ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

সৈয়দ শামসুল হককে নিবেদিত কবিতা

প্রকাশিত: ০৬:৫৪, ৩০ সেপ্টেম্বর ২০১৬

সৈয়দ শামসুল হককে নিবেদিত কবিতা

ভালোবাসা রাত শাহীন রেজা মনে হয় এই শেষ তারপর শুরু এভাবেই শেষ বেলা বাজে গুরুগুরু অতঃপর শুধু ঢল পৃথিবীর সুখ চেনাচোখে চিরঘুম কেঁপে ওঠে বুক এই ভালো শেষ ভালো চারদিকে শোক সবমুখে এক ভাষা আমাদেরি লোক পরানেতে আছো তুমি আছো তুমি নীড়ে অদেখার কারাগারে কবিতার ভিড়ে ছায়া দিয়ে ঘেরা ওই প্রণয়ের হাট ফুলে ফুলে অনুপম মরণের খাট বাতাসের বুকে দোলে মাধবীর হাত চাদোয়ায় জেগে থাকে ভালোবাসা রাত। ** স্নানের ভেতর স্নান মাসুদ মুস্তাফিজ পরাণের গহীন ভিতর থেকে রক্তের ভাঁজগুলো আজ শ্রাবণধারায় আকাশে ওড়ে আর নতুন ভালোবাসায় গড়িয়ে পড়ে মাটিতে মেঘের সিঁড়ি বেয়ে সত্যের স্বপ্ন-আগুন চমকে ওঠে রাজরোগের সন্তাপের রঙিন দরোজায় যেখানে লোকান্তরের শ্বাস-প্রশ্বাসের অভিমানের জীবন এ কোনো উপলচারিণী প্রকৃতিস্থ যাত্রা নয় অসীম কল্পনার সাদা শুদ্ধতার যন্ত্রণার অদৃশ্যের তপ্তনদী পেরিয়ে তুমি চলে গ্যালে বহুদূর... এই দীপাবলি প্রহর ভেঙে তুমি আর কতোদূর যাবে- নুরুলদিনের সারা জীবন পাখিনৃশংসতার হৃদবাতাসে সিগ্ধালোয় ভরিয়ে রেখেছো বাংলাদেশকে আমরা নিশ্চয়ই তোমার পায়ের আওয়াজ পেতে কান খাড়া করে রাখবো চিরকাল বাংলার আকাশে জনাকীর্ণ স্নানের ভেতর আর কোনো স্নান নয় কবি প্রতিদিনের চরকি ঘোরানো রাত শেষে আমরা হৃদ কলমের টানে তোমাকেই খুঁজবো ত্রিকাল সাহিত্যে সম্পর্কের রক্ত দিয়ে যাত্রা হয়-প্রস্থান হয় না ** বটবৃক্ষের কোলাহল হাসান হাবিব শোকের কোন শব্দ নেই দুঃখের কোন শব্দ নেই পতনের শব্দে বটবৃক্ষের কোলাহল নাম রাখে, নিসর্গের বাংলাদেশ। আজ তোমার শব্দে টের পাই, উরুশীর্ষে ঘুম তোলে সবুজ বৃক্ষ মৃদু মৃত্তিকা এঁকে দেয় রবীন্দ্রসরণী। শোকের কোন শব্দ নেই দুঃখের কোন শব্দ নেই শস্যভূমিতে হেঁটে যাও রেখে দাও পাথর রেখে দাও অক্ষরগুলো পত্রহীন রেখে দাও একদিন হেঁটে পাবে সবুজ গ্রাম। আজ শোকের কোন শব্দ নেই দুঃখের কোন শব্দ নেই তাকিয়ে থাকি মানচিত্রের দিকে। ** যাওয়া নয় ফিরে আসা মোহাম্মদ হোসাইন ‘জন্ম জন্মে বারবার কবি হয়ে ফিরে আসব আমি বাংলায়।’ -সৈয়দ শামসুল হক বৈশাখে রচিত হয়েছিল বলে তা বৈশাখেই থেমে থাকেনি- ছড়িয়ে পড়েছিল সারা বাংলায়। হাসপাতালের বেডে শুয়ে শুয়ে এ সবই কি ভেবেছিলেন তিনি? না কি ‘অনন্তকালকে মুঠোর ভেতরে বন্দী’ করে রাখাই ছিল আরাধ্য তার? ‘পরাণের গহীন ভেতরে, কাঁদছিল, কেউ কাঁদছিল’- কেন কাঁদছিল অমন- সে কান্নাই কি আজ সমগ্র বাংলাদেশকে ছাপিয়ে অনন্তে মিশে যাচ্ছে.. অগ্নি ও জলের কবিতায় কবিতায়? একদিন হ্যৎকলমের টানে আমিও মজেছিলাম খুব; আমিও তার পায়ের আওয়াজেই সচকিত হয়েছিলাম এবং নাভিমূলে ভস্মাধার রেখে, নিষিদ্ধ লোবানের খোঁজ কী করে পাওয়া যায়- তা চেয়েছিলাম। কী এমন ছিল- যার নীল দংশনে তিনিও অতল গহ্বরে হারিয়ে গেলেন অবশেষে! নাকি নূরুল দীন হয়ে কিংবা কবি হয়েই এ মাটির পলল ভূমিতে আবার ফিরে আসবেন মুজিবের রক্তাক্ত বাংলায়- আর নিহত পয়ার খোলে বসে থাকবেন বিরতিহীন উৎসবে উৎসবে চিরযুবার মতো অমলিন! ** সে চলি যায় কেন্ জোবায়ের মিলন সকালে এতো বৃষ্টি হলো কেনো, ঝাপুরঝুপুর ধারা বইলো কেনো, শ্রাবণের আকাশ কেনো টুপটাপ করে ঝরে গেল মা হারা শিশুর মতো? মেঘেরা কি পিঁপড়ার মতো জেনেছিল শোকের পূর্বাভাস? ‘পরাণের গহীনের ভিতর’ ধাপুরধুপুর ভাঙ্গন! গঙ্গার স্রোত খেয়ে নিচ্ছে গাঁও গেঁরাম “কার কাছে যাইয়া কমু, সে চলি যায় কেন্!’’ ‘নূরলদীন কার কাছে যাইয়া কবে- সে চলি যায় কেন্! কলিমুদ্দিন কার কাছে যাইয়া কবে- সে চলি যায় কেন্! জলেশ্বরী কার কাছে যাইয়া কবে- সে চলি যায় কেন্! কও’না কার কাছে যাইয়া কমু, সে চলি যায় কেন্!’’
×