ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

আইএস জঙ্গীদের রোমহর্ষক তাণ্ডব এক ইয়াসমিনের গল্প

প্রকাশিত: ০৬:৩৯, ৩০ সেপ্টেম্বর ২০১৬

আইএস জঙ্গীদের রোমহর্ষক তাণ্ডব এক ইয়াসমিনের গল্প

বিশ্বজুড়ে আইএস জঙ্গীদের অমানবিক পাশবিকতায় মনুষ্যত্ব যেভাবে লঙ্ঘিত হয়েছে, মানবতা যেভাবে ধিক্কৃত হয়েছে তা আজ ন্যক্কারজনক রূপে উন্মোচিত। তাদের রক্তাক্ত নৃশংস অভিযান শুধুমাত্র হত্যাযজ্ঞের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়, সর্বনাশের শেষ পর্যায়ে গিয়ে অসংখ্য নারীর সম্ভ্রমহানিতার মতো পৈশাচিক উন্মত্ততারও এসব জঙ্গীরা তাদের অপকর্মের স্বাক্ষর রেখে যাচ্ছে। আর তাই উত্তর ইরাকের সিঙ্গর অঞ্চলের অসংখ্য নারী আজও আইএসের ভয়ে ভীতসন্ত্রস্ত এবং উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় শিউরে ওঠেন। ২০১৪ সালে আগস্ট মাসে আইএসের জঙ্গী হামলা হয় এই সিঙ্গর এলাকায়। যেখানে অনেক স্বাধীন ইয়েজিদি বাস করত। চার লাখ মানুষের এই সম্প্রদায় আইএসের নগ্ন আক্রমণে অনেকেই মারা যান, অনেকেই জঙ্গীদের হাতে ধরা পড়েন কেউবা সিঙ্গর অঞ্চল ছেড়েই চলে যান। ধৃত পুরুষ ইয়েজিদিদের জোর করে ইসলাম ধর্ম গ্রহণে বাধ্য করা হয় এবং আপত্তি করলে তাদেরও শেষ করে দেয়া হয়। যারা মুসলমান হয় তাদের জঙ্গী তৈরি করার প্রক্রিয়াও শুরু হয়ে যায়। সেখানে ইয়েজিদি নারীর অবস্থা কতখানি শোচনীয় এবং অসহায় তা বর্ণনা করতে গিয়ে জার্মানির এক চিকিৎসক হৃদয়বিদারক আর্তিতে কেঁপে ওঠেন। এসব মহিলার মধ্যে মাত্র ১ হাজার ১০০ ইয়েজিদি নারী আইএসের কড়া নজর থেকে নিজেদের বাঁচিয়ে জার্মানিতে শরণার্থী হিসেবে পালিয়ে যায়। যেসব নারী-কিশোরী নিজেদের বাঁচাতে পারেনি এই মৌলবাদী চক্র থেকে তাদের নানাভাবে হাত বদল করে বিক্রি করে দেয়া হয় আর বাকিদের ওপর চলে নিষ্ঠুর, নির্মম শারীরিক পীড়ন। জার্মানির এই চিকিৎসক ইয়ান কিজিলহাল ধর্ষিতা আট বছরের এক বালিকা সম্বন্ধে বলেন যে, মেয়েটিকে জঙ্গীরা আটবার বেচাকেনা করে এবং দশ মাসে প্রায় শতবার নির্যাতন চালায়। এই চিকিৎসক আরও বলেন যে, তিনি রোয়ান্ডা এবং বসনিয়ায়ও অনেক মহিলা রোগীকে চিকিৎসা করেছেন। কিন্তু এমন ভয়াবহ অবস্থার সম্মুখীন কখনও হননি। জার্মানে আসা এসব ইয়েজিদি মহিলা যাদের বয়স ৬-৫৬ পর্যন্ত তাদের মধ্যে ইয়াসমিন নামের আঠারো বছরের এক মেয়ের দুর্দশা বর্ণনা করতে এই চিকিৎসকের অন্তরাত্মা শিউরে ওঠে। ইয়াসমিন সতেরো বছরের এক কিশোরীকে আইএস জঙ্গীদের দ্বারা নির্যাতিত এবং লাঞ্ছিত হতে দেখে ভয়ে এবং শঙ্কায় কুঁকড়ে যায়। তারপর ইয়াসমিন নিজেকে বাঁচানোর জন্য যা করে তা যেমন ভয়ঙ্কর তেমনি লোমহর্ষক। আইএস জঙ্গীরা যাতে তার থেকে ঘৃণায় মুখ ফিরিয়ে নেয় তার জন্য নিজের শরীরে পেট্রোল ঢেলে আগুন জ্বালিয়ে দেয়। তার কাছে এই দগ্ধতার যন্ত্রণার চাইতেও ভয়ঙ্কর আইএস জঙ্গীদের নৃশংস পৈশাচিক উল্লাস কোন নারীর শরীরকে নিয়ে। ইয়াসমিনসহ আরও অনেক শিশু-কিশোরী এবং মহিলাদের জার্মানির এক অজ্ঞাত পরিচয় স্থানে চিকিৎসা সেবা দেয়া হচ্ছে। পোড়া শরীর আর ভীতচকিত মন দিয়ে ইয়াসমিন এখনও ভেবে কূল-কিনারা পাচ্ছে না আইএসের নিষ্ঠুর জঙ্গীরা কি আবারও হানা দেবে? এসব বিপন্ন, বিপর্যস্ত নারীর মানসিক পরিচর্যা দিয়ে সুস্থ করে তোলার প্রচেষ্টায় লিপ্ত কিজিলহানের মতো আরও অনেক চিকিৎসক। গোপন স্থানে আইএসের নজর এড়িয়ে নিবিড় পরিচর্যায় এসব অভিবাসী মহিলাকে সেবা দেয়া হচ্ছে। জার্মানিতে আসা মহিলারা আর তাদের স্বদেশ ইরাকে যেতে মোটেই আগ্রহী নন। জার্মানিতেই তারা স্থায়ীভাবে বাস করতে চান। এদের মধ্যে অনেকেই সেই অমানবিক আর পৈশাচিকতার স্মৃতি মনেও করতে চান না। দগ্ধ আর পোড়া শরীর নিয়ে ইয়াসমিন কাতরালেও আইএস জঙ্গীদের নির্মমতার কাহিনী সারা পৃথিবীকে জানাতে চায়। বাবা-মা-বোন আর দুই ভাইয়ের সঙ্গে জার্মানিতেই চিরস্থায়ীভাবে থেকে যেতে চায় ইয়াসমিন। অসুস্থ বিপন্ন, অসহায় ইয়াসমিন সুস্থ হয়ে লেখাপড়া শিখতে আগ্রহী। ইংরেজী এবং জার্মান দুটো ভাষাই আয়ত্ত করতে চায়। তথ্য-প্রযুক্তিতেও নিজের দক্ষতা বাড়াতে চায়। কিন্তু সারা শারীরিক অবস্থা এতই লাজুক যে এখনও শরীরে অনেক অস্ত্রোপচার করতে হবে। তবুও সে হারতে চায় না এই অপরিণত জীবনযুদ্ধে। নতুন চলার পথকে সে স্বাগত জানাতে চায়। সামনে এগিয়ে যেতে চায়। অপরাজিতা ডেস্ক
×