জনকণ্ঠ রিপোর্ট ॥ বখাটেদের বিরুদ্ধে আইনী ব্যবস্থা নেয়া দূরের কথা, উল্টো পরিবারের পক্ষ থেকে মামলা নয়, সামাজিকভাবে নিষ্পত্তির পরামর্শ দেয়া হয়েছে। নানারকম চাপ সৃষ্টির কারণে অবশেষে নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থনা, প্রকাশ্যে করজোড়ে ও পায়ে ধরে মাফ চাওয়া, ৫০ হাজার টাকার অর্থদ- এবং আরও অর্থদ-সহ নানান শর্ত সংবলিত মুচলেকার মধ্য দিয়ে হবিগঞ্জে এক নারী নাট্যকর্মী লাঞ্ছনার ঘটনাটি সালিশ বৈঠকেই নিষ্পত্তিতে বাধ্য করা হয়েছে। জেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে এক সালিশী বৈঠকে এ লাঞ্ছনার বিষয়টি নিষ্পত্তি করা হয় বুধবার সন্ধ্যায়। এতে উপস্থিত ছিলেন- রিচি গ্রাম পঞ্চায়েত কমিটির সভাপতি আছান উল্লাহ সর্দার, সেক্রেটারি আব্দুর রহমান, রিচি যুব সংঘের নেতা জিতু মিয়া, খোয়াই থিয়েটারের সভাপতি এ্যাডভোকেট নিলাদ্রী শেখর পুরকায়স্থ টিটু, কবি ও প্রাবন্ধিক এমএ রব, বাসদ নেতা হুমায়ূন খান প্রমুখ। শুরুতেই রিচি গ্রামের বাসিন্দা অভিযুক্ত বখাটে ও তাদের অভিভাবকদের উপস্থিতিতে গত ১৯ সেপ্টেম্বর দুপুরে হবিগঞ্জ শহরের খোয়াই থিয়েটার কার্যালয়ে সংঘটিত ঘটনায় মহিলা মহাবিদ্যালয়ের ছাত্রী ও সংশ্লিষ্ট থিয়েটারের নাট্যকর্মী শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত হওয়ার বিষয়টি হুবহু জানতে এক প্রতিবাদী নাট্যকর্মীর জবানবন্দী গ্রহণ করা হয়। পরবর্তীতে এ বিষয়ে করণীয় ও বখাটেদের কেমন শাস্তিতে আনা প্রয়োজন মর্মে উক্ত ব্যক্তিদ্বয়সহ আরও কয়েকজনের মতামত নেয়া হয়। এ সময় ওই ধরনের ঘটনা ঘটলে তাৎক্ষণিক পুলিশী করণীয়, তাদের উদাসীনতা-দায়িত্ববোধে ক্ষোভ প্রকাশ করা হলেও একই রকম যে কোন ঘটনা সংঘটিত হলে করণীয় সম্পর্কে বিজ্ঞ আদালতের সুস্পষ্ট দিক-নিদের্শনা রয়েছে- এমন বক্তব্য নানাভাবে উঠে এলেও পরিস্থিতি বিবেচনায় সালিশী বৈঠকেই নারী লাঞ্ছনার বিষয়টি নিষ্পত্তির সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত হয়। এরই প্রেক্ষিতে প্রথমে অভিযুক্ত দুই বখাটেকে ২৫ হাজার করে ৫০ হাজার এবং আরও এক বখাটেকে ১০ হাজার টাকা জরিমানা ঘোষণা করে ওই ঘটনার জন্য তাদের দোষী সাব্যস্ত করা হয়। এছাড়া সালিশ বৈঠকেই প্রত্যেক বখাটে করজোড়ে ক্ষমা প্রার্থনা এবং লাঞ্ছিত নাট্যকর্মীসহ তার আরও এক বান্ধবীর দুই অভিভাবক, খোয়াই থিয়েটারের প্রতিবাদী সেক্রেটারি ইয়াসিন খাঁসহ উপস্থিত সালিশ বিচারকদের পায়ে ধরে ক্ষমা প্রার্থনা করে। নাট্যকর্মী ও তার অপর বান্ধবীর বাসায় গিয়ে তারা এবং অভিভাবকদের নিকট বখাটের অভিভাবকরা ক্ষমা চাইবে- এই মর্মে সিদ্ধান্ত দেয়া হয়। ভবিষ্যতে বখাটেরা এমন ঘটনার যাতে পুনরাবৃত্তি ঘটাতে না পারে এবং লাঞ্ছিত ছাত্রীদের নিরাপত্তা নিশ্চিন্তকরণে অভিযুক্ত প্রত্যেককে আরও ৫০ হাজার টাকার মুচলেকা দিয়ে এ সালিশ বৈঠকের নিষ্পত্তি টানা হয়।