ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

প্রধানমন্ত্রী আজ ফিরছেন

গণসংবর্ধনার ব্যাপক প্রস্তুতি

প্রকাশিত: ০৬:০১, ৩০ সেপ্টেম্বর ২০১৬

গণসংবর্ধনার ব্যাপক প্রস্তুতি

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কানাডা ও যুক্তরাষ্ট্রে ১৭ দিনের সফর শেষে আজ শুক্রবার দেশে ফিরছেন। বৃহস্পতিবার স্থানীয় সময় রাত আটটা ৫৫ মিনিটে প্রধানমন্ত্রী এমিরেটসের ফ্লাইটে ঢাকার উদ্দেশে যুক্তরাষ্ট্রের ভার্জিনিয়ার ডালেস ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্ট ত্যাগ করেন। দুবাই হয়ে আজ শুক্রবার বিকেল পাঁচটা ২০ মিনিটে প্রধানমন্ত্রী ও তাঁর সফরসঙ্গীদের বহনকারী ফ্লাইটটি হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করবে। এ সময় বিমানবন্দর থেকে খিলক্ষেত, কুড়িল ফ্লাইওভার, হোটেল রেডিসন, কাকলীর মোড়, বনানী, জাহাঙ্গীর গেট, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, বিজয় স্মরণি, সামরিক জাদুঘর, জাতীয় সংসদ ভবন মোড় হয়ে গণভবন পর্যন্ত রাস্তার দু’পাশে দাঁড়িয়ে তাঁকে গণসংবর্ধনা জানাবে আওয়ামী লীগসহ মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সর্বস্তরের জনগণ। এবার নারীর ক্ষমতায়নে অসামান্য অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে এবার জাতিসংঘ কর্তৃক ‘প্ল্যানেট ৫০-৫০ চ্যাম্পিয়ন’ ও ‘এজেন্ট অব চেঞ্জ এ্যাওয়ার্ড’ পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এছাড়া কানাডায় ‘ফিফথ রিপ্লেনিশমেন্ট কনফারেন্স অব দ্য গ্লোবাল ফান্ড (জিএফ)’ ও যুক্তরাষ্ট্রে জাতিসংঘ সাধারণ অধিবেশনে সফল নেতৃত্ব দেয়ার জন্য তাঁকে গণসংবর্ধনা দেয়া হচ্ছে। বিরল সম্মানে ভূষিত হওয়ায় কৃতজ্ঞ বাঙালী জাতির পক্ষ থেকে আওয়ামী লীগসহ ১৪ দল, সহযোগী, ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনসমূহ, বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে গণভবন পর্যন্ত রাস্তার দু’পাশে দাঁড়িয়ে ফুল ও করতালির মাধ্যমে তাঁকে গণসংবর্ধনা দেবে। সংবর্ধনায় লাখো জনতার ঢল নামানোর প্রস্তুতি নিয়েছে আওয়ামী লীগ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উত্তর আমেরিকার দু’টি দেশ কানাডা ও যুক্তরাষ্ট্রে সফরের উদ্দেশে ১৪ সেপ্টেম্বর হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ত্যাগ করেন। প্রধানমন্ত্রী ১৬ সেপ্টেম্বর মন্ট্রিলের হায়াত রিজেন্সিতে অনুষ্ঠেয় এই রিপ্লেনিসমেন্ট সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যোগদান করেন। পরে বিকেলে তিনি একই হোটেলে অন্যান্য রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানদের সঙ্গে সম্মেলনের মিনিস্ট্রিয়াল প্লেজিং মোমেন্ট ও আনুষ্ঠানিক সংবর্ধনায় অংশ নেন। প্রধানমন্ত্রী হায়াত রিজেন্সি মন্ট্রিলে কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোর আমন্ত্রণে আনুষ্ঠানিক নৈশভোজে অংশগ্রহণ করেন। ১৭ সেপ্টেম্বর শেখ হাসিনা কানাডার প্রধানমন্ত্রী ও বিশ্ব তহবিলের নির্বাহী পরিচালক মার্ক দাইবালের সঙ্গে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে দ্বিতীয় দিনে সম্মেলনে যোগদান করেন। একই দিনে তিনি ‘রিমোভিং বেরিয়ার্স টু হেল্্থ থ্রো এম্পাওয়ারিং উইমেন এ্যান্ড গার্লস এ্যান্ড রিচিং দ্য মোস্ট মার্জিনালাইজড’ শীর্ষক প্যানেল আলোচনা-১ এবং ‘এনগেজিং এ্যান্ড মোবিলাইজিং ইয়ুথ টু মিট দ্য সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট গোল্্স’ শীর্ষক প্যানেল আলোচনা-২-এ অংশ নেন। কানাডার প্রধানমন্ত্রী ও কানাডার গবর্নর জেনারেল ডেভিড জনস্টনের যৌথ আয়োজনে অনুষ্ঠেয় আনুষ্ঠানিক মধ্যাহ্নভোজে তিনি অংশ নেন। তিনি পরে সম্মেলনের সমাপনী অধিবেশনে যোগদান করেন। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী ট্রাডোর সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে মিলিত হন। তিনি অন্যান্য রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানদের সঙ্গে বিশ্ব তহবিল ও গ্লোবাল সিটিজেন আয়োজিত কনসার্টেও অংশ নেন। ১৮ সেপ্টেম্বর শেখ হাসিনা দুপুর ১টা ৪০ মিনিটে (মন্ট্রিল সময়) এয়ার কানাডার একটি ফ্লাইটযোগে নিউইয়র্কের উদ্দেশে মন্ট্রিল ত্যাগ করেন। শেখ হাসিনা ১৯ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘ সদর দফতরে উদ্বাস্তু ও অভিবাসনের ওপর সাধারণ পরিষদের উচ্চপযার্য়ের প্লিনারি বৈঠকে ভাষণ দেন। তিনি ৫ ‘গ্লোবাল কমপ্যাক্ট ফর সেফ, রেগুলার এ্যান্ড ওর্ডালী মাইগ্রেশন : টেকসই উন্নয়ন বিষয়ক এজেন্ডা-২০৩০ এবং অভিবাসীদের মানবাধিকারের প্রতি পূর্ণ শ্রদ্ধা অর্জন এগিয়ে নিয়ে যাওয়া বিষয়ক রাউন্ড টেবিল বৈঠকে কো-চেয়ারের দায়িত্ব পালন করেন। প্রধানমন্ত্রী ২০ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭১তম অধিবেশনের সাধারণ আলোচনার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যোগদান করেন। তিনি পরে হোটেল ম্যারিয়ট ইস্টসাইডে জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে আয়োজিত কাউন্টার টেররিজমের ওপর এশিয়ান লিডার্স ফোরামের বৈঠকে যোগ দেন। প্রধানমন্ত্রী জাতিসংঘ সদর দফতরের কনফারেন্স রুম-২তে সাউথ সাউথ বিষয়ক জাতিসংঘ অফিসে বাংলাদেশ আয়োজিত পাবলিক সার্ভিস ডেলিভারিতে স্কেলিং আপ ইনোভেশনে সাউথ সাউথ এ্যান্ড ট্রায়াঙ্গুলার কো-অপারেশন বিষয়ক এক বৈঠকে যোগ দেন। শেখ হাসিনা মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা আয়োজিত উদ্বাস্তু বিষয়ক এক বৈঠকে যোগদান করেন। তিনি ২১ সেপ্টেম্বর বারাক ওবামা আয়োজিত এক সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে অংশ নেন। সুইডিস প্রধানমন্ত্রী স্টিফেন আয়োজিত ডিসেন্ট ওয়ার্ক এ্যান্ড ইক্লুসিভ গ্রোথ বিষয়ক স্যোসাল ডায়ালগ সংক্রান্ত গ্লোবাল ডিলের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী অংশ নেন। তিনি জাতিসংঘ সদর দফতরের কনফারেন্স রুম-৮ এ পানি বিষয়ক উচ্চ পযার্য়ের এক প্যানেল বৈঠকে যোগদান করেন। ২১ সেপ্টেম্বর বিকেলে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে জাতিসংঘের সদর দফতরে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ৭১তম অধিবেশনে মাতৃভাষা বাংলায় ভাষণ প্রদানকালে প্রধানমন্ত্রী সন্ত্রাসী ও উগ্রবাদীদের অর্থ, অস্ত্রশস্ত্রের যোগান বন্ধ এবং তাদের প্রতি নৈতিক ও বৈষয়িক সমর্থন না দেয়ার জন্য বিশ্ব সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানান। একই দিন প্রধানমন্ত্রী নারীর ক্ষামতায়নে তাঁর অসাধারণ অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে ‘প্লানেট ৫০- ৫০ চ্যাম্পিয়ন’ ও ‘এজেন্ট অব চেঞ্জ এ্যাওর্য়াড’ পান। জাতিসংঘ সদর জাতিসংঘ প্লাজায় তাঁকে দেয়া এক উচ্চপর্যায়ের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে গ্লোবাল পার্টনারশিপ ফোরাম ‘এজেন্ট অব চেঞ্জ এ্যাওর্য়াড’ তার কাছে হস্তান্তর করা হয়। এ অ্যাওর্য়াড প্রাপ্তির মধ্য দিয়ে প্রধানমন্ত্রী ‘প্লানেট ৫০-৫০ চ্যাম্পিয়ন’ হিসাবে জাতিসংঘ উইমেন স্বীকৃতি পেলেন। একই দিন তিনি জাতিসংঘ সদর দফতরে জাতিসংঘ মহাসচিব বান কি মুন এর দেয়া এক সংবর্ধনা সভায় এবং হোটেল ওয়ার্ল্ডোপ অস্টোরিয়ায় বিজনেস কাউন্সিল অব ইন্টারন্যাশনাল আন্ডার স্ট্যান্ডিং (বিসিআইইউ) আয়োজিত এক ভোজসভায় যোগ দেন। শেখ হাসিনা ২১ সেপ্টেম্বর নিউইয়র্কে হোটেল গ্রান্ড হায়াতে প্রবাসী বাংলাদেশীদের দেয়া এক সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে যোগ দেন এবং ২২ সেপ্টেম্বর নিউইয়র্কে বাংলাদেশের স্থায়ী মিশনে এক সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন। প্রধানমন্ত্রী জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে যোগ দেয়ার পাশাপাশি মিয়ানমারের স্ট্যাট কাউন্সেলর এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রী অং সান সুচি, সুইস প্রেসিডেন্ট জোহান চেনিডার আম্মান এবং কমনওয়েলথ মহাসচিব ও ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের (ডব্লিউইএফ) নির্বাহী চেয়ারম্যান এবং বিশ্ব ব্যাংকের প্রেসিডেন্টসহ বিভিন্ন রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানদের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করেন। এদিকে প্রধানমন্ত্রীর গণসংবর্ধনা সফল করতে বিমানবন্দর থেকে গণভবন পর্যন্ত দীর্ঘ পথের ৮টি রুট নির্ধারণ করা হয়েছে। বিমানবন্দর থেকে গণভবন পর্যন্ত দীর্ঘ ৮ কিলোমিটার সড়ক পথে ঢাকা মহানগর থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্যদের নেতৃত্বে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সকল থানা, ওয়ার্ড ও ইউনিয়নের নেতারা দাঁড়িয়ে প্রধানমন্ত্রীকে ফুলেল শুভেচ্ছায় ¯œাত করবেন। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও জনপ্রশাসন মন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম এমপি আওয়ামী লীগ, ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ আওয়ামী লীগের প্রতিটি থানা, ওয়ার্ড ও ইউনিয়ন, সহযোগী, ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনসমূহের নেতৃবৃন্দ ও সর্বস্তরের জনগণকে যথাসময়ে এই অভ্যর্থনা কর্মসূচীতে উপস্থিত থাকার জন্য অনুরোধ জানিয়েছেন।
×