ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

মূল ফিচার ॥ রুহুল আমিন ভূঁইয়া

বুবলীর বাজিমাত

প্রকাশিত: ০৬:৫৩, ২৯ সেপ্টেম্বর ২০১৬

বুবলীর বাজিমাত

সাংবাদিকতার প্রতি অনুরাগ থেকেই টেলিভিশনে এসেছিলেন সংবাদ উপস্থাপনায় । বর্তমানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমবিএ করছেন। ইকোনমিক্সে অনার্স শেষ করেছেন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে। হতে চেয়েছিলেন ব্যারিস্টার। এমনকি ব্রিটিশ স্কুল অব ল’তে দুই বছর এলএলবিও করেছেন। কিন্তু চাকরি এবং এমবিএর চাপে সেটা আর শেষ করা হয়নি। ক’দিন আগেও দেশের মানুষের কাছে সংবাদ উপস্থাপিকা হিসেবে ছিলেন পরিচিত মুখ। আর আজ রুপালি জগতের মানুষ। বলছি বুবলীর কথা। ঢালিউডের নতুন মুখ শবনম বুবলী। এসেই রাতারাতি তারকা। সম্প্রতি ঈদ-উল-আযহায় বাংলাদেশে মুক্তি পেয়েছে তার অভিনীত ‘বসগিরি’ ও ‘শুটার’ ছবি। এর মধ্য দিয়ে বড়পর্দার অভিষেক হলো এই নবাগত নায়িকার। দুটি ছবিতেই তার নায়ক হিসেবে আছেন ঢালিউডের কিং খান খ্যাত শাকিব খান। নুসরত ফারিয়ার পর নতুন এই নায়িকাকে নিয়ে হৈচৈ শুরু হয়ে গেছে। আসলেন দেখলেন এবং জয় করলেন দর্শক হৃদয়। মূলত ‘বসগিরি’ দিয়েই আলোচনায় চলে আসেন বুবলী। তার এ পথচলা এত সহজ ছিল না। এ কথা জানতে হলে, তাকাতে হবে একটু পেছনের দিকে। ব্যারিস্টার হওয়ার ইচ্ছা থাকলেও সেই পথে আর পা বাড়াননি। কথায় আছে, স্বপ্ন মানুষকে চলার পথে এগিয়ে নিয়ে যায়। তাই সবাই স্বপ্ন দেখেন। স্বপ্ন দেখতে নেই মানা। তবে সবাই স্বপ্নের সিঁড়িতে পা রাখতে পারেন না। যারা স্বপ্নের পথে এগিয়ে সাফল্যের সিঁড়িতে পা রাখেন, তারাই সফল। আর এই সফল মানুষের সংখ্যা হাতেগোনা। তেমনি একজন শবনম ইয়াসমিন বুবলী। ছোটবেলায় স্বপ্ন দেখতেন, বড় হয়ে একজন অভিনেত্রী হবেন। অভিনয় দিয়ে খুব নাম করবেন। ছোটবেলায় ছবির ভক্ত ছিলেন এই লাস্যময়ী। বিশেষ করে বাংলা ছবির। সময় পেলেই ছবি দেখায় মত্ত হতেন। কারণে-অকারণে ছবি দেখার বাহানা খুঁজতেন। সময়ের সঙ্গে বদলে যায় তার সে স্বপ্ন। নতুন নেশায় আকৃষ্ট হন তিনি। নিজেকে দেখতে চান একজন নৃত্যশিল্পী হিসেবে। মেয়ের এমন আগ্রহ দেখে বাবা-মা তাকে ভর্তি করান একটি নাচের স্কুলে। সেখানে কয়েক বছর নাচের তালিমও নিয়েছেন, কিন্তু মন থেকে অভিনয়ের চিন্তা একেবারে ঝেড়ে ফেলেননি বুবলী। সময়ের পরিক্রমায় বদলে যায় অনেক কিছু। যোগ দেন একটি বেসরকারী স্যাটেলাইট চ্যানেলের সংবাদ উপস্থাপিকা হিসেবে। কিন্তু মনের কোটরে হয়ত অভিনয়ের ইচ্ছা স্ফুলিঙ্গের মতো জ্বলজ্বল করছিল। তাই তো অনেক চড়াই-উতরাই পেরিয়ে পরিবারের মত-অমতের বাধা পেরিয়ে নাম লেখান শামীম আহমেদ রনির ‘বসগিরি’ ছবিতে। আর এই যাত্রা আরও বেগবান হলো এবারের ঈদে। মুক্তিপ্রাপ্ত দুটি ছবিই দর্শক ভালবাসায় সিক্ত হয়েছে। তবে ‘শুটারের’ তুলনায় ‘বসগিরি’ ছবিটি দর্শকরা সানন্দে গ্রহণ করেছেন। ছবি দেখতে গিয়ে কেঁদে ফেলেছি। ঈদে প্রেক্ষাগৃহে গিয়ে দর্শকসারিতে বসে ‘বসগিরি’ দেখেছেন। আমাদের সেই অভিজ্ঞতার কথা বলেছেন তিনি। ‘বসগিরি’ ছবিতে সাড়া কেমন পাচ্ছেন? এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, রাজধানী ও দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে ভাল সাড়া পাচ্ছি। ভাবনার চেয়ে অনেক বেশি রেসপন্স পাচ্ছি। প্রায় প্রতিটি হলেই ‘বসগিরি’ দেখতে দর্শকদের উপচে পড়া ভিড় আর তুমুল চাহিদার কথা শুনছি। ফোনে, ফেসবুকে সবাই খুব প্রশংসা করছেন ছবিটির। ‘বসগিরি’র পুরো টিমের পক্ষ থেকে সকল দর্শকের কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। আপনি ‘বসগিরি’ দেখলেন কোন হলে? ঈদের পরেরদিন ছোট ভাইকে নিয়ে টঙ্গীর চম্পাকলিতে। সিনেমা হলে বোরকা পরে যেতে হয়েছে। যা দর্শক, বোরকা ছাড়া উপায় ছিল না। গিয়ে শুনলাম, সকালের শোতে দর্শকদের ভিড়ে হলের বাইরের মূল গেট ভেঙে গেছে। ছবি দেখার অভিজ্ঞতা কেমন ছিল? গানের দৃশ্যগুলোতে দর্শকরা সিটের ওপর দাঁড়িয়ে নাচানাচি করছিলেন। যখন হেলিকপ্টারে করে নায়ক শাকিব খান প্রবেশ করেন, পুরো হল যেন চিৎকার আর করতালিতে ফেটে পড়ছিল। কমেডি দৃশ্যগুলোও দর্শক উপভোগ করছিলেন। নায়ক-নায়িকাকে ঘিরে দর্শকের মন্তব্যগুলো কাছে বসেই শুনছিলাম। ওই মুহূর্তের আনন্দের কথা ভাষায় প্রকাশ করতে পারব না। ছবি দেখতে গিয়ে কেঁদে ফেলেছি। আপনাকে দশকরা কীভাবে নিয়েছেন? ছবিটিতে আমার প্রথম দৃশ্যে একটি বস্তার ভেতর থেকে বের হই আমি। সঙ্গে সঙ্গে হলজুড়ে দর্শকের হাততালি। চোখে পানি চলে এসেছিল। আর ‘ডিল ডিল’ ও ‘বুবলী বুবলী’ গান দুটির সময় দর্শকের উল্লাস-চিৎকার আর নাচানাচিতে কিছুই শুনতে পাচ্ছিলাম না। ‘বসগিরি’ নিয়েই আপনার উন্মাদনা দেখা যাচ্ছে। কেন? উপস্থাপনা ছেড়ে প্রথম চুক্তিবদ্ধ হয়েছি ‘বসগিরি’ ছবিতে। ছবিতে অভিনয় শুরুর আগে পরিবার থেকেও সমস্যা হয়েছিল। সবকিছু অতিক্রম করে কাজটি শুরু“করেছিলাম। তাই ছবিটির প্রতি আমার ভালবাসা একটু বেশি। তবে ‘শুটার’ যে খারাপ হয়েছে, তা বলা যাবে না। সেটিও অনেক ভাল হয়েছে। অনেক ভাল সাড়া পাচ্ছি। দর্শক ভালবাসা সম্পর্কে জানতে চাইলে বুবলী বলেন, ‘দর্শকরা এভাবে আমার অভিনয়ের প্রতিদান ফিরিয়ে দেবে, তা কল্পনাও করিনি। তবে এটা ঠিক যে, আত্মবিশ্বাস ছিল। সব মিলিয়ে ভাল একটা কিছু হচ্ছে বলে সবসময় মনে-প্রাণে বিশ্বাস রেখেছি। তাই তো যেখানেই গিয়েছি সেখানেই প্রত্যাশার চেয়ে বেশি ভালবাসা পেয়েছি। দর্শকদের এ ভালবাসা অভিনয়ের সেরাটা দিয়ে সবসময় ফিরিয়ে দিতে চাই। বুবলী আরও বলেন, ‘যখন ছবি দুটি মুক্তি পেল আর খবর পাচ্ছিলাম যে, দুটি ছবিই ভাল যাচ্ছে। তখন কি যে আনন্দ তা মুখে প্রকাশ করা যায় না। সেই আনন্দ এখনও বিরাজমান আমার মনে। আরেকটি কথা না বললেই নয়, ‘বসগিরি’ এক ধরনের ছবি, শুটার আরেক ধরনের। অর্থাৎ শুটারেরও একটি নির্দিষ্ট দর্শক রয়েছে। তাই দুটি ছবিই ভাল চলছে। কেউ কেউ শুধু বসগিরির কথাই বলছেন। অথচ শুটারও যে ভাল ব্যবসা করছে, সেটা অনেকেই এড়িয়ে যাচ্ছেন।’ বর্তমান ব্যস্ততা নিয়ে জানতে চাইলে বুবলী বলেন, ‘ঈদের পর আমার প্রতি দর্শকের যে প্রত্যাশা দেখলাম তা ভবিষ্যতের যাত্রাকে আরও বেগবান করবে। ইতোমধ্যে অনেক পরিচালক ও প্রযোজনা সংস্থা যোগাযোগ করেছেন। শাকিব ভাইয়ের সঙ্গে জুটি বেঁধে ছবি করার প্রস্তাব পাচ্ছি বেশি। আমি খুব ধীরে-সুস্থে এগোতে চাই। যেহেতু শুরুটা ভাল করেছি তাই ধারাবাহিকতা বজায় রাখার চিন্তা ভাবনা এঁটেছি। নতুন ছবির পরিকল্পনা আরেকটু সময় নিয়ে জানাব। কেউ কেউ বলছেন, শাকিব-অপুর সেই জুটির কফিনে আপনি পুরোপুরি পেরেক ঠুকে দিয়েছেন। এ বিষয়ে কিছু বলবেন কি? তিনি বললেন, ‘দেখুন, সময়ের সঙ্গে অনেক কিছু বদলে যায়। শাকিব-অপুর জুটি নিঃসন্দেহে অন্যতম পরীক্ষিত সেরা জুটি। এখন দর্শকরা যদি আমাদের চায়, তাতে দোষের তো কিছু নেই। ওই যে বললাম, একটা সময় শাকিব ভাইয়ের সঙ্গে শাবনূর, পূর্ণিমা, সাহারা আপাও কাজ করেছেন। এখন পরিচালক ও প্রযোজকরা শাকিব-বুবলী গ্রহণ করতে চাচ্ছেন। কোন জুটি পেছনে পড়ে গেলে বা ভাঙতে তাতে দর্শকেরই হাত থাকে। এতে ব্যক্তিগত কোন হাত বা বিষয় কাজ করে না। সুতরাং এতে আমারও কোন হাত নেই। ওই যে বললাম দর্শক চাহিদা ! পরিশেষে, এটাই বলতে চাই, যার সঙ্গেই কাজ করি না কেন অভিনয়ের সেরাটা দিয়েই এগিয়ে যেতে চাই। একটা সময় সংবাদ পড়তেন, এখন নিজেই সংবাদের খোরাক। বিষয়টা কেমন উপভোগ করছেন, এমনটা জানতে চাইলে বুবলী বলেন, ‘এ আনন্দ ভাষায় প্রকাশের নয়। সত্যিই আমি ভাগ্যবতী’।
×