ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

আজ মহালয়া দেবীদুর্গার আবাহন

প্রকাশিত: ০৬:১০, ৩০ সেপ্টেম্বর ২০১৬

আজ মহালয়া দেবীদুর্গার আবাহন

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ বাতাসে পুজোর গন্ধ। মন উৎসবময়। শুরু হচ্ছে দেবীপক্ষ। প্রতিমা তৈরি শেষ। বাহারি রং চড়েছে প্রতিমার গায়। নিপুণ শিল্পী তার তুলির আলতো ছোঁয়ায় জাগিয়ে তুলছেন দেবী দুর্গাকে। জেগে উঠবেন সরস্বতী। গণেশের গায় উঠবে নকশীদার কুচির দুধসাদা ধুতি। মা লক্ষ্মীর হাসি ঝরে পড়বে। আর বোধনের মধ্য দিয়ে খুলে যাবে মা দুর্গার স্নিগ্ধ শান্ত চোখ। জেগে উঠবেন দশভুজা। আশীর্বাদ দেবেন মনোবাঞ্ছা নিয়ে দূর-দূরান্ত থেকে আসা পূজারীকে। আজ শুভ মহালয়া। চ-ীপাঠের মধ্য দিয়ে দেবী দুর্গার আবাহনই মহালয়া হিসেবে পরিচিত। চ-ীতেই আছে কিভাবে সৃষ্টি হয়েছে দেবী দুর্গার। বাঙালী হিন্দু সম্প্রদায়ের প্রধান ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপুজোর একটি গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ মহালয়া। আজ ভোরে চ-ীপাঠের মধ্য দিয়ে আবাহন ঘটবে দেবী দুর্গার। দেবীকে আমন্ত্রণ জানানো হবে মর্ত্যলোকে। আগামী শুক্রবার ষষ্ঠীপুজোর মাধ্যমে শারদীয় দুর্গোৎসবের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হলেও মূলত আজ থেকেই পূজারীরা দুর্গাপুজোর আগমনধ্বনি শুনতে পাবেন। শাস্ত্রীয় বিধান মতে, মহালয়ার অর্থ হচ্ছে, মহান আলোয় দুর্গতিনাশিনী দেবী দুর্গাকে আবাহন। দু’টি পক্ষ রয়েছে, একটি পিতৃপক্ষ, অন্যটি দেবীপক্ষ। অমাবস্যা তিথিতে পিতৃপক্ষের শেষ হয়, আর প্রতিপদ তিথিতে শুরু হয় দেবীপক্ষের। আজ মহালয়ার মাধ্যমে শুরু হচ্ছে সেই দেবীপক্ষ। ধর্মমতে, এই দিনে দেব-দেবীকুল দুর্গাপুজোর জন্য নিজেদের জাগ্রত করেন। মহালয়ার দিন ভোরে মন্দিরে মন্দিরে শঙ্খের ধ্বনি ও শ্রী শ্রী চ-ীপাঠের মধ্য দিয়ে দেবীকে আবাহন জানানো হয়। এদিন গঙ্গাতীরে প্রার্থনা করে ভক্তরা মৃত আত্মীয়স্বজন ও পূর্বপুরুষদের আত্মার মঙ্গল কামনা করেন। তাই মহালয়া দুর্গোৎসবের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। দেবীর আরাধনা সূচিত হয় মহালয়ার মাধ্যমে। মহালয়া থেকেই দেবীপক্ষের শুরু। পুরাণ মতে, রাজা সুরথ প্রথম দেবীদুর্গার আরাধনা শুরু করেন। বসন্তে তিনি এই পুজোর আয়োজন করায় দেবীর এ পুজোকে বাসন্তী পুজোও বলা হয়। কিন্তু রাবণের হাত থেকে সীতাকে উদ্ধার করতে যাওয়ার আগে অকালে রামচন্দ্র দুর্গাপুজোর আয়োজন করেছিলেন। তাই শরৎকালের এই পুজোকে হিন্দুমতে অকালবোধনও বলা হয়। সনাতন পঞ্জিকা মতে, এ বছর আসছেন দেবী দুর্গা ঘোড়ায় চড়ে। এতে রবি শস্য ভাল হবে। দেবী বিদায়ও নেবেন ঘোড়ায় চরে। এতে দূর হবে সকল অসুখ বিসুখ। শারদীয় দুর্গোৎসবকে ঘিরে নানা আয়োজনে ব্যস্ত বাঙালী হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষ। উৎসবের আমেজ ছড়িয়ে পড়েছে সব ধর্ম ও শ্রেণীর বাঙালীদের মধ্যেও। পুজোর আনন্দে মাতোয়ারা জাতি। মন্দিরে মন্দিরে চলছে প্রতিমা সাজ-সজ্জার কাজ। দেবী মূর্তি নির্মাণ শেষ, গায় এখন রং ছোঁয়ানোর অপেক্ষায় দক্ষ ভাস্কর, নিপুণ শিল্পী। ধুলোবালি লেগে যাতে নষ্ট না হয়, সেজন্য কাপড়ের পর্দা দিয়ে ঢেকে রাখা হয়েছে মন্দিরের প্রতিমাগুলোকে। আয়োজকরা ছুটছেন দর্জি পাড়ায়। মা দুর্গার লাল টুকটুকে বেনারসী শাড়ির জরির কাজ, গণেশের ধুতিতে নকশাদার পাড় বসানো, আর মহিষাসুরের জমকালো পোশাক তৈরির জন্য কেউবা ছুটছেন কামার পাড়ায়। ঘণ্টার পর ঘণ্টা ঠাঁয় দাঁড়িয়ে বানিয়ে নিচ্ছেন দেবীর হাতের চক্র, গদা, তীর-ধনুক ও খড়গ-ত্রিশূল। আর ঘষা-মাজায় মিস্ত্রিরা ব্যস্ত ম-পগুলোকে নতুন করে তুলতে ঘুম নেই ডেকোরেটরদের। আয়োজকদের ফরমায়েশ ও ডিজাইন অনুযায়ী গড়ে তুলছেন দৃষ্টিনন্দন অস্থায়ী পুজোম-প। চলছে সংস্কারের শেষ কাজটুকুনও। আজ দুর্গাদেবীর আবাহন বা মহালয়া। সাত দিন পরে ৭ অক্টোবর ষষ্ঠীতে দশভুজা দেবীদুর্গার বোধন, আমন্ত্রণ ও অধিবাসের মধ্যদিয়ে শুরু হবে পুজোর আনুষ্ঠানিকতা। ৮ অক্টোবর মহাসপ্তমী, ৯ অক্টোবর মহাষ্টমী ও কুমারী পুজো, ১০ অক্টোবর মহানবমী বিহিত পুজো এবং ১১ অক্টোবর বিজয়া দশমী ও দর্পণ বিসর্জন শেষে শোভাযাত্রা সহকারে প্রতিমা বিসর্জনের মাধ্যমে শেষ হবে পাঁচ দিনব্যাপী শারদীয় দুর্গোৎসবের। আজ শুক্রবার মহানগর সার্বজনীন পূজা কমিটির উদ্যোগে ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দির মেলাঙ্গনে ভোরে মহালয়ার ঘট স্থাপন, বিশেষ পুজো এবং মহালয়ার বিশেষ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। গুলশান-বনানী সার্বজনীন পূজা উদযাপন পরিষদ বনানী পুজোম-পেও মহালয়া উপলক্ষে নেয়া হয়েছে নানা অনুষ্ঠান। এদিকে এবার দুর্গোপুজো উপলক্ষে সারাদেশেই ধর্মীয় সম্প্রীতি রক্ষায় নেয়া হয়েছে দেশব্যাপী কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা। হাজার হাজার র‌্যাব-পুলিশ, আর্মড পুলিশ ব্যাটেলিয়নসহ সারাদেশেই পুজোম-পগুলোর আশপাশে থাকবে বিপুলসংখ্যক গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা। বাংলাদেশ পুজো উদযাপন পরিষদ ও মহানগর সার্বজনীন পূজা কমিটিও দুর্গোৎসবকে ব্যাপক উৎসবমুখর করে তুলতে প্রতিদিনই প্রস্তুতিমূলক সভা করছে। বাংলাদেশ পুজো উদযাপন পরিষদের হিসাব অনুযায়ী, সারা দেশে ২৯ হাজার ৩৯৫ পুজোম-পে শারদীয় দুর্গোৎসবে আয়োজন করা হয়েছে। যা গতবারের তুলনায় তিন শ’টি বেশি। সারাদেশের বিভিন্ন মন্দির, ক্লাব, সংগঠন, স্থানীয় পুজো উদযাপন কমিটি ও ব্যক্তিগত উদ্যোগে আয়োজিত হচ্ছে এসব পুজো। সুষ্ঠুভাবে দুর্গাপুজো সম্পন্ন করতে সরকারী তরফেও নেয়া হয়েছে নানা উদ্যোগ।
×