ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

বাংলাদেশের ফাইনালে ওঠার লড়াই আজ

প্রকাশিত: ০৬:৩০, ২৯ সেপ্টেম্বর ২০১৬

বাংলাদেশের ফাইনালে ওঠার লড়াই আজ

রুমেল খান ॥ ‘ফাইনালের প্রতিপক্ষ হিসেবে কাকে প্রত্যাশা করি পাকিস্তানকে। কেননা আমার কাছে ভারতের চেয়ে পাকিস্তানকেই বেটার দল মনে হয়েছে। সেরা দলকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার মজাই আলাদা। তাছাড়া পাকিস্তানকে ফাইনালে চাই আরেকটি কারণে। স্বাধীনতা যুদ্ধ দেখিনি, তাই পাকিস্তানকে হারিয়েই চ্যাম্পিয়ন হতে চাই!’ কথাগুলো মোহাম্মদ মোহসীনের। বাংলাদেশ অনুর্ধ-১৮ জাতীয় হকি দলের প্রতিশ্রুতিশীল ফরোয়ার্ড। ঢাকায় চলমান ‘বেক্সিমকো অনুর্ধ-১৮ এশিয়া কাপ হকি’তে আজ পুল ‘এ’ চ্যাম্পিয়ন হিসেবে বাংলাদেশ সেমিফাইনালে খেলবে চাইনিজ তাইপের বিপক্ষে, বেলা সাড়ে ১২টায়। মওলানা ভাসানী জাতীয় হকি স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত অপর সেমিতে মুখোমুখি হবে দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ভারত-পাকিস্তান। তাদের খেলাটি শুরু হবে বিকেল ৩টায়। বেলা এগারোটায় প্রথম ম্যাচে মুখোমুখি হবে ওমান ও হংকং। পরাজিত দলের অবস্থান হবে সপ্তম। বুধবার হকি স্টেডিয়ামে জনকণ্ঠের সঙ্গে একান্ত আলাপনে উপরোক্ত মন্তব্য করেন মোহসীন। এছাড়া কথা হয় বাংলাদেশ দলের অপর দুই খেলোয়াড় রোমান সরকার (অধিনায়ক), আশরাফুল ইসলাম এবং প্রধান কোচ কাওসার আলীর সঙ্গে। এ পর্যন্ত দুটি আন্তজার্তিক ম্যাচ খেলেছেন মোহসীন। দ্বিতীয় ম্যাচেই (বিপক্ষ ওমান) ম্যাচসেরা হয়েছেন। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘এটা আমাকে সামনের ম্যাচগুলোতে আরও ভাল খেলতে অনুপ্রাণিত করবে।’ ২০১০ সালে প্রথম বিভাগ হকি লীগে ওয়ান্ডারার্সের হয়ে ক্যারিয়ার শুরু মোহসীনের। যে দলের হয়ে খেলেছেন, কিছু না কিছু অর্জন করেছেন। যেমন ২০১০ লীগে ওয়ান্ডারার্সের হয়ে সর্বোচ্চ গোলদাতা হন। সর্বশেষ লীগ খেলেন মেরিনার্সের হয়ে। এই লীগে মেরিনার্স চ্যাম্পিয়ন হয়, যা তাদের ক্লাব ইতিহাসের প্রথম কোন শিরোপা। মোহসীনেরও তাই। সেজন্য নিজেকে সৌভাগ্যবান মনে করেন তিনি। এবার জিততে চান অ-১৮ এশিয়া কাপ হকির শিরোপাও। সাবেক জাতীয় হকি খেলোয়াড় আবদুল্লাহ্ পিরু ও শহীদুল্লাহ্ খোকনের ভাগ্নে হচ্ছেন মোহসীন। ‘আমার তিন মামাই হকি খেলতেন। তাদের দেখেই হকি খেলতে আগ্রহী হই। আমার পিরু ও খোকন মামার মতো আমিও একদিন জাতীয় বা সিনিয়র দলে খেলার স্বপ্ন দেখি।’ ইংল্যান্ডের এ্যাশলে জ্যাকসন ও বাংলাদেশের রাসেল মাহমুদ জিমির দারুণ অনুরাগী মোহসীন। অধিনায়ক রোমান সরকার বলেন, ‘আমাদের সেমির প্রতিপক্ষ চাইনিজ তাইপে। আশা করছি ম্যাচটা আমরা অনায়াসেই জিতবো। গ্রুপ পর্যায়ে যেভাবে ডমিনেট করে খেলে আমরা দুটি ম্যাচে জিতেছি (বিশেষ করে ভারতের বিরুদ্ধে), সেজন্যই এমন আত্মবিশ^াস তৈরি হয়েছে আমাদের মধ্যে। তবে চাইনিজ তাইপেকে তাই বলে মোটেও অবহেলা করছি না। কেননা, তারাও তো যোগ্যতা দেখিয়েই সেমিফাইনাল পর্যন্ত এসেছে। আমরা আমাদের স্বাভাবিক খেলাটা খেললেই জিতবো, এতে কোন সন্দেহ নেই।’ এই টুর্নামেন্ট শুরুর আগে আমরা এই মাঠেই চাইনিজ তাইপের সঙ্গে একটি ৪৫-৫০ মিনিটের প্রস্তুতি ম্যাচ খেলেছিলেন রোমানরা। তাতে তারা জিতেছিলেন ৯-১ গোলে। তবে এই আসরে তাদের খেলা সরাসরি না দেখলেও ভিডিওতে তাদের খেলার ধরন রোমানদের দেখিয়েছেন কোচ। ‘সেভাবেই তিনি গেম প্ল্যান করেছেন।’ জানান রোমান। তিনি আরও বলেন, ‘ভারতের সঙ্গে আমরা খেলেছি ৪-৪-২ ফর্মেশনে। চাইনিজ তাইপের সঙ্গে আরও আক্রমণাত্মক খেলব আমরা। হতে পারে ফর্মেশন হবে ৪-৩-৩। ভারতের সঙ্গে আমরা পেনাল্টি কর্নার থেকে বেশি গোল করায় মনোযোগী ছিলাম। ওমানের সঙ্গে আবার মনোযোগী ছিলাম ফিল্ড গোল করায়। তাইপের সঙ্গে চেষ্টা করব দুই ধরনেই খেলতে। আমরা যেহেতু ফাইনাল নিয়েই ভাবছি, তাই সেমির ম্যাচে এমনভাবে খেলব, যেন ফাইনালের প্রতিপক্ষ আমাদের খেলার ধরন নিয়ে বিভ্রান্ত হয়।’ সবশেষে সমর্থকদের উদ্দেশে রোমান আহ্বান জানান, ‘আমাদের পাশে যদি আপনারা সবসময় থাকেন, তাহলে আমরা অবশ্যই দেশের হকির হারানো গৌরব ফিরিয়ে আনতে পারব ইনশাল্লাহ্।’ দলের অপর পিসি স্পেশালিস্ট ও ডিফেন্ডার আশরাফুল ইসলাম বলেন, ‘অনুশীলনই একজন মানুষকে পূর্ণাঙ্গ করে তোলে। বিকেএসপিতে যখন ছিলাম, তখন প্রতিদিন অনুশীলনে কমপক্ষে ২০০টি পিসি মারতাম। এজন্য একাকী বিশেষভাবেও অনুশীলন করতাম।’ এখন দলের সঙ্গে অনুশীলনে কয়টা পিসি মারেন? ‘৫০-৬০ টা হবেই।’ পিসি মারায় কাকে আদর্শ মানেন? ‘আর্জেন্টিনার গঞ্জালো আর বাংলাদেশের মামুনুর রহমান চয়ন ভাইকে। তিনি প্রায়ই আমাকে ভুল-ত্রুটি ধরিয়ে দেন।’ পিসি স্পেশালিস্ট হওয়ার পেছনে কাদের অবদান বেশি? ‘জাহিদ হোসেন রাজু, মামুন উর রশীদ, মাহবুব হারুন, গোবিনাথ কৃষ্ণমূর্তি ... এই চার কোচের অবদান আছে।’ সেমির ম্যাচে চাইনিজ তাইপের বিরুদ্ধে পিসি থেকে কয়টা গোল করতে চান? ‘এমন কোন টার্গেট নেই। আমি চাই দলের জয়। নিজের গোল নিয়ে কোন মাথা ব্যথা নেই।’
×