করা হয়। পরবর্তীতে সরকারী আনন্দ মোহন কলেজ থেকে বিভিন্ন বিভাগের উদ্যোগে দেয়ালিকা প্রকাশের প্রতিযোগিতা ছিল। রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের কারণে পঁচাত্তরের পর থেকে নব্বই দশকের গোড়া পর্যন্ত দেয়ালিকা প্রকাশে এক ধরনের বন্ধ্যত্ম চলে ময়মনসিংহে। নব্বই দশকের পর থেকে আবার নতুন ধারায় শুরু হয় দেয়ালিকা প্রকাশের চর্চা। বর্তমানে বিভিন্ন স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শুরু করে সাহিত্য সংগঠনের উদ্যোগে দেয়ালিকা প্রকাশ নতুন মাত্রা লাভ করেছে। কালিবাড়ি রোডের প্রিমিয়ার আইডিয়াল হাইস্কুলের উদ্যোগে টানা সতেরো বছর ধরে চলে আসছে দেয়ালিকা প্রকাশ। স্কুলের প্রাক্তন প্রধান শিক্ষক মনোয়ারা বেগমের উদ্যোগে স্কুল শিক্ষক সাকিয়া বেগম, নুরুন্নাহার খান, জোৎ¯œা ফৌজিয়া কুলসুম, মোফাজ্জল হোসেন, নীলুফা রহমান, গোলাম হক ও কামরুল হাসানের সহযোগিতায় ‘সেজুঁতি’ নামের দেয়ালিকা ময়মনসিংহে এখন আলোচিত নাম। শিক্ষক মোফাজ্জল হোসেন দেয়ালিকার নামকরণ করেন। স্কুলের প্রধান শিক্ষক চান মিয়া জানান, মূলত ক্ষুদে লেখক তৈরি ও তাদের সৃজনশীল মেধা বিকাশের লক্ষ্যেই এই উদ্যোগ নেয়া হয়। প্রথম দিকে ছড়া, কবিতার পাশাপাশি শিশু কিশোরদের আঁকা ছবি দিয়েই সাজানো হয়েছে দেয়ালিকা। কিন্তু এখন কবিতা, ছড়া, গল্প, রম্য রচনা ও ছবির পাশাপাশি মানবাধিকার, নারীর মর্যাদা, আদিবাসীদের অধিকার, বিখ্যাত ব্যক্তিদের জীবনীসহ সমসমায়িক বিষয়ও তুলে ধরা হচ্ছে। প্রতিবছর একুশে ফেব্রুয়ারি মহান ভাষা দিবসকে সামনে রেখে দেয়ালিকা প্রকাশ করা হচ্ছে। ১ম থেকে দশম শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের নিজেদের হাতের লেখা ও ছবি দেয়ালিকায় ঠাঁই পায়। আইন ও সালিশ কেন্দ্রের সহযোগিতায় বাংলাদেশ দেয়াল পত্রিকা পরিষদ আয়োজিত ২০১৫ সালে অনুষ্ঠিত ৮ম জাতীয় দেয়াল পত্রিকা উৎসব প্রতিযোগিতায় স্কুলটি দ্বিতীয় পুরস্কার লাভ করে। বিদ্যাময়ী সরকারী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নাছিমা আক্তার জানান, টানা এক দশক বন্ধ থাকার পর তাঁর উদ্যোগে আবার নতুন করে স্কুলের ক্ষুদে লেখকদের নিয়ে নিয়মিত দেয়ালিকা বের করা হচ্ছে মৌসুমী নামে। মহান মে দিবসকে সামনে রেখে বের করা হয় ‘চেতনার ক্যানভাস’ নামে দেয়ালিকা। সর্বশেষ বর্ষাকাল নামে বের করা হয়েছে দ্বিতীয় দেয়ালিকা। শরতকাল নামে আরও একটি দেয়ালিকা বের করার প্রক্রিয়া চলছে। শিক্ষার্থীদের ছড়া, কবিতা, গল্প ও ছবি এসব দেয়ালিকার মূল প্রাণ। -বাবুল হোসেন, ময়মনসিংহ থেকে
×