সাহিত্যের প্রতি আন্তরিক না হলে কখনও শিল্প সৃষ্টি হয় না। লিটলম্যাগ ‘হৃদয়ে চলন’ সে আন্তরিক নাম বহন করে। পৃষ্ঠা উল্টাতেই প্রথমে চোখ পড়ে কবিতায়। মাঝখানে দু’-চারটি লেখা ছাড়া বলতে গেলে পুরো সংখ্যাটি সম্পাদক কবিতা দিয়ে সাজিয়েছেন। অর্থাৎ কবিতা সংখ্যা বললে একটুও ভুল হবে না।
পড়া শুরু করলাম বর্ষপূর্তির এই সংখ্যাটি। একটি লিটলম্যাগের প্রচ্ছদ, তার পেজ কোয়ালিটি আর লেখা যদি সমৃদ্ধ হয় সংখ্যাটি এমনিতেই পড়া হয়ে যায়। তবে পাঠশেষে যা বুঝলাম এখানে বাড়িয়ে বলার কিচ্ছু নেই। অফসেট কাগজ আর মজবুত বাইন্ডিং হলে যে ম্যাগটি এক কথায় ভাল হবে এমন নয়। সাহিত্যে কাগজের মান থেকেও লেখার মান থাকতে হয়। মজবুত বাইন্ডিং থেকেও সম্পাদনার হাত শক্ত হতে হয়। তবেই শ্রেণীবোদ্ধাদের সমালোচনায় একটি লিটলম্যাগ কি সাহিত্য কাগজের নতুন সৃষ্টিতে আলো ফেলার একটা সুযোগ তৈরি হতে বেশি সময় লাগে না।
‘মানবসমাজে সংঘটিত সব ঘটনাই সংবাদমূল্য পায় না। নির্বাচিত কিছু ঘটনা ছাপার অক্ষরে মানুষ জানতে পারে। এর মধ্যে কিছু ঘটনা মানুষকে ব্যথিত করে, কিছু ঘটনা করে গর্বিত। বিভিন্ন ঘটনার ভেতর দিয়েই কাটে মানুষের প্রাত্যহিক জীবন। এর ভেতর থেকে কিছু বিষয় সে গ্রহণ করে দায়ে পড়ে- সংসারের প্রয়োজনেও, কিছু আনন্দ লাভের জন্য। আবার ঘটনা ইতিহাসেরও সাক্ষী হিসেবে মানুষকে সাহায্য করে। সাহিত্যিকরা সমাজে ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলো থেকে কিছু ঘটনা নির্বাচন করেন। যেমন- শস্যের বীজ সম্পাদনা করেন একজন প্রাজ্ঞ কৃষক। কৃষক ভবিষ্যতের জন্য সংরক্ষণের সময় উৎকৃষ্ট বীজগুলো আলাদা করেন ভুসি-চিটা থেকে।’
এস এম বেলাল হোসেনের ‘মধ্যযুগে সাহিত্য ও সমাজ’ প্রবন্ধটি পাঠ করে বেশ ভাল লেগেছে।
তবে নাহিদ হাসান রবিনের ‘আমার এই গান’ শিরোনামে গল্পটি পড়ে মনে হলো, কয়েক বন্ধু মিলে আড্ডা দেয়ার কাহিনী ছাড়া আর কিছু নয়। আনিফ রুবেদের ‘সনাতন কলা’ লিখতে গিয়ে গল্পটি লেখক চটজলদি করে ফেলেছেন। লেখক গল্পটিকে আরেকটু সময় দিতে পারতেন। ইমরান মাহফুজের ‘মানুষ খোঁজা চোখ’ শিরোনামে লেখাটি সূচিপত্রতে ‘গল্প’ উল্লেখ থাকলেও এটি আসলে গল্প কি না প্রশ্ন রাখলাম লেখকের কাছে?
প্রকৃতির বর্ণনায় সম্পাদকীয় শুরু হলেও মাঝখানে সম্পাদক বলেন, নানা চড়াই-উতরাই আর বাধাবিপত্তি পেরিয়ে তবু ‘হৃদয়ে চলন’ প্রকাশ হচ্ছে। এই জন্য প্রশংসা আর সাধুবাদ দিতে হয় ‘হৃদয়ে চলন’ পরিবারকে। দেশের মফস্বল শহরগুলোতেই মূলত বেশি বিপাকে পড়তে হয় সাহিত্য সম্পাদকদের। কারণ পৃষ্টপোষকতা একেবারেই নগণ্য ওসব শহরে । তবু শত কষ্টকে উপেক্ষা করে একেকটা জেলা, উপজেলা থেকে সাহিত্যকর্মীরা বের করেন সাহিত্যের এই কাগজগুলো। এ সংখ্যায় স্থান পেয়েছে দেশের বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ নবীন ও প্রবীণ কবির কবিতা। তন্মধ্যে বজলুল করিম বাহার, জাকির হোসেন, চন্দনকৃষ্ণ পাল, শিবলী মোকতাদির, আনোয়ার কামাল, ভাগ্যধন বড়–য়া, ইসলাম রফিক, হাফিজ রহমান, সীমান্ত হেলাল, আশরাফ জুয়েল, পলিয়ার ওয়াহিদ, লতিফ জোয়ার্দার, অদ্বিত্ব শাপলা, প্রত্যয় হামিদ, তিথি আফরোজ, অধরা জ্যোতি, রেহানা সুলতানা শিল্পী, মিজানুর রহমান বেলাল, সৌম্য সালেক, রাশেদ রেহমান, সাফিনা আক্তার, সিক্তা কাজল, রফিকুজ্জামান রনি, সতেজ মাসুদ, জব্বার আল নাঈম, আক্তারুজ্জামান লেবু, সাহিদা সাম্য লীনা, মোকসেদুল ইসলাম, গোলাম সরোয়ার, হিরণ্য হারুন, পার্থ অগাস্টিন, মাহমুদ নোমান, সাম্মি ইসলাম নীলা, নাহিদা আক্তার তান্নি, সাখাওয়াৎ সমুন, মীর রবি, আশিক বিন রহিম, ইসলাম তরিকসহ অনেকে লিখেছেন। সবশেষে রয়েছে কবি ও সম্পাদক হাদিউল হৃদয়ের একটি আলোচনা ও আমির খসরু সেলিমের একগুচ্ছ ছড়া। কিছু কিছু লেখায় সম্পাদকের হাত পড়েনি বললেই চলে। সেদিক থেকে বলতে হয়, সামনের সংখ্যাগুলোতে সম্পাদক যেন আরও সতর্ক থাকেন।
শীর্ষ সংবাদ: