ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

মেঘনায় দুর্ঘটনার শঙ্কা

মাছের ট্রলারে যাত্রী পারাপার

প্রকাশিত: ০৪:৩৪, ৩০ সেপ্টেম্বর ২০১৬

মাছের ট্রলারে যাত্রী পারাপার

খোকন আহম্মেদ হীরা, বরিশাল ॥ বিআইডব্লিউটিএর নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে উত্তাল মেঘনা পাড়ি দিয়ে প্রতিনিয়ত মাছ ধরার ছোট ছোট ট্রলারে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে শত শত যাত্রীদের পারাপার করা হচ্ছে। অধিক ঝুঁকিপূর্ণ জেনেও অর্থের লোভে একটি মহল যাত্রীদের জিম্মি করে এসব ট্রলারে অবাধে উঠতে বাধ্য করা হচ্ছে। ফলে যেকোন সময় নৌ দুর্ঘটনার আশঙ্কা করছেন সচেতন মহল। সূত্র মতে, বিগত ২০০০ সালে রামগতি থেকে এমএল টাইপের একটি লঞ্চ যাত্রী নিয়ে ভোলায় আসার পথে উত্তাল মেঘনায় ডুবে ছয় শতাধিক যাত্রী নিহত হয়। ওই বছরই বরিশাল-লক্ষ্মীপুর নৌরুটে মেঘনা নদীতে উপকূল এক্সপ্রেস ডুবে তিন শতাধিক যাত্রী মৃত্যুবরণ করেন। তার পরেও জীবনের ঝুঁকি নিয়ে প্রতিনিয়ত হাজারও যাত্রী মাছ ধরার ট্রলারে চড়ে উত্তাল মেঘনা পাড়ি দিচ্ছেন। এ অবৈধ ট্রলারে যাত্রীবহনে প্রতিরোধের কোন ব্যবস্থা না করায় প্রশাসনের নিষ্ক্রিয়তা নিয়েও জনমনে নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। সূত্রে আরও জানা গেছে, ভোলার সঙ্গে রাজধানী, চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুরসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় যাতায়াতের একমাত্র মাধ্যম হচ্ছে নৌপথ। ভুক্তভোগীরা অভিযোগ করেন, ভোলা-লক্ষ্মীপুর রুটে বর্ষা মৌসুমে প্রতিদিন সি-ট্রাকসহ পাঁচটি বড় নৌযান নিয়মিত চলাচল করছে। কিন্তু সি-ট্রাক ও লঞ্চের স্টাফদের গাফিলতি, স্বেচ্ছাচারিতা ও খামখেয়ালীপনার কারণে প্রয়োজনের তাগিদে বিকল্প ব্যবস্থায় যাত্রীরা জীবনের ঝুঁকি জেনেও ছোট ছোট মাছ ধরার ট্রলারে গন্তব্যে যেতে বাধ্য হচ্ছেন। অভিযোগে আরও জানা গেছে, ভোলায় ফারুক বেপারি ও লক্ষ্মীপুরে আলমগীর মেম্বার নামের এক ব্যক্তি এসব রুটের ট্রলার পারাপার নিয়ন্ত্রণ করছেন। অভিযোগ রয়েছে, সি-ট্রাক ও লঞ্চের স্টাফদের অবৈধ সুবিধা দিয়ে তাদের সঙ্গে যোগসাজশে স্থানীয় প্রভাবশালী ঘাট ইজারাদার ফারুক বেপারি ও আলমগীর মেম্বার উত্তাল মেঘনায় ছোট ছোট মাছ ধরার ট্রলারে যাত্রী পরিবহনের ব্যবস্থা করেছেন। আর অবৈধভাবে ট্রলারে করে যাত্রী পারাপারের জন্য ইলিশা পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রে নিয়মিত মাসোহারা দিচ্ছেন। অবশ্য এ অভিযোগ অস্বীকার করেছেন ইলিশা পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের অফিসার ইনচার্জ আবুল বাশার। ভোলার ইলিশাঘাট এলাকার বাসিন্দারা জানান, প্রতিনিয়ত ছোট ছোট মাছ ধরার ট্রলারে যাত্রী ভর্তি করে লক্ষ্মীপুরের মজু চৌধুরীহাটসহ বিভিন্নস্থানে উত্তাল মেঘনা পাড়ি দিয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক ট্রলার চালকরা জানান, প্রতি যাত্রীর কাছ থেকে ১৫০ টাকা করে ভাড়া নিয়ে ইলিশাঘাট থেকে লক্ষ্মীপুরের মজু চৌধুরীর হাটের উদ্দেশে তারা উত্তাল মেঘনা পাড়ি দিচ্ছেন। প্রতি ট্রলারে ৪০ থেকে ৫০ জন করে যাত্রী বহন করা হয়। তারা আরও জানান, ট্রলার মালিক ও ঘাট ইজারাদার ফারুক বেপারি প্রশাসনকে ম্যানেজ করেই ট্রলারে যাত্রী পারাপারের ব্যবস্থা করেছেন। ফারুকের পক্ষে রতন পাটওয়ারী নামের এক ব্যক্তি প্রতি ট্রলার থেকে ৩৮ টাকা করে ঘাটের টোল আদায় করেন। চরফ্যাশন উপজেলার দুলারহাট গ্রামের আবুল কালাম জানান, জরুরী প্রয়োজনে তিনি লক্ষ্মীপুরের মজু চৌধুরীহাটে যাবেন। ইলিশাঘাটে আসার পর ট্রলারের লোকজনে তাকে জানিয়েছেন, এ ঘাট থেকে এখন আর কোন লঞ্চ কিংবা সি-ট্রাক চলাচল করবে না। তাই বাধ্য হয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে মাছ ধরার ট্রলারে করে উত্তাল মেঘনা পাড়ি দিয়ে তিনি গন্তব্যের উদ্দেশে রওনা হয়েছেন। এ বিষয়ে বিআইডব্লিউটিএর ভোলা জোনের দায়িত্বপ্রাপ্ত এক কর্মকর্তা জানান, নৌপথে দুর্ঘটনা এড়াতে প্রতিবছর ভোলার মেঘনা নদীকে ডেঞ্জারজোন হিসেবে চিহ্নিত করে ছোট এমএল সাইজের লঞ্চ ও মাছ ধরার ট্রলার চলাচলে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়। কিন্তু ভোলার ফারুক বেপারি বরিশাল বিভাগীয় কমিশনারের কাছ থেকে খেয়া পারাপারের একটি ইজারা নিয়ে ঝুঁকিপূর্ণ এ রুটে যাত্রীদের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে উত্তাল মেঘনায় ট্রলারে পারাপার করছেন। জেলা প্রশাসক কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, রমজানের ঈদের পর ওই রুটে বেশ কয়েকদিন ভ্রাম্যমাণ আদালত বসানো হয়েছিল। তখন কোন অবৈধ ট্রলার চলাচল করেনি।
×