ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

টেস্ট শুরুর আগে সেই পিচ-নাটকে জমজমাট ইডেন

প্রকাশিত: ২০:৪৮, ২৯ সেপ্টেম্বর ২০১৬

টেস্ট শুরুর আগে সেই পিচ-নাটকে জমজমাট ইডেন

অনলাইন ডেস্ক ॥ বঙ্গ ক্রিকেট প্রশাসনে জমানা বদলেছে। তার সঙ্গে কিউরেটরও বদলেছে। কিন্তু ইডেনের বাইশ গজ নিয়ে নাটকে এতটুকু পরিবর্তন আসেনি। যতই কোচ অনিল কুম্বলে বলুন কিউরেটরদের কাছে পছন্দের উইকেট চাইবেন না, ইডেনে প্রথম দিন পা রেখেই কিন্তু উইকেট নিয়ে বায়না করে রাখলেন ভারতীয় দলের কোচ অনিল কুম্বলে। সঙ্গে ক্যাপ্টেন বিরাট কোহালিও। ভারতের টেস্ট দলে নতুন ক্যাপ্টেনের জমানা এসেছে। নতুন কোচও এসেছেন। কিন্তু ইডেন-উইকেট নিয়ে সেই নাটক চলছেই। বুধবার ইডেনের বাইশ গজে যে সবুজ আভা দেখা গেল। টিম ইন্ডিয়ার ‘ফরমায়েশ’ মেনে নেওয়া হলে বৃহস্পতিবার তা দেখতে পাওয়ার সম্ভাবনা বোধহয় কম। ঘাস তুলতে গিয়ে যদি উইকেটের ক্ষতিও হয়, তা হলেও নাকি আপত্তি নেই ভারতীয় টিম ম্যানেজমেন্টের। সেই উইকেট নিয়ে আপত্তি। সেই কিউরেটরের কাছে নালিশ। সেই সিএবি প্রেসিডেন্টের সঙ্গে দরবার। শেষ পর্যন্ত সমঝোতাও। চরিত্রগুলো শুধু বদলেছে। ঘটনাগুলো নয়। অশ্বিন, জাডেজার ঘূর্ণি ম্যাজিকে যাতে নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে টেস্ট সিরিজ জয় নিশ্চিত করা যায়, সে জন্যই আর কোনও ঝুঁকি নিতে চায় না ভারতীয় দল। শোনা গেল, এ দিন দুপুরে ইডেনে ঢুকে উইকেটে ঘাস দেখে নাকি বেশ চটে যান বিরাট কোহালি। সঙ্গে সঙ্গে তা জানান অনিল কুম্বলেকে। মাঠে ঢোকার সঙ্গে সঙ্গে সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়কে ক্যাপ্টেনের সেই উদ্বেগের কথা জানান কুম্বলে। সৌরভ তাঁকে আশ্বাস দেন যে, যেমন উইকেট চান, তেমনই দেওয়ার চেষ্টা করবেন তাঁরা। এর পরই কিউরেটর সুজন মুখোপাধ্যায়কে ডেকে কথা বলেন সৌরভ। ডাকেন কুম্বলেকেও। তিনজনে মিলে কথাও হয় উইকেট নিয়ে। মাঠেই ছিলেন বিসিসিআই-এর আঞ্চলিক কিউরেটর আশিস ভৌমিকও। তাঁর সঙ্গেও এই ব্যাপারে আলোচনা হয়। বিকেলে কুম্বলের সঙ্গে আলোচনা সেরে মাঠ থেকে বেরবার সময় সৌরভ বলেন, ‘‘কাল ঘাস আরও ছাঁটা হবে। তবে এই উইকেটে শুরু থেকেই টার্ন পাওয়া যাবে না। আদর্শ টেস্ট উইকেট এটা। প্রথম দু’দিন বল সিম করবে, তৃতীয় দিন থেকে হয়তো টার্ন করবে।’’ কিন্তু সে রকম উইকেট বোধহয় চান না কোহালি-কুম্বলেরা। তাই মাঠে সৌরভের কাছ থেকে পছন্দের উইকেটের আশ্বাস পাওয়ার পরও কুম্বলে থেমে থাকেননি। বিকেলে প্র্যাকটিসের পর ফের তিনি সোজা উঠে আসেন ক্লাব হাউসে। সৌরভের ঘরে। সেখানে ফের উইকেট নিয়ে দু’জনের মধ্যে আলোচনা হয় বলে জানা গেল। কিউরেটররা নাকি বোঝানোর চেষ্টা করেছিলেন। যেহেতু পিচে আর্দ্রতা পুরোপুরি যায়নি, নীচের দিকে স্যাঁতসেঁতে ভাব রয়েছে, তাই ঘাস পুরো ছাঁটতে গেলে উইকেটের ক্ষতি হতে পারে। যা শুনে নাকি কোহালিরা বলেন, তাতে তাঁদের কোনও আপত্তি নেই। কিন্তু ঘাস ছেঁটে ফেলতে হবে। কিউরেটররা অবশ্য এই নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাননি। এক দিকে এই পিচ-নাটক যখন চলছে, তখন অন্য দিকে ব্যাটিং একাগ্রতায় মগ্ন ভারতীয় ক্যাপ্টেন বিরাট কোহালি। ওয়েস্ট ইন্ডিজে প্রথম টেস্টে সেই দুশোর পর তাঁর ব্যাটে আর তেমন রান নেই। কানপুরেও দুই ইনিংস মিলিয়ে ২৭। এই রান খরায় যে কতটা ক্ষুধার্ত হয়ে তিনি, তা তাঁর প্র্যাকটিসেই বোঝা গেল। প্রথমে রবারের বলে অনেকক্ষণ নকিং করেন। যে ধরনের বলে বারবার অসুবিধায় পড়ছেন তিনি। যে ভাবে কোমরের উপরের উচ্চতায় লাফিয়ে আসা বল নামাতে গিয়ে আউট হচ্ছেন ইদানীং, বেশিরভাগ সেরকম বলেই নক করছিলেন তিনি। পরে দুই নেটেই ব্যাট করেন। তার পর ফের নকিংয়ে যান। সব শেষে আবার নেটে ঢুকে পড়েন স্থানীয় নেট বোলারদের নিয়ে। সতীর্থরা সবাই যখন ড্রেসিংরুমে, তখনও নেটে ব্যাটিং করে চলেছেন বিরাট। সারাক্ষণ ব্যাট হাতে যেন ডুবে ছিলেন তিনি। ভারতীয় ক্রিকেটাররা কয়েকজন যখন ইডেনে প্র্যাকটিসে ব্যস্ত, তখন বিকেলে গৌতম গম্ভীর এসে পড়লেন শহরে। কিন্তু তিনি কি ইডেন টেস্টে প্রথম এগারোয় জায়গা পাবেন? এর উত্তরে কুম্বলে বলে দিলেন, ‘‘গৌতম দলে ফিরেছে, ভাল কথা। আমাদের ওপেনারদের নিয়ে যে কী হচ্ছে, কে জানে? ওয়েস্ট ইন্ডিজে মুরলী বিজয় চোট পেল, এখানে লোকেশ রাহুল। তবে গৌতম ডোমেস্টিকে ভাল খেলেছে বলে দলে এসেছে। দলের সবাই তো এগারোয় আসার মতো।’’ এ দিন ভারতীয় দলের অপশনাল প্র্যাকটিসে অবশ্য শিখর ধবনকে ভালরকম ঘাম ঝরাতে দেখা যায়। নেটে ব্যাট করা থেকে শুরু করে অন্য নেটে নকিং, নেটের ধারে বাউন্সার ছাড়ার প্র্যাকটিসও তাঁকে দিয়ে করান কুম্বলে। ধবনের এই প্র্যাকটিসে স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে, তা হলে কি তাঁকে মুরলীর সঙ্গে ওপেন করতে পাঠানো হবে? আবার অমিত মিশ্রর প্র্যাকটিসে দেখেও তাঁর এগারোয় ফেরা নিয়ে জল্পনা শুরু হয়ে গেল। রাহুল চোট পাওয়ায় যে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, তাতে পূজারাকে দিয়ে ওপেন করানোর একটা ভাবনা ভারতীয় দলে রয়েছে। তেমন সম্ভাবনা কতটা, তা জানতে চাইলে কুম্বলে অবশ্য ঘুরিয়ে বলেন, ‘‘পূজারাকে নিয়ে মিডিয়ায় যা চর্চা চলছে, বেচারাকে একটু নিঃশ্বাস নিতে দিন। তবে ও আমাদের দলের বেশ গুরুত্বপূর্ণ একটা অংশ। ও সফল হয়েছে, আরও হবে। তবে দলের মধ্যে পূজারার উপর কোনও চাপ নেই। বরাবর ও অবদান রেখেছে। জানি ভবিষ্যতেও রাখবে।’’ সৌরাষ্ট্রের ব্যাটসম্যানের উপর যে কতটা ভরসা, তা কুম্বলে বুঝিয়েই দিলেন এ দিন। পূজারা অবশ্য এ দিন প্র্যাকটিস থেকে ছুটিই নিয়েছিলেন। বিশ্রাম নিয়েছেন মুরলী, অশ্বিন, জাডেজা ও তিন পেস বোলারও। বৃহস্পতিবার পুরো শক্তি নিয়েই সিরিজ জয়ের প্রস্তুতিতে নামবেন কোহালিরা। সূত্র : আনন্দবাজার পত্রিকা
×