ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

মিটারের বিড়ম্বনা

প্রকাশিত: ০৪:১৭, ৩০ সেপ্টেম্বর ২০১৬

মিটারের বিড়ম্বনা

বিদ্যুত বিলে ‘ভূতের আছর’ অনেক পুরনো। এনালগ যুগ ছাড়িয়ে ডিজিটাল যুগে পৌঁছালে ভূত আর তার আছর ছেড়ে যাচ্ছে না। এখন সে ডিজিটাল আছরে পরিণত হয়েছে। আর এই পদ্ধতিতে কত যে কারসাজি খেলা করে, জানে তা বিদ্যুত বিভাগ। আর মাশুল গোনে বিদ্যুত গ্রাহক। বৈধ গ্রাহকরা যেখানে হয়রানির শিকার হচ্ছেন, সেখানে অবৈধ ব্যবহারকারীরা পাচ্ছে গুরুত্ব। তারা কম দামে বিদ্যুতও ব্যবহার করছে। অভিযোগ আছে, এই দাম সরকারী কোষাগারে নয়, জমা হয় মিটার রিডারের পকেটে। তারপর তা ভাগ-বাটোয়ারায় কর্তা থেকে কর্মীর পকেটও ভারি হতে থাকে। বিদ্যুতের সঙ্গে গ্রাহকদের লুকোচুরি খেলার দিন প্রায় শেষ হতে যাচ্ছে। আগের মতো লোডশেডিংয়ের ধকল বলে তেমন কিছু আর নেই। বিদ্যুত বিভ্রাট বা ঘাটতি হোক আর না হোক বৈধ গ্রাহকের ঘাড়ে ভূতের আছর নামে যখন অতিরিক্ত বিদ্যুতের বিল আসে হাতে। বৈধ ব্যবহারকারীর বিলে উঠে আসে অতিরিক্ত ইউনিট ব্যবহারের বিল। অথচ এই পরিমাণ বিদ্যুত গ্রাহক ব্যবহারই করেননি। বিদ্যুত অবস্থার সার্বিক উন্নয়ন ও গ্রাহক হয়রানি রোধে সংশ্লিষ্টদের পক্ষ থেকে নানা ধরনের উদ্যোগ নেয়া হলেও এবং মধুর মধুর বচন নির্গত হলেও সবই যেন বার বার অসার বলে দৃশ্যমান হচ্ছে। এনালগ মিটারের যুগ পেরিয়ে ডিজিটাল মিটার ব্যবহার করেও অনেক বৈধ গ্রাহক পার পাচ্ছে না বিদ্যুতের অতিরিক্ত বিলের বোঝা থেকে। স্থানীয় অফিসে অভিযোগ করে অনেকেই শিকার হচ্ছেন বাড়তি হয়রানির। বিদ্যুত সংযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ার ভয়ে নীরবে বয়ে যাচ্ছেন বাড়তি বিলের বোঝা। কোন কোন ক্ষেত্রে মিটার সংক্রান্ত গ্রাহকের অভিযোগ শুনতেও রাজি হচ্ছে না স্থানীয় অনেক বিদ্যুত অফিস। বরং তাদের মনমতো সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেয়া হচ্ছে গ্রাহকের ওপর। বিদ্যুতের বিল সংক্রান্ত অভিযোগ একুশ শতকের নয়। বিশ শতকেই সামরিক জান্তা শাসকদের আমল থেকে এই অনিয়ম চালু হয়েছে। যা এখনও চলে আসছে। এর সঙ্গে বিদ্যুত সংশ্লিষ্ট কিছু অসৎ কর্মকর্তা ও কর্মচারীর জড়িত থাকার অভিযোগও পুরনো। এই অভিযোগটা বরাবরের যে, লাইনম্যানরা দিচ্ছে অবৈধ সংযোগ আর মিটার রিডাররা দিচ্ছে বিলে অতিরিক্ত রিডিং ইউনিট। অনিয়ম, দুর্নীতিসহ মিটার রিডারদের কারসাজির কারণে অতিরিক্ত অর্থ গচ্চা দিতে হচ্ছে গ্রাহকদের। তাদের বিরুদ্ধে মিটার রিডিং না দেখে যেমন বেশি বিল করার অভিযোগ রয়েছে, তেমনি কোন কোন গ্রাহকের কাছ থেকে মুচলেকা নিয়ে বিল কম করে দেয়ার অভিযোগও কম নয়। অধিক বিলের বিষয়ে গ্রাহকদের কোন অভিযোগ কানে তুলছে না সংশ্লিষ্টরা। অনেক সময় অবৈধ সংযোগ পরিচালনা করতে গিয়ে রিডাররা বৈধ সংযোগ গ্রাহকদের ওপর চাপিয়ে দিচ্ছে অতিরিক্ত বিলের বোঝা। এসব হয়রানি থেকে প্রায়শই গ্রাহকদের মুক্ত করার লক্ষ্যে নানা পদক্ষেপ গ্রহণের কথা বলা হলেও বাস্তবে কিছুই হয় না। আবার অতিরিক্ত বিল পরিশোধের পরও স্থানীয় অফিসে অভিযোগ জানালে মিটার পরিবর্তনের পরামর্শ দেন কর্তৃপক্ষ। প্রি-পেইড মিটার ব্যবস্থা চালু প্রকল্পের কাজ কতদূর এগোল সে প্রশ্নেরও উত্তর মেলে না। মিটার রিডার, লাইনম্যানরা আর্থিকভাবে এত লাভবান হচ্ছেন। যাকে বলা যায় ‘আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ।’ তাদের অর্থকড়ি, সহায়-সম্পদের বিশাল ভা-ারের খবর মাঝে মধ্যে সংবাদপত্রে আসে। কিন্তু বিদ্যুত বিল নিয়ে ভৌতিক অবস্থার আর নিরসন হয় না। এই ট্রাডিশন বন্ধ করা দরকার।
×