ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

নিয়ামত হোসেন

চক্ষু মেলিয়া

প্রকাশিত: ০৪:২২, ৩০ সেপ্টেম্বর ২০১৬

চক্ষু মেলিয়া

সিংহের বিয়ে সেদিন চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানায় ঘটা করে বিয়ে হলো সিংহের। বেশ ঘটা করেই আয়োজন করা হয়েছিল। আহূত, অনাহূত, রবাহূত বহু অতিথি এসেছিলেন বিয়েতে। চর্ব চৌষ্য লেহ্য পেয় ইত্যাদির ব্যবস্থাটি মন্দ ছিল না- ছিল ফাস্ট ফুড, কেক, ডিম ইত্যাদি। লোকে খুব মজা করেছে। আনন্দ পেয়েছে। এসবের বিবরণ বের হয়েছে পত্রিকায়। এসব কথা সবার জানা। সুতরাং এ বিষয়ে বলার কিছু নেই। ওই এটুকু ছাড়া যে মানুষের দিন যাপনের নিরানন্দ সময়ে এতে যে একটু আনন্দ মিলেছে সেটাই বা কম কিসের! তবে, এখানে যে কথাটি ওঠে, সেটা হচ্ছে এই যে, বিয়ের দিনে এত কদর পশুরাজের, এই যে জামাইআদর, সব সময় যদি কম-বেশি এই আদরটুকু থাকে তা হলেই ভাল। এই যে এক বেলা রাজভোগ, ক’দিন পরে তার বা তাদের ভাগ্যে সাধারণ খাবার জুটবে তো? জুটলে সেটাই হবে সব থেকে আনন্দের। ‘বন্যেরা বনে সুন্দর’। কিন্তু বন্যদের চিড়িয়াখানায় রাখা হয় আমাদের স্বার্থে। সেখানে ওদের দেখা যায়। দেখে ওদের সম্পর্কে শিক্ষা পাওয়া যায়। এটাই আনন্দ। দেশের অনেক চিড়িয়াখানার হাল ভাল নয়। কখনও দেখা যাবে জায়গা আছে, কিন্তু জায়গার প্রাণীটি নেই। হয়ত অসুস্থ বা মারা গেছে। নতুন প্রাণী আনা হয়নি। কোন সময় দেখা যাবে কোন দাপুটে সতেজ হিংস্র পশু হার জিরজিরে অবস্থা, চলতে গিয়ে যেন কাতরাচ্ছে। দেশের সব চিড়িয়াখানার সব পশু যাতে ভাল থাকে, সুস্থ থাকে, যাতে সব সময় দু’বেলা পেট পুরে খেয়ে তরতাজা হয়ে থাকতে পারে সেটা সবাই চাইবে। আর চাইবে সব চিড়িয়াখানার পরিবেশ যেন সব সময় সুন্দর থাকে, সব ধরনের ‘ধড়িবাজ’-মুক্ত থাকে। সেটাই সবাই চাইবে। সিংহের বিয়েতে যেমন অনাবিল আনন্দ পায় মানুষ, তেমনি আনন্দ পাবে সব সময়, সব চিড়িয়াখানায়। আগে টয়লেট... ছেলে বিয়ে করবে। বাপের মহাউৎসব। খুব স্বাভাবিক ব্যাপার। বাড়িতে শুরু হলো মহাতোড়জোড়। এটা কর-সেটা কর। হেলিকপ্টার ভাড়া কর। করা হলো তাই। হেলিকপ্টারের জন্য আবেদনও করা হলো। কর্তৃপক্ষের লোক আবেদন পেয়ে ছুটে এলো আবেদনকারীর গাঁয়ের বাড়িতে। খোঁজখবর করে, দেখে-শুনে কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্তÑ হেলিকপ্টার দেয়া যাবে যদি বাড়িতে বাথরুম বানাতে পার! কারণ হেলিকপ্টার ভাড়া করে বিয়ে দেবে, কিন্তু তোমাদের ‘টাট্টিখানা’ নেই কেন? শর্ত হলো বানাও শৌচাগার তবে মিলবে হেলিকপ্টার। কড়া শর্ত। ঠেলার নাম বাবাজি। শর্ত পূরণ হলো। বাড়িতে টয়লেট হলো। তারপর আর জানা না গেলেও ধারণা করা যায়, হয়ত অতঃপর মহাধুমধামে বিবাহ সম্পন্ন হয়েছে। ঘটনাটি ঘটেছে ভারতের মধ্যপ্রদেশের এক অজ গাঁয়ে। সারমেয়’র পরিচ্ছন্নতাবোধ জার্মানির এক ছোট্ট শহর। শহরে সুন্দর একটি পার্ক। লোকজন বেড়াতে যায়। কিছুক্ষণ বসে। হাওয়া খায়। চমৎকার পরিবেশে সময় কাটায় সেখানে। তবে, দেখা যায় অনেকেই এখানে-ওখানে আবর্জনা ফেলে। তাতে পার্ক নোংরা হয়। কর্তৃপক্ষ নোটিস দিয়েছে। কোন আবর্জনা ফেলা যাবে না সেখানে। তবু ফেলা হয়। কারও যেন গ্রাহ্যি নেই! একদিন দেখা গেল, একটি কুকুর পার্কের ভেতরে এক জায়গায় জমিয়ে রাখা আবর্জনা মুখে করে নিয়ে বাইরের ডাস্টবিনে ফেলছে। দিব্যি সে ময়লা-আবর্জনাগুলো মুখে করে নিয়ে বাইরের ময়লা ফেলার জায়গায় ফেলে দিয়ে পরিষ্কার করল স্থানটি। সেখানকার এক আগন্তুকের চোখে পড়েছিল ঘটনাটি। তিনি পুরো ঘটনাটি ভিডিও করে রেখে ছেড়ে দিয়েছেন ইন্টারনেটে, ইউটিউবে। সেখানে তিনি বলেছেন এর থেকে অনেকের শিক্ষা নেয়া উচিত। যথার্থই বলেছেন তিনি। এতে দ্বিমতের অবকাশ নেই। সারমেয়রা প্রভুভক্ত- এ কথা সবার জানা। কিন্তু তাদের পরিচ্ছন্নতা বোধ যে এত প্রখর তা ক’জনারই বা জানা ছিল।
×