ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

৪৩টিই নাজুক;###;১২টির এক ভাগ কাজও হয়নি;###;বাস্তবায়নে পাঁচ ধরনের জটিলতা

রেলের উন্নয়ন প্রকল্পে গতি নেই

প্রকাশিত: ০৬:০৪, ৩০ সেপ্টেম্বর ২০১৬

রেলের উন্নয়ন প্রকল্পে গতি নেই

রাজন ভট্টাচার্য ॥ রেলওয়ের জন্য ৭০টি মিটারগেজ ডিজেল ইলেকট্রনিক লোকোমোটিভ সংগ্রহের প্রকল্পটি হাতে নেয়া হয়েছিল ২০১১ সালে। সর্বশেষ এই প্রকল্পের মেয়াদ ধরা হয় আগামী বছরের জুন মাস পর্যন্ত। প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন ২০১৪ সালের দ্বিতীয় দফা দরপত্র আহ্বানের পর অগ্রগতি খুব একটা হয়নি। অথচ ইতোমধ্যে কেটেছে পাঁচ বছর। রেলওয়ের চলতি বছরের মার্চের প্রতিবেদনে প্রকল্পের এক ভাগ কাজও শেষ হয়নি বলে উল্লেখ করা হয়েছে। রেলওয়ের উন্নয়নে চলমান ৪৩টি প্রকল্পের মধ্যে প্রায় অর্ধেক প্রকল্পের অবস্থা এমন নাজুক। বাকি প্রকল্পগুলোর মধ্যে বেশিরভাগই যথাসময়ে শেষ হয়নি। এক ভাগ কাজ হয়নি এমন প্রকল্পের সংখ্যা অন্তত ১২টি। ১০টির মতো প্রকল্প আছে যেগুলোর কাজ মেয়াদ শেষেও অর্ধেক হয়নি। সব মিলিয়ে রেলের উন্নয়ন প্রকল্পের কাজে গতি নেই। সময় যায়। কিন্তু কাজ শেষ হয় না। ঢিমে তালে চলছে উন্নয়ন কাজ। এর মধ্যে বেশিরভাগ প্রকল্পই শুরু হয় ২০০৭ থেকে ২০০৯ সালের মধ্যে। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে রেল মন্ত্রণালয়ের সচিব ফিরোজ সালাহ উদ্দিন জনকণ্ঠকে বলেন, একেকটি প্রকল্পের ক্ষেত্রে ভিন্ন ভিন্ন জটিলতা রয়েছে। সব প্রকল্পে একই ধরনের সমস্যা হয় না। কোন প্রকল্পে ব্যাংক লোন বা কাগজপত্র তৈরিতে বিলম্ব হয়। আবার কোন কোন ক্ষেত্রে অর্থ প্রাপ্তির বিষয়টিও সহজেই সমাধান হয় না। এছাড়াও প্রকল্প বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে জমি পাওয়া, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের লোকজন দেশের বাইরে থাকা, মালামাল আনার ক্ষেত্রে জটিলতা সৃষ্টি হয়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে দেখা গেছে এ রকম সমস্যা মোকাবেলা করতে হচ্ছে। তবুও আমরা সকল প্রকল্প গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনায় নিয়ে কাজ করছি। পাশাপাশি অর্থ প্রাপ্তি নিশ্চিত হলে কাজ যথাসময়ে শেষ করতে প্রকল্প পরিচালকদের প্রতি নির্দেশ আছে। রেল মন্ত্রণালয়ের দাবি, ২০০৯ থেকে ১৪ সাল পর্যন্ত ২৪টি উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ শেষ হয়েছে। এছাড়া ২০১৩ সালে রেলওয়ের উন্নয়নে ২০ বছর মেয়াদি মাস্টারপ্ল্যান চূড়ান্ত করা হয়েছে। এসব প্রকল্প গুরুত্ব বিবেচনায় বাস্তবায়ন করা হবে। ইতোমধ্যে দেশের ৪৪টি জেলা রেল নেটওয়ার্কের আওতায় আনা হয়েছে। এছাড়া নানা জটিলতায় প্রকল্প বাস্তবায়নে কিছুটা বিলম্ব হলেও শেষ না হওয়ার কারণ নেই। সময় যায় কাজ শেষ হয় না ॥ বাংলাদেশ রেলওয়ে সেক্টর ইমপ্রুভমেন্ট প্রকল্পের আওতায় সিগন্যালিংসহ টঙ্গী-ভৈরববাজার পর্যন্ত ডাবল লাইন নির্মাণ কাজ প্রকল্পটি ২০০৬ সালের শুরুতে নেয়া হয়েছিল। কথা ছিল তা শেষ হবে ২০১৪ সালে। দু’দফা সময় বাড়িয়ে যা ২০১৭ সাল পর্যন্ত করা সর্বশেষ সময়সীমা নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে চলতি বছরের মার্চ পর্যন্ত প্রকল্পের অবকাঠামোগত (ভৌত) অগ্রগতি প্রতিবেদনে শতভাগ কাজ শেষ হওয়ার কথা উল্লেখ রয়েছে! খুলনা রেলওয়ে স্টেশন ও ইয়ার্ড রি-মডেলিং ও বেনাপোল রেলওয়ে স্টেশনের অপারেশনাল উন্নয়ন প্রকল্পটি ২০০৭ সালের জুলাই মাসে শুরু হয়ে গত বছর শেষ হওয়ার কথা থাকলেও তা হয়নি। রেলওয়ের সর্বশেষ প্রতিবেদনে প্রকল্পের ৫৫ ভাগ অগ্রগতি দেখানো হয়েছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রকল্পের বর্তমান দায়িত্বপ্রাপ্ত পরিচালক জানান, সিডিউল অনুযায়ী আমাদের কাজ চলছে। একল্পের কাজ দ্রুত শেষ করার বিষয়ে ইতোমধ্যে একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে কাজ শেষ করার কথা জানান তিনি। ২০০৭ সালের জুলাই মাসে শুরু হয়েছিল ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলপথ উন্নয়ন প্রকল্প। যা শেষ হওয়ার কথা ছিল গত বছর। এই প্রকল্পের পাহাড়তলী ওয়ার্কশপ উন্নয়ন ও কনসাল্টিং ইঞ্জিনিয়ারিং সার্ভিসেস ফর ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলওয়ে ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট এবং স্কিল ডেভেলপমেন্ট প্রোগ্রাম এ দুটি প্রকল্প সময় বাজানো হলেও এখনও চূড়ান্তভাবে শেষ হয়নি। প্রকল্পের পহাড়তলী ওয়ার্কশপের অগ্রগতি হিসেবে ডিপিপি পুনর্গঠন প্রক্রিয়াধীন রয়েছে একথা উল্লেখ আছে। বাকি দুটি প্রকল্পের ৫৬ ভাগ অগ্রগতির কথা বলা আছে। লাকসাম ও চিনকী আস্তানার মধ্যে ডাবল লাইন ট্র্যাক নির্মাণ ২০০৭ সালে শুরু হয়েও মেয়াদ পেরিয়েছে এক বছর। তবুও শেষ হয়নি। সর্বশেষ প্রকল্পের অগ্রগতি প্রতিবেদনে ৮৯ ভাগ কাজ শেষ হওয়ার কথা উল্লেখ আছে। রফতানি অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প, পাঁচুরিয়া-ফরিদপুর-ভাঙ্গা রেলপথ পুনর্বাসন ও নির্মাণ প্রকল্প গত বছর শেষ হওয়ার কথা থাকলেও এখনও তা ঝুলে আছে। চলতি বছরের মার্চ পর্যন্ত প্রকল্পের অগ্রগতি দেখানো হয়েছে ৯৩ ভাগ। প্রকল্পের বর্তমান দায়িত্বপ্রাপ্ত পরিচালক নাম প্রকাশ না করার শর্তে জনকণ্ঠ’কে জানান, পাঁচুরিয়া থেকে ফরিদপুর পর্যন্ত রেল যোগাযোগ তো আছেই। ফরিদপুর থেকে ভাঙ্গা পর্যন্ত মেজর কাজ শেষ হয়েছে। এই প্রকল্পটিও চলতি বছরের ডিসেম্বর মাসের মধ্যে শেষ করার কথা জানান তিনি। দোহাজারি থেকে রামু হয়ে কক্সবাজার এবং রামু থেকে মায়ানমারের কাছে গুনদুম পর্যন্ত সিংগেল লাইন ডুয়েল গেজ ট্র্যাক নির্মাণ প্রকল্প ২০১০ সালের জুলাই মাসে শুরু হয়ে ইতোমধ্যে প্রায় ছয় বছর চলছে। ২০২২ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত এ প্রকল্পের মেয়াদ ধরা হলেও কাজের অগ্রগতি নেই। এ প্রকল্পের মূল সমস্যা এডিবির অর্থায়ন। সর্বশেষ প্রকল্পের অগ্রগতি দেখানো হেেছ ১৬ ভাগ। প্রকল্প পরিচালক মোহাম্মদ মকবুল আহমদ ইতোমধ্যে বদলি হয়েছেন। নতুন একজনকে প্রকল্পের পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে বলে জানা গেছে। এছাড়াও ঈশ্বরদী থেকে পাবনা হয়ে ঢালারচর পর্যন্ত ৭৮ কিলোমিটার নতুন রেললাইন নির্মাণ প্রকল্প ২০১০ সালের শেষ দিকে শুরু হয়ে যা এখনও চলমান রয়েছে। যদিও গত বছর প্রকল্পের কাজটি শেষ হওয়ার কথা ছিল। চলতি বছরের মার্চ পর্যন্ত প্রকল্পের অগ্রগতি দেখানো হয়েছে ৫৯ ভাগ। রেলওয়ের লাকসাম-চাঁদপুর সেকশনের পুনর্বাসন প্রকল্পের কাজ ২০১১ সালে শুরু হয়ে ১৭ সালের মাঝামাঝি শেষ হবে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে প্রকল্পের অগ্রগতি খুবই কম। ২০১৬ সালের মার্চ পর্যন্ত প্রকল্পের ৭৬ ভাগ অগ্রগতি দেখানো হয়েছে। এছাড়ও রেলওয়ে এ্যাপ্রোচসহ দ্বিতীয় ভৈরব ও দ্বিতীয় তিতাস সেতু নির্মাণ ২০১০ সালের শুরু হয়ে গত বছর শেষ হওয়ার কথা থাকলেও, হয়নি। এই প্রকল্প ২০১০ সালের ১১ নবেম্বর অনুমোদন দেয় একনেক। এরপর প্রায় ৬ বছর পেরিয়ে গেলেও ভারতীয় ঋণে নেয়া এ প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হয়নি। ঋণের পরিবর্তে দেশটির দেয়া শর্তেও ভারে পুরো প্রকল্পই ডুবতে যাচ্ছে। বিষয়টি এরই মধ্যে ভারতীয় দূতাবাস এবং এক্সিম ব্যাংক অব ইন্ডিয়াকে জানানো হয়েছে। প্রকল্পের সর্বশেষ অগ্রগতি পাঁচ ভাগেরও কম। খুলনা থেকে মংলা পোর্ট পর্যন্ত রেলপথ নির্মাণ প্রকল্পটি ২০১০ সালে শুরু হয়ে বা ২০১৮ সালে বাস্তবায়নের কথা রয়েছে। যদিও কাজের অগ্রগতি নিয়ে খোদ প্রকল্প সংশ্লিষ্টরাই খুশি নন। ২০১৪ সালের প্রকল্পের সর্বশেষ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে মাত্র শূন্য দশমিক ৬৮ ভাগ অগ্রগতির কথা। চলতি বছরের মার্চ পর্যন্ত প্রকল্পের সর্বশেষ অগ্রগতি দেখানো হয়েছে ২৩ ভাগ। রেলওয়ের জন্য ২৬৪টি এমজি কোচ ও দুটি বিজি ইন্সপেকশন কার সংগ্রহ প্রকল্প ইন্ডিয়ান ডলার ক্রেডিট লাইনের আওতায় এলওসি অনুমোদিত প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়নি বলে জানা গেছে। চট্টগ্রামের ষোলশহর-দোহাজারী ও ফতেয়াবাদ-নাজিরহাট সেকশন পুনর্বাসন প্রকল্পের কাজ শেষ হবে ২০১৭ সালে। যদিও ২০১৪ সালে এ প্রকল্পের অগ্রগতি দেখানো হয়েছে ৭১ ভাগ। কুলাউড়া-শাহবাজপুর সেকশন পুনর্বাসন কাজটি ২০১১ সালের শুরু হলেও ২০১৭ সালে শেষ হওয়ার সময় নির্ধারণ করা হয়েছে। সর্বশেষ প্রতিবেদন প্রকল্পের কোন অগ্রগতি দেখানো হয়নি। বাংলাদেশ রেলওয়ের জন্য ৭০টি মিটারগেজ ডিজেল ইলেকট্রনিক লোকোমোটিভ সংগ্রহ ২০১১ সালে নেয়া প্রকল্পটি শেষ হয়ার মেয়াদ ধরা হয়েছে আগামী বছরের জুন মাস পর্যন্ত। জানতে চাইলে প্রকল্পের পরিচালক দুলাল কুমার রায়ের সঙ্গে জনকণ্ঠের পক্ষে কয়েকবার মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে তিনি মিটিংয়ে থাকার কথা বলে পরে যোগাযোগ করতে বলেন। এরপর একাধিকবার ফোন করলেও তিনি ফোন ধরেননি। এডিবির সেকেন্ড পিএফআরের আওতায় বাংলাদেশ রেলওয়ে সেক্টর উন্নয়নে তিনটি কাজ মেয়াদ অনুযায়ী চলতি বছরও শেষ হয়নি। এর মধ্যে একটি ১৪ ভাগ, একটি ৬ ভাগ ও অপরটি পাঁচ ভাগ অগ্রগতির কথা সর্বশেষ রেলওয়ের প্রতিবেদনে উল্লেখ আছে। পূর্বাঞ্চলের চিনকী আস্তানা-চট্টগ্রাম সেকশনের ১১টি স্টেশনের বিদ্যমান সিগন্যালিং ব্যবস্থার প্রতিস্থাপন ও আধুনিকীকরণ প্রকল্প ২০১২ সালে শুরু হয়ে যা আগামী বছর শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, নানা প্রতিবন্ধকতার কারণে যথা সময়ে প্রকল্পের কাজ শেষ করা সম্ভব নাও হতে পারে। সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী প্রকল্পের কাজ হয়েছে মাত্র ১৪ ভাগ। ঢাকা-টঙ্গী সেকশনের তৃতীয় ও চতুর্থ ডুয়েল গেজ লাইন এবং টঙ্গী জয়দেবপুর সেকশনে ডুয়েল গেজ লাইন নির্মাণ প্রকল্প চলতি বছরের শেষ দিকে শেষ হওয়ার কথা আছে। কিন্তু প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, প্রকল্পের কাজ ২০১২ সালে শুরু হলেও গতি কম। ২০১৪ সালের জুন মাসের রেলওয়ের প্রকল্পের অগ্রগতি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রকল্পের অনুকূলে আহ্বানকৃত ইওআই যা এখনও মূল্যায়নাধীন। ২০১৬ সালের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে শূন্য দশমিক ২৫ ভাগ। ২০১২ সালে শুরু হয়েছিল চিনকী আস্তানা-আশুগঞ্জ সেকশনের ক্ষয়প্রাপ্ত রেল সম্পূর্ণ নবায়ন এবং অন্যান্য আনুষঙ্গিক কাজ। চলতি বছরের মাঝামাঝিতে তা শেষ হওয়ারও কথা ছিল। কিন্তু হয়নি। রেলওয়ের সর্বশেষ প্রকল্প অগ্রগতি প্রতিবেদনে এই প্রকল্পটির ৮৯ ভাগ কাজ শেষ হওয়ার কথা বলা হয়েছে। ১০০ মিটার গেজ ও ৫০টি ব্রডগেজ যাত্রীবাহী গাড়ি সংগ্রহের কথা রয়েছে আগামী বছরের মাঝামাঝি সময়ের মধ্যে। তিন দফা টেন্ডারের পর...॥ আশুগঞ্জ-আখাউড়া সেকশনের তিনটি স্টেশনের সিগন্যালিং ও ইন্টারলকিং ব্যবস্থার প্রতিস্থাপন ও আধুনিকীকরণ প্রকল্পের কাজ মেয়াদ শেষেও এখন পর্যন্ত কোন কাজ হয়নি। প্রকল্পের পরিচালক চন্দন কান্তি দাশ জনকণ্ঠ’কে বলেন, চুক্তি অনুযায়ী ভারতের কোম্পানি দিয়ে কাজ করার কথা থাকায় প্রকল্পের কাজ শুরু করতে বিলম্ব হচ্ছে। তিনি বলেন, পরপর তিন দফা টেন্ডার আহ্বানের পর কোয়ালিফাইড কোম্পানি পাওয়া গেছে। এখন কাজ শুরুর হবে। ইতোমধ্যে ভারত থেকে কিছু মালামাল আসছে। আগামী মাসের মধ্যে বিল্ডিংয়ের কাজ শুরুর কথা জানান তিনি। ২০১৪ সালের মাঝামাঝি সময়ে শুরু হয়েছিল ঈশ্বরদী-জয়দেবপুর সেকশনের চারটি স্টেশনে নবনির্মিত ৩য় লাইনগুলোকে কম্পিউটার বেজড ইন্টারলকিং ব্যবস্থার সম্প্রসারণ কাজ। যা মেয়াদ শেষেও সম্পন্ন হয়নি বলে জানা গেছে। প্রকল্পের সর্বশেষ অগ্রগতি শূন্য দশমিক ৩১ ভাগ। এছাড়াও দর্শনা-ঈশ্বরদী সেকশনের ১১টি স্টেশনের সিগন্যালিং ব্যবস্থার মানোন্নয়ন কাজ ২০১২ সালের শুরুতে শুরু হয়ে চলতি বছরের জুলাই মাসে শেষ হওয়ার কথা। কিন্তু চলতি বছরের মার্চে রেলওয়ের প্রকল্প অগ্রগতি প্রতিবেদনে ১৪ ভাগ কাজ শেষ হওয়ার কথা বলা আছে। প্রকল্প পরিচালক আবুল কালাম জনকণ্ঠ’কে বলেন, কাজের অগ্রগতি কতটুকু হয়েছে আমার জানা নেই। কাগজপত্র না দেখে বলা সম্ভব নয়। আখাউড়া থেকে লাকসাম পর্যন্ত ডুয়েলগেজ ডাবল রেললাইন নির্মাণ এবং বিদ্যমান রেললাইনকে ডুয়েলগেজে রূপান্তর প্রকল্প শেষ হবে ২০২০ সালে। চলতি বছরের মার্চে প্রকাশিত রেলওয়ের সর্বশেষ অগ্রগতি প্রতিবেদনে প্রকল্পের ১০ ভাগ কাজ শেষ হওয়ার কথা উল্লেখ আছে। প্রকল্পের পরিচালক রফিকুল আলমের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তা সম্ভব হয়নি। ২০১৪ সালের জুলাই মাসে রেলওয়ের জন্য ১২০টি ব্রডগেজ যাত্রীবাহী ক্যারেজ সংগ্রহ প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছিল। যা আগামী বছরের শেষ দিকে শেষ হতে পারে। ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ সেকশনে বিদ্যমান মিটারগেজ রেললাইনের সমান্তরাল একটি ডুয়েল গেজ ডাবল লাইন নির্মাণ প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা আছে আগামী বছরের জুন মাসে। অথচ প্রকল্পের অগ্রগতি মাত্র দেড়ভাগ। সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, প্রকল্পের কাজ শেষ হতে সময় লাগবে আরো অন্তত কয়েক বছর। প্রকল্প পরিচালক আল ফাত্তাহ মোঃ মাসউদুর রহমান জনকণ্ঠ’কে বলেন, এখন পর্যন্ত প্রকল্পের দৃশ্যমান তেমন কোন অগ্রগতি হয়নি। নানা প্রতিবন্ধকতার কারণে কাজটি বিলম্ব হচ্ছে। তিনি জানান, এখন ফিজিক্যাল ডিজাইনের কাজ চলছে। আগামী এক মাসের মধ্যে প্রকল্পের টেন্ডার কাজ শেষ করার কথাও জানান তিনি। আমনুরা বাইপাস রেললাইন প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা আগামী বছর। এজন্য বরাদ্দ রয়েছে ১৩ কোটি ১৫ লাখ টাকা। গত বছর এ প্রকল্পে বরাদ্দ ছিল আট কোটি টাকা। ২০১৫ সালের শুরুতে প্রকল্পটি হাতে নেয়া হয়েছিল। চলতি বছরের মার্চ পর্যন্ত কাজের অগ্রগতি মাত্র ৪১ ভাগ। তবে প্রকল্প পরিচালক মোঃ আসাদুল হক জনকণ্ঠ’কে জানান, ইতোমধ্যে প্রকল্পের অগ্রগতি হয়েছে বেশ। ৭০ ভাগ কাজ শেষ হয়েছে। পশ্চিমাঞ্চলের জন্য ৫০টি এমজি ও ৫০টি বিজি যাত্রীবাহী ক্যারেজ পুনর্বাসন কাজ ২০১৪ সালে শুরু হয়ে ২০১৭ সালে শেষ হওয়ার কথা। চলতি বছরের মার্চ পর্যন্ত সর্বশেষ কাজের অগ্রগতি এক ভাগও দেখানো হয়নি। এ প্রসঙ্গে গত বুধবার প্রকল্প পরিচালক নূর আহাম্মদ হোসেন জনকণ্ঠ’কে বলেন, চুক্তি বিলম্ব হওয়ায় কাজ শুরু করতে সময় লেগেছে। ইতোমধ্যে ২১টি ব্রডজেট (বিজি) ও ২২টি মিটার গেজের (এমজি) কাজ শেষ হয়েছে। আর্থিক অগ্রগতিও ভাল। সব মিলিয়ে ৪৩ ভাগ কাজ শেষ হওয়ার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, প্রয়োজনের তুলনায় প্রকল্প সমাপ্তির সময় কম দেয়া হয়েছে। তবুও আগামী বছরের জুনের মধ্যে আশা করি ৯০ ভাগ কাজ শেষ হবে। তবুও যথাসময়ে কাজ শেষ করার চেষ্টা রয়েছে। রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলের লেভেল ক্রসিং গেটসমূহের পুনর্বাসন ও মানোন্নয়ন কাজ শুরু হয় ২০১৫ সালে। যা আগামী বছরের মাঝামাঝিতে শেষ হতে পারে। পশ্চিমাঞ্চলের লেবেল ক্রসিং গেটসমূহের পুনর্বাসন ও মানোন্নয়ন কাজের খুব একটা অগ্রগতি নেই। হাইটেক পার্কের জন্য মীর্জাপুর ও মৌচাক স্টেশনের মধ্যবর্তী কালিয়াকৈরে একটি বি ক্লাস স্টেশন নির্মাণের কার্যক্রম ২০১৫ সালে শুরু হয়ে তা ২০১৯ সালে শেষ হওয়ার কথা আছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে কাজের অগ্রগতি খুবই কম। লোকোমোটিভ রিলিফ ক্রেন এবং লোকোমোটিভ সিমুলেটর সংগ্রহের সময়সীমা ২০১৯ পর্যন্ত নির্ধারণ করা হলেও কাজের অগ্রগতি নিয়ে খুব একটা আশাবাদী নন সংশ্লিষ্টদের কেউই। নারায়ণগঞ্জ-জয়দেবপুর সেকশনের ওভারপাস ও আন্ডারপাস নির্মাণের জন্য সম্ভাব্যতা সমীক্ষা কার্যক্রম আগামী বছরের শেষ দিকে শেষ হতে পারে। ১০০টি মিটার অনুঃ গেজ যাত্রীবাহী ক্যারেজ পুনর্বাসন ২০১৫ সালের শুরু হলেও অগ্রগতি ভাল নয়। ২০২২ সালে পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্পের কাজ শেষ হবে। যা শুরু হয়েছে চলতি বছর। এ প্রকল্পের কাজের অগ্রগতি খুব বেশি নয়। রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচীতে রেলওয়ের ৪৩টি প্রকল্প দেখানো হয়েছে। এর মধ্যে বিনিয়োগ ৩৪টি ও কারিগরি সহায়তা ৭টি ও জেডিসিএফ একটি। প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য মোট নয় হাজার ১১৪ কোটি টাকারও বেশি বরাদ্দ হয়েছে। মোট বরাদ্দের জিওবি তিন হাজার ৫০০ কোটি টাকা। প্রকল্প সাহায্য নির্ধারণ করা হয়েছে পাঁচ হাজার ৬১৪ কোটি টাকা। রেলওয়ের কর্তাব্যক্তিরা বলছেন, এসব উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে রেলওয়ের গুরুত্ব ও অবদান বাড়বে। তেমনি সুষ্ঠু ও নিরাপদ রেল চলাচল নিশ্চিত করা সম্ভব হবে। নয় থেকে ১৪ পর্যন্ত অর্জন ॥ রেলওয়ে সূত্র বলছে, ২০০৯ থেকে ১৪ সাল পর্যন্ত ২৪টি প্রকল্পের কাজ শেষ হয়েছে। এর মধ্যে নতুন রেললাইন হয়েছে ১১২ কিলোমিটার। ডুয়েলগেজ নির্মাণ হয়েছে ২০৭ কিলোমিটার, রেলপথ পুনর্বাসন উন্নয়ন করা হয়েছে ৭৬৫ কিলোমিটার। এছাড়াও নতুন সেতু নির্মাণ করা হয়েছে ৬৫টি, নতুন স্টেশন নির্মাণ হয়েছে ২২টি, ৪৬টি লোকোমোটিভ সংগ্রহ, মালবাহী ওয়াগন ৫১৬টি এবং ৩০টি ব্র্যাক ভ্যান, ডিএমইউ সংগ্রহ ২০ সেট এমজি, যাত্রীবাহী কোচ পুনর্বাসন ২৬০টি, ওয়াগন পুনর্বাসন ২৭৭টি, সিগন্যালিং ব্যবস্থার আধুনিকীকরণ ২২টি, নতুন ট্রেন ৯২টি, প্ল্যান্টস, মেশিনারি এবং ইকুইপমেন্টস সংগ্রহসহ ট্রেন সার্ভিস বাড়ানো হয়েছে ২৪টি। এই সময়ের মধ্যে শেষ হয়েছে তিন হাজার ৮২০ কোটি টাকার ২৪ প্রকল্প। রেলওয়ে সূত্রগুলো বলছে, এই সেক্টরের উন্নয়নে ২০ বছর মেয়াদী মাস্টারপ্ল্যান করা হয়েছে। চারটি পর্যায়ে বাস্তবায়নের জন্য ২৩৩৯৪৪ দশমিক ২১ কোটি টাকা ব্যয়ে ২৩৫টি প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে। ২০১৩ সালের ৩০ জুন মন্ত্রণালয় এই মাস্টারপ্ল্যান অনুমোদন দেয়।
×