ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

আফগানদের কাছে লজ্জার হার মাশরাফিদের

প্রকাশিত: ০৬:৩০, ২৯ সেপ্টেম্বর ২০১৬

আফগানদের কাছে লজ্জার হার মাশরাফিদের

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ ব্যাটিংয়ের ভরাডুবিই কাল হলো। টানা ৬ ওয়ানডে জয়ের (দক্ষিণ আফ্রিকা ২, জিম্বাবুইয়ে ৩ ও আফগানিস্তান ১) পর পচা শামুকে পা কাটল বাংলাদেশ দলের। বুধবার মিরপুর শেরেবাংলা জাতীয় স্টেডিয়ামে সিরিজের দ্বিতীয় ওয়ানডেতে আফগানিস্তানের কাছে ২ উইকেটে পরাজিত হয় মাশরাফি বিন মর্তুজার দল। ফলে সিরিজে ১-১ সমতা আনল আফগানরা। এ ম্যাচ জিতলে ওয়ানডেতে নিজেদের শততম জয় এবং টানা ছয়টি সিরিজ জয়ের গৌরব অর্জন করত বাংলাদেশ। দুটোই এখন পিছিয়ে গেল। আগের ম্যাচে রুদ্ধশ্বাস লড়াই করে অভিজ্ঞ বাংলাদেশের কাছে মাত্র ৭ রানে হেরেছিল আফগানরা। আর এদিন আগে ব্যাট করে আফগান স্পিনারদের দুর্ধর্ষ বোলিং ও ব্যাটিং ব্যর্থতায় ৪৯.৪ ওভারে মাত্র ২০৮ রানেই গুটিয়ে যায় বাংলাদেশ ইনিংস। জবাবে অধিনায়ক আসগর স্ট্যানিকজাইয়ের দুরন্ত অর্ধশতকেই জয়ের ভিত পেয়ে যায় আফগানরা। শেষ পর্যন্ত ৪৯.৪ ওভারে ৮ উইকেটে ২১২ রান তুলে জয় ছিনিয়ে নেয় আফগানিস্তান। এবার আর অভিজ্ঞতা কাজে লাগেনি, আইসিসির সহযোগী সদস্য দেশ আফগানিস্তানের কাছে লজ্জার হার সঙ্গী হয়েছে বাংলাদেশের। দ্বিতীয় ওয়ানডে তিন নম্বর উইকেটে- যেটার চরিত্র বৈচিত্র্যময়! স্পিনবান্ধব ধীরগতির এ উইকেটে কখনও এই উইকেটে প্রচুর রান হয়েছে, কখনও ধসে পড়েছে কোন দলের ব্যাটিং! টস হেরে আগে বাংলাদেশকে সেই গোলকধাঁধায় পড়তে হয়েছে। ইমরুল কায়েসের বদলে প্রথমবার ওয়ানডে দলে আসেন মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত। শুরুটা বেশ ভালই করেছিলেন তামিম ইকবাল ও সৌম্য সরকার। প্রথম থেকেই অফস্পিনার মোহাম্মদ নবিকে দিয়ে আক্রমণ শুরু করেছিল আফগানিস্তান। তামিমকে (২০) ফিরিয়ে দলীয় ৪৫ রানের জুটি ভেঙ্গে দেন মিডিয়াম পেসার মিরওয়াইস আশরাফ। নিজের পরের ওভারে দারুণ ছন্দ নিয়ে ব্যাট করা সৌম্য সরকারকেও (২০) তুলে নেন। তৃতীয় উইকেটে মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ ও মুশফিকুর রহীম দারুণ খেলছিলেন। ৬১ রানের জুটিটা ভাঙ্গেন নবীন উল হক, বোল্ড করে দেন মাহমুদুল্লাহকে (২৫)। দুই ওভার পর মুশফিকও ফিরে যান প্রিয় শট সুইপ খেলতে গিয়ে। ৫১ বলে ৪ চারে ৩৮ রান করেন তিনি। লেগস্পিনার রশিদ খান তার ক্যারিশমা দেখান, সঙ্গে যোগ দেন নবি। ফলে ৪৩ রানের মধ্যে ৬ উইকেট হারিয়ে চরম বিপর্যয়ে পড়ে বাংলাদেশ। ৯ উইকেটে ১৬৫ বাংলাদেশ! শেষ উইকেটে রুবেল হোসেনের সঙ্গে ৪৩ রানের মূল্যবান জুটি গড়ে দলকে সম্মানজনক সংগ্রহ এনে দেন অভিষেক হওয়া মোসাদ্দেক। তিনি ৪৫ বলে ৪ চার ও ২ ছক্কায় ৪৫ রানের হার না মানা ইনিংস খেলেন। রশিদ ৩৫ রানে তিনটি এবং নবি ১০ ওভারে মাত্র ১৬ রান দিয়ে দুটি উইকেট নেন। ৪৯.২ ওভারে ২০৮ রানে শেষ হয় বাংলাদেশের ইনিংস। মিরপুরে আগে ব্যাট করে গত বছর ১০ জুলাই দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে ১৬০ এবং ৬ মার্চ ২০১৪ শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে ৯ উইকেটে ২০৪ এবং পরে ব্যাট করে ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে ১৬৭ রান সাম্প্রতিক সময়ের সর্বনি¤œ সংগ্রহ। সে তিনটি ম্যাচেই হেরেছিল বাংলাদেশ। গত বছর এই মাঠেই বাংলাদেশ দুটি তিন শতাধিক রানের ইনিংস গড়েছিল পাকিস্তান ও ভারতের বিরুদ্ধে। তাই দীর্ঘদিন পর বুধবারের ভরাডুবি ব্যাটসম্যানদের ব্যর্থতার কারণেই হয়েছে। ব্যাট হাতে সাকিব ১৭ রান করেই ফিরে গিয়েছিলেন। কিন্তু বল হাতে জ্বলে উঠলেন শুরু থেকেই। ইনিংসের চতুর্থ ওভারের চতুর্থ বলে নওরোজ মঙ্গল (১০) ও ষষ্ঠ বলে রহমত শাহকে (০) শিকার করেন। ১৪ রানেই দুই উইকেট হারিয়ে বিপদে পড়ে আফগানরা। কিন্তু মোহাম্মদ শাহজাদ আক্রমণাত্মক ব্যাট করছিলেন। হাশমতুল্লাহ শহিদী তাকে ভালই সাপোর্ট দিচ্ছিলেন। ৪৫ রানের এ জুটি হাশমতকে (১৪) এলবিডব্লিউ করে ভাঙ্গেন মোসাদ্দেক। ক্যারিয়ারের প্রথম ওয়ানডে বলেই উইকেট তুলে নেয়া প্রথম বাংলাদেশী বোলার তিনি। ওয়ানডে ইতিহাসে এমন নজির দেখিয়েছেন আরও ২৩ জন। ফিরতি স্পেলে ফিরে আবার আঘাত হানেন সাকিব। ৩৫ বলে ৪ চার ও ২ ছক্কায় ৩৫ করা শাজাদকে ফিরিয়ে দেন সাজঘরে। ৬৩ রানে ৪ উইকেট খুইয়ে বিপদে পড়া আফগানদের দারুণ এক জুটি এনে দেন আসগর স্ট্যানিকজাই ও নবি। পঞ্চম উইকেটে তারা ১০৭ রানের জুটি গড়ে জয়ের ভিত গড়ে দেন। ফিরতি স্পেলে এসে ৬১ বলে ৩ চার ও ২ ছক্কায় ৪৯ রান করা নবিকে এলবিডব্লিউ করে ব্রেক থ্রু দেন দারুণ ইকনোমি বোলিং করা মাশরাফি। পরের ওভারেই বোলিংয়ে ফিরে মোসাদ্দেক সবচেয়ে মূল্যবান উইকেট শিকার করেন। ৯৫ বলে ৪ চার ও ২ ছক্কায় ৫৭ রান করা আসগরকে ফিরিয়ে দেন। ওভারটি মেডেনও লাভ করেন তিনি। তখন জয় থেকে ৫৪ বলে ৩৫ রান দূরে আফগানরা। ৪৫তম ওভারে এসে আবার আঘাত হেনে সাকিব ফেরান রশিদ খানকে (৫)। ৪৭তম ওভারে মোসাদ্দেকের পঞ্চম বলে নজিবুল্লাহ জাদরানের স্টাম্পিং মিস করেন মুশফিক। তবে চাপে পড়া আফগানদের ৪৯তম ওভারে মোসাদ্দেককে ছক্কা হাঁকিয়ে জয় সহজ করে দেন আশরাফ। প্রথম ওয়ানডের মতো আর কোন নাটকীয়তা হয়নি। শেষ পর্যন্ত শেষ ওভারের চতুর্থ বলে দৌলত জাদরানের চারে জেতে আফগানরা।
×