ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

সম্পাদকদের সঙ্গে মানবাধিকার কমিশনের মতবিনিময়

সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদ দমনে সর্বস্তরের মানুষের অংশগ্রহণ জরুরী

প্রকাশিত: ০৬:০৫, ৩০ সেপ্টেম্বর ২০১৬

সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদ দমনে সর্বস্তরের মানুষের অংশগ্রহণ জরুরী

স্টাফ রিপোর্টার ॥ সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদ দমনে সরকারের ভূমিকা মুখ্য হলেও গণমাধ্যমসহ দেশের সর্বস্তরের মানুষের অংশগ্রহণ জরুরী বলে মনে করণ বিভিন্ন গণমাধ্যমের সম্পাদকরা। তারা বলছেন, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও গণতন্ত্র সমুন্নত রাখতে হলে উগ্র সাম্প্রদায়িক ও মৌলবাদী শক্তির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়তে হবে। কোন অবস্থাতেই সন্ত্রাসবাদকে সমর্থন দেয়া যাবে না। দেশ বিরোধী দানব যতই শক্তিশালী হোক না কেন সকলের সম্মিলিত প্রতিরোধে তারা নিশ্চিহ্ন হতে বাধ্য। বৃহস্পতিবার জাতীয় প্রেসক্লাবের ভিআইপি লাউঞ্জে সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদ দমনে করণীয় শীর্ষক এক মতবিনিময় সভায় বিশিষ্টজনরা এসব কথা বলেন। বিভিন্ন গণমাধ্যমের সম্পাদকদের সঙ্গে ‘সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদ নিরসনে করণীয়’ শীর্ষক ওই মতবিনিময়ের আয়োজন করে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন। সম্প্রতি বাংলাদেশসহ বিশ্বব্যাপী জঙ্গী তৎপরতা বেড়ে যাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে এই সভার আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনকে জনগণের আস্থা অর্জন করা ও দুর্বলবান্ধব হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন গণমাধ্যমের সাংবাদিকরা। সেইসঙ্গে সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদের বিরুদ্ধে সচেতনতা তৈরির জন্য মানবাধিকার কমিশনকে প্রচারাভিযান চালানোরও পরামর্শ দেন তারা। জঙ্গী ও সন্ত্রাসবাদ প্রতিরোধে সামাজিক ঐক্য গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রীর তথ্য উপদেষ্টা ইকবাল সোবহান চৌধুরী বলেন, মৌলবাদের একটি সহিংস রূপ হলো জঙ্গীবাদ। এই জঙ্গীবাদ শুধু সরকারের আইন-শৃঙ্খলা বহিনী দিয়ে নির্মূল সম্ভব নয়, এটি নির্মূলে সর্বসাধারণকে এগিয়ে আসতে হবে। মানবাধিকার কমিশনের প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, আপনারা একটি স্বাধীন কমিশন। আইন আপনাদের মুক্ত বিচরণের ক্ষমতা দিয়েছে। সঠিকভাবে মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা তুলে ধরুন। এ ক্ষেত্রে আপনারা কোন বাধার সম্মুখীন হলে গণমাধ্যম আপনাদের পাশে থাকবে। ডেইলি অভজারভারের সম্পাদক ইকবাল সোবহান চৌধুরী আরও বলেন, ক্ষমতাবানরাই বেশি মানবাধিকার লঙ্ঘন করে। শুধু সরকারী লোকজনই যে ক্ষমতাবান তা নয়। সমাজের অনেক বিত্তবান অর্থ সম্পদের প্রভাব খাটিয়ে মানবাধিকার লঙ্ঘন করে থাকেন। যা কোনভাবেই মেনে নেয়া যায় না। এরকম কর্মকা-ের বিরুদ্ধে মানবাধিকার কমিশনের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে বলে আমরা মনে করি। আলোচনা সভায় অংশ নিয়ে বিশিষ্ট কলামিস্ট আবুল মকসুদ বলেন, দুর্বলের পক্ষে কথা বলে সবলের প্রতি কতটা সফল হতে পারেন সেটা আপনাদের চ্যালেঞ্জ। কারণ যুগ যুগ ধরে দুর্বল জাতিগোষ্ঠী নির্যাতিত হয়ে আসছে। এ ক্ষেত্রে সবলরা অপরাধ করে পার পেয়ে যায়। জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান কাজী রিয়াজুল হক বলেন, প্রগতিশীল আন্দোলনের ফসল হলো জাতীয় মানবাধিকার কমিশন। তাই ১৬ কোটি মানুষের কাছে আমাদের জবাবদিহিতা রয়েছে। তিনি বলেন, সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদ দমনের জন্য রাষ্ট্র রয়েছে। আমাদের কাজ হলো সন্ত্রাসীদের মানসিকতার পরিবর্তন ঘটানো। এজন্য গণমাধ্যম ও জনগণের সহযোগিতা আমাদের দরকার। দৈনিক সমকালের সম্পাদক গোলাম সরওয়ার বলেন, সরকার মানবাধিকার কমিশন গঠন করে। কমিশন গঠিত হওয়ার পর তা আর সরকারের নয়, জনগণের। শুধু কথা নয়, সবার অধিকার সুনিশ্চিত করতে হবে। শুধু কথার ফুলঝুরি ছড়িয়ে কোন লাভ হবে না। মানবাধিকার কমিশনের নবনিযুক্ত চেয়ারম্যানের উদ্দেশে তিনি বলেন, চেয়ারম্যান হিসেবে আপনার শিরদাঁড়া কতটুকু শক্ত, আমরা দেখতে চাই।’ প্রথম আলোর সহযোগী সম্পাদক আব্দুল কাইয়ুম বলেন, কমিশনের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ তাদের যে ভাবমূর্তি গড়ে উঠেছে, এতে আরও গুণগত পরিবর্তন এনে সামনে এগিয়ে যেতে হবে। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলো কোন বিষয় তুললে তার চুলচেরা বিশ্লেষণ করার পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা চাইব, আন্তর্জাতিক সংস্থার আগেই মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়গুলো নিজেরাই তুলে ধরে সেগুলো প্রতিকারের ব্যবস্থা নেবে। পাশাপাশি জঙ্গীবাদের বিরুদ্ধে সচেতনতা তৈরির জন্য মানবাধিকার কমিশনকে প্রচারাভিযান চালানোরও পরামর্শ দেন তিনি। জাতীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি শফিকুর রহমান বলেন, ধর্মের নামেই সবচেয়ে বেশি মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটছে। তাই এ ব্যাপারে সবাইকে সচেতন হতে হবে। অন্যদের মধ্যে একাত্তর টেলিভিশনের প্রধান সম্পাদক ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোজাম্মেল বাবু, সাংবাদিক রাহাত খান, জাতীয় প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক কামরুল ইসলাম চৌধুরী, সময় টেলিভিশনের প্রধান বার্তা সম্পাদক মোস্তফা দানিশ, দেশ টেলিভিশনের সুকান্ত গুপ্ত অলক প্রমুখ। মানবাধিকার কমিশনের অন্য সদস্যরাও মতবিনিময় সভায় উপস্থিত ছিলেন।
×