ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

মীম নোশিন নাওয়াল খান

সত্যিকারের হোগার্টস!

প্রকাশিত: ০৬:৪১, ৩০ সেপ্টেম্বর ২০১৬

সত্যিকারের হোগার্টস!

হ্যারি পটার পড়তে বা দেখতে গিয়ে হ্যারি, রন আর হারমিয়নের সঙ্গে পাঠক-দর্শকরাও ঘুরে এসেছেন জাদুর স্কুল হোগার্টস থেকে। হোগার্টসের প্রতিটা অলি-গলি, করিডোর, ডরমিটরি হ্যারি পটার ভক্তদের চেনা। বইপড়ার বা চলচ্চিত্র দেখার পুরো সময়টা হোগার্টসেই পেরিয়ে গেছে পাঠক-দর্শকদের। কিন্তু বই বা চলচ্চিত্র শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই বেরিয়ে এসেছে হতাশার দীর্ঘশ্বাস- ইশ! আমি যদি সত্যি হোগার্টসে পড়তে পারতাম! হ্যারি পটার ভক্তরা প্রায় সবাই হোগার্টসে পড়ার স্বপ্ন দেখে এসেছেন, নিজেকে জাদুকর কল্পনা করে এসেছেন। আর সেই ভক্তদের জন্যই এবার রয়েছে একটি চমকপ্রদ খবর। সত্যি সত্যিই এবার তারা পড়তে পারবেন হোগার্টসে! তাদের কথা ভেবে নির্মিত হয়েছে সত্যিকারের হোগার্টস! চোখ কপালে উঠল? অবাক হওয়ার মতোই বিষয় বটে। হোগার্টসের আদলে তৈরি কোন স্থাপনা এটা, এটা সরাসরি একটা জাদুবিদ্যার কলেজ! পোল্যান্ডের লেসনায় অবস্থিত এই জাদুবিদ্যার কলেজ। চোকা ক্যাসল নামক প্রাচীন দুর্গে গড়ে তোলা হয়েছে এই কলেজ। তবে এর প্রতিষ্ঠাতারা এটিকে হোগার্টস বলে মানতে রাজি নন, তাদের মতে হ্যারি পটার থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে এই কলেজ প্রতিষ্ঠিত হলেও এটি হোগার্টস নয়। অদ্ভুত এই কলেজের নাম দেয়া হয়েছে ‘চোকা কলেজ অব উইচক্র্যাফট এ্যান্ড উইরজারড্রি।’ কলেজ অব উইজারড্রিতে প্রতিটি সেশন হয় চারদিনের। এই চারদিন এখানে ক্লাস করার জন্য গুনতে হবে ৩৯০-৪৩০ ডলার। এই খরচে আপনি পাচ্ছেন চারদিন কলেজ অব উইজারড্রিতে থাকা-খাওয়া, জাদুবিদ্যা শেখা এবং অবশ্যই অভূতপূর্ব অভিজ্ঞতা লাভ করার সুযোগ। হোগার্টসের মতোই কলেজ অব উইজারড্রিতে একজন জাদুকর হিসেবে আপনি করবেন জাদুবিদ্যার ক্লাস। সেই জাদু আবার প্রয়োগও করতে পারবেন অন্য কারোর ওপরে এবং আপনার ভাগ্য ভাল হলে আপনার জাদু কাজও করবে! হ্যারি পটারের চারটা হাউসের মতো এই কলেজেও আছে পাঁচটা হাউস। শিক্ষার্থীরা তাদের নিজেদের হাউসের হয়ে বিভিন্ন জাদুবিদ্যার খেলায় অংশ নেয় এবং হাউসের জন্য পয়েন্ট অর্জন করে। এ ছাড়াও চোকা ক্যাসলে রয়েছে সত্যিই জাদুর পৃথিবী থেকে ঘুরে আসার সুযোগ। এখানকার শিক্ষার্থীদের পাশ দিয়ে ঘুরে বেড়ায় হ্যারি পটারের গল্পের মতো অদ্ভুত সব জাদুর প্রাণী। এমনই রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতা দেয়ার জন্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছে কলেজ অব উইজারড্রি। তবে এবার মনে প্রশ্ন জাগতে পারে, জাদুবিদ্যা কি সত্যিই আছে? তাহলে কীভাবে জাদুবিদ্যা শেখা বা তা প্রয়োগ করা সম্ভব? এই প্রশ্নের উত্তর হচ্ছে লার্প। পুরো কলেজ অব উইজারড্রির ধারণাটাই লার্পিংয়ের ওপর ভিত্তি করে করা। লার্প মানে হচ্ছে লাইভ এ্যাকশন রোল প্লেয়িং। এটাকে এক ধরনের খেলা বা এক ধরনের নাটক বলা যেতে পারে, যেখানে অংশগ্রহণকারীরা তাদের জন্য নির্ধারিত চরিত্র অনুযায়ী সবকিছু করে থাকে। জাদুবিদ্যার কলেজের ধারণাটা এ রকমই। কলেজ অব উইজারড্রির শিক্ষার্থীরা নিজেদের জাদুকর হিসেবে কল্পনা করে সে অনুযায়ী কাজ করেন। তাহলে লার্পের মাধ্যমে কীভাবে জাদুবিদ্যা কাজ করে? ধরুন আপনি কারোর ওপর কোন স্পেল বা জাদু প্রয়োগ করলেন। আপনি আপনার জাদুর কাঠি তার দিকে তাকিয়ে স্পেলটি বলবেন, আর আপনার শিকার ঠিক করবে সে কী করতে চায়। যদি সেভাবে সে আপনার ইচ্ছে অনুযায়ী কাজ করতে চায়, তবে সে তাই করবে। যদি আপনি তাকে নির্বাক করে দেয়ার স্পেল বলে থাকেন, সে স্বেচ্ছায় চুপ হয়ে যাবে। সেক্ষেত্রে বলা যায় আপনার জাদু কাজ করেছে। আবার যদি তার ইচ্ছে না হয়, তবে সে আপনার স্পেল অনুযায়ী কাজ করবে না। তখন আপনার জাদুও কাজ করবে না। কিন্তু এই জাদুর স্পেলগুলো আপনি কোথায় শিখবেন? কলেজ অব উইজারড্রিতে প্রতিটা কাজ করার ক্ষেত্রে- জাদু প্রয়োগ থেকে শুরু“করে জাদুর প্রাণীদের সঙ্গে ব্যবহার- সবকিছুর জন্যই আছে সুনির্দিষ্ট নিয়ম। এই নিয়মগুলো কীভাবে জানবেন? এই নিয়মগুলো জানার জন্য শিক্ষার্থীদের জন্য একটা হ্যান্ডবুক আছে। মোটা বাঁধাই করা হ্যান্ডবুকে কলেজ অব উইজারড্রির সব নিয়মকানুন লেখা আছে। বাস্তব জগতে বসে এই জাদুর পৃথিবীতে চারদিন তিন রাত কাটিয়ে আসার সুযোগটা তৈরি করেছে লাইভফর্ম এবং রোলস্পিলস্ফ্যাব্রিকেন-এর আন্তর্জাতিক দল। তারাই চার দিনের এই লার্প ক্যাম্পের আয়োজক। আর তাদের জন্যই এতদিন পর সত্যি হয়েছে অসংখ্য হ্যারি পটার ভক্তের স্বপ্ন। কলেজ অব উইজারড্রির প্রতিটি সেশনের জন্য ১৪০ জন শিক্ষার্থী নেয়া হয়। ইতোমধ্যে এই জাদুবিদ্যার কলেজের আটটি সেশন শেষ হয়েছে সফলভাবে। নবম সেশনটি শুরু“হবে এ বছরের ১৭ নবেম্বর থেকে এবং শেষ হবে ২০ নবেম্বর। আর দশম সেশনটি ২৪ নবেম্বর শুরু হয়েছে ২৭ নবেম্বর শেষ হবে। তবে এই দুটো সেশনের কোনটারই টিকেট নেই, বিক্রি হয়ে গেছে সবই। সেই সঙ্গে আছে লম্বা একটা অপেক্ষমাণ তালিকা। এটাই প্রমাণ করে এই কলেজের জনপ্রিয়তা। কিন্তু মন খারাপের কিছু নেই। আপনি যদি চান, তবে কলেজ অব উইজারড্রির ১১তম সেশনের জন্য টিকেট কেটে ফেলতে পারেন, যা ২০১৭ সালের ১৬ মার্চ থেকে ১৯ মার্চ পর্যন্ত চলবে। তবে আর দেরি কেন? সুযোগ থাকলে তৈরি হয়ে নিন আজীবন মনে রাখার মতো এক রোমাঞ্চকর জাদুর পৃথিবীর অভূতপূর্ব অভিজ্ঞতার জন্য।
×